❝সহজতম ইবাদত❞
লেখাঃ শাইখ Atik Ullah হাফিযাহুল্লাহ...
কিছু ইবাদত খুবই সহজ। আলাদা সময় লাগে না। শারীরিক শ্রম ব্যয় হয় না। এমনকি টাকাপয়সাও খরচ হয় না।
১. (الرضا) রেজার এবাদত। রেজা সন্তুষ্টি। পরিভাষায় এই ইবাদতকে ‘রেজা বিল কাজা’ বলা হয়। মানে, আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়েছেন, তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। রাব্বে কারিম আমার জন্য যে ফয়সালা করেছেন, তার প্রতি অনুগত থাকা। এই এবাদত ইসলামি আকিদার অংশও বটে। নবিগণ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই এবাদত করে গেছেন। তাদের সাহাবীদেরকে হাতেকলমে এই এবাদত শিখিয়ে গেছেন। ফিরিশতাগণও এই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই ইবাদত করেন।
সারাদিনে আমি যখনই সময় পাই মনে মনে বলার চেষ্টা করব: আমি আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট। সকাল-সন্ধ্যার দোয়াতেও এই ইবাদতের প্রসঙ্গ আছে। রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান ()-আমি আল্লাহকে সন্তুষ্টচিত্তে রব হিসেবে মেনে নিয়েছি। মনেপ্রাণে এই আকিদা ও এবাদতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারলে, জীবন ও জগতের অনেক কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা যাবে।
২. (جبر الخواطر) দুঃখীজনকে সুখি করা। দুঃখভারাক্রান্ত মনে সান্ত্বনার প্রলেপ দেয়া। হতাশাগ্রস্তকে আশার কথা বলা। অন্যের মনে হাসিআনন্দ সৃষ্টি করা। সারাদিনে আমরা চাইলে ঘরে-বাইরে অনেকবার এই এবাদত করতে পারি।
৩. (قضاء حوائج الناس) মানুষের হাজত পুরো করা। অভাবির অভাব দূর করতে সাহায্য করা। এজন্য সহজ পদ্ধতি হল, নিজের পরিচিত বা অপরিচিত, তবে নিশ্চিতভাবে জানা আছে যে, মানুষটা খুবই অভাবী। এমন কয়েকজনের নাম্বার সংগ্রহ করে রাখতে পারি। প্রতিদিন না পারলেও মাঝেমধ্যে কিছু কিছু হাদিয়া পাঠাতে পারি। একসাথে কয়েকটা এবাদত হয়ে গেল। গোপনে দান করা, হাদিয়া দেয়া, মানুষের সম্মান রক্ষা করা।
৪. (الكلمة الطيبة) উত্তম কথা বলা। অন্যের সাথে সুন্দর করে কথা বলা ‘সদকা’। মিষ্টি হেসে কথা বললে দ্বিগুণ সদকা। কেমন আছেন ভাই? দুটি সদকা হয়ে গেল। আপনাকে আমি আল্লাহর জন্য মহব্বত করি। তিনটি সদকা হল। ক. উত্তম কথা বলা, খ. মিষ্টি হেসে কথা বলা গ: মুমিন ভাইয়ের প্রতি মহব্বত প্রকাশের সুন্নাহ আদায়।
৫. (حسن الظن) সুধারণা। এই এবাদত দুইভাবে করা যায়।
ক. আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা। আল্লাহ তাআলা আমার জন্য যা ঠিক করেছেন, সেটাই আমার জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ তাআলা যা করেন, আমার ভালোর জন্যই করেন।
খ. বান্দার প্রতি সুধারণা। মুমিন ভাইয়ের প্রতি অহেতুক মন্দ ধারণা পোষণ না করা। বাহ্যিকভাবে খারাপ কিছু না দেখলে, অন্যের প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করা এবাদত।
৬. (زكاة العلم) ইলমের যাকাত প্রদান। একটা বিষয় আমার জানা আছে, কেউ আমার কাছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করল, আমি বিরক্ত না হয়ে যথাসম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
৭. (التفاؤل والأمل بالله) আল্লাহ তাআলার প্রতি সবসময় আশাবাদী থাকা। আমি আল্লাহ তাআলার প্রতি যেমন ধারণা পোষণ করব, আল্লাহ তাআলাও আমার প্রতি ঠিক তেমন আচরণ করবেন। চরম দুর্দিনে, কঠিন দুঃসময়েও রাব্বে কারিমের প্রতি পরম আশাবাদী থাকব।
৮. (ترك مالا يعنيك) অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজ, চিন্তা, আচরণ বর্জন করা। এটা ইসলামের মৌলিকতম সৌন্দর্য। বসে বসে অহেতুক আকাশকুসুম চিন্তা করে সময় নষ্ট করব না। বিনা প্রয়োজনে কথা বলব না। বিনা প্রয়োজনে কোনোদিকে তাকাবও না। আমার প্রতিটি আচরণ হবে মাপা।
৯. (التغافل) অন্যের দোষত্রুটি দেখেও না দেখার ভান করা। যদি শিরক-কুফর-হারাম হয়, সেটা ভিন্ন কথা। অন্যের দোষ দেখে সাথে সাথে সংশোধন করতে গেলে, হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ দাম্পত্যজীবনে। তাগাফুল মানে ইচ্ছাকৃতভাবে বেখবর থাকা। এককথায়: সচেতন অচেতনতা। তাগাফুল মানে অন্যের সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল থাকা নয়, অন্যের সম্পর্কে পরিপূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকা সত্ত্বেও, ঝামেলা এড়াতে ‘না জানার’ ভান করে থাকা।
১০. (الإمهال والصبر) ধীরস্থিরতা ও সবর করা। দোষত্রুটি দেখেই ঝাঁপিয়ে না পড়া। অন্যকে সংশোধনের সুযোগ, অবকাশ দেয়া। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা। উপযুক্ত পন্থায় নসিহত-উপদেশ দিয়ে ধীরেসুস্থে অগ্রসর হওয়া।
১১. (وقف الشائعات) গুজব-রটনা নিজের কাছেই থামিয়ে দেয়া। আমার কানে কারো সম্পর্কে গুজব এসে পৌঁছলে, আমি সেটাকে দুকান হতে দিবো না। আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব। আমার কাছ থেকে আর ছড়াতে দিবো না।
এসব ইবাদতের জন্য দরকার একটু সচেতন প্রয়াস। বেশি কিছু নয়। চেষ্টা করলে প্রতিদিন আমরা এসব এবাদত অসংখ্যবার করতে পারি। রাব্বে কারিম তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment