Tuesday, December 13, 2011

Collection of Stories - 06

জোনাকি পোকাঃ
 
অনেক দিন হল আমি জোনাকী পোকা দেখিনি।প্রবাসী হয়ার পর আমিমনে হয় যন্ত্র   হয়ে গেছি। খাওয়া,ঘুম আর কাজ এই-সবের মাঝেই মিশে আছি বলা যেতে পারে। জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের একটা কথা বার বার মনে পরে,

"হে দারিদ্র তুমি মহান,
তুমি মোরে দানিয়েছ খৃষ্টের সম্মান"

আমি মহান নই,মহান হয়ার ইচ্ছেও নেই।"দারিদ্র" শব্দের সাথে "ক্ষুধার্থ" র্শব্দটার খুব মিল আছে। প্রচন্ড ক্ষুধায় যখন কষ্ট পেতাম, তখন "মহান" বলে যে একটা শব্দ আছে,সেটার কথা আমার মনে থাকতনা। আমার প্রিয় কবিকে বলতে ইচ্ছে করত,"হে মহামান্ন্য কবি,আপনি কি ভেবে দারিদ্রকে এত্তো উপরে তুলে ধরেছেন?", আমার বিদেশ আসার সুযোগ হয়।আমি হয়ে যাই প্রবাসি.....।
 

প্রবাসি হয়ার পর থেকেই আমার মাঝে দেশপ্রেম সৃষ্টি হয়।আমার হৃদয় দর্পনে প্রতিনিয়ত ভেসে উঠে আবহমান বাংলার নানান রূপ।একাকিত্তের আগুনে আমি দাও-দাও করে জ্বলতে থাকি।
জোনাকি পোকার কথা বলছিলাম।কিছুদিন ধরে জোনাকিপোকার কথা বারবার মনে পড়ছে.......
ছোট বেলায় বাবার সাথে একবার গভীর রাতে গ্রামের বাড়ি রওনা হয়েছিলাম।আমরা যেখানে থাকতাম সেখান থেকে আমাডের গ্রামের বাড়ি তেমন একটা দূরে না।তার পরও আমার ভয় ভয় করছিল (ভূতের ভয়), জোছনা ছিলনা,কিন্তু তারপরও চাঁদেরসামান্য আলোয় রাস্তায় আমাদের ছায়া পড়েছিল।আমার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল,আমাদের এই ছায়াটাই হয়ত ভূত। আমাদের গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুতের আলো সেই সময় পৌঁছায়নি,তাই বাড়ি গুলোকেও ভূতের বাড়ি মনে হচ্ছিল। আমি আব্বুর হাতের দিকে চেয়ে চেয়ে পথ চলতে থাকলাম।এই অন্ধকার ভূতের বাড়িতে আমি থাকব কিভাবে,সেটা ভেবে আমার রক্ত শীতল হতেহতে হয়ত জমতে শুরু করেছিল।আব্বু হঠাৎ বললেন,"চেয়ে দেখ কত্তো জোনাকি"।
জোনাকি পোকা দেখার শখ আমার নেই,তারপরো দৃষ্টি দিলাম বাড়ির পাশের ঝোপের দিকে।ছোটছোট পোকা গায়ে মিটিমিটি সবুজ আলো নিয়ে ঘুরছে,সে আলোতে তীব্রতা নেই।জোনাকি পোকা নিয়ে কয়েকটা গল্প-কবিতা পড়েছি,কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি এই পোকা এতোসুন্দর হবে।আমার শিশু মনের সব ভয় ক্ষনিকেই দূর হয়ে যায়।আমার তখন মনে হচ্ছিল,হাজার হাজার প্রহরী প্রদ্বীপ নিয়ে আমাদের গ্রামটাকে পাহারা দিচ্ছে।আব্বু একটু পরেই ভেজা গলায় আমাকে ফিসফিস করে বললেন,"অনেক বছর পর আজ আবার একসাথে এতো জোনাকি পোকা দেখলাম"
বাবার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম,জোলাকি পোকা বাবার খুবি ভালো লাগে,সেটা বুঝলাম,কিন্তু চোখে জল আনার কারণ বুঝতে পারিনি সেই সময়।আমার মনে আছে সেই আলো বিহীন রাত-ও আমার বাবার চোখের জলকে আড়াল করে রাখটে পারেনি।
আমার অবচেতন মন,ছোটবেলার সেই মধুময় স্মৃতি আমার নিউরনের মাঝে যতলে তুলে রেখেছিল।সে রাত এখনো আমার হৃদয় দর্পনে ছবির মত ভেসে উঠে।
দারিদ্রের শক্ত শিকল আমার পায়ে বাঁধা।আমি এখন আশায় প্রহর গুনছি,একদিন আমার পায়ে বাধাঁ এই শক্ত শিকল ছিড়ে যাবে।আমি তখন ছোটবেলারসেই রাতের মত আরেকটা রাত বেচে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাব।আমি একসাথে অনেক জোনাকিপোকা দেখে কিছুক্ষণ কাঁদব।
 
 গল্পটি নেয়া :  https://www.facebook.com/Golpo143
লিখেছেন "মীর ইমাম"

Collection of Stories - 05

রাতের খালি রাস্তায় দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালাচ্ছে নিরব। পেছনে বসা অনিমা। তারা ভাল বন্ধু এবং একে অপরকে অনেক ভালবাসে কিন্তু একথাটা কেউ কাউকে বলেনি কখনো।

অনিমা- একটু আস্তে চালাবে? আমার ভয় করছে।

নিরব- না । আমার খুব ভাল লাগছে।

অনিমা- প্লীস । এটা খুবই বিপদজনক।

নিরব- ঠিক আছে। আগে বল তুমি আমাকে ভালবাস?

অনিমা- আচ্ছা আমি তোমাকে ভালবাসি।
এখন একটু আস্তে চালাও।

নিরব- এখন আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো।
অনিমা নিরবকে জড়িয়ে ধরলো।

অনিমা- এখন আস্তে চালাও।

নিরব- তুমি আমার হেলমেট খুলে নিজে পড়।
এটা পড়ে আমি বাইক চালাতে সাছন্দ্য বোধ করিনা। এটা একটা বিরক্তি কর জিনিস।

পরের দিন ।

আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা একটি ঘটনা। একটি মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিল্ডিংয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে বিদস্ত হয়েছে। জানা গেছে মোটর সাইকেলের ব্রেক এর তার ছিড়ে গিয়েছিল। যাত্রীদের দুজনের একজন সাথেসাথেই মারা যায়, অপর জন মারাত্তক আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। ছেলেটা বুঝতে পারে যে বাইকের ব্রেক কাজ করছে না, কিন্তু মেয়েটিকে কিছু বুঝতে দেয়নি। সে জানত যে এতে করে অনিমা আরও ঘাবড়ে যাবে। শেষ মূহুর্তে ছেলেটি মেয়েটাকে বলেছিল আমি তোমাকে ভালবাসি এবং তার কাছ থেকে ভালবাসার উপহার সরুপ শেষ মুহূর্তের জন্য একটু আদর জড়ানো  ভালবাসা নিয়েছিল।


[একেই বলে সত্যিকারের ভালোবাসা]
 
গল্পটি নেয়া :  https://www.facebook.com/Golpo143