তারপরেও বিবাহের পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনের পর যেসব জিনিসকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে, সেখানে আখলাকের কথা এসেছে। যেমন এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের যদি পছন্দ হয়, তাহলে তার সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করো। অন্যথা জমিনে বড় বিপদ দেখা দেবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। ( সুনানে তিরমিযি)
দেখুন এই হাদিসে আখলাক দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও সেটাকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ যেকোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এবং বিশেষভাবে দাম্পত্য জীবনে আখলাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর উপরই সম্পর্কের অনেক কিছু নির্ভর করে। দাম্পত্য সম্পর্কের শান্তি, স্বাদ, স্থায়িত্ব ইত্যাদি আখলাকের মাধ্যমেই গড়ে উঠে, সৌন্দর্য আর অঢেল সম্পদের মাধ্যমে নয়।
আবার আখলাক বা চরিত্রের বিষয়টিও একটু বুঝা দরকার। আমরা চরিত্র ভাল বলতে বর্তমানে এমনটা বুঝি যে, ছেলেটার কোন মেয়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক নেই, নেশাপানি করে না। আবার মেয়ের ক্ষেত্রে বুঝি, তার কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই, অশ্লিল ও বেপর্দা চলা ফেরা করে না। ব্যস এতটুকুই। কিন্তু আখলাক কেবল এতটুকুর ভিতর সীমাবদ্ধ না।
মানুষটির ভিতর রাগের মাত্রা ও ধরণ কেমন, তার মুখের ভাষা কেমন, তার আচরণ কতটা ভদ্রতাসূচক ও সম্মানজনক, আত্মীয়তা ও মানুষের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার আচরণ কতটা সম্পর্কমুখী, জীবনের বিচিত্র পরিস্থিতিগুলোতে তার ভূমিকা বা অবস্থান কতটা ইতিবাচক এসবও আখলাকের অন্তর্ভূক্ত।
আবার দ্বীনদারিতাও কেবল নামাজ রোজা, দাড়ি, টুপি, বোরকা, নিকাবের এসবের মাঝে সীমাবদ্ধ না। এগুলো দ্বীনদারিতার অন্যতম একটা স্টেইজ। তবে ব্যক্তির চিন্তাচেতনা, চরিত্র, আচার ব্যবহারের সবকিছুই দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত।
ফলে পাত্রপাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যখন দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে, তখন দ্বীনদারিতার অংশ হিসেবে আখলাক ও চিন্তাচেতনাকেও গুরুত্বের সাথে নিতে বলা হয়েছে। বিশেষত যখন দ্বীনদারিতার কথা উল্লেখের পরও বিশেষভাবে আখলাকের কথা কিছু বর্ণনায় এসেছে, তখন বুঝতে হবে এর বিশেষ গুরুত্ব আছে।
এজন্য নিজেকে একজন উত্তম পাত্রপাত্রী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং নিজের জন্য ভাল পাত্রপাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক দ্বীনদারিতার পাশাপাশি আখলাক বা চরিত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া জরুরী। কারণ কেবল বাহ্যিক দ্বীনদারিতা সাংসারিক জীবনে সুখ আনতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। আখলাকের দ্বীনদারিতাই এই জীবনে শান্তি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে।
- ইফতেখার সিফাত