Wednesday, December 14, 2011

আংশিক ভুতুরে গল্পঃ‘কুয়ো’ [ Collection of Stories - 11 ]

মামুন তার চাকরিটা ভালোই উপভোগ করে, যদিও প্রতিদিন অনেক ট্রাভেল করতে হয়। গাড়ী থাকার কারণে সেটা অবশ্য উপভোগ্যই হয়। আজ তার রংপুরে থাকার কোন ইচ্ছেই ছিল না। ভেবেছিল বগুড়া থেকে সকাল সকাল রংপুরে পৌঁছুলে বিকেলের মধ্যেই কাজ শেষ করে আবার বগুড়ায় ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু রংপুরের ডিষ্ট্রিবিউটর কাশেম সাহেব নাছোড়বান্দা লোক। এদিকে কাজশেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা। তাই মামুন কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রলোকের আতিথ্য নিতে রাজীহল।
কাশেম সাহেবের বাড়ীটা শহরের প্রায় মাঝখানেই, একতলা বেশ বড় দালান। খাওয়া-দাওয়া শেষেগল্প-গুজব করতে করতে কখন রাত ১১টা বেজে গেছে খেয়ালই করেনি কেউ। কাশেম সাহেব মামুনকে তার শোবার ঘর দেখিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। মামুন দেরী না করে শুয়ে পড়ল। তাড়াতাড়ি ঘুমান দরকার, সকালে উঠেই বগুড়ায় ফিরতে হবে। কিন্তু ঘুম আর আসছে না; সে কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করল। এর মধ্যে কারেণ্ট চলে গেল।
মামুন লক্ষ্য করল বাইরে বেশ ভালোই জ্যোস্না। কারেণ্ট চলে যাওয়ার পর তা স্পষ্ট হল।মাঝে মাঝে মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে; একটা আলো-আঁধারির খেলা। সারাদিনের পরিশ্রমে দ্রুতই ঘুম চলে আসার কথা, কিন্তু ঘুমের দেখাই নেই। বেশ গরম পড়েছে, তবে হালকা বাতাস মাঝেমাঝে জানান দিয়ে যাচ্ছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে একটা গোছান বাগান চোখে পড়ল। আগে খেয়াল করেনি। ঘুম না আসায় বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিল না। তাই দরজা খুলে সে বাগানে চলে এল। চাঁদের আলোয় একটা অন্যরকম অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরল।
হাটছে আর আনমনে অনির কথা ভাবছে সে। হাটতে হাটতে সে বাগানের ঠিক মাঝখানে কুয়োর পাশে বাধানো জায়গাটায় বসল। কুয়োটা অনেক আগের দেখেই বোঝা যায়, তবে নিয়মিত যত্নেরদাগ সুস্পষ্ট। কুয়োর উপর ছাউনিও আছে।
সে একটু অবাক হল। শহরে বাড়ীরপেছনে এই রকম কুয়ো এবং কুয়োরপাড় সচরাচর দেখা যায় না এ সময়। তবে ভদ্রলোকের রুচির প্রসংসা করতেই হল মনে মনে। ছোট-বড় গাছ, কুয়ো সব বেশ সুন্দর পরিকল্পনা মাফিক করাহয়েছে। আলো-আধাঁরির কারণে কোনটা কি গাছ তা বোঝা যাচ্ছেনা। তবে গন্ধরাজ আছে এটা নিশ্চিত। সে চারিদিকে তাকালগন্ধের উৎসের সন্ধানে, কিন্তু চোখে পড়ল না।
মেঘগুলো চাঁদের সাথে খেলেই চলেছে। ছোট শহর তাই এত রাতে তেমন কোন শব্দ বা হট্টগোল নেই। মামুন ভাবল কারেণ্ট না থাকায় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। পরিবেশটা বেশ ভালো লাগছে। গাছগুলোয় কেমন অন্ধকার থোকা থোকা জমাট বেঁধে আছে। চাঁদের আলো সেই অন্ধকার দূর করতে পারছে না। বাড়ীগুলো কেমন যেন কোমল মিহি আঁধারের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।
মামুন উঠে দাড়াল। কুয়োটা তাকে টানছে। অনির কথা মনে হচ্ছে। অনি থাকলে এরই মধ্যে অন্তঃত কয়েকবার কুয়োর ভেতর মুখ দিয়ে নিজেই নিজেকে ডাকত। মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা আদুরে ভাব আছে। অনি থাকলে খারাপ হত না।
মামুন কুয়োটার কাছে যেয়ে ভিতরে তাকাল। উপরে ছাউনি থাকায় একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। শরীরটা শিউরে উঠল।আশে পাশের কোমল আঁধারের সাথে এই আঁধারটা একেবারেই বেমানান।
রাত অনেক হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবার ছুটতে হবে। সে রুমের দিকে পা বাড়াল। কিছুটা এগিয়েই আবার পিছন ফিরে কুয়োটাকে দেখল। কুয়োটাযেন তাকে ডাকছে। যেন একটা কিছু বাকী রয়ে গেল। মামুন দ্বিধাগ্রস্তের মত কুয়োটার দিকে ফিরে তাকাল। তারপর কাছে এসে কুয়োর ভিতরে মুখ রেখে ডাকল ‘অনি’। না, কোন প্রতিধ্বনি হলো না! সে একটু অবাক হল। আর কিছু চিন্তা না করে সে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল।
সকালে উঠে তাড়াহুড়ো করে রেডী হয়েই বেরুবার উদ্যোগ করল সে। কিন্তু কাশেম সাহেব এই সাত-সকালেই বিশাল আয়োজন করে বসে আছেন। অগত্যা তাকে বসতেই হল। খেতে খেতে সে বলল,আপনার পেছনের বাগানটা বেশ সুন্দর। কাশেম সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আপনি কখন গেলেন সেখানে। মামুন বলল, ঘুম আসছিলো না, তাই রাতে একটু ঘুরে দেখলাম। কুয়োটা বেশ লেগেছে। কিন্তু ওটা মনে হয় বুঁজে গেছে, তাই না? কোন প্রতিধ্বনি হল না!
 

কাশেম সাহেব তার বিস্ময় গোপন করার কোন চেষ্টাই করলেন না। বললেন, আপনি ঠিক কোথাও ভুল করছেন। মামুন বলল,ভুলের কি আছে? কাশেম সাহেব বললেন, বাগানের মাঝে কোন কুয়ো নেই! এবার মামুনের অবাকহবার পালা। কিন্তু আমি নিজে গত রাতে সেখানে বসেছি, উপরে ছাউনিও আছে, মামুন জোর গলায় বলল। আমি শব্দ করে প্রতিধ্বনি শুনতে চেষ্টাও করেছি।
 

কাশেম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বেশ আগে এ বাড়ীতে কখনও এসেছেন। দেখুন তো মনে করে। মামুন অবাক বিস্ময়ে বলল, না। বলতে পারেন রংপুরে এবারই প্রথম এলাম! কেন বলুন তো?
কাশেম সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ওখানে এক সময় একটা কুয়ো ছিল বটে, ছাউনিও ছিল ওটার উপর। আগের মালিক সেটা বুঁজিয়ে ফেলেছেন। তার মেয়েটা কুয়োয় পড়ে মারা গিয়েছিল। এরপরই তিনি বাড়ী বিক্রি করে চলে যান।
••••••••••••••••••••••••••••••••একটু ভয় লাগলেও লাইক বাটনে ক্লিক 
 
গল্পটি নেয়া :   https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215537208521511

আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ভুতুরে গল্প [ Collection of Stories - 10 ]

••••••••••••••••••••••••••••••••এটি একটি সত্যি ঘটনা যা বছরচারেক আগে আমার সাথে ঘটেছিলো।। সে রাতে আমি আমার গ্রামের বাড়ি চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফিরছিলাম।। প্রায় ঘণ্টা তিনেক একটানাগাড়ি চালিয়ে কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম।। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার চিন্তায় একমুহূর্তের জন্যও অসতর্ক হই নি।। 
 
রাত তখন প্রায় ২ টার মতো বাজে।।এতো রাতে ঢাকায় ফেরার মূল কারণ হল, তারপরের দিন সকাল ১০ টায় আমার অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে।। যাই হোক,আসার পথে খাজা বাবার মাজার নামে একটা জায়গা পড়ে।। সেই জায়গা নিয়ে অনেক কুসংস্কাররয়েছে, যে সেখানে নাকি প্রচুর পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে।। চালক প্রায়ই গাড়ির ব্যাল্যান্ স হারিয়ে ফেলে,অথবা ব্রেক জ্যাম হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল।। শুধুমাত্র রাস্তায় কিছু ট্রাক আর গুটিকয়েক প্রাইভেট কার।। আমি আনুমানিক ৭০-৮০ কিমি বেগে গাড়ি ছুটাচ্ছিলা ম।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর।।হটাত একটা মোড় ঘোরার সময় আচমকা দেখলাম একটা লোক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।। লোকটার পড়নে একটা ছেড়া ফাটা হাফ প্যান্ট।। গায়ে কোনো কাপড়নেই।। মুখে জঙ্গলের মতো দাড়ি।। চোখগুলো আলো পড়ে ঝিকঝিক করছে।। হলদে দাঁতগুলো দেখে অন্য সময় হয়তো ঘেন্না লাগতো।। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার গাড়ি তার গায়ে আঘাত করবে অথচ মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার গাড়ির দিকে।। ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। ব্রেকচেপে ধরবো যে, সেই চিন্তাওতখন মাথায় আসছিলো না।। সত্যি করে বলতে গেলে, যেই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলা ম,সেই স্পীডে ব্রেক করলেও তা ঐ লোকটাকে সজোরে ধাক্কা দিবে।। নিজেকে ফিরে পেলাম হটাত।। প্রানপ্রনে ব্রেক চেপে ধরলাম।। কিন্তু শেষ রক্ষাহলো না।। গাড়িটি হেঁচড়ে যেতে লাগলো লোকটির দিকে!! একদম শেষ মুহূর্তে চোখটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো।।আশা করছিলাম, গগন বিদারি কোনো চিৎকার শুনবো, কিন্তু অবাক করে দিয়ে কানে এলো কেউ যেনও পাগলের মতো হেসে উঠলো।। আমার গাড়ি লোকটাকে বেধ করে চলে গেলো।। বেধ করে বলছি কারন, আঘাতের কোনো শব্দ আমি পাই নি।। যাই হোক, সজোরে ব্রেক চাপায় গাড়িটি ২০-২৫ মিটার সামনেগিয়ে থেমে গেলো।। দ্রুত দরজা খুলে বের হলাম।। আশ্চর্য, এতক্ষণ রাস্তায় অনেক গাড়িকেই সাইডকাটিয়েছি।। অনেক গাড়িই আমাকে পাশ করে সামনে এসেছে,কিন্তু এই মুহূর্তে যতদূর দৃষ্টি যায় কোনো গাড়ি দেখতে পাচ্ছি না।। যাই হোক,এতো কিছু ভাবার মতো শক্তি তখনছিল না।। প্রায় দৌড়ে সেই জায়গায় এলাম যেখানে লোকটিকে দেখতে পেয়েছিলাম। । কিন্তু, এসে কাউকে দেখলামনা।। ভাবলামধাক্কা খেয়ে হয়তো ছিটকে দূরে গিয়ে পড়েছে।। প্রায় মিনিট দশেক আঁতিপাঁতি করেখুজলাম।। কিছুই দেখলাম না।। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে রাস্তাটা নির্জনই রইলো।। একটা গাড়ি দেখলাম না।। একরকম অমানুষিক কষ্ট উপলদ্ধি করলাম মনের ভেতর।।একটা মানুষকে মেরেফেলেছি!! সে রাতে বহু কষ্টে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। ।অফিসের মিটিংটা জয়েন করে এরপর একসপ্তাহের ছুটি নেই।। আমার ঢাকার বাসায় আমি এবং আমার ওয়াইফ থাকতাম।। তাকে কিছু বলিনি।। পাছে, ভয় পায় বা আমাকে খারাপ ভাবে।। আমার আচার আচরণ দেখে আমারওয়াইফের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগলো।। এদিকে আমি মোটামুটি শপথ করেছি যে তাকে কিছু বলবো না।। যাই হোক, আমার ওয়াইফের পিড়াপীড়িতে পড়ে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আবার দেশের বাড়িতে যাবো।। সেদিন সকালেই আবারো চট্রগ্রামে রউদ্দেশে রওনা হই আমরা।। এবার আমার বউ ছিল সাথে।। দেশের বাড়িতে আমরা ২দিন ছিলাম।। হটাত একদিন বিকেলে ফোন এলো অফিস থেকে।। কিছু বিদেশী ক্লায়েন্ট এসেছে।। আমার উপস্থিতি খুব করে দরকার।।আমার ছুটির তখনো ২দিন বাকি।। তাই প্রথমে আমার বউ খুব করে আপত্তি জানালো।। কিন্তু, তাকে বুঝিয়ে বলতে সে মেনে নিলো।। বুঝতে এবং বুঝাতে ভালোই সময় ব্যায় হলো।। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে রওনাহই আমরা।। এদিন আমি গাড়ি খুব ধীরে চালাচ্ছিলা ম।। স্পীড কোনো অবস্থাতেই ৪০-৫০ এর বেশি উঠাচ্ছিলাম না।। আমিগাড়ি চালাচ্ছি।। আমার বউ পাশে বসে গান শুনছে।। আস্তে আস্তে আবারো সেই রাস্তায় চলে এলাম, যেখানে গতদিন এক্সসিডেন্ টটা করেছিলাম!! খারাপ লাগা ভাবটা ফিরে এলো আবার।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছি।। হটাত আমাকে চমকে দিয়ে রাস্তার ঠিক ঐখানটায় আজকেও ঐ লোকটিকে দেখতে পেলাম।। সাথে সাথে আমার বউকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, সে কি কিছু দেখতে পাচ্ছে কিনা!! গান শুনতে থাকলেও তার চোখ খোলা ছিল।। আমি ধাক্কা দিতেই কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বলল, “আশ্চর্য!! এই লোক হটাত করেকোত্থেকে উদয় হলো!!” আমার আর প্রশ্ন করা লাগলোনা।। যা জিজ্ঞেস করতে নিয়েছিলামতার উত্তর এমনিতেই পেয়ে গেলাম।। ব্রেক করে গাড়ি থামালাম।। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গাড়ি থামানোর সাথে সাথে লোকটা যেনো হাওয়ায় মিলিয়েগেলো।। আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও নিজেও ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে।। ভয় সতন্ত্র গলায় বলল, “লোকটা কোনদিকে গেলো??” আমার কাছে কোনো উত্তর ছিলনা।। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম খোলা রাস্তার দিকে।
 
গল্পটি নেয়া :   https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215595451849020