Saturday, April 20, 2024

কবরে পুতে রাখা যাদু নষ্টে সংশ্লিষ্ট কবরের মাটি ব্যবহার করা প্রসঙ্গে

কবরে পুতে রাখা যাদু নষ্টে সংশ্লিষ্ট কবরের মাটি ব্যবহার করা প্রসঙ্গে...

[প্রসঙ্গটি রুকইয়াহ নিয়ে পড়াশুনা করেন এমন অনেকের কাছেই সিলি বা কমন লাগতে পারে। কিন্তু আজকে নতুন করে পুরাতন এক অভিজ্ঞতা হোলো। রুকইয়াহ প্র‍্যাক্টিশনার কিছু লোক আছেন যাদের কমন সেন্স এত আজগুবি লেভেলে যে, এদের সামনে বড় করে গাছ একে এরপর সেটার নীচে বড় বড় অক্ষরে গয়াকার গা ছ "গাছ" লিখে দিতে হয়। আর এভাবে লিখা না থাকলে গাছ কে মাছ ভেবে বসে থাকেন। এই লিখা তাদেরকে সমৃদ্ধ করতে উপকৃত করবে ইনশাআল্লাহ।]

যাদু নষ্টের ক্ষেত্রে মূল সুন্নাহ হচ্ছে যাদু তুলে ফেলা।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাদু তোলা সম্ভব না হওয়ায় রুকইয়াহ ও রুকইয়াহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাগুলো দ্বারা যাদুর প্রভাবকে শরীর থেকে নষ্ট করতে হয়। যেমন সঠিক উপায়ে হিজামা করা, সঠিক উপায়ে যাদুনষ্টের গোসল করা, বমি করা, পেট ক্লিয়ার করা, রুকইয়াহ করা, ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে উপায় ও উপাদান যত নিখুত হবে আল্লাহর সুন্নাহ অনুযায়ী রোগী সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় তত দ্রুত সুস্থ হবে। এরসাথে তাওয়াক্কুলের বিরোধীতা নেই। 

আল্লাহ নিজেই রোগ বানিয়েছেন এবং রোগের চিকিৎসায় সুস্থতার প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন।

রুকইয়াহর গোসলে বরইপাতা ব্যবহার করা তাবিয়ীদের আমল, সরাসরি রুকইয়াহর সুন্নাহ না।

অন্যদিকে রুকইয়াহর গোসলের পানির সাথে পরিচ্ছন্ন মাটি ব্যবহার করা সরাসরি সুন্নাহ।

يوسف بن محمد بن ثابت بن قيس بن شماس الأنصاري ، عن أبيه ، عن جده ، قال النبي (ص) : اكشف البأس رب الناس عن ثابت بن قيس بن شماس ، ثم أخذ ترابا من بطحان فجعله في قدح فصب عليه ماء ثم غسله به

সাবিত ইবনে কাইস তার বাবা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন, (তিনি অসুস্থ হওয়ার পর) রাসুল সা: তাকে এই বলে রুকইয়াহ করেন যে, "হে মানুষের রব! আপনি সাবিত ইবনে কায়িস থেকে কষ্ট দুরভীত করুন।

 অত:পর একটি পাত্রে " বাতহান" উপত্যকার মাটি ও পানি মিশ্রিত করেন। সেই পানি সাবিত ইবনে কাইসের শরিরে ঢেলে তাকে গোসল করিয়ে দেন। (তারিখুল কাবির- বুখারী, সুনানে আবু দাউদ)

সুনানে আবু দাউদের চিকিৎসা অধ্যায়ে এই হাদিসের বর্ননায় "তিনি মাটির সাথে পানি মিশিয়ে ফু দেন" অত:পর তা শরীরে ঢেলে গোসল করিয়ে দেন। -এই অংশটি অতিরিক্ত এসেছে।

💠 আলোচ্য হাদিসের অসংখ্য শিক্ষা থেকে রুকইয়াহর দুটো মূলনীতি বেরিয়ে আসে।

১। রুকইয়াহর গোসলের পানিতে মাটি মেশানো সুন্নাহ।

২। রাসুল সা: "বাতহান" উপত্যকার মাটি মিশিয়েছেন।

এর অর্থ হচ্ছে, একেক স্থানের মাটির একেক বিশেষত্বের কারনে তা চিকিৎসায় ফলপ্রসূ হতে পারে।

যেমন অন্য হাদিসে এসেছে রাসুল সা: ফোড়ার রুকইয়াহতে যখমের উপর রুকইয়াহ করতে করতে "মদিনার মাটি" ঘসছিলেন। আরেক হাদিসে যাদুর চিকিৎসা হিসেবে আয়শা রা: "একে অপরের সাথে সংযুক্ত এমন তিন কূপের পানি দিয়ে গোসল করে যাদু থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন।

" ফলে এটা সন্দেহাতীতভাবে বুঝা যায় যে, একেক স্থানের মাটি রুকইয়াহতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে একেক ভুমিকা রাখে। এটা শুধু মাটি না, মাটি পানি যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন অগ্নিপুজারীদের স্থানের মাটি থেকে মসজিদের মাটি বেশি বরকতময় হবে ইত্যাদি।

💠 বুঝলাম গোসলের পানিতে মাটি ব্যবহার করতে হবে। তাই বলে কবরে পুতে রাখা যাদু নষ্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কবরের মাটি ব্যবহার করবো কেন?

আসুন এই হাদিসটি দেখি-

لو كانَ شيءٌ سابقُ القدَرَ لسبقَتْهُ العينُ، و إذا اسْتُغْسِلْتُم فاغْسِلُوا

কোনো কিছু তাকদিরকে অতিক্রম করতে পারলে সেটা হতো বদনজর। সুতরাং যখন তোমাদেরকে নজরের জন্য গোসল করতে বলা হবে তখন গোসল করো। (জামিউস সগীর, সহিহ)

এই হাদিস দ্বারা রুকইয়াহর অনেকগুলো উসুলের মধ্যে একটি উসুল হচ্ছে, 

"শরিয়তসম্মত উপায়ে অসুস্থতাসৃষ্টিকারীর (যেমন নজরদানকারীর) স্পর্শ কে আক্রান্ত ব্যক্তির গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে নজর কাটানো।"

উপরের হাদিস দ্বারা রুকইয়াহতে এই "স্পর্শ প্রক্রিয়া" অযুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ফলে নজরদানকারীর অযুর পানি দিয়ে রোগীকে গোসল দিলে সেটা চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। কারন অযুর পানিতে অসুস্থতা সৃষ্টিকারীর স্পর্শ রয়েছে। কিন্তু যদি অযুর পানি না পাওয়া যায় তখন?

তখন আমরা উসুলের দিকে ফিরে যাই। আর উসুল হচ্ছে 

"নজরদানকারীর বা অসুস্থতা সৃষ্টিকারীর স্পর্শ"।

এইজন্য নজরদানকারীর অযুর পানি পাওয়া না গেলে নজরদানকারী স্পর্শ করেছে এমন বস্তু পাওয়া গেলেও সেটাকে রুকইয়াহর গোসলের পানিতে চুবিয়ে নজর কাটানোর গোসল করার পরামর্শ আরব রাকীরা দিয়ে থাকেন।

সারমর্মঃ

a. যেকোনো পরিচ্ছন্ন মাটিই রুকইয়াহর গোসলের পানিতে ব্যবহার করা/ মাটি দিয়ে মাসেহ করা বৈধ ও সুন্নাহ। আর যেকোনো কবরের মাটিই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র।

b. যেই কবরে যাদু পুতে রাখা সেই কবরের যাদু তুলতে না পারলে সেই কবরের উপরে থাকা/ কবরস্থ পবিত্র পরিচ্ছন্ন মাটির কিছু অংশ গোসলের পানির সাথে এইজন্য মেশাতে বলা হয় যাতে যাদুর প্রভাব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কারন কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত বরকতময় মাটিগুলোর পরে কবরের যাদু নষ্টের গোসলের জন্য সংশ্লিষ্ট কবরের মাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরি। কারন এই মাটি পৃথিবীর অন্য যেকোনো মাটির তুলনায় যাদুর সবচেয়ে কাছের অংশের মাটি। ফলে এই পরিচ্ছন্ন মাটি "সংশ্লিষ্ট যাদুর ট্রেস" হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে।" গোসলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত গোসল করলে যাদু দ্রুত নষ্ট হয়।

একই কথা এমন পুকুরের ক্ষেত্রে যেখানে রোগীর যাদুকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোগী রুকইয়াহর প্রতিটি গোসলে সেই পুকুরের পানি মিশিয়ে নিলে বা রোগীকে পুকুরে দাড় করিয়ে রুকইয়াহ করতে করতে ওই পুকুরের পানি দিয়ে গোসল দিতে থাকলে যাদু দ্রুত নষ্ট হয়।

আল্লাহ সর্বাধিক ভালো জানেন।

Abdullah Fahad vai 

No comments:

Post a Comment