একবারের ঘটনা। নবীজি ﷺ সাহাবিদের নিয়ে বসা। এসময় এক মহিলা এসে তার স্বামীর ব্যাপারে ভয়ানক রকমের তিনটা অভিযোগ পেশ করেন।
১। আমি নামাজ পড়তে গেলে আমার স্বামী আমাকে মারেন।
২। ফজরের নামাজ না পড়ে উনি ঘুমিয়ে থাকেন।
৩। আমি নফল রোযা রাখলে রোযা ভাঙতে বাধ্য করেন।
মজার বিষয় এই মহিলার স্বামী সফওয়ান ইবনে মু'আত্তল রা.। যিনি সেই মজলিশে অন্য সবার সাথে বসা। নবীজি ﷺ সফওয়ানকে ডেকে বললেন, অভিযোগগুলো কি সত্য? তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, হ্যা অভিযোগ সত্য। তবে এর ব্যাখ্যা আছে হে আল্লাহর নবী।
: কী ব্যাখ্যা?
:: সে প্রথম অভিযোগ তুলেছে, সে নামাজ পড়লে আমি তাকে মারি। আসলে সে নামাজে লম্বা লম্বা কেরাত পড়ে। ফলে আমাকে সে সময় দিতে পারে না। অপেক্ষায় ঝুলিয়ে রাখে। অথচ আমি তার সঙ্গ পেতে চাই। তার সেবার মুখাপেক্ষী থাকি।
নবীজি ﷺ বললেন,
: নামাজের জন্য ছোট কেরাতই যথেষ্ট।
নোট- স্বামী ঘরে থাকা অবস্থায় স্বামীর সেবা নফল ইবাদাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। স্বামীকে সঙ্গ দেয়াই একটি ইবাদাত। অথচ আজকাল আমাদের মা-বোনেরা বই/মোবাইল/ঘুম/ফেসবুক/ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যা মোটেও ইবাদাত তো নাই, বরং ক্ষেত্রে বিশেষ গোনাহের কারখানা।
:: তার দ্বিতীয় অভিযোগ, ফজরের নামাজ না পড়ে আমি ঘুমিয়ে থাকি। আসলে বিষয়টা হল আমার পেশা হল পানি টানা। এটাই আমার জীবিকা নির্বাহের উপায়। সেটা রাতের বেলাতেই করতে হয়। কাজ যখন শেষ হয়, তখনও ফজরের ওয়াক্ত হয় না। এদিকে প্রচন্ড ঘুমের চাপে মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে যাই। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। পরে ঘুম ভাঙ্গে সূর্যদয়ের পর!
নবীজি ﷺ বললেন,
: আচ্ছা। তাহলে যখনি ঘুম ভাঙবে সালাত আদায় করে নিবে।
:: তার তৃতীয় অভিযোগ, সে রোযা রাখলে আমি তাকে তা ভাঙতে বাধ্য করি। কারণ আমি সারা রাত কঠিন পরিশ্রম করি৷ দিনের বেলাতেই কেবল স্ত্রীর কাছে যাওয়ার ফুরসত পাই। আর সেই সময়টাতেও তার সাথে মিলিত হতে পারি না, কারণ সে তখন রোযাদার!
নবীজি ﷺ বললেন,
: তোমরা সবাই শোনো, আজকের পর মহিলারা তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে পারবে না।
নোট- স্বামীর অধিকার ক্ষুন্ন করে নফল কোনো ইবাদাত স্ত্রীর জন্য বৈধ নয়।
[ আবু দাউদঃ২৪৫৯, আদ্দুরারুস সানিয়াহ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা]
আজকের অধিকাংশ দীনি বোনদের মেজাজ হল- ''সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা খোজা''। পুরুষকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা। বিশেষত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের মাঝে এটা প্রকট। স্বামী তালাক দিতে পারলে স্ত্রী কেন পারবে না...? স্বামীর জন্য নেটজগত অবাধ হলে স্ত্রীর জন্য কেন ফেতনা...? দুজনের গড়ে তোলা সংসারে পুরুষ কেন নেতা...? এমনকি অনেকে অভিযোগ তোলে, পুরুষ ৭০ টা হুর পেলে নারী কেন 'কিছু' পাবে না...? ডিভোর্স বৃদ্ধি ও সংসারে অশান্তির প্রধান কারণও কিন্তু এই 'সমতা' ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা' এর বিষাক্ত চেতনা!
অথচ আল্লাহ এবং নবীজি ﷺ পুরুষকে নারীর চেয়ে কর্তৃত্বের দিক থেকে উপরে রেখেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো হবে আল্লাহ তা'আলা যদি 'সমতা' বিধান দিতেন।
নবীজি ﷺ বলেছেন,
আল্লাহর পর কাউকে সাজদাহ করা বৈধ হলে আমি প্রতিটা স্ত্রীকে বলতাম, সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে! কেননা আল্লাহ তা'আলা স্বামীদেরকে স্ত্রীদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। [ আবু দাউদঃ২১৪০, আয যাওয়াজিরঃ২/৪১, সনদ সহিহ]
আল্লাহু আকবার!