Wednesday, September 20, 2023

প্রথম দেখা

প্রথম দেখা
বিয়ে উপলক্ষ্যে পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখা সুন্নত। এই দেখাদেখি বিয়ে করার চেয়ে কম আকর্ষণীয় আর উত্তেজনাকর নয়। কয়েকজনের স্মৃতি তোলা রইল,

আঁধারকন্যা
১ঃ পাত্রপক্ষ এসেছে। আমাকে সংবাদ দেয়া হল। লজ্জায় পা চলছিল না। আব্বু আমাকে ধরে নিয়ে বসালেন। চোখ তুলে চাইতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টা করে চোখ তুলে তাকালাম। দেখার পর মন ভেঙে গেল। আর সেখানে বসে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। পছন্দ যেহেতু হয়নি, বিয়ে তো হবে না। শুধু শুধু বসে থেকে কী লাভ। সরাসরি পছন্দ হয়নি বলতেও সংকোচ হচ্ছিল। একজন মানুষ আমাদের বাড়ি থেকে কষ্ট নিয়ে ফিরে যাক, সেটা চাইছিলাম না। মাথায় একটা বুদ্ধি এল। কথা শুরু হওয়ার আগেই আব্বুকে বলে উঠে চলে এলাম। এসে মেইনসুইস বন্ধ করে দিলাম। অন্যবাড়িতে আলো শুধু আমাদের বাড়ি অন্ধকার। পাত্রপক্ষ বেশ বুদ্ধিমান। অন্ধকারেই আব্বুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আর যোগাযোগ করেননি।

চোরাদৃষ্টি
২: খুবই লজ্জা হচ্ছিল। আব্বু আর ভাইয়া সেখানে বসা ছিলেন। আম্মু আমার হাতে কফি দিয়ে পাঠালেন। কামরায় প্রবেশ করেই আমি রীতিমতো বিমোহিত। এত সুন্দর মানুষও হয়। লাজলজ্জা ভুলে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমাকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে আব্বু আর ভাইয়া বিব্রত বোধ করছিলেন। ভাইয়া কয়েকবার ইশারা দিলেন। আমি খেয়াল করিনি। যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম, যে কোনো মুহূর্তে চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে কফির ট্রেসহ হোঁচট খেয়ে পড়ার আশংকা ছিল। ভাইয়া দ্রুত উঠে এসে ট্রেটা হাতে নিয়ে টেবিলে রেখে আমাকে ভেতরে ফিরিয়ে এনে বকুনি দিলেন। ভাইয়ার বকুনি আমার কানে গেলে তো! কারণ আমার হৃদয়টা দরজার ওপাশে রেখে এসেছি যে। বিয়ের এতবছর পরও স্বামী সেদিনের ঘটনাটা নিয়ে আমার সাথে মস্করা করতে ছাড়েন না।

গোয়েন্দা জেরা
৩ঃ পাত্রী দেখতে গিয়েছি। একটু পর সদর্পে এসে আমার মুখোমুখি হয়ে বসলেন। যে সে বসা নয়, রীতিমতো পায়ের ওপর পা তুলে বসেছেন। বসেই কালবিলম্ব না করে জেরার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। পাত্রীর ড্যামকেয়ার ভাবভঙ্গি দেখে ভড়কে গেলাম। কত বেতন পাই, বাসাভাড়া কত লাগে, খরচের খাত কী কী, আরো নানা প্রশ্ন। কোনোরকমে গোয়েন্দা জেরাপর্ব শেষ করলাম। নিরাপদে বিদায় নিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

হাইহিল
৪ঃ আম্মু বারবার নিষেধ করেছেন: হাইহিল পরে পাত্রের সামনে যাস না। আমি বেঁটে। হাইহিল না পরলে খুবই খাটো দেখায়। আম্মুর নিষেধ ডিঙ্গিয়ে হাইহিল পরেই গেলাম। আসার সময় আম্মু জোর করে আমার হাতে চা-নাস্তার ট্রে ধরিয়ে দিলেন। উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপছিল। হাইহিল পরার অভ্যেস ছিল না। কামরায় প্রবেশ করার পর হিলের তলায় শাড়ি আটকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। ট্রের চা-নাস্তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। কামরার কয়েকজন উচ্চস্বরে হেসে উঠল। পাত্র সবার আগে উঠে এলেন। তাকে হাসতে দেখিনি। তবে সেদিনের ঘটনা নিয়ে বিয়ের পর থেকে সেই যে দুষ্টুমির হাসি শুরু করেছেন, আজো থামেনি। এখন পিনপিনে পাতলা চপ্পল পরলেও টিপ্পনী কাটতে ছাড়েন না: দেখো আবার না হোঁচট খেয়ে পড়ে যাও।

ললাটচুম্বন
৫ঃ সকাল থেকেই প্রচণ্ড উত্তেজনা। পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে জোহরের পর। খাবারের অগেই দেখাদেখি হবে। আব্বু পাত্রপক্ষকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ঘরে এনে বসালেন। আমি নাস্তার ট্রে হাতে কামরায় প্রবেশ করলাম। অভ্যেশবশত আব্বুর কপালে চুমু খেলাম। আব্বুর পাশেই পাত্র বসে ছিলেন। আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। লজ্জায় কোনো দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আব্বুর কপালে চুমু খাওয়ার পর পাশে বসা পাত্রকে ভাইয়া মনে করে তার কপালেও চুমু খেয়ে বসলাম। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম কী ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছি। লজ্জায় পারলে সেখানেই মরে যাই। একদৌড়ে ছুটে এসে আমার রূমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। বাসররাতে বর দুষ্টুহাসি দিয়ে বললেন, তোমাকে বিয়ে করার জন্যই তুমি ষড়যন্ত্র করে আমার কপালে.....। এত বছর পরও স্বামী সেদিনের ঘটনা বলে আমাকে রাগানোর চেষ্টা করেন।

মা শা আল্লাহ
৬ঃ বন্ধুর বোনের সাথে বিয়ের কথাবার্তা হয়েছে। রূয়তে শরয়ি বা প্রথম দেখার জন্য আমাকে বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হল। আগে কতবার এসেছি। আজকের আসা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাত্রীকে আগে কখনো দেখিনি। আমি সাক্ষাতের কামরায় বসে আছি। পাত্রীকে নিয়ে আসা হল। তাকে দেখেই আমার কী যে হল, বুঝতে পারলাম না। মুখ দিয়ে অজান্তে সুবহানাল্লাহ, মা শা আল্লাহ বেরিয়ে গেল। এমন অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে আমি ঘোরের জগতে চলে গিয়েছিলাম। মুখ দিয়ে ক্রমাগত ‘মা শা আল্লাহ’ বেরোচ্ছিল। আমার অভিব্যক্তিতে পাত্রী লজ্জা পেয়ে ছুটে পালিয়ে গেল। একটু পর তাকে আবার জোর করে ধরে আনা হল। তারও পাত্র দেখা উচিত। আমি তখনো চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে ‘মা শা আল্লাহ’ বলে যাচ্ছিলাম।

রাব্বে কারীম সবার জন্য উত্তম জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করে দিন। আমীন।

- শায়খ আতিক উল্লাহ্ হাফি.

No comments:

Post a Comment