Sunday, August 15, 2021

মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি

মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি
▬▬▬▬🌐💡💡🌐▬▬▬▬
খর তপ্ত জমিন। মানুষ-জন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, তৃণ-লতা সব কিছু একপশলা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে। হঠাৎ আকাশ জুড়ে শুরু হল মেঘের আনাগোনা। মুশলধারে বৃষ্টি বর্ষণ হল। প্রাণে প্রাণে জাগল জীবনের স্পন্দন। আবার কলকাকলিতে ভরে উঠল পৃথিবী।
মাহে রমাযানের উদাহরণ অনেকটা এমনই। পৃথিবী যখন পাপ-পঙ্গিলতায় ভারি হয়ে উঠে। গুমোট অস্থিরতায় সমগ্র পৃথিবী কাঁপতে থাকে। ঠিক এমন সময় আল্লাহ তায়ালা মাহে রমাযানকে উপহার হিসেবে দেন বিশ্ববাসীর নিকট। যেন তারা তাদের পেছনে ফেলে আসা পাপরাশীকে সিয়াম, কিয়াম ও অন্যান্য নেকী অর্জনের মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে পারে। আল্লাহর অশেষ রহমতের বারি ধারায় সিক্ত হয়ে শুরু করতে পারে নতুন ভাবে পথ চলা।
প্রিয় ভাই ও বোন, এই রমাযান আমাদের মাঝে সমাগত। নিঃসন্দেহে রমাযান মুসলিমদের জন্য এক বিরাট কল্যাণের মাস।
- এ মাসে মুসলিমদের জন্য রোযা পালন করা ফরয।
- এ রোযা ইসলামের ৫টি রোকন (স্তম্ভ) এর মধ্যে অন্যতম।
- আল্লাহ তাআলা এ মাসে মানব জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য মহা গ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেছেন।
- এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হল, রমাযানের শেষ দশকের কদরের রাত বা শবে কদর।
- কুরআন-সুন্নায় এ মাসের মর্যাদা এবং এতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অনেক আলোচনা এসেছে।
তাই আসুন, আমরা রামাযানের যথাযথ আদব রক্ষা করে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ তায়ালার নিকট গুনাহ-খাতা মোচন করিয়ে নেই এবং সেই সাথে দু হাত ভরে উপার্জনের চেষ্টা করি পরকালের পাথেয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
---------------------
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। KSA

 

বিশ্বব্যাপী একসাথে রোযা শুরু এবং একসাথে ঈদ পালন: কতটুকু সঠিক?

 

বিশ্বব্যাপী একসাথে রোযা শুরু এবং একসাথে ঈদ পালন: কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন : মতোবিরোধপূর্ণ মাসায়েলের ক্ষেত্রে কি যে কোনো একটা মানলেই হবে? যেমন: পৃথিবীর যে কোনো এক স্থানে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে সারাবিশ্বে এক দিনে রোযা শুরু করা বা ঈদ পালন করা কিংবা এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এসব ইবাদত করা। এ বিষয়ে সবার পক্ষেই হাদিস সহিহ সনদে বর্ণিত। তাহলে এ ক্ষেত্রে যেকোনো এক ভাবে করলেই কি যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
বর্তমানে সারা বিশ্বে একই সাথে রোযা ও ঈদ পালনের বিষয়ে মুসলিমদের মাঝে মতভেদ ব্যাপকতা লাভ করেছে। হচ্ছে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা-যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
তবে এ মর্মে কথা হল, ইতিহাস সাক্ষী, কোন কালেই সারা বিশ্বে একই দিন রোযা বা ঈদ পালিত হয় নি। এটা সম্ভব নয়। বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমেও তা প্রমাণিত নয়।
১৪০১ হিজরী সালে মক্কা মুকাররমায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে OIC এর আল ফিকহ একাডেমি এবং সৌদি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ সারা বিশ্বে একসাথে সিয়াম ও ঈদ পালনকে শরিয়ত, আকল, যুক্তি সব দিক দিয়ে অসম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছে।
এ মর্মে আরও পড়ুন:
💠 প্রশ্ন: পৃথিবীতে মুসলমানরা সকলে একই দিনে রোযা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালন করার ব্যাপারে একতাবদ্ধ নয় কেন?
💠 উত্তর:
ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, এই ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। একদল বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের মক্কার সময় অনুসরণ করা উচিত। অন্য দলের আলেমগণ বলেন, এই সময়টি বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সময়ে হওয়া উচিৎ।
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর।" [বাকারা আয়াত ১৮৫]
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "“তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখ তখন রোযা রাখ এবং নতুন চাঁদ দেখলে রোযা ভেঙ্গে ফেল।" [বুখারী, হাদিস নং ১৯০৭ ও ১৯০৯]
সুতরাং এই হাদিসটির উপর ভিত্তি করে ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন যে, সারা বিশ্বের সব জায়গা থেকে একই দিনে রমজানের চাঁদ দেখা অসম্ভব। সুতরাং মক্কার সময়টি সারা বিশ্বে একযোগে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
"মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “ঐ দিন রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে ঐ দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানি করতে হবে ঐ দিন যে দিন সকলে কুরবানি করে।" [তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৭]
কুরআনে বলা হয়েছে যে, “আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত"
[বাকারাঃ ১৮৭]
কিন্তু সূর্যোদয় সারা বিশ্বে একই সময়ে হয় না বরং একেক দেশে একেক সময়ে হয়। সুতরাং রোযা পালনে স্থানীয় সময় অনুসরণ করতে হবে।
উৎস: সামহোয়্যার ব্লগ