Friday, November 10, 2023

পুরুষ কই

১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। সেই উপলক্ষ্যে একটি কোম্পানির শুধুমাত্র পুরুষ কর্মী, অফিসারদের কাছে এই ফরমটা পাঠানো হয়েছে।

প্রশ্নগুলোর ধরন খেয়াল করে দেখুন।

প্রথম প্রশ্ন : How would you redefine masculinity in 2023 in terms of activities that are not traditionally practiced by men?

এখানে পুরুষত্ব বা ম্যাসকিউলিনিটিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে বলা হচ্ছে। সেই সাথে এটাও বলে দেওয়া হচ্ছে সংজ্ঞায়নটা করতে হবে এমন সব কাজ দিয়ে যেগুলো সাধারণত পুরুষরা করে না! 

তার মানে তারা পুরুষত্বকে নারীসুলভ কর্মকান্ড দিয়ে সংজ্ঞায়িত করতে বলছে। কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন এমনভাবে করেছে যেন কর্মীরা উত্তরটা কর্তৃপক্ষের মনমতো দিতে বাধ্য হয়। ভিন্নমত জানানোর কোনো সুযোগই রাখা হয়নি।

দ্বিতীয় প্রশ্ন : Are there any hobbies or interests that you're passionate about that are not typically seen as masculine by societal standards?

আপনার এমন কোনো শখ বা আগ্রহের জিনিস আছে কিনা যা সামাজিকভাবে ম্যাসকিউলিন ধরা হয় না?

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে এধরনের প্রশ্ন করার মানে কি? যা ম্যাসকিউলিন না, পুরষ সুলভ না সেই জিনিসকে হাইলাইট করতে এত মরিয়া কেন কর্তৃপক্ষ? স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এখানে মেয়েলি পুরুষদের প্রোমোট করা হচ্ছে। এবং ম্যাসকিউলিন পুরুষদের নিজেদের ব্যাপারে কিছু বলার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না।

তৃতীয় প্রশ্ন : If we were to launch a campaign to redefine masculinity in 2023, what tagline would you use to express your perspective?
For example, "I am [Your Name] & I love [Non-Traditional Masculine Interest]" or "I am [Your Name] & I stand against [Toxic Masculine Interest]"

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষ্যে একটা স্লোগান বা ট্যাগলাইন লিখতে বলা হয়েছে। সাথে দুটো উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে কেমন ট্যাগলাইন দিতে হবে। 

উদাহরণ ১ :
I am [Your Name] & I love [Non-Traditional Masculine Interest]
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের ট্যাগলাইন বা স্লোগান কেন পুরুষ বিরোধী হবে? 

উদাহরণ ২ :
I am [Your Name] & I stand against [Toxic Masculine Interest]"
একটা দিবসের ট্যাগলাইনে কেন পজেটিভ কিছু না লিখে জোরপূর্বক নেতিবাচক জিনিস লিখতে হবে। তাও আবার যে পুরুষদের নিয়েই দিবস, সেই পুরুষদের বিরুদ্ধেই! 

পশ্চিমারা পয়সা খরচ করে পুরুষদেরকে মেয়েলি বানানোর মিশনে নেমেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা সিস্টেমেটিকভাবে পুরুষদেরকে খর্ব এবং দুর্বল করার পায়তারা করছে। পুরুষরা দুর্বল হয়ে গেলে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য পুরুষদেরকে মেয়েলি করাটা খুবই ধূর্ত একটা কৌশল। পুরুষত্ববিহীন মেয়েলি পুরুষরা কোনো বিপ্লবে যাবে না, যুদ্ধ করবে না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না। তারা হবে নরম, আবেগপ্রবণ। তাদেরকে দমিয়ে রাখা সহজ হবে।

মেকআপ, মডেলিং, নারীবাদ, পতিতাবৃত্তি সহ নানা ধরনের জাগতিক চাকচিক্যময় মূলা দেখিয়ে নারীকে বিপ্লব, যুদ্ধ, প্রতিবাদ থেকে দূরে রাখা তাদের কাছে কোনো ব্যাপার না। কিন্তু ক্ষমতাশালী, জালিমদের জন্য পুরুষ আমজনতা হলো হুমকিস্বরূপ। তাই পুরুষকে দমিয়ে রাখা গেলেই তারা ৮০% সফল। আর তারা ঠিক সেটাই করছে। 
.
এখানে যে কোম্পানির ফরম দিয়েছি সেটা বাংলাদেশি কোম্পানি, ইনভেস্টর বিদেশি।

Saturday, November 4, 2023

পুতুল নয়, মানুষ

কন্যাকে আমি পুতুল পুতুল করে আজ অবধি ট্রিট করিনি। আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লাহ তাওফীক দিয়েছেন ওকে সম্পূর্ণ একটা মানুষ, একজন আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবেই দেখতে পারার।

সেই প্রসেসের অংশ হিসেবে নানা কিছুই করি। আজ একটা নিয়ে বলি।

আমরা মনে করি, বাচ্চা মানে একটা পুতুল। আমার খেলনা। এর কোনো ব্যক্তিত্ব নাই, লজ্জাশরম নাই। মতামত নাই। মানে কিছুই নাই। জাস্ট একটা এক-দেড় ফুটের শরীর আছে, যেটা আমার অধিকারে, আমার ইচ্ছার অধীনে।

যাবতীয় সমস্যার মূল এখানেই।

ডে-১ থেকে ওর ডায়াপার চেঞ্জ চারজন মানুষ করেছে (মাঝে একদিন পরিবারের অন্য এক নারী সদস্য আমি ঘুমে থাকাবস্থায় করেছিলেন, যেটার সম্ভাবনা আমি দেখিনি বলে মানা করা হয়নি। ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ। সেটাও খুব সম্ভবত ওর বয়স মাস দুয়েক হবার আগের গল্প)।
আমি, ওর বাবা, ওর নানী, ওর দাদী।

নানী-দাদী বেড়াতে আসলে করেছে (সেটাও অনেক আগের কথা। এখন সেটাও দিই না। আমিই চেঞ্জ করি, যে অবস্থায়ই থাকি)। নানীর কাছে গোসল করেছে।
এই ক’জন মানুষের বাইরে কারোর সামনে ও আজ অবধি আনড্রেসড হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ!

হাজার মানুষের সামনে জামাতে বমি/কিছু ফেললেও, আগে ক্লিন করে, বেডরুমে নিয়ে যাই জামা বদলাতে। গোসলের সময় বাথরুমে নিয়ে তারপর আনড্রেসড করি।

কত শুনেছি বা শুনি—ওর গরম লাগে, উদোম রাখো, রাখতে হয়, ব্লা ব্লা! কন্যার বাবা আর আমি এই ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকি। লাগুক গরম, আমাদের আপত্তি নেই!

আমারও গরম লাগে। গরম লাগার জন্যে ফ্যান আছে। ওটুকু আমি দিতে পারব। আমারও গরমে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে চামড়াসুদ্ধ তুলে ফেলি, বাতাস লাগুক। করি না তো! অভ্যেস, উচিত—ওসব ব্যাপার বিবেচনায় রাখি।

ওর বেলায়ও তা-ই রাখি।

ওর প্রথম উপুড় হওয়ার ভিডিওটা কাউকে দেখাতে পারিনি, ডায়াপার চেঞ্জের সময় উপুড় হয়ে যাওয়ায়। 
ছবিতে ওর পেটু বেরিয়ে থাকলেও আমরা সেটা কাউকে দিই না। রাখি না নিজের কাছেও, নিজের ফোনেও।

এজ আ রেজাল্ট, কন্যা আলহামদুলিল্লাহ নিজেই কমফোর্টেবল ফিল করে না কারো সামনে আনড্রেসড হতে (সাত মাস পূর্ণ হয়নি এখনো)। কিংবা বেশিক্ষণ আনড্রেসড অবস্থায় বা ডায়াপার খোলা অবস্থায় থাকতে।

ওর জামা বদলানোর বা ডায়াপার বদলানোর আগে সবসময় জিজ্ঞেস করি বা বলি, ‘জামা বদলাই মা?’ ‘ডায়াপার চেঞ্জ করব আমরা এখন, ঠিক আছে?’
ধাঁই করে মন চাইল আর খুলেটুলে নিলাম, করি না এটা।

এতে আমারও অভ্যেস হচ্ছে। ওর যখন বুঝেশুনে সম্মতি দিতে পারার বয়স হবে, তখন নতুন করে অভ্যেস করতে হবে না আমার। ওরও ততদিনে জানা হয়ে যাবে, ওর কন্সেন্ট ছাড়া no one can ever touch her. 

ওর উদোম গায়ে চুমু আমিও দিই না। ওর প্রাইভেট পার্টে ডায়াপার চেঞ্জের সময় বাদে আমি নিজের হাতের স্পর্শই ভুলেও লাগতে দিই না (অনেকেই বেহুদাই এমন করে, আমি নিজেই বহুজনের কাছে জেনেছি)।

She must know, বেহুদাই জড়াজড়ি করাটাই আদর না। আদর একদমই স্পর্শ না করেও করা যায়।

ও এখন নিজেই কারো কোলে বসতে চায় না। কোলে চড়ে ঘুরতে রাজি। কিন্তু কোলে বসতে রাজি না। বসলে বিছানায় বসবে, অন্য কোথাও বসে থাকবে। কিন্তু কোলে বসবে না। চাপাচাপি, জাপটে ধরা—ইত্যাদি অতি মাখামাখি আদরে তার অনীহা সে ভালোভাবেই প্রকাশ করে। কারোও সাথে ততক্ষণই খুশিমনে খেলবে, যতক্ষণ নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখবে।
না হলেই চিৎকার। 

মা হিসেবে আমি যে খুব নিশ্চিন্ত হয়ে যাই এতে, তা না।
আমার নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি, পরিচিত/নিকটজনদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলিগুলো আমায় নিশ্চিন্ত হতে দেয় না।

আমি এই ‘অন্যদের সামনে আনড্রেস না করা’-টা ওর সেফটি মেজার হিসেবে প্র‍্যাক্টিস করছি না। সেফটি মেজার হিসেবে কী কী প্র‍্যাক্টিস করি বা করা উচিত, সেসব নিয়ে কথা নাহয় অন্য সময় বলব। হ্যাঁ, কানেক্টেড অবশ্যই। কিছুটা সেফটি এনশিওর অবশ্যই করে। 

কিন্তু, এই ব্যাপারটা প্র‍্যাক্টিস করছি মূলত ‘to respect her privacy’.

ওর মতামত দেওয়ার বা দিতে পারার বয়স হয়নি।
আর হয়নি বলেই দায়িত্বটা এখন আমাদের দু’জনের। ওর প্রাইভেসির দায়িত্বটুকু ওর বাবা-মায়ের, যতদিন না ও নিজে সেটা রক্ষা করতে শেখে।

That's what we believe! 

প্রাইভেসি বস্তুটা আদতে অনেক বিস্তৃত। সেসবের আলাপ নাহয় অন্য কোনোদিন!
_____________________
|| পুতুল নয়, মানুষ ||
তানিয়া নওশিন ফারুকী

#রৌদ্রময়ী

একই কথা ছোট্ট ট্রেনিংয়ে থাকা বীর পুরুষের জন্যও! মানে ছেলে বাবু