ডিপ্রেশন ও স্ট্রেস ইনটলারেন্স থেকে বাড়ছে আত্মহত্যা।
প্রতিটা আত্মহত্যার পর আমরা তার কারন অনুসন্ধান করি, কিন্তু আমরা জানি না, ডিপ্রেশনের কিছু অতি বড় কারন লুকিয়ে আছে আমাদের জীবনধারার ভেতরেই।
নিচের কারনগুলি খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, কেন এখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে থাকে এবং দিনকে দিন কেন মানুষের স্ট্রেস টলারেন্স কমছে।
১)মানুষ এখন আর সামাজিক জীব না। মানুষের এখন কোন দল থাকে না। একজনের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ার মত দশজন মানুষ এখন আর নেই। মানুষ এখন মূলত ভোক্তা ও নাগরিক। এটা মানুষকে অটোম্যাটিক্যালি ক্রনিক স্ট্রেসে ঠেলে দেয়, কারন দলবদ্ধভাবে বাস করাই মানুষের স্বভাব।
২)রোদ ও অন্ধকারের স্বাভাবিক চক্র এখন মানুষের জন্য অপ্রতুল। মানুষ দিনে অন্ধকারে থাকে এবং রাতে থাকে আলোয়, অথবা দিন-রাত সবসময়ই আলোতে থাকে। রাতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানেও প্র্যাক্টিক্যালি আলোতেই থাকা। রাতের সময়টা স্ট্রেস হরমোনকে আমরা পুল ডাউন করছি না, ফলে সমস্ত এন্টাই ইনফ্ল্যামাটরি মলিকিউল তৈরি কম হচ্ছে, ড্যামেজ রিপেয়ারমেন্ট বন্ধ থাকছে বা আশানুরুপ আকারে হচ্ছে না। সারাক্ষন অক্সিডেশান চলছে, রিডাকশান চলছে না।
৩)অতিরিক্ত ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড খাওয়া হচ্ছে সারাজীবন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কোষে ওমেগা-৬ আর ওমেগা-৩ এর ভারসাম্য। অতিরিক্ত ওমেগা-৬ ফ্যাট আমাদের সেলুলার রিজিডিটি বাড়ায়, স্টিকিনেস বাড়ায়। ব্রেইন ফগ, আন্ডারপারফর্মিং ব্রেইন, স্পষ্টভাবে চিন্তা না করতে পারা, একই চিন্তা বারবার করা, এধরনের সমস্যার অন্যতম কারন হিসেবে ওমেগা-৬ টক্সিসিটিকে উল্লেখ করা হয়।
৪)সুগার বা রিফাইন্ড স্টার্চ ডিপেন্ডেন্সি-এটা অন্যতম একটা বড় কারন যার ফলে মানুষের ব্রেইন রিওয়ার্ড ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গেছে। ফুড থেকে রিওয়ার্ড পেয়ে অভ্যস্ত মানুষ প্রতিটা কাজ থেকেই রিওয়ার্ড আশা করে। রিওয়ার্ড না পেলেই হতাশ হয়ে যায়।
৫)ক্রনিক্যালি হাই ডোপামিন-লো সেরোটোনিনঃ সোশ্যাল মিডিয়া স্টিমুলেশনের কারনে আমাদের ডোপামিন লেভেল সারাক্ষনই হাই থাকে, যা আমাদের ইমপালসিভ করে এবং আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি, সেরোটোনিনের অভাব বাড়ায় বিষন্নতা-হতাশা এবং আত্মঘাতী আচরন।
৬)ক্রনিক ওভারওয়ার্কঃ ইতিহাসের যেকোন সময়ের চেয়ে মানুষ বেশি কাজ করে এখন। দিনে গড়ে ৯-১২ ঘন্টা, যেখানে ঐতিহাসিকভাবে মানুষের কাজের পরিমান ছিল দিনে গড়ে ৩.৫-৫.৫ ঘন্টা।
৭)ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিঃ আমাদের জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ, প্রায় ৭০% ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্ট এবং আনুমানিক ৩৫-৮৫% ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্ট(ভিন্ন ভিন্ন গবেষনায় ভিন্ন ভিন্ন ফাইন্ডিংস এসেছে প্যারামিটার এবং স্যাম্পল আলাদা হবার কারনে)। ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সি আমাদেরকে বিষণ্ণ করে, কর্মক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তি নষ্ট করে, আমাদের প্রজননক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। পক্ষান্তরে, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি, ফোকাসিং পাওয়ার এবং বুদ্ধিমত্তাকে দুর্বল করে দেয়, দুর্বল করে হৃদপিন্ড, হাড় ও ফুসফুসকেও। বিশ্বব্যাপী এংজাইটি-প্যানিক ডিজর্ডারের অন্যতম শক্তিশালী কো ফ্যাক্টর হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। আমাদের এনার্জি কয়েন এটিপি, লার্নিং নিউরোট্রান্সমিটার NMDA এবং BDNF উৎপাদনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
৮)সেলুলার লেভেল ভিটামিন সি ডেফিসিয়েন্সিঃ এতে অবাক হওয়ার কোন কারনই নাই যে আমাদের ওভারস্ট্রেসড, ওভারওয়ার্কড পপুলেশন যারা আসলে সারাবছরই দুষন আর ইনফ্ল্যামেশনের ভেতর থাকে, তারা স্বাভাবিকভাবেই কোষে ভিটামিন সি'র অভাবে ভুগবে। ভিটামিন সি সমস্ত প্রানীর স্ট্রেস রেস্পন্স মেকানিজমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং ডোপামিন থেকে সেরোটোনিন উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটা অবিচ্ছেদ্য কোফ্যাক্টর। আপনি ভিটামিন সি ডেফিসিয়েন্ট মানে আপনার ইচ্ছাশক্তি বা কাজের উদ্দীপনা হয়তো থাকবে কিন্তু স্বাভাবিক প্রশান্তি ও মাইন্ডফুলনেস থাকবে না। আমাদের ব্রেইন-হার্ট-এড্রেনাল কর্টেক্স আর চোখে সারা শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি কনসেন্ট্রেশান থাকে। ভিটামিন সি ব্রেইনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ যে স্ট্রেসে পড়লে আমাদের শরীর সব জায়গা থেকে ভিটামিন সি খরচ করে কিন্তু ব্রেইনের ভিটামিন সি ধরে রাখে।
আমাদের রক্তনালী যে কোলাজেন দিয়ে তৈরি তাও গঠন করতে ভিটামিন সি লাগে, আমাদের নার্ভ সেলের মায়োলিন শিথ ফরমেশন ঠিক রাখতেও ভিটামিন সি লাগে।
মেন্টাল হেলথের ওপর নিউট্রিয়েন্টের ভুমিকা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লেকচার দিলেও শেষ করা যাবে না।
আমরা আত্মহত্যা, ডিপ্রেশন, এংজাইটি ডিজর্ডারের বাহ্যিক কারন খুজে মরি, কিন্তু অনেক সময়েই শরীরের ভেতরে বসে থাকে আমাদের আযরাঈল, নিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সি।
- Muhammad Sajal