জোনাকি পোকাঃ
অনেক
দিন হল আমি জোনাকী পোকা দেখিনি।প্রবাসী হয়ার পর আমিমনে হয় যন্ত্র হয়ে গেছি।
খাওয়া,ঘুম আর কাজ এই-সবের মাঝেই মিশে আছি বলা যেতে পারে। জাতীয় কবি কাজি
নজরুল ইসলামের একটা কথা বার বার মনে পরে,
"হে দারিদ্র তুমি মহান,
তুমি মোরে দানিয়েছ খৃষ্টের সম্মান"
আমি মহান নই,মহান হয়ার ইচ্ছেও নেই।"দারিদ্র" শব্দের সাথে "ক্ষুধার্থ"
র্শব্দটার খুব মিল আছে। প্রচন্ড ক্ষুধায় যখন কষ্ট পেতাম, তখন "মহান" বলে যে
একটা শব্দ আছে,সেটার কথা আমার মনে
থাকতনা। আমার প্রিয় কবিকে বলতে ইচ্ছে করত,"হে মহামান্ন্য কবি,আপনি কি ভেবে
দারিদ্রকে এত্তো উপরে তুলে ধরেছেন?", আমার বিদেশ আসার সুযোগ হয়।আমি হয়ে যাই
প্রবাসি.....।
প্রবাসি হয়ার পর থেকেই আমার মাঝে দেশপ্রেম সৃষ্টি
হয়।আমার হৃদয় দর্পনে প্রতিনিয়ত ভেসে উঠে আবহমান বাংলার নানান
রূপ।একাকিত্তের আগুনে আমি দাও-দাও করে জ্বলতে থাকি।
জোনাকি পোকার কথা বলছিলাম।কিছুদিন ধরে জোনাকিপোকার কথা বারবার মনে পড়ছে.......
ছোট বেলায় বাবার সাথে একবার গভীর রাতে গ্রামের বাড়ি রওনা হয়েছিলাম।আমরা
যেখানে থাকতাম সেখান থেকে আমাডের গ্রামের বাড়ি তেমন একটা দূরে না।তার পরও
আমার ভয় ভয় করছিল (ভূতের ভয়), জোছনা ছিলনা,কিন্তু তারপরও চাঁদেরসামান্য
আলোয় রাস্তায় আমাদের ছায়া পড়েছিল।আমার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল,আমাদের এই
ছায়াটাই হয়ত ভূত। আমাদের গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুতের আলো সেই সময়
পৌঁছায়নি,তাই বাড়ি গুলোকেও ভূতের বাড়ি মনে হচ্ছিল। আমি আব্বুর হাতের দিকে
চেয়ে চেয়ে পথ চলতে থাকলাম।এই অন্ধকার ভূতের বাড়িতে আমি থাকব কিভাবে,সেটা
ভেবে আমার রক্ত শীতল হতেহতে হয়ত জমতে শুরু করেছিল।আব্বু হঠাৎ বললেন,"চেয়ে
দেখ কত্তো জোনাকি"।
জোনাকি পোকা দেখার শখ আমার নেই,তারপরো দৃষ্টি দিলাম
বাড়ির পাশের ঝোপের দিকে।ছোটছোট পোকা গায়ে মিটিমিটি সবুজ আলো নিয়ে ঘুরছে,সে
আলোতে তীব্রতা নেই।জোনাকি পোকা নিয়ে কয়েকটা গল্প-কবিতা পড়েছি,কিন্তু আমি
কখনো ভাবিনি এই পোকা এতোসুন্দর হবে।আমার শিশু মনের সব ভয় ক্ষনিকেই দূর হয়ে
যায়।আমার তখন মনে হচ্ছিল,হাজার হাজার প্রহরী প্রদ্বীপ নিয়ে আমাদের
গ্রামটাকে পাহারা দিচ্ছে।আব্বু একটু পরেই ভেজা গলায় আমাকে ফিসফিস করে
বললেন,"অনেক বছর পর আজ আবার একসাথে এতো জোনাকি পোকা দেখলাম"
বাবার কথা
শুনে আমি চমকে উঠলাম,জোলাকি পোকা বাবার খুবি ভালো লাগে,সেটা বুঝলাম,কিন্তু
চোখে জল আনার কারণ বুঝতে পারিনি সেই সময়।আমার মনে আছে সেই আলো বিহীন রাত-ও
আমার বাবার চোখের জলকে আড়াল করে রাখটে পারেনি।
আমার অবচেতন মন,ছোটবেলার সেই মধুময় স্মৃতি আমার নিউরনের মাঝে যতলে তুলে রেখেছিল।সে রাত এখনো আমার হৃদয় দর্পনে ছবির মত ভেসে উঠে।
দারিদ্রের শক্ত শিকল আমার পায়ে বাঁধা।আমি এখন আশায় প্রহর গুনছি,একদিন আমার
পায়ে বাধাঁ এই শক্ত শিকল ছিড়ে যাবে।আমি তখন ছোটবেলারসেই রাতের মত আরেকটা
রাত বেচে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাব।আমি একসাথে অনেক জোনাকিপোকা দেখে কিছুক্ষণ
কাঁদব।
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/Golpo143
লিখেছেন "মীর ইমাম"