Friday, February 3, 2012

কল্পলোকের কল্পকথা [ Collection of Love Stories -21]


কল্পলোকের কল্পকথা

রাসেল।। ভার্সিটিতে পরিচয়। অনেক ভাল মনের একটা ছেলে। আর ভাল মনের মানুষজন তার চারপাশের মানুষগুলোকে খুব সহজে আপন করে নেয় এবং তাদের মধ্যে ভালোর বীজ বপন করে দেয়। সেই ক্ষেত্রে তার আশে-পাশের মানুষগুলোকেও ভাল বলা যায়। এই সূত্র ধরলে আমিও ভাল মানুষের কাতারেই পরি। কারনটা বলতে গেলে,রাসেল ছিল আমার ভার্সিটি লাইফের সব চেয়ে কাছের বন্ধু। অর সাথে আমার লাইফের এমন কোন অধ্যায় নেই,যা শেয়ার করা হতো না। অর ক্ষেত্রেও একই, অর জীবনের প্রতিটি ঘটনার সাথে আমি পরিচিত।


আজ চার বছর পর শপিং করতে গিয়ে হঠাৎ ই অর সাথে দেখা হয়ে যায়। সাথে ছিল ভাবী আর একটা ফুটফুটে মেয়ে, অবিকল পুতুলের মত। তাই হয়ত সখ করে বাবা-মা পুতুলের মত মেয়েটির নাম রেখেছে পুতুল। অনেক আহ্লাদ করে তাকে, রাসেলের মুখ থেকে পুতুল-সোনা নামে ডাকতে শুনলাম। কত আদর করেই না বাবা-মা তাদের সন্তানদের ডাকে। হয়তো সন্তানরা তা উপলব্ধিও করতে পারে না।


৪ বছর আগে ফিরে গেলাম এক পলকেই।।। সদা হাসি-খুশি থাকা রাসেলটা কেমন যেন ক্লাসে গোমড়া মুখ করে বাসে থাকত। কাউকে কিছুই বুঝতে দিত না। কেন যেন অকে অনেক বেশি চিন্তিত লাগছিল কিছুদিন যাবত। তাই আমি আর দেরী সয়তে পারলাম না। অই পিরিয়ড শেষ হতেই কেফের সামনে নিয়ে অর কাছে কি হয়েছে অর,তা জানতে চাইলাম। ও নাছোড় বান্দা কিছুতেই মুখ খুলতে রাজি না। এই অজুহাত, সেই অজুহাত দেখিয়ে প্রসঙ্গটা পাল্টাতে চাচ্ছিলো। আমিও কম যাই না। আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো, আমি বললাম দোস্ত,ঠিক আছে বলতে হবে না। যাইরে দোস্ত,তোকে অনেক আপন ভাবতাম, কিন্তু আসলে আমি মানুষ চিনতে ভুল করি। এই বলে যেই, পা বাড়ালাম সামনের দিকে, তখনই পিছন থেকে রাসেলের ডাক, এই তুষার কোথায় যাচ্ছিস,দাঁড়া বলছি। আমি তো মহা খুশি। ভাবলাম আমার ডোজে কাজ হয়েছে। আমি অনেকটা মন খারাপের ভান করে দাঁড়িয়ে রইলাম। পাশে এসে রাসেল আমাকে একটা ঘুসি দিয়ে বলল, আমার না বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ কলির সাথে। আমি অকে ফিরতি একটা ঘুসি দিয়ে বললাম,এই খুশির খবর বলতে তোমার এত গা জ্বলে কেন? বজ্জাত ছেলে। দাঁড়া সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি। এই বলে দিলাম একটা দৌড় ক্লাসের দিকে। আর পিছন থেকে রাসেল চিৎকার করে বলতে লাগলো, খবরদার কাউরে বলবি না। তাহলে কিন্তু আমার ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।


সেই বছরের অক্টোবর মাস।।। লেভেল-৪ এর টার্ম-২ শেষ হল, কিছু দিনের জন্য হলেও পড়ালেখা স্তগিত। বাকী পড়ালেখা দেশের বাইরে থেকে করতে হবে। রাসেলকে ইদানীং খুব বেশি রকম উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। সামনেই যে অর বিয়ে, তাও আবার অর ভালবাসার মানুষটার সাথে।


কলির সাথে রাসেলের দীর্ঘ ৪ বছরের প্রেম। ভার্সিটির প্রথম লেভেল থেকেই অর সাথে কলির সম্পর্ক। কলি হোমইকোনমিকস কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। আর রাসেল যেহেতু বুয়েটে পড়ে তাই তাকে আজিমপুরে শিফট করতে হয়। কলিদের বাসা আর রাসেলদের বাসা কাছাকাছি হওয়াই প্রায়ই অদের দেখা হতে থাকে, এর পর তা ভাললাগা থেকে কবে যে ভালবাসায় রুপ নেয় তা কারোরই জানা নেয়।


জানুয়ারি মাস।।। জোরে সোরে বিয়ের শপিং করা শুরু হয়ে গেছে। রাসেলের তো দেখা পাওয়াই যেন, আকাশের চাঁদ কাছে পাওয়ার মত। বেচারা ব্যস্ততা আর কাজের চাপে একদমই শুকিয়ে যাচ্ছে। কলিকেও তেমন সময় দেয় নে শয়তানটা। একদিন কলি ফোন দিয়ে অর নামে কত অভিযোগ করল!!!


জানুয়ারি ৩০ তারিখ।।। আজিমপুরের ব্যস্ত রাস্তা ধরে হাটছিল কলি। কি এক কাজে যেন কলেজে আসতে হয়েছিল। বাসায় ফিরেছে, রাস্তা পাড় হতে গিয়েই বেচারির জীবনের সব চেয়ে কালো অধ্যায়ের সূচনা হল। কোত্থেকে যেন একটা মাইক্রো এসে ঠোকে দিয়ে গেল তাকে, আর সাথে সাথে তার ভাগ্যে রেখে গেল নির্মম কিছু পরিহাস।


ফেব্রুয়ারি ২ তারিখ।।। ঘুম ভাঙল কলির। ঘুম কিনা বলতে পারছে না। মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা। মাথা টা কোন মতে কাত করে তাকিয়ে দেখলো,তার হাত ধরে মা বসে আছে। মনে হচ্ছে জনম-জনম ধরে আগলে রেখেছে থাকে। মেয়ের চোখ খুলতেই মার মুখে হাসি ফুটে এলো। কলি কিছুতেই তার পা দুইটা নাড়াতে পারছে না। কি যেন তার পায়ে ভর দিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে একটা পাহাড় সমান বোঝা তার পায়ে কেউ চেপে রেখেছে। ব্যাথাটা আরেকটু প্রখর হওয়াই আবারও ঘুমিয়ে পড়ল কলি।


ফেব্রুয়ারি ২,বিকাল ৫ টা।।। কলি বুঝতে পারল যে তার ভাগ্যে আর বিয়ে লেখা নেই। তার ডান পাটা ঐ দুর্ঘটনায় দারুন ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় হাটুর নিছ থেকে কেটে ফেলতে হয়। সে জানে যে,তাকে বাকিটা জীবন পঙ্গু হয়েই বাচতে হবে। চোখের কোটলি থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরতে দেখা গেলো।


ফেব্রুয়ারি ৪।।। রাসেলদের বাসা থেকে তার মা এসে কলিকে দেখে যায়। আর যাওয়ার সময় বলে যায়, রাসেল আর কলির বিয়ে হওয়া এখন আর সম্ভব না। এই বলেই রুমের বাইরে পা বাড়িয়ে চলে গেলো। কলি মার হাতটা অসহায়য়ের শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। কিছু যেন তার মনটা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না। হয়ত বলতে চাচ্ছে, মা এর চেয়ে মরে গেলেই হয়তো ভালো হতো।


ফেব্রুয়ারি ১৪।।। খুব সকাল রাসেল হসপিটালে। মা খাবার আনার বায়না করে বাইরে চলে গেছে। রাসেলকে দেখে কলি খুব খুশি হয়ে কান্না কান্না কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো তুমি? নতুন বউ দেখতে কেমন? নিশ্চয় অনেক রূপবতী। তোমার বিয়ে হয়ে গেলে না,নতুন বউটাকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি অকে একটু আদর করে দিবো। সে না খুব বেশি লাকি হবে। আর শোন, তোমাকে না কখনই একটা কথা বলি নি, আর হয়তো বলার সুযোগ হবে নাহ, তুমি না অসম্ভব রকম ভাল একটা ছেলে,অনেক বেশি কেয়ারিং। তোমার বউটাকে সুখে রেখো। এই কথাগুলো বলতে বলতে গাল বেয়ে বেয়ে অশ্রুর ফোটা বেয়ে পরে বিছানা ভিজে গেছে। রাসেল এতক্ষণ পর মুখ খুলল, পাগলী তোমার কি সব কথা বলা শেষ? শেষ হয়ে গেলে তারাতারি উঠো, রেডি হতে হবে না? তুমি না রেডি হলে আমাকে বিয়ে করবে কে? তখন কিন্তু রাস্তা থেকে মেয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে হবে। রাসেলের কথাগুলো বুঝতে কলির মনে হয় একটু বেশিই সময় লেগে গেল। সে রাসেলকে বলল, এই তুমি কি আমাকে একটা বার চিমটি কাটবা? রাসেল তার পাগলীর গায়ে জোরে চিমটি কেটে বলল, কি স্বপ্ন দেখছো নাতো?


রাসেল তাকে গাড়ি করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। আজ যে অদের বিয়ে। শক্ত করে রাসেল কলির হাতটি ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে, মনে আছে পাগলী, তুমি বলেছিলে তোমার হাতটা কখনো না ছাড়তে, আমি না ছাড়ি নি। কখনো ছাড়বোও না। আই লাভ ইউ পাগলী।



অই তুষার, কি ভাবতেছিস? আচমকা রাসেলের কন্ঠ কানে আসলো। কিছু না দোস্ত। কেমন আছিস? -ভাল আছি রে। তুই কেমন আছস? -আমিও ভাল আছি দোস্ত। তোর তো কোন খবরই নাই। ভাবীকে নিয়ে কবে দেশে ফিরলি??? -এই তো দোস্ত খুব বেশি দিন না,মাস খানেক হবে। জানিস,তোর ভাবীর পা না ঠিক হয়ে যাবে, লেগ ট্রান্সপ্লান্টের মাধমে। আমার স্পেনের কিছু ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ হইছে। ওখানে নাকি প্রথমবারের মত সফল ভাবে লেগ ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়ছে। -হাসি ভরা মুখে আমি বললাম, অনেক খুশির খবর শুনালি দোস্ত। আর ভাবী আমি অত্যন্ত দুঃখিত এতক্ষণ আপনার সাথে কথা না বলার জন্য। কেমন আছেন ভাবী? -এইতো ভাইয়া,ভালো আছি। আপনি সময় পেলে কিন্তু বাসায় চলে আসবেন। আমাদের জন্য না হলেও আমাদের এই পুতুলটার জন্য হলেও অন্তত একবার আসবেন। -আচ্ছা ভাবী,অবশ্যই আসবো। আপনি না বললেও আসবো। পরে আবার যেন না শুনতে হয়, এত ঘন ঘন কেন আসি? :D -না ভাইয়া,তা কেন হবে, এই কথা কখনোই আপনাকে শুনতে হবে না, আসবেন কিন্তু বাসায়। -আচ্ছা ভাবী,আসবো। আর রাসেল শোন, ভাবীর আর তোদের পুতুলটার যত্ন নিস। যাই রে দোস্ত, পরে কথা হবে।


যেতে যেতে পেছনে ফিরে তাকালাম, রাসেল দিব্যি খুশি মনে হুইল চেয়ার ঠেলে ঠেলে বেরাচ্ছে, আর ভাবীজান এক দোকান থেকে আরেক দোকানে তার পুতুলটার জন্য জামা-কাপড় দেখেই যাচ্ছে।


[ একটি সত্য কাহিনী নিয়ে গল্পটি লিখা, তবে কিছুটা কাল্পনিকতার মিশ্রণে ]


উৎসর্গ- আমার ভার্সিটির বন্ধু রাসেলকে। ও অনেকদিন যাবত বলছিল, দোস্ত তুই তো লেখা-লেখি করছ, আমার নাম দিয়ে একটা গল্প লিখ না, আর পারলে মেয়েটার (নায়িকার) নাম দিস কলি। দিয়ে দিলাম দোস্ত। খুব বেশি সময় করতে পারি না তো, তাই লেখা-লেখি করার সখ থাকার সত্ত্বেও তেমন ভাবে করা হয়ে উঠে না। তবে এটা বলে রাখা ভাল যে গল্পের কাহিনিটা আমার বন্ধুর (রাসেলের) না, তা না হলে- পরে আবার অকে অনেক কথা শুনতে হতেও পারে ;)

লিখেছেন-ক্ষণিকের আগুন্তুক

গল্পটি নেয়া :     https://www.facebook.com/abegmoy.valobasha/posts/240361689377321 

¤¤ হঠাত্‍ স্বপ্নভঙ্গ ¤¤ [ Collection of Love Stories 20]


প্রথম তাকে দেখি একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে।খুব একটা সুন্দরী কিম্বা চরম র্স্মাট বললে ভুল হবে।ছিমছাম ও সিম্পল একটা মেয়ে।পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেন মেয়েটার সন্ধানেই ছিল আমার চোখদুটো।দু একবার তার চোখে ধরা পড়ে গেলাম।ভয়ে আমি চোখ নামিয়ে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই তার মিষ্টিহাসি দেখে আমার জানে যেন পানি ফিরে আসল কিন্তু সে হাসি আজো ভুলতে পারিনি।সেদিন শুধু দেখাদেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

মূলত সেদিন থেকেই আমার এক অদ্ভুত সমস্যার সূত্রপাত।কোন কাজে মন বসছিলনা,আর পড়াশুনার কথা নাই বললাম।কারণে অকারণে কেবল মেয়েটিই আমার কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করতে লাগল।মেয়েটিকে নিয়ে নানারকম অদ্ভুত চিন্তাভাবনা করতাম যা আমার চিরাচরিত স্বভাবের সর্ম্পূণ বিপরীত।আমি একদিন কিছু না ভেবেই সেই আত্নীয়ের(যার বিয়ে ছিল)শরনাপন্ন হলাম।নাম সামিহা।ইন্টার র্ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।তখন নামটা জগতের সবচে সুন্দর নাম বলে মনে হচ্ছিল।সে আবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আমার আত্নীয় হয়।

আমি স্বভাবতই মেয়েদের সাথে একটু দুরত্ব বজিয়ে চলি।তার উপর 'প্রেম' শব্দটা ছিল আমার অপরিচিত।ফলে আমার এ বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতি ছিলনা বললেই চলে।কিন্তু একদিন ঠিক করলাম তার কলেজে যাব কিন্তু দূর থেকে দেখব কারণ ছেঁচড়ামি কিম্বা বখাটেপনা কখনই সার্পোট করতামনা।সপ্তাহে কয়েকবার করে গিয়ে তার নিষ্পাপ মুখখানি দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে পূর্ণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করতাম কিন্তু সর্বদা একটা নিরাপদ দুরত্বে থাকার চেষ্টা করতাম।

এক বিকেলে ঘুম ভাঙল ফোনের আওয়াজে।চরম বিরক্তি সত্তেও ফোনটা রিসিভ করলাম:
>হ্যালো অঙ্কন বলছ?(মেয়ের কন্ঠস্বর)
>হুম বলছি।আপনি?
>আমি সামিহা।
শুনে আমি তো পুরা লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে পরলাম।আরেকটু হলে বিছানা থেকেই পড়ে যেতাম।তাও একটু ভাব দেখানোর জন্যেই বল্লাম:
>কোন সামিহা?আপনি আমার নাম্বারই বা পেলেন কই?
>(হাসি)তোমার ঢং দেখেত হেসেই মরি।আমার কলেজের সামনে ঘুরাফেরা কর আর এখন এত ভাব।
আমি বুঝলাম আর ভাব ধরে লাভ নাই তাই সরাসরি বললাম
>কেমন আছ?
>এইতো ছেলে লাইনে আসছে।
>হেসে বললাম,কিসের জন্য ফোন দেওয়া হল?
>এটা আমার নাম্বার।
সেদিনের মত সেখানেই শেষ।কিন্তু কেমন জানি নাম্বারটা হাজার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলাম।খুশিতে আমার যেন আর ঘুম হয়না।সেই থেকেই শুরু....

এরপর থেকে ৫০০sms চালাচালি,চ্যাটিং,কল করার মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হতে লাগল।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে উইশ করা,খাবারদাবারের খবর নেয়া,একজনের সমস্যা অন্যকে জানানো,সুখদুঃখ শেয়ার না করলে যেন পেটের ভাত হজম হতো না।একদিন ওর ফোন না আসলে সেদিন আর মাথা ঠিক থাকতনা।এত গভীর বন্ধুত্ব থাকা সত্ত্বেও আমি ওকে মনের কথাটা বলতে পারতাম না যদি সে একসেপ্ট না করে বা যদি আমাদের এ বন্ধুত্বের অপমৃত্যু ঘটে।।

একদিন ও নিজ থেকেই ফোন দিয়ে বলল আমার সাথে দেখা করতে চায় কি জানি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।আমি ভাবলাম, এই সুযোগ, আজ ওকে বলবই যা থাকে কপালে।কিন্তু কেন যেন ওর সামনে পড়লেই আমি সব ভাষা হারিয়ে ফেলতাম।আজো তার ব্যাতিক্রম হলো না।সব কথা ওই বলতে লাগল।সত্যি বলতে ওর কথা শুনতে এত যে ভাল লাগছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।হঠাত্‍ করে ও বলল,একটা important কথা ছিল।বলতে লাগল,একটা ছেলেকে আমি পাগলের মত ভালবাসি কিন্তু সে বাসে কিনা জানি না।আমি ওর জন্য জীবনও দিতে পারব।একথা শুনার পর আমি অনুভূতিহীন হয়ে পড়লাম।তার কোনকথাই আমার কানে ঢুকছিলনা।শত চেষ্টা করেও নিজের অশ্রু রুখতে পারলাম না।পাছে ও দেখে ফেলে আমি ওকে বিদায় না জানিয়ে দ্রুত চলে এলাম।নিজেকে প্রতারিত মনে হতে লাগল।সেদিন রাতে ও হাজারবার ফোন করল কিন্তু রিসিভ করলামনা।কারণ জবাব দেবার কিছুই ছিলনা।রাত দুটোর দিকে মেসেজ আসল ওর মোবাইল থেকে।পড়ে আমার আক্কেল গুড়ুম। "আমার পুরো কথা না শুনে চলে এলে কেন?আরে গাধা আমার ভালবাসার পুরুষটা তুমি ছাড়া আর কেউনা ।" কিষ্ঞিত্‍ লজ্জা এবং ক্ষোভ নিয়ে তাকে ফোন দিলাম।কিন্তু তার সেই ট্রেডমার্ক হাসি শুনে আমার সব অভিমান কর্পূরের মত উবে গেল।

আমাদের ভালবাসা পুরোদমে চলছিল যাকে বলে in full swing.সামনে তার জন্মদিন।তাকে একটা সারপ্রাইজ না দিলেই নয়।ও সমুদ্র খুব পছন্দ করত।ঠিক করলাম ওর জন্মদিনে দুজন মিলে বীচে যাব।সারাদিন একসাথে কাটাব।যেই ভাবা সেই কাজ।জন্মদিনে তাকে প্রথম উইশটা আমিই করলাম।প্রথমে রাজি না থাকলেও আমার জোরাজুরিতে বীচে যেতে রাজি হল।দুজনে মিলে অনেক মজা করলাম।সারাদিন একসাথে কাটালাম।ফিরে আসতে মন চাইছিলনা।ঠিক করলাম রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরব। ওইসময় বীচে প্রত্যেকদিনের মত কিছু ছেলে বাইক রেসিং খেলছিল।আমরা দুজন হাত ধরে বসেছিলাম আর গল্প করছিলাম।হঠাত্‍ একটা বাইক এসে যে পাশে ও বসে ছিল সে পাশে ধাক্কা দিল।

কিছু বুঝার আগেই দুজনি ছিটকে পড়লাম রাস্তায়।আমি চোখ খুলে দেখলাম আমার পাশে ওর সুন্দর মুখটা সম্পূর্ণ রক্তাক্ত।আমি হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে তার হাত ধরতে চাইলাম।স্পর্শও করলাম। কি শীতল সে হাত।আমি কখনই হাত ছাড়তাম না।কিন্তু এ পৃথিবীর মানুষ খুবই স্বার্থপর।কয়েকজন আমাকে ধরে জোর করে গাড়িতে তুলতে লাগল।এরপর কিছুই মনে নেই।কিছুই না...

যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হাসপাতালে।চারদিকে ফিনাইলের তীব্র গন্ধ।স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আমি ওর কথা জিজ্ঞাসা করলাম মায়ের কাছে।মা ফুঁপিয়ে কাদতে থাকে।আমার আর বুঝতে দেরি হল না কেন ওর হাত এত ঠান্ডা ছিল।

আমি একটুও কাঁদতে পারলাম না। এখনও পারিনা। কারণ এসবের জন্য যে আমি দায়ী।আমার ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে ওকে।নিজেকে অপরাধী মনে হয়।আমি ওকে বীচে না নিলে ও হয়ত বেঁচে থাকত।কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা।মনে হয় কেন যে আমিও মারা গেলাম না।আবার মাঝে মাঝে মনে হয় এটা দুঃস্বপ্ন।একটু পর ওর ফোনে আমার ঘুম ভাঙবে।আর ও অভিমানী কন্ঠে বলবে:
>'আর কতক্ষণ ঘুমাবা...তাড়াতাড়ি ওঠে ফোন দাও...সারারাত কথা হয়নি...তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে আমার কষ্ট হয়...'

আমার তখন চিত্‍কার করে বলতে ইচ্ছে করে:
>আমি আর কত রাত তোমার সাথে কথা না বলে থাকবো??? আমারো যে ভীষণ কষ্ট হয়....

লিখেছেন-ইমতিয়াজ মাহমুদ

গল্পটি নেয়া :     https://www.facebook.com/abegmoy.valobasha/posts/240482799365210