Saturday, June 29, 2024

বিয়ে নিয়ে কথা

জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিয়ে প্রতি রাতের ৩০ মিনিটের জন্য না। বাকি ২৩ ঘন্টা ৩০ মিনিটের কথাটাও মাথায় রাখা উচিত। নয়তো জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে।

বিয়ে কেন করে সেটা না জেনেই অনেকে বিয়ে করছে। কেউ বিয়ে করছে নিজের বিলাসী শখ পূরণ করতে। কেউ বিয়ে করছে সামাজিক স্ট্যাটাস তৈরি করতে। কেউ বিয়ে করছে আবেগে। কেউ বিয়ে করছে খুশিতে। কেউ বিয়ে করছে ঠ্যালায় পড়ে। কেউ বিয়ে করছে ট্রেন্ডি হতে।

নিজেকে মূল্যায়ন না করে যার-তার সাথে ঘর বাঁধার মাশুল চড়া মূল্যে দিতে হয় এক সময়।

বিয়ে একটা প্রয়োজনীয়তা। প্রথম প্রয়োজন বৈধ উপায়ে যৌ*ন চাহিদা পূরণ করা। এরপর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাওয়া। একজন সোল মেট পাওয়া।

মানসিকতা না মিললে, চিন্তা-চেতনার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকলে, জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক না হলে গলার কাঁটা নিয়ে সারাটা জীবন পার করতে হয়। যারা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন, তারা একসময় বিচ্ছেদের মতো জীবন অচল করে দেওয়া সিদ্ধান্তের পথে পা বাড়ান।

কেউ কারো মতো হুবুহু হতে পারবে না। এ কথা যেমন সত্য। আবার একে অপরের হৃদয়টা বুঝতে না পারলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব যে সৃষ্টি হবে, সেটাও কিন্তু সত্য। তাই মাথার ওপরের পাখাটা ধীরে চলবে নাকি দ্রুত গতিতে, রাতের খাবার কি দেরি করে খাবে নাকি আগেভাগে, খাবারের ঝাল কিংবা লবন কমবেশি করার ব্যাপারে একে অপরকে স্যাক্রিফাইস করতেই পারে। তবে তার মানে এই নয় যে দুজন মানুষ আলাদা দুই জগতের বাসিন্দা। দুজনের মৌলিক চাওয়া-পাওয়া একেবারেই ভিন্ন হবে।

চোখের ভালো লাগার একটা বিষয়ও কিন্তু আছে। এটা মৌলিক চাহিদা। সঙ্গীকে যদি ভালো নাই লাগে, তখন বিয়েটা অর্থহীন হয়ে যায়। কাঁধের ওপর স্রেফ 'বিবাহিত' তকমাটাই থাকে; সঙ্গীর হাতটা পাওয়া যায় না।

অথচ কান্না করার জন্য সঙ্গীর কাঁধে মাথা রাখাটা প্রাপ্য অধিকার। বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে সকল দুঃখগুলো এক নিমিষেই পানি করে ফেলার জন্য কোনো অনুমতি বা পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করতে যেন না হয়, সেটার নিশ্চয়তা থাকতে হয়। একে অপরকে ঠিক সেভাবেই বুঝবে, যেমনটা তারা নিজেকে বুঝে।

বিয়ের আগে কারো মনের ভেতরে গিয়ে তো আর এসব যাচাই করা যায় না। তাহলে উপায় কি? সংসার জীবন তো তাহলে আর হবে না।

না, ব্যাপারটা সেরকম না।

ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়া না। ভালোবাসলে ত্যাগও করতে হয়। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার উদাহরণ হলো, জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর সন্তুষ্টির জন্য নিজের পছন্দকে বিসর্জন দেওয়া। তবে তার মানে এই নয় যে, অন্যায়, ভুল ও অযৌক্তিক আবদারগুলোকেও প্রশ্রয় দিতে হবে।

দু'জনের চাওয়া-পাওয়ার মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় করে নিতে হবে। আলোচনায় বসে এসব নিয়ে চুক্তি করবে? উঁহু। তা না। যা হবে নিঃশব্দে। দুজনের ভেতরে আরো দুটো সত্তা আছে। কথা হবে ওই দুটো সত্তার মাঝে। এর নাম নীরব ভালোবাসা। তারা সংসার করছে। দৈনন্দিন জীবনে আট/দশটা দম্পতি যা করে তারাও তাই করছে। তবে দুজনের ভেতরেই নীরব প্রচেষ্টা চলছে–কীভাবে সঙ্গী/সঙ্গিনীকে সুখি, সন্তুষ্ট রাখা যায়। সে কি ভালোবাসে, তার পছন্দ-অপছন্দ, সঙ্গী/সঙ্গীনির কাছে তার চাওয়াটা কি ইত্যাদি।

ভালোবাসা দেওয়ার অনেকগুলো ধরণ। কিছু ধরণের ভালোবাসা চেয়ে নিতেই মজা। 'সে শুধুই আমার'-এর অধিকার খাটানোর একটা তৃপ্তি কাজ করে। আবার কিছু ধরণের ভালোবাসা চেয়ে নেওয়ার মধ্যে তৃপ্তি নেই। মনে চায় সে নিজে থেকে আমার চাওয়াটা বুঝে নিক।

দু'জনের বোঝাপড়াটা এমন হবে যে–কোনটা রাগ আর কোনটা অভিমান, কোনটা মন খারাপ আর কোনটা মনের কষ্ট; মুখে না বললেও অপরজন বুঝে নেবে।

এটা দীর্ঘ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে আয়ত্ত করতে হয়। ভালোবাসার সংসার চর্চা করার বিষয়। এটা কোনো প্রতিযোগিতা না। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতিযোগী না; বরং দুই দেহ এক হৃদয়।


করিম শাওন




Thursday, June 20, 2024

কাবিন ব্যবসায়ী


এক ভদ্রলোক বললেন আমি একটা দরকারি কাজেই ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। ম্যানেজার প্রবলেমটা শুনে বললেন, এক কাজ করুন একটা অ্যাপ্লিকেশন লিখে আজই জমা দিন। আশাকরি দু একদিনের মধ্যেই আপনার প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে। ম্যানেজারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আমি তখন অ্যাপ্লিকেশনটা লিখছি। কানে এলো,

"দরকার কি! এই বয়সে জেল খাটতে পারব না। সবই তো জানো, আগের মতো সেই দিন কাল আর নেই।" 

কথাটা কানে আসতেই পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা আর এক বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলছেন। কথাটা শুনে অপর ভদ্রমহিলা তখন বললেন,

-আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। বেলা এগারোটা পর্যন্ত কেউ ঘুমোয়? তা তুমি কিছু বলো না? 

-প্রথম প্রথম বলতাম, দেখলাম তাতে অশান্তি বাড়ে।

-তা অতো বেলায় ঘুম থেকে উঠে কাজ কর্ম কিছু তো করে!

কথাটা শুনে ভদ্রমহিলা হাসলেন। তারপর বললেন,

-কাজ করে তো! মোবাইল নিয়ে ভিডিও বানায়, রিল মিল কি আজকাল হয়েছে ওসব বানায়। তার ওপর নিজের রূপ চর্চা, সাজগোজ, এগুলোই তো কাজ। এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই।

-রান্না টান্না? তুমিই করো?

-ওটা আবার কাজ নাকি? ছেলে একদিন বৌমাকে বলল, মাকে তুমি একটু হেল্প করতে পারো তো। মুখের ওপর বলল, আমি রান্না করব না। আমি রাঁধুনি না তোমার মায়ের হেল্পার? ছেলে বলল, তাহলে মা-ই বা রান্না করবে কেন? বৌমা মুখের ওপর বলে দিল, যার যেটা যোগ্যতা সে সেটাই করবে। তারপর সে কি অশান্তি। আমাকে মেজাজ দেখিয়ে বলল, আপনি আমাকে মেন্টালি টর্চার করছেন। পথের ভিখিরি করে ছেড়ে দেব। পাশের বাড়িতে দেখেছেন তো, কি অবস্থা হয়েছে? আমি সারাদিন ভয়ে থাকি। তুমি বলো তো ছেলের বিয়ে দিয়ে কি ভুল করেছি? নাকি ভয়ে থাকব বলে? আগে আমার এত রোগ টোগ ছিল না। সুগার, প্রেসার সব কিছুতে আক্রান্ত। আতঙ্কে থাকি সব সময়।  

অ্যাপ্লিকেশন লিখতে লিখতে কলম থেমে যাচ্ছিল আমার। ভদ্রমহিলা কথা গুলো যে একদম সত্যি বলছেন, সে কথা বুঝতে অসুবিধা রইল না। আমার নিজের চোখে দেখা এমন দু তিনটে পরিবারকে দেখেছি, ছেলের বিয়ের দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিয়ের সাত মাসের মাথায় ডিভোর্স। মোটা অঙ্কের দাবী করে টাকা গুছিয়েই শুধু নেয়নি, মিথ্যে ফোর নাইন্টি এইটের ফাঁদে ফেলে জেল জরিমানা হয়েছে বয়স্ক শ্বশুর শাশুড়ির। আবার এমন বৌমাকেও দেখেছি, সকাল এগারোটায় ঘুম থেকে ওঠে, রিল বানায়, আর শাশুড়িকে গাধার মতো খাটিয়ে তার ঘাড়ে বসে খায়। অ্যাপ্লিকেশন লিখতে লিখতে ভাবছি তখন, কি দিন কাল এলো সত্যি! ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে আরো একবার ওনাকে দেখলাম। দেখেই মনে হল, অমায়িক শান্ত স্বভাবের মানুষ। অথচ তাঁর কপালেই এমন?

সে যাইহোক, আমি অ্যাপ্লিকেশনটা লিখে ম্যানেজারের রুমে ঢুকলাম। ম্যানেজারের অ্যাপ্লিকেশনটা নিয়ে বললেন, আপনি বাইরে অপেক্ষা করুন। আমি মিনিট দশেকের মধ্যে আপনাকে ডেকে নিচ্ছি।

ম্যানেজারের কথা মতো যথারীতি বাইরে এসে অপেক্ষা করতেই হলো। বাইরে বেরিয়ে দেখি, ওই দুই ভদ্রমহিলা তখনো নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। অপর ওই ভদ্রমহিলা তখন এই ভদ্রমহিলাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন,

-কি আর করবে বলো, সব কিছুই কপাল। কার মনে কি আছে, কি করে বুঝবে বলো তো। আজকাল অনেক মেয়েই বিয়ের পর ইচ্ছা করে ডিভোর্স নিয়ে এক রকমের ব্যবসা খুলে ফেলেছে। মান সম্মান নষ্ট করে দিয়ে ছেলের বাড়ির পরিবারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যাকগে, মণিকা দি , বড় বৌ খারাপ হয়েছে, কি আর করবে বলো, ছোটো ছেলের বিয়েটা অন্তত দেখে শুনে দিও। এর মতো খারাপ যেন না হয়।

ভদ্রমহিলা বললেন, 

-দিতে তো চাইছি, ছোটো ছেলে আর বিয়ে করতেই রাজী হচ্ছে না। আমাকে বলে দিল, এই বেশ ভালো আছি। চারিদিকে যা দেখছি, তাতে আমি বিয়ে করে ওই ফাঁদে পা দিচ্ছি না। এই বুড়ো বয়সে আমার বাবা মা মিথ্যে কেসের আসামী হয়ে উঠবে, আর আমি চোখে দেখেও কিছু করতে পারব না, এর থেকে বড়ো যন্ত্রণার আর কি হতে পারে‌। মা তুমি আমাকে আর বিয়ে করার জন্য চাপ দিও না। 

ভদ্রমহিলার ছেলের কথা গুলো শুনে আমি তাই ভাবছিলাম, এ কথা গুলো একেবারেই উড়িয়ে দেবার নয়। আমার পরিচিত এক ভাই, সেদিন তাকে বিয়ের কথা বলতেই, সেম কথা গুলো ও আমাকে শোনালো। আজকাল বহু ছেলেই দেখছি বিয়ে করতেই চাইছে না। এমনটা যদি চলতে থাকে, এ তো আগামী দিনের জন্য এ এক অশনি সংকেত। বিয়ের মতো এক পবিত্র সামাজিক বন্ধন কলুষিত হয়ে উঠছে কিছু নোংরা মানসিকতার মানুষের জন্য, যারা ডিভোর্সটাকে হাতিয়ার করে মোটা টাকা ইনকামের ফায়দা তুলছে। সেই সঙ্গে আইনের গেরোয় পড়ে জেলের আসামি সাজতে হচ্ছে ছেলেটিকে,ও তার পরিবারকে। এবার বোধহয় ভাববার সময় এসেছে। আইনের একপাক্ষিক বৈষম্য আর নয়, আইন বোধহয় সবার জন্য সমান হওয়া দরকার। ফোর নাইন্টি এইট শুধু নারীর জন্য কেন, পুরুষদেরও থাকুক। সত্য মিথ্যা যাচাই হোক। প্রকৃত দোষী শাস্তি পাক, সে পুরুষ হোক বা নারী। আইনের ফা়ঁদটা কারো যেন হাতিয়ার না হয় অন্যকে জব্দ করার জন্য, অন্তত যারা মিথ্যে কেস সাজিয়ে ডিভোর্সের গল্প তৈরি করছে, তাদের টাকা আদায়ের ধান্দা বন্ধ হোক।


এদের কিভাবে আগে থেকেই চিনবেন সেটার উপর জানতে চান কি?