Friday, June 24, 2022

জীবনের প্রয়োজনে কুরআন

 

জীবনের প্রয়োজনে কুরআন: ১

(কুরআনি মূলনীতি)

------

উলুহিয়ত রুবুবিয়ত সম্পর্কিত মূলনীতি

উলুহিয়ত মানে আল্লাহ ইলাহ বা উপাস্য, এ সম্পর্কিত আয়াত। রুবুবিয়ত মানে, আল্লাহ রব বা প্রতিপালক, এ সম্পর্কিত আয়াত

১: আল্লাহ অজাতক

আল্লাহ তাআলা কাউকে জন্ম দেননি। তিনিও কারো থেকে জন্ম নেননি। তিনি কারো সন্তান নন। তিনি কারো মাতাপিতাও নন

وَ مَا یَنْۢبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًا

অথচ এটা দয়াময়ের শান নয় যে, তার সন্তান থাকবে (মারয়াম: ৯২)

ۣ وَلَمْ یَتَّخِذْ وَلَدًا

যিনি কোন পুত্র গ্রহণ করেননি (ফুরকান: )

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ.

তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন (ইখলাস: )

. আল্লাহ একক। অদ্বিতীয়। অনুপম

আল্লাহ তাআলা একক ইলাহ। তার সাথে দ্বিতীয় কোনও উপাস্য নেই

اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ سُبْحٰنَهٗۤ اَنْ یَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌ ۘ.

আল্লাহ তো একই মাবুদ। তাঁর কোনও পুত্র থাকবে-এর থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র (নিসা: ১৭১)

وَ اِلٰـهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ.

তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ, তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু (বাকারা: ১৬৩)

فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَآ أِلٰهَ إِلَّا اللهُ.

সুতরাং (হে রাসূল!) নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই (মুহাম্মাদ: ১৯)

قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ.

বলে দাও, কথা হলÑ আল্লাহ সব দিক থেকে এক (ইখলাস: )

বসিরা (অন্তর্দৃষ্টি): তাওহিদের বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি। দলিলে আকলি

মানবীয় স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিই বলে, স্রষ্টা এক একক হওয়াই কাম্য। একাধিক ইলাহের অস্তিত্ব থাকলে, একজন আরেকজনের উপর প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা চালাতই। এটাই তাওহিদের প্রধানতম বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি। আল্লাহ তাআলা সব ধরণের শিরক থেকে মুক্ত

قُلْ لَّوْ کَانَ مَعَهٗۤ اٰلِـهَۃٌ کَمَا یَقُوْلُوْنَ اِذًا لَّابْتَغَوْا اِلٰی ذِی الْعَرْشِ سَبِیْلًا

বলে দাও, আল্লাহর সঙ্গে যদি আরও খোদা থাকত, তবে তারা আরশ-অধিপতি (প্রকৃত খোদা)-এর উপর প্রভাব বিস্তারের কোন পথ খুঁজে নিত (বনি ইসরাইল: ৪২)

لَوْ کَانَ فِیْهِمَاۤ اٰلِهَۃٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَا

যদি আসমান যমীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং তারা যা বলছে, আরশের মালিক আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র (আম্বিয়া: ২২)

 

 

 

مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا کَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلَهٍۭ بِمَا خَلَقَ وَ لَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰی بَعْضٍ ؕ سُبْحٰنَ اللهِ عَمَّا یَصِفُوْنَ

আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সঙ্গে নেই অন্য কোন মাবুদ। সে রকম হলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ মাখলুক নিয়ে পৃথক হয়ে যেত, তারপর তারা একে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা হতে আল্লাহ পবিত্র (মুমিনুন: ৯১)

. আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ। সমস্ত সৃষ্টি স্রষ্টার মুখাপেক্ষী। স্রষ্টা কারো মুখাপেক্ষী নন

اَللهُ الصَّمَدُ

 

আল্লাহই এমন যে, সকলে তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন (ইখলাস: )

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

এবং তার সমকক্ষ নয় কেউ (ইখলাস: )

. আল্লাহ অবিনশ^র। বিশ্বজগতে যা কিছু আছে, সবই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই চিরন্তন। চিরস্থায়ী

كُلُّ مَنْ عَلَیْهَا فَانٍ ﴿ۚۖ۲۶﴾ وَّ یَبْقٰی وَجْهُ رَبِّكَ ذُوالْجَلٰلِ وَ الْاِكْرَامِ.

ভূ-পৃষ্ঠে যা-কিছু আছে, সবই ধ্বংস হবে। বাকি থাকবে কেবল তোমার প্রতিপালকের গৌরবময়, মহানুভব সত্তা (রহমান: ২৬-২৭)

. আল্লাহ যাবতীয় লাভক্ষতির মালিক। উপকার, অপকারের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই হাতে

قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِیْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ

বল, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ইচ্ছা না করেন, আমি আমার নিজেরও কোন উপকার অপকার করার ক্ষমতা রাখি না (আরাফ: ১৮৮)

وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا کَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ ۚ وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ

আল্লাহ যদি তোমাকে কোনও কষ্ট দান করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা দূর করবে এবং তিনি যদি তোমার (ইউনুস: ১০৭)

وَ اِذَاۤ اَرَادَ اللهُ بِقَوْمٍ سُوْٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَهٗ ۚ وَمَا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّالٍ

আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর কোন বিপদ আনাার ইচ্ছা করেন, তখন তা রদ করা সম্ভব নয়। আর তিনি ছাড়া তাদের কোন রক্ষাকর্তা থাকতে পারে না (রাদ: ১১)

. আল্লাহ সবকিছুর কেন্দ্র। আল্লাহর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা ন্যস্ত। জগতের সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ

স্মরণ রেখ, সৃষ্টি আদেশ দান তাঁরই কাজ (আরাফ: ৫৪)

لِلّٰهِ الْأَمْرُ جَمِيْعًا

প্রকৃতপক্ষে এসব কিছুই আল্লাহর এখতিয়ারাধীন (রাদ: ৩১)

 

জীবনের প্রয়োজনে কুরআন:

(কুরআনি মূলনীতি)

উলুহিয়ত রুবুবিয়ত সম্পর্কিত মূলনীতি ()

হুকমুল্লাহ। আল্লাহ হুকুম। আল্লাহর বিধান। আল্লাহর শাসন। তাকদির বা বা শরীয়ত সম্পর্কিত হুকুম

: আল্লাহর হুকুম বা বিধান অকাট্য

اَللهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ

প্রতিটি আদেশ আল্লাহই দান করেন। এমন কেউ নেই যে, তার আদেশ রদ করতে পারে (রাদ ৪১)

. আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম বিধানদাতা। তিনি সর্বোত্তম হুকুমদাতা। তিনি মহান শরিয়ত প্রণেতা

وَهُوَ خَيْرُ الْحٰكِمِيْنَ

আর তিনিই শ্রেষ্ঠতম ফায়সালাকারী (আরাফ: ৮৭)

وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا

তাদের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফায়সালা দানকারী কে হতে পারে (মায়েদা: ৫০)?

. বিতর্কে, পরস্পর বিদাদ-বিসম্বাদে, ঝগড়াকলহে, মতানৈক্যে মুমিনের একমাত্র প্রত্যাবর্তনস্থল হল আল্লাহর বিধান রাসূলের আদর্শ

فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِیْ شَیْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَی اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْیَوْمِ الْاٰخِرِ ذٰلِکَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا

অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা আল্লাহ পরকালে সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়ে থাকলে সে বিষয়কে আল্লাহ রাসূলের উপর ন্যস্ত কর। এটাই উৎকৃষ্টতর পন্থা এবং এর পরিণামও সর্বাপেক্ষা শুভ (নিসা: ৫৯)

. আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত। আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য বিধান গ্রহণ করা অবৈধ

إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلّٰهِ

হুকুম আল্লাহ ছাড়া আর কারও চলে না (আনআম: ৫৭)

وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا

তিনি নিজ কর্তৃত্বের কাউকে শরীক করেন না (কাহফ: ২৬)

اَلَا لَهُ الْحُكْمُ

স্মরন রেখ, হুকুম কেবল তারই চলে (আনআম: ৬২)

. বিধান, বিচার, শাসন হবে কেবল আল্লাহর নাযিল করা বিধান দিয়ে। মানবরচিত বিধান দিয়ে নয়

فَاحْكُم بَيْنَهُمْ بِمَآ أَنْزَلَ اللهُ

সুতরাং তাদের মধ্যে সেই বিধান অনুসারেই বিচার কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন (মায়েদা: ৪৮)

. জেনেবুঝে সচেতন প্রয়াসে আল্লাহর হুকুমকে যে উপেক্ষা করবে, সে কাফের

বসিরা-ইবরতঃ আল্লাহর বিধানকে তুচ্ছ মনে করে, যুগের অনুপযোগী মনে করে, আল্লাহ বিধানের প্রতি অবজ্ঞা পোষণ করে, আল্লাহর বিধানের চেয়ে অন্য বিধানকে শ্রেষ্ঠ মনে, অন্য বিধান গ্রহণ করলে, নিঃসন্দেহে সে কাফের

وَمَنْ لَّمْ یَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْکٰفِرُوْنَ

যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না, তারা কাফির (মায়েদা: ৪৪)

. আল্লাহর বিধান তরককারী জালেম। ফাসেক

যারা শরীয়তের তুলনায় অন্য বিধানকে শ্রেষ্ঠ মনে করে না। অবেহলা, উদাসীনতার কারণে, অন্য বিধান গ্রহণ করে। তারা মূলত জালেম। ফাসেক। শরীয়ত ছেড়ে অন্য বিধান গ্রহণ করাটা কুফরি। তবে তারা কাফের নয়

وَمَنْ لَّمْ یَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ

যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালিম (মায়েদা: ৪৫)

وَمَنْ لَّمْ یَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ

যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা ফাসিক (মায়েদা: ৪৭)

. হক ছেড়ে দেয়ার পরিণতি ভয়াবহ

فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ ۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلٰلُ ۚۖ فَاَنّٰی تُصْرَفُوْنَ

হে মানুষ! তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের সত্যিকারের মালিক। সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? এতদসত্ত্বেও তোমাদেরকে উল্টো কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে (ইউনুস: ৩২)?

وَمَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَیَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَسَآءَتْ مَصِیْرًا

আর যে ব্যক্তি তার সামনে হিদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য কোনও পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেই পথেই ছেড়ে দেব, যা সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, যা অতি মন্দ ঠিকানা (নিসা: ১১৫)

.

.

লক্ষ্যণীয়:

বক্ষ্যমাণ লেখাটি কুরআনিয়াত সিরিজের প্রকাশিতব্য বইয়ের অংশ। বইটির কাজ শেষ হলে, প্রতিয়োগিতার আয়োজন করা হবে। বিষয়ভিত্তিক আয়াত মুখস্থ বলার প্রতিযোগিতা। আকর্ষণীয় পুরস্কার থাকবে। ইন শা আল্লাহ। আগ্রহবোধ করলে, তালিবে ইলমগণ প্রস্তুতি স্বরূপ এখন থেকে মুখস্থ করা শুরু করতে পারি

 

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment