প্রথম তাকে দেখি একটা বিয়ের
অনুষ্ঠানে।খুব একটা সুন্দরী কিম্বা চরম র্স্মাট বললে ভুল হবে।ছিমছাম ও সিম্পল একটা
মেয়ে।পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেন মেয়েটার সন্ধানেই ছিল আমার চোখদুটো।দু একবার তার
চোখে ধরা পড়ে গেলাম।ভয়ে আমি চোখ নামিয়ে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই তার মিষ্টিহাসি দেখে
আমার জানে যেন পানি ফিরে আসল কিন্তু সে হাসি আজো ভুলতে পারিনি।সেদিন শুধু
দেখাদেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
মূলত সেদিন থেকেই আমার এক
অদ্ভুত সমস্যার সূত্রপাত।কোন কাজে মন বসছিলনা,আর পড়াশুনার কথা নাই বললাম।কারণে অকারণে কেবল মেয়েটিই আমার কল্পনার রাজ্যে
বিচরণ করতে লাগল।মেয়েটিকে নিয়ে নানারকম অদ্ভুত চিন্তাভাবনা করতাম যা আমার চিরাচরিত
স্বভাবের সর্ম্পূণ বিপরীত।আমি একদিন কিছু না ভেবেই সেই আত্নীয়ের(যার বিয়ে
ছিল)শরনাপন্ন হলাম।নাম সামিহা।ইন্টার র্ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।তখন নামটা জগতের সবচে
সুন্দর নাম বলে মনে হচ্ছিল।সে আবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আমার আত্নীয় হয়।
আমি স্বভাবতই মেয়েদের সাথে একটু
দুরত্ব বজিয়ে চলি।তার উপর 'প্রেম' শব্দটা ছিল আমার অপরিচিত।ফলে আমার এ বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতি
ছিলনা বললেই চলে।কিন্তু একদিন ঠিক করলাম তার কলেজে যাব কিন্তু দূর থেকে দেখব কারণ
ছেঁচড়ামি কিম্বা বখাটেপনা কখনই সার্পোট করতামনা।সপ্তাহে কয়েকবার করে গিয়ে তার
নিষ্পাপ মুখখানি দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে পূর্ণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করতাম কিন্তু
সর্বদা একটা নিরাপদ দুরত্বে থাকার চেষ্টা করতাম।
এক বিকেলে ঘুম ভাঙল ফোনের
আওয়াজে।চরম বিরক্তি সত্তেও ফোনটা রিসিভ করলাম:
>হ্যালো অঙ্কন বলছ?(মেয়ের কন্ঠস্বর)
>হুম বলছি।আপনি?
>আমি সামিহা।
শুনে আমি তো পুরা লাফ মেরে
বিছানা থেকে উঠে পরলাম।আরেকটু হলে বিছানা থেকেই পড়ে যেতাম।তাও একটু ভাব দেখানোর
জন্যেই বল্লাম:
>কোন সামিহা?আপনি আমার নাম্বারই বা পেলেন কই?
>(হাসি)তোমার ঢং দেখেত হেসেই
মরি।আমার কলেজের সামনে ঘুরাফেরা কর আর এখন এত ভাব।
আমি বুঝলাম আর ভাব ধরে লাভ নাই
তাই সরাসরি বললাম
>কেমন আছ?
>এইতো ছেলে লাইনে আসছে।
>হেসে বললাম,কিসের জন্য ফোন দেওয়া হল?
>এটা আমার নাম্বার।
সেদিনের মত সেখানেই শেষ।কিন্তু
কেমন জানি নাম্বারটা হাজার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলাম।খুশিতে আমার যেন আর ঘুম
হয়না।সেই থেকেই শুরু....
এরপর থেকে ৫০০sms চালাচালি,চ্যাটিং,কল করার মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হতে লাগল।প্রতিদিন
ঘুম থেকে উঠে উইশ করা,খাবারদাবারের
খবর নেয়া,একজনের সমস্যা অন্যকে জানানো,সুখদুঃখ শেয়ার না করলে যেন পেটের ভাত হজম হতো না।একদিন ওর ফোন না আসলে সেদিন
আর মাথা ঠিক থাকতনা।এত গভীর বন্ধুত্ব থাকা সত্ত্বেও আমি ওকে মনের কথাটা বলতে
পারতাম না যদি সে একসেপ্ট না করে বা যদি আমাদের এ বন্ধুত্বের অপমৃত্যু ঘটে।।
একদিন ও নিজ থেকেই ফোন দিয়ে বলল
আমার সাথে দেখা করতে চায় কি জানি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।আমি ভাবলাম, এই সুযোগ, আজ ওকে বলবই
যা থাকে কপালে।কিন্তু কেন যেন ওর সামনে পড়লেই আমি সব ভাষা হারিয়ে ফেলতাম।আজো তার
ব্যাতিক্রম হলো না।সব কথা ওই বলতে লাগল।সত্যি বলতে ওর কথা শুনতে এত যে ভাল লাগছিল
তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।হঠাত্ করে ও বলল,একটা important কথা ছিল।বলতে
লাগল,একটা ছেলেকে আমি পাগলের মত ভালবাসি কিন্তু সে বাসে কিনা
জানি না।আমি ওর জন্য জীবনও দিতে পারব।একথা শুনার পর আমি অনুভূতিহীন হয়ে পড়লাম।তার
কোনকথাই আমার কানে ঢুকছিলনা।শত চেষ্টা করেও নিজের অশ্রু রুখতে পারলাম না।পাছে ও
দেখে ফেলে আমি ওকে বিদায় না জানিয়ে দ্রুত চলে এলাম।নিজেকে প্রতারিত মনে হতে
লাগল।সেদিন রাতে ও হাজারবার ফোন করল কিন্তু রিসিভ করলামনা।কারণ জবাব দেবার কিছুই
ছিলনা।রাত দুটোর দিকে মেসেজ আসল ওর মোবাইল থেকে।পড়ে আমার আক্কেল গুড়ুম। "আমার
পুরো কথা না শুনে চলে এলে কেন?আরে গাধা আমার
ভালবাসার পুরুষটা তুমি ছাড়া আর কেউনা ।" কিষ্ঞিত্ লজ্জা এবং ক্ষোভ নিয়ে তাকে
ফোন দিলাম।কিন্তু তার সেই ট্রেডমার্ক হাসি শুনে আমার সব অভিমান কর্পূরের মত উবে
গেল।
আমাদের ভালবাসা পুরোদমে চলছিল
যাকে বলে in full swing.সামনে তার
জন্মদিন।তাকে একটা সারপ্রাইজ না দিলেই নয়।ও সমুদ্র খুব পছন্দ করত।ঠিক করলাম ওর
জন্মদিনে দুজন মিলে বীচে যাব।সারাদিন একসাথে কাটাব।যেই ভাবা সেই কাজ।জন্মদিনে তাকে
প্রথম উইশটা আমিই করলাম।প্রথমে রাজি না থাকলেও আমার জোরাজুরিতে বীচে যেতে রাজি
হল।দুজনে মিলে অনেক মজা করলাম।সারাদিন একসাথে কাটালাম।ফিরে আসতে মন চাইছিলনা।ঠিক
করলাম রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরব। ওইসময় বীচে প্রত্যেকদিনের মত কিছু ছেলে বাইক রেসিং
খেলছিল।আমরা দুজন হাত ধরে বসেছিলাম আর গল্প করছিলাম।হঠাত্ একটা বাইক এসে যে পাশে
ও বসে ছিল সে পাশে ধাক্কা দিল।
কিছু বুঝার আগেই দুজনি ছিটকে
পড়লাম রাস্তায়।আমি চোখ খুলে দেখলাম আমার পাশে ওর সুন্দর মুখটা সম্পূর্ণ
রক্তাক্ত।আমি হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে তার হাত ধরতে চাইলাম।স্পর্শও করলাম। কি শীতল সে
হাত।আমি কখনই হাত ছাড়তাম না।কিন্তু এ পৃথিবীর মানুষ খুবই স্বার্থপর।কয়েকজন আমাকে
ধরে জোর করে গাড়িতে তুলতে লাগল।এরপর কিছুই মনে নেই।কিছুই না...
যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি
হাসপাতালে।চারদিকে ফিনাইলের তীব্র গন্ধ।স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আমি ওর কথা জিজ্ঞাসা
করলাম মায়ের কাছে।মা ফুঁপিয়ে কাদতে থাকে।আমার আর বুঝতে দেরি হল না কেন ওর হাত এত
ঠান্ডা ছিল।
আমি একটুও কাঁদতে পারলাম না।
এখনও পারিনা। কারণ এসবের জন্য যে আমি দায়ী।আমার ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে ওকে।নিজেকে
অপরাধী মনে হয়।আমি ওকে বীচে না নিলে ও হয়ত বেঁচে থাকত।কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে
পারিনা।মনে হয় কেন যে আমিও মারা গেলাম না।আবার মাঝে মাঝে মনে হয় এটা
দুঃস্বপ্ন।একটু পর ওর ফোনে আমার ঘুম ভাঙবে।আর ও অভিমানী কন্ঠে বলবে:
>'আর কতক্ষণ
ঘুমাবা...তাড়াতাড়ি ওঠে ফোন দাও...সারারাত কথা হয়নি...তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে
আমার কষ্ট হয়...'
আমার তখন চিত্কার করে বলতে
ইচ্ছে করে:
>আমি আর কত রাত তোমার সাথে
কথা না বলে থাকবো??? আমারো যে ভীষণ
কষ্ট হয়....
লিখেছেন-ইমতিয়াজ মাহমুদ
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/abegmoy.valobasha/posts/240482799365210
No comments:
Post a Comment