Tuesday, August 31, 2021

Companies Act, 1994 Forms I - Form-I Declaration on Registration of Company THE COMPANIES ACT, 1994

Form-I

Declaration on Registration of Company

THE COMPANIES ACT, 1994

(See Section 25)

 

Name of the Company                                                                                                    

Declaration of complianc e with the requirements of the companies act, 1994 made

pursuant to section 25 (2) on behalf of a company proposed to be Registered as the

                                                                                                                                   _

Presented for filing by                                                                                             _

I,                                                             of                                                               _

                                                                                                                                     _

do solemnly and sincerely declare that I am an Advocate* / Attorney/ A Pleader entitled

to appear before High Court who is engaged in the formation of the company/ a

person named in the Articles  as a  Director/  Manager/  Secretary of the

                                                                             and and that all the requirements of

the Companies Act, 1994 in respect of matters precedent to the registration of the said

company and incidental there to have been complied with, save only the payment to

the fees and sums payable on registration and I make the solemn declaration

conscientiously believing the same to be true.

 

 

 

Signature

Note: The declaration need not to be-

(a) Signed before a magistrate or an officer competent to administer others or

(b) Stamps as a affidavit

 

* Strike out the portion which does not apply

 

Wednesday, August 18, 2021

শক্তিশালী মুমিন এর ১৪টি অনন্য গুণ

 
শক্তিশালী মুমিন এর ১৪টি অনন্য গুণ
▬▬▬▬ ◐◯◑ ▬▬▬▬
◈◈ শক্তিশালী মুমিন এর মর্যাদা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ، وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا تَعْجَزْ ، وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا ، وَلَكِنْ قُلْ : قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ “
“শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। আর সবকিছুতেই কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং যাতে তোমার কল্যাণ রয়েছে তা অর্জনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। দুর্বলতা প্রদর্শন করো না। তবে যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, “যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার এই এই হত।” বরং বল, “আল্লাহ এটাই তকদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।” কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, ঈমানদারগণ ঈমানের দিক দিয়ে সমান নয়। তাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তবে শক্তিশালী মুমিনগণ অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। কিন্তু দুর্বল মুমিনরাও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত নয়।
তাহলে আমাদের জানা দরকার শক্তিশালী মুমিন কারা? কী তাদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য? এগুলো জেনে আমরাও যেন সে সকল গুণাবলী অর্জন করে আল্লাহর প্রিয়ভাজন মুমিনদের দলভুক্ত হতে পারি। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমীন।
◈◈ শক্তিশালী মুমিন এর গুণাবলী:
নিম্নে একজন শক্তিশালী মুমিনের ১৪টি অনন্য গুণাবলী সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
◉ ১) সুদৃঢ় ঈমান
◉ ২) দ্বীনের ইলম অর্জন করা
◉ ৩) সবর বা ধৈর্য ধারণ
◉ ৪) রাগ নিয়ন্ত্রণ
◉ ৫) উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা
◉ ৬) উদ্যমী হওয়া
◉ ৭) নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের প্রচেষ্টা থাকা
◉ ৮) মানুষের উপকার করা
◉ ৯) সুস্বাস্থ্য
◉ ১০) মজবুত চিন্তাভাবনা ও সুনিপুণ পরিকল্পনা
◉ ১১) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক
◉ ১২) আত্মমর্যাদা ও পরিচ্ছন্ন অন্তর
◉ ১৩) শক্তিশালী মুমিনের হৃদয় হয় ভালবাসা, দয়া ও মায়া–মমতায় পূর্ণ।
◉ ১৪) ভুল স্বীকার
নিম্নে উপরোক্ত বিষয় সমূহের পর্যালোচনা তুলে ধরা হল:
❑ ১) সুদৃঢ় ঈমান:
শক্তিশালী মুমিন মানেই অটুট আকীদা ও বিশ্বাসের অধিকারী। সে রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি, দ্বীন হিসেবে ইসলামের প্রতি এবং নবী হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সন্তুষ্ট। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিষয়ে এমন সুদৃঢ় ঈমান পোষণ করে যে, কোন সংশয় ও ভ্রান্তির সামনে দুর্বল হয় না। সে তার মূল্যবোধ ও মূলনীতিতে আস্থাশীল- যার কারণে সংশয় ও সন্দেহের ঝড় তাকে টলাতে পারে না বা কু প্রবৃত্তি ও লালসার স্রোত তরঙ্গ তাকে ভাসিয়ে নিতে পারে না।
❑ ২) দ্বীনের ইলম অর্জন করা:
শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম গুণ হল, সে দ্বীনের জ্ঞানার্জনে উদগ্রীব থাকে। কেননা, ইলম ছাড়া যথার্থ শক্তিশালী মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ
“বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার: ৯)
উত্তর হল, কখনও নয়। বরং আল্লাহ তাআলা যাকে ঈমানের পাশাপাশি ইলম দান করেছেন সে নি:সন্দেহে মর্যাদার দিক দিয়ে উন্নত। যেমন আল্লাহ তালা বলেন,
يَرْفَعِ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ۚ
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও যাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে আল্লাহ্‌ তাদের স্তরে স্তরে মর্যাদায় উন্নীত করবেন।” (সূরা মুজাদিলা: ১১)
তিনি আরও বলেন,
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّـهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে।” (সূরা ফাতির: ২৮)
নবীগণ যেহেতু মুমিনদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী মুমিন ছিলেন সুতরাং তাদের রেখে যাওয়া ইলমের উত্তরাধিকারী রব্বানী আলেমগণও অন্যদের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী মুমিন। কারণ তারা আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করেছে, অন্যরা তা পারে নি। আর এ কারণেই কেবল আলেমগণই আল্লাহ তাআলাকে সর্বাধিক ভয় করে।
❑ ৩) সবর বা ধৈর্য ধারণ:
শক্তিশালী মুমিনদের অন্যতম গুণ হল, তারা হন প্রচণ্ড ধৈর্যশীল। প্রকৃতপক্ষে দৃঢ় সংকল্প আর মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরাই কেবল এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖإِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
“বিপদাপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের বিষয়।” (সূরা লোকমান: ১৭)
পক্ষান্তরে দুর্বলরা হয় ধৈর্যহীন ও অস্থির। তারা বিপদে পড়লে খেই হারিয়ে ফেলে।
শক্তিশালী মুমিন সামাজিকভাবে মানুষের সাথে চলাফেরা করে আর মানুষ তাকে আচরণে কষ্ট দিলে ধৈর্যের পরিচয় দেয়। এ অবস্থায় ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তার সাথে চলাফেরা-উঠবস অব্যাহত রাখা একমাত্র শক্তিশালী মুমিন দ্বারাই সম্ভব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
المؤمنُ الَّذي يخالطُ النَّاسَ ويصبرُ على أذاهم أعظمُ أجرًا منَ المؤمنِ الَّذي لاَ يخالطُ النَّاسَ ولاَ يصبرُ على أذاهم
“যে মুমিন মানুষের সাথে উঠবস করে এবং তারা কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করে সে অধিক প্রতিদানের অধিকারী হবে এমন মুমিন হতে যে মানুষের সাথে উঠবস করে না এবং তারা কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করে না।” (ইবনে মাজাহ, সহীহ-আলবানী, হা/৩২৭৩)
◯ সবর বা ধৈর্যের তিনটি ক্ষেত্রে রয়েছে। যথা:
● ক) ইবাদত বা আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ।
● খ) আল্লাহর অবাধ্যতা বা পাপাচার থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ।
● গ) জীবনের বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা, বিপর্যয় ও দুর্বিপাকে ধৈর্য ধারণ।
❑ ৪) রাগ নিয়ন্ত্রণ:
শক্তিশালী মুমিন তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। সে কখনও ব্যক্তি স্বার্থে রাগ করে না। কেউ তার প্রতি অবিচার করলে প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকার পরও সে ক্ষমা করে দেয়।
রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘প্রকৃত বীর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন: তিনি বলেন,
ليسَ الشَّديدُ بالصُّرَعةِ ، إنَّما الشَّديدُ الَّذي يملِكُ نفسَهُ عندَ الغضبِ
“প্রকৃত বীর সে ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে বা অন্যায়-অপকর্ম দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া অবশ্যই প্রশংসনীয় গুণ। অন্যায়, দুর্নীতি ও পাপাচারের পথ রোধ করতে এ রাগ অত্যন্ত জরুরি। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
❑ ৫) উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা:
শক্তিশালী মুমিন হৃদয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে। তার স্বপ্ন হয় অনেক উঁচু। তার অভীষ্ট লক্ষ হয় বহু দূর। সে আখিরাতের প্রতিযোগিতায় বিজয় মুকুট পরিধান করতে চায়। তাই সে দুর্দান্ত বেগে ছুটে যায় আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের আহ্বানে। আল্লাহ বলেন,
وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন। যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)
শক্তিশালী ঈমান ছাড়া এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার সম্ভব নয়। এ জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করতে হয়। অনেক পরিশ্রম আর কষ্ট করতে হয়। যেমন শীতের রাতেও ওযু করে ফজর সালাতে যাওয়া, রাত জেগে কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সালাত, নফল রোযা, নিজের অভাব থাকা সত্যেও অসহায় মানুষের সাহায্য, কু প্রবৃত্তিকে দমন করে দ্বীনের পথে টিকে থাকা, প্রয়োজনে আল্লাহর পথে জিহাদে নিজের জান-মাল সর্বস্ব অকাতরে বিলিয়ে দেয়া ইত্যাদি।
উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি উদাহরণ হল,আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উঁচু জান্নাতের জন্য দুআ করা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন:
إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ ، فَإِنَّهَا أَوْسَطُ الْجَنَّةِ ، وَأَعْلَى الْجَنَّةِ ، وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ ، وَمِنْهُ يُفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ
“তোমরা যখন আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদউস কামনা করবে। কারণ, তা হল, উৎকৃষ্ট ও উন্নততর জান্নাত। এ জান্নাতের উপর রয়েছে পরম করুণাময় আল্লাহর আরশ। তা হতে জান্নাতের নহর সমূহ প্রবাহিত হয়”। (সহীহুল বুখারী ২৭৯০,৭৪২৩)
❑ ৬) উদ্যমী হওয়া:
শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম সেরা গুণ হল, তার অন্তরে প্রচণ্ড উদ্যম ও স্প্রিহা কাজ করে। সে কখনও অলসতাকে সুযোগ দেয় না। কেননা অলসতাকে আশ্রয় দেয়া মানে, শয়তানের নিকট নিজেকে সঁপে দেয়া। যে নিজেকে শয়তানের কাছে সঁপে দেয় তার ধ্বংস অনিবার্য।
সামগ্রিকভাবে অকর্মণ্যতা,অলসতা, ভীরুতা ইত্যাদি দোষগুলো মানুষের উন্নতির পথে অন্তরায়। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সব দোষ-ত্রুটি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন এবং আশ্রয় চাওয়ার জন্য তার উম্মতকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআ করতেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ.
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাবল্য (এর শিকার হওয়া) থেকে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস ৬৩৬৯)
❑ ৭) নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের প্রচেষ্টা থাকা:
শক্তিশালী মুমিন কেবল নিজের সংশোধনকেই যথেষ্ট মনে করে না। বরং আল্লাহ তাকে যে শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে অন্যকেও সংশোধনের কাজে ব্রতী হয়।
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি :
مَنْ رَأَى مِنْكُم مُنْكراً فَلْيغيِّرْهُ بِيَدهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطعْ فبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبقَلبهِ وَذَلَكَ أَضْعَفُ الإِيمانِ
“তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখবে তখন সে যেন তা হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি সে এ সামর্থ্য না রাখে তাহলে যেন মুখ দিয়ে পরিবর্তন করে (মুখে প্রতিবাদ করে)। যদি এ সামর্থ্যও না থাকে তাহলে অন্তরে (ঘৃণা করে এবং পরিবর্তনের পরিকল্পনা আঁটতে থাকে)। আর এটি হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতার স্তর।” (সহীহ মুসলিম)
এ হাদিসে অন্যায় প্রতিহত করার তিনটি স্তর বলা হয়েছে। এ তিনটি মধ্যে ১ম স্তরটি অর্থাৎ হাত দ্বারা বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবর্তন করা এর পরের দুটি স্তর থেকে নি:সন্দেহ অধিক উত্তম। তবে তা শক্তি ও সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যদি কারও অন্যায় প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি ও সামর্থ্য থাকে তাহলে তা ব্যবহার করে অন্যায় পরিবর্তন করবে। আর এটি হল শক্তিশালী মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
❑ ৮) মানুষের উপকার করা:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ
“সে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপকার করে।” (সিলসিলা সহীহাহ, হাসান)
শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, সে শুধু নিজের স্বার্থ নিয়েই ভাবে না বরং মানুষের কল্যাণে অবদান রাখে। সে আর দশজন মানুষের মত নয়। সে বিপদে মানুষকে সাহায্য করে, অন্ধকারে আলো জ্বালায়, জ্ঞানহীনকে জ্ঞানদান করে, রোগীর সেবা করে, কেউ পরামর্শ চাইলে সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে, মাজলুমকে রক্ষা করে, দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষের মনে সান্ত্বনা দেয়, হতাশার অন্ধকারে আশার আলো জ্বালায়.. এভাবে যেখানে যতটুকু সম্ভব সেখানে ততটুকু মানুষের কল্যাণে নিজের মেধা, যোগ্যতা, অর্থ ও শ্রম দ্বারা উপকার করতে ছুটে যায়। এটি হল শক্তিশালী মুমিনের পরিচয়।
◯ আবু বকর (রা.): আমাদের প্রেরণা:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟ قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ- مسلم
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: তোমাদের মধ্যে আজ কে রোযা রেখেছে?
আবু বকর (রা.): আমি।
রাসূল (সা.) : তোমাদের মধ্যে আজ কে জানাজায় হাজির হয়েছে?
আবু বকর (রা.): আমি।
রাসূল (সা.) : তোমাদের মধ্যে আজ কে অসহায়কে খাবার দিয়েছে?
আবু বকর (রা.): আমি।
রাসূল (সা.) : তোমাদের মধ্যে আজ কে রোগীর সেবা-যত্ন করেছে?
আবু বকর (রা.): আমি।
রাসূল (সা.): ‘‘যার মধ্যে উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো একত্রিত হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (সহীহ মুসলিম/১০২৮)
❑ ৯) সুস্বাস্থ্য:
একজন সুস্থ, সবল ও মজবুত মানুষ দ্বারা যেভাবে দ্বীন ও দুনিয়ার কাজ করা সম্ভব দুর্বল ও অসুস্থ মানুষ দ্বারা কখনো তা সম্ভব নয়। তাই তো দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মুমিন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সুস্থ থাকার জন্য দুআ করতেন,রোগ হলে চিকিৎসা করতেন এবং লোকদেরকে চিকিৎসা করতে উৎসাহিত করতেন। শুধু তাই নয় বরং নিজেও রোগ-ব্যাধির প্রেসক্রিপশন দিতেন।
সুস্থতার ব্যাপার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
“দুটি নেয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অসতর্ক ও প্রতারিত। সে দুটি হল, সুস্থতা এবং অবসর সময়।”(সহীহুল বুখারী ৫/২৩৫৭)
শারীরিক শক্তি আল্লাহ তায়ালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর পূর্বে এগুলোর কদর করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন,
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هِرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ
“পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন কর:
● (১) জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।
● (২) সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে।
● (৩) অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে।
● (৪) যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং
● (৫) সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম খণ্ড, ৮ম অধ্যায় ১২৭ পৃষ্ঠা। আল্লামা আলবানী রহ., হাদিসটি সহীহ বলেছেন। দ্রঃ সহীহুল জামে, হাদিস নং ১০৭৭)
শক্তিশালী মুমিন ব্যক্তি তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়, ঘুম, বিশ্রাম ইত্যাদির প্রতি যত্নশীল হয়। সে মনে করে, শারীরিক সুস্থতা ও দৈহিক বল তাকে ইবাদত-বন্দেগী, দ্বীনের কাজ, পাশাপাশি হালাল অর্থ উপার্জন এবং মানব কল্যাণে অবদান রাখতে সাহায্য করবে।
মোটকথা, দৈহিক শক্তি এবং সুস্থতাকে সে দ্বীন ও দুনিয়ার ভালো কাজে অবদান রাখার মাধ্যম মনে করে।
❑ ১০) মজবুত চিন্তাভাবনা ও সুনিপুণ পরিকল্পনা:
মজবুত ইমানদারের একটি গুণ হল, তার চিন্তা-চেতনা, কথা-বার্তা, বক্তব্য, সিদ্ধান্ত, যুক্তি, বিচার-বিবেচনা ইত্যাদি সব কিছু হয় মজবুত এবং সূক্ষ্ম। সে ইবাদত-বন্দেগী, কাজে-কর্ম সকল ক্ষেত্রেই সুদৃঢ়,সুনিপুণ এবং যত্নশীল।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
“যখন তুমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ভরসা কারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আল ইমরান: ১৫৯)
মজবুত কাজকে আল্লাহ তাআলাও পছন্দ করেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إنَّ اللهَ تعالى يُحِبُّ إذا عمِلَ أحدُكمْ عملًا أنْ يُتقِنَهُ
“নিশ্চয় আল্লাহ এটা পছন্দ করেন যে, তোমাদের কেউ কোন কাজ করলে তা যেন মজবুত ভাবে করে।” (সহীহুল জামে, হা/১৮৮০, হাসান)
❑ ১১) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক:
মুমিন ব্যক্তি সত্য, ন্যায়-নীতি, সততার পক্ষে থাকে নির্ভীক। এ ক্ষেত্রে সে সমালোচনা কারী সমালোচনাকে পরোয়া করে না। বাতিলের বিরুদ্ধে থাকে স্পাত কঠিন। সে সৎ ও কল্যাণকামী। তোষামোদি ও ছলচাতুরীকে প্রশ্রয় দেয় না। যে দিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা ধরে না বরং সৎসাহস বুকে নিয়ে নির্ভিক ভাবে ঝড়ের বিপরীতে পথ চলে।
এই সাহসী ব্যক্তিরাই সমাজের অন্যায়, অপকর্ম ও বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম আ.। যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার জানবাজ সাহসী সাহাবীগণ।
❑ ১২) আত্মমর্যাদা ওপরিচ্ছন্ন অন্তর:
শক্তিশালী মুমিন হয় আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী। সে অহংকার করে না বরং বিনয় ও নম্রতা তার চরিত্রের ভূষণ। সে অর্থলিপ্সু বা লোভাতুর হয় না। সে হীন চরিত্রের অধিকারী নয়। অর্থের প্রয়োজন হলেও তার আত্মমর্যাদা তাকে অর্থলিপ্সু বানায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“যাদেরকে মনের লিপ্সা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।” (সূরা আল হাশর: ৯)
❑ ১৩) শক্তিশালী মুমিনের হৃদয় হয় ভালবাসা, দয়া ও মায়া–মমতায় পূর্ণ। সে কৃতজ্ঞ চিত্তের অধিকারী। সে কারও প্রতি ব্যক্তিগত কারণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে না বরং সে কাউকে ভালবাসলে বা ঘৃণা করলে তা হয় একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে কেন্দ্র করে।
❑ ১৪) ভুল স্বীকার: শক্তিশালী ইমানদারের একটি গুণ হল, ভুল হলে সে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। ভুল সংশোধন করে। সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে না। এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের গুণ।
◯ সুদৃঢ় ঈমানের আলামত:
● ১) আল্লাহ এবং রাসূল যা ভালবাসেন তা নিজের চাহিদা, রুচি এবং ভালবাসার উপর অগ্রাধিকার দেয়া।
● ২) আল্লাহর জন্য নিজের জান- মাল, সহায়-সম্পত্তি উৎসর্গ করা।
● ৩) আল্লাহ এবং তার রাসূল যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসা আর তারা যাকে ঘৃণা করেন তাকে ঘৃণা করা।
● ৪) তকদীর তথা আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং যতই বিপদ আসুক না কেন মনঃক্ষুণ্ণ ও হতাশ না হওয়া।
● ৫) স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা।
● ৬) আল্লাহর জিকিরের সময় মনে তৃপ্তি ও প্রফুল্লতা অনুভব করা। আল্লাহ বলেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّـهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّـهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।” (সূরা রা’দ: ২৮)
তিনি আরও বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّـهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে । আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতগুলো পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।” (সূরা আনফাল: ২)
● ৭) নেকির কাজে আনন্দ এবং গুনাহর কাজে অস্থিরতা অনুভব করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من سرَّتْهُ حسنتُهُ وساءتْهُ سيئتُه فهو مؤمنٌ
“মুমিন তো সেই ব্যক্তি যার অন্তর নেক কাজে খুশি হয় আর পাপকাজে কষ্ট অনুভব করে।”
(সহীহুল জামে, হা/৬২৯৪, সহীহ)
পরিশেষে, মহান রবের নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে সে ঈমান অর্জনের তাওফিক দান করেন যার উপর তিনি সন্তুষ্ট। তিনি যেন আমাদের দুর্বলতাগুলো শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেন, অভাবগুলো মোচন করেন এবং গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু, দাতা ও ক্ষমাশীল।
▬▬▬▬ ◐◯◑ ▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদ আরব
(صفات المؤمن القوي (باللغة البنغالية
تأليف: عبد الله الهادي عبد الجليل
داعية بمكتب الدعوة و توعية الجاليات بالجبيل