Sunday, June 10, 2012

একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনা [Paranormal Stories - 1 ]




।। একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনা ।।
জানিয়েছেনঃ শাকিলা তুবা
“বাসায় কাজের লোক না থাকলে আমার কি যে ঝামেলা যায়, এ কথাটা শাহেদ কখনোই বুঝলো না। হুট করে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে বাসায় ফিরলো। কি আর করা! অগত্যা রান্না বান্না করে সবাইকে খাইয়ে বিদায় দিতে দিতে রাত ১২টা বেজে গেল। আমিও থালাবাটিগুলো নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম। সব ধুয়ে অবসর হতে হতেই ভাবলাম কাল সকালের নাশতার জন্যে সবজি কেটে ফ্রিজে রেখে দিই।সকালে উঠে ক’টা রুটি বানিয়ে, 
সবজিটা ভেজে দিলেই হবে। আর ডিম তো আছেই পোচ করে দেবক্ষন।
বেডরুমে ঢুকে দেখি বাহ শ্রীমান তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কি আরামের একটা ঘুম দিয়েছেন! পুরুষমানুষগুলো কি যে স্বার্থপর হয়! এই যেমনআমার ছেলেটা। নয় বছর বয়স হয়েছে, ওর সব কিছু এখনো আমাকেই করে দিতে হয়। মেয়েটাপাঁচ বছরের। অথচ দেখো কি লক্ষী। আজো যখন বাসায় এত গেস্ট, মেয়েটা আমাকে টেবিলেপ্লেট সাজাতে সাহায্য করলো। গ্লাসগুলো সাজিয়ে দিল। আর ছেলেটা বসে বসে তখনকার্টুন দেখছিল।
আমি বাথরুমে ঢুকে মুখহাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর মুখে ক্রিম ঘঁষতে ঘঁষতে একদম বিছানায়। শরীর আর বইছে না। ওয়াল ঘড়িতে দেখলাম সময় রাত দেড়টা বাজে।হাত বাড়িয়ে বেডসুইচ অফ করে শুয়ে পড়লাম। আমার বাঁদিকে শাহেদ, ডানপাশে মেয়ে টায়রা আর ওর পাশে দেয়াল বরাবর ছেলে টোকন। ওদের দিকে একবারতাকিয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় ডুবে গেলাম।
চোখটা লেগে এসেছিল প্রায়। কোন এক আজানা কারনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে। পাশ ফিরে শুতেগিয়ে হোঁচট খেলাম মনে মনে। বাইরের স্ট্রীট ল্যাম্পের আলো পর্দা ছাড়িয়ে আমার ঘরে এসে এক চিলতে ফিতের মত পড়ে থাকে প্রতিদিন। আজো পড়েছে। সে আলোয় আমি দেখলাম, সম্পূর্ন অপরিচিত মোটা, কালো, মধ্যবয়স্ক এবং কুৎসিতএক লোক মুখ হা করে আমার পাশে ঘুমুচ্ছে। আমার সমস্ত শরীর যেন অবশ হয়ে আসতে চাইলো। কেমন যেন বিশ্রী একটা গন্ধ চারপাশে। কোনমতে পাশ ফিরে দেখলাম ঐপাশে কালোকালো দু’টো অপরিচিত ছেলেমেয়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছি না! এবার আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিছানাটা আমার নয়, এমনকি বাড়ীটাও। কেমন যেন পুরনো দিনের একটা বাড়ী। হায়হায়, এ আমি কোথায়? বাড়ী যদি অন্যের হয় বেডসুইচটা কি আছে? কোন কিছু না ভেবেই আমিলাফ দিয়ে উঠে বসে হাত বাড়িয়ে বেড সুইচটা অন করে দিলাম। আলো জ্বলে উঠতেই আমার বুকটা যেন আরো হিম হয়েউঠলো। দেখি, আমার বর শাহেদ আর ছেলেমেয়ে দু’টো বিছানায় উঠে বসে আছে আর একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদেরদৃষ্টিতে হিমশীতল শূণ্যতা বুঝিবা মৃত মানুষের চোখ। আমি চীৎকার করতে করতে ছুটে গেলাম দরজার দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে একঝলক শুধু দেখলাম ওরা সেই একই ভাবে বসে আছে তবে দৃষ্টিটা আমার উপর।
কোনরকমে গিয়ে কিচেনে ঢুকলাম। ঢুকতেই আমার হৃৎপিন্ডটা বের হয়ে আসবার উপক্রম হল। দেখি অনেকগুলো অচেনা মহিলা আমারই রান্নাঘরে। পিঠা বানাচ্ছিলবুঝিবা। তাদের সামনে ছড়ানো চালের গুঁড়ি, কোড়ানো নারিকেল আর গুড়। ওরা হাসি আনন্দে কলকল করছিল। আমি ঢুকতেই সবাই খুব অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে, সবারই চোখ ভয়ে বিস্ফারিত। তারপরই ওরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, ভূ—উ—ত, ভূ—উ—ত বলে। আর একজন আমার গায়ে ছুড়ে দিলো চালের গুঁড়াগুলো। আমি পাগলের মতো ওই ঘর থেকেও বেরিয়ে এলাম।
এখন আমি বেডরুমে ঘুরছি, রান্নাঘর-ড্রইংর ুম সব ঘুরছি। ভোজবাজির মত উধাও হয়ে গেছে সব। কেউ নেই। এমন কি আমার স্বামী বা ছেলেমেয়েরাও কোথাও নেই। ডাইনিং টেবিলে বসে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ডায়েরী লিখছি। কেন লিখছি তাও জানিনা। আমার সারা গায়ে এখনো চালের গুঁড়া লেগে আছে,গলায় হাতে, কাপড়ে। এত রাতে, এত্তো বড় একটা বাড়ীতে আমি একা। আমার মতো ভীতু মানুষ একদম একা। কি করে এটা সম্ভবহলো জানিনা। আমি কাঁদছি আর বিড়বিড় করে ডাকছি, শাহেদ, শাহেদ---“
এটা আমার ছোট খালার লেখা একটা ডায়েরীর অংশবিশেষ। আঠারো বছর আগে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে উনি ঘুমন্ত অবস্থাতেই হার্ট এটাক করা মারা যান। খুবই আশ্চর্যের বিষয় হলো, উনি যেরাতে মারা যান ডায়েরীটা সে রাতের। মারা যান ঠিক রাত দেড়টায়, যখন আমার খালু আর খালাতো ভাইবোন টায়রা, টোকন ঘুমিয়ে ছিল। খালু টয়লেটে যাবার জন্যে রাত দুইটায় ঘুমথেকে উঠে দেখেন খালার সারা শরীর চালের গুঁড়ায় মাখামাখি আর তার শরীরটা তখনো গরম। ডাক্তার এসে মত দেন যে উনি রাত দেড়টায় পৃথিবী ছেড়েছেন।

ব্ল্যাক ম্যাজিক [Small Tale -4]





[ঘটনা-২]
কিছুদিন পর আবার বন্ধুটির ফোন।।বলল,তোর গ্রামের বাড়ি নান্দাইলে না??????হুম,কেন ,কি হইসে??নাওরীর কুদ্দুস কবিরাজ এর নাম শুনসস???আমি উনার নাম আগে শুনিনাই।
আমি নাওরী যামু,তোর যাওয়াই লাগব।কি আর করা গেলাম।নাওরী জায়গাটা আমার গ্রামের বাড়ি থেকে খুব দূরেনা।হঠাত কাওকে না জানিয়ে গ্রামে আসছি ব্যপারটা নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।তাই আত্নগোপনের মতই ছিলাম।কুদ্দুস মিয়ার বাড়িতে উঠলাম।একটা টিনের ঘর,একটা ছনের ঘর,আরেক টা রান্নাঘর।বাড়ির উঠোন টা বেশ বড়ই।লোকমুখে শুনলাম উনি তাবিজ করে মানুষ বশ করায়।অনেককে মেরেও ফেলেন।বন্ধুকে বলেছিলাম,এইকাজ গুলো কুফরী।ধর্ম নিয়ে অনেক জ্ঞানই দিয়েছি।কিন্তুফলাফল শুন্য।দেখলাম কুদ্দুস মিয়া উঠোনে বসেই সবার সমস্যা সমাধান করেন।তখন রাত ৮টা।আমাদের কে বলল,আপনাদের খাবার দেয়া হয়েছে ওই ঘরে।খেয়ে বিশ্রাম করেন।আমি আসছি।পুটি মাছের ঝোল,লাল শাক আর ডাল দেয়া হয়েছে,সাথে মোটা চালের ভাত।।খেয়ে বসে আছি।।উনি আসল।বলল,উঠোনে আসেন।গেলাম,বসলা ম।উনি সিগেরেট ধরিয়ে সমস্যা জানতে চাইলেন।সব বলা হল।সব শুনে উনি বললেন,মেয়ের বাপকেতাবিজ করা লাগবে।ফ্রেণ্ড বলল করেন।ফ্রেণ্ড এর মাথা থেকে একটা চুল ছিড়ল।কয়েকটা বই আনল।একটা বই এর নাম আমারস্পষ্ট মনে আছে যার নাম তাবিজ করার ৩৬০টি উপায়।হারিকেন এর আলোয় তিনি বই ঘাটছিলেন আর আমি তাকে খেয়াল করছিলাম।আমার মামারাএলাকায় অনেক সম্ভ্রান্ত।তাদে র পরিচয় দেয়ার পর খাতির টা একটু বেড়ে গেল বলেই মনে হয়।উনাকেজিজ্ঞেস করলাম তাবিজে কাজ হয় কিনা।উনি বললেন আলবৎ হয়।তাবিজে কি মানুষ মারা যায়?উনি বললেন,মানুষ মারাটাই সহজ।প্রথমে বেদ মারা হয়।লোকটা বমি করে।এ অবস্থা অনেক দিন চলে।একসময় মৃত্যু নিশ্চিত।।আমি জিজ্ঞেস করলাম বুঝতে পারে না তাবিজ কে করল??উনি ফিক করে হাসল।আবার জিজ্ঞেস করলাম,ডাক্তার ভাল করতে পারে না???উনি বললেন,কোন মতেই না।একমাত্র আমার মত এ লাইনে যারা আছে,তারাই এ তাবিজ ভাঙ্গার ক্ষমতা রাখেন।আমার থেকে আরো অনেকেই আছে যারা আরো ভাল কাজ জানে।রাত তখন ২টা বাজে।উনার মোবাইলে একটা ফোন।সিলেট থেকে একজন করেছে কাউকে তাবিজ করতে।কথায় বুঝতে পারলাম।আমি জিজ্ঞেস করলাম তাবিজ করতে কি কি লাগে??উনি বললেন,খুবই সহজ।যাকে তাবিজ করতে হবে তার নাম,তার বাবার নাম।তারপর একটা চুল দিয়ে একটা মন্ত্র পড়ে মাটির তৈরীএকটা পুতুল সেই চুল দিয়ে বেধে রাখলেই হয়।।তাবিজ ভাঙ্গার জন্যও বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।।তিনি আমাদেরকেকিছু কাজ দিলেন।মেয়ের বাড়ির সামনে মেয়ের একটুকরো কাপড় পুড়াতে হবে।বাড়ি টাকে কেন্দ্র করা চার পাক ঘুরতে হবে।বলা বাহুল্য,বন্ধুটা র কাছে মেয়েটার কিছু কাপড় ছিল।কুদ্দুস মিয়া বললেন,কিছু স্বর্ণের কাজ আছে।খরচ বেশী পড়বে।আমি ফ্রেণ্ডকে না করেছিলাম।সে আমার কথা শুনেনাই।ভার্সিট ি তে ভর্তির নাম করে আমার রিসিট দেখিয়ে বাসা থেকে অনেক টাকা নেয়।তার কাজ হয়েছে কিনা সে ব্যপারে কিছুবলব না।কিছু জরূরী কথা বলছি।
এ সমস্ত কালো যাদু,তাবিজ,তন্ত ্র মন্ত্রে কাজ অবশ্যই হতে পারে।।কিন্তু কতিপয় শয়তানরাই এ পথকে বেছে নেয়।এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যে কি ভয়াবহ তাকবিরাজ,তান্ত্রি করা খুব অচিরেই বুঝতে পারে।একটা কথা শুনেছিলাম,সুরা ফাতিহা উলটো করে পরে কোন গাছে ফু দিলে গাছটা নাকি ২ভাগ হয়ে যায়।পরিণামে লোকটি কাফির হয়ে যায়।যেহেতু আমার কাফির হওয়ার কোন ইচ্ছা নাই,তাই আমি কখোনই এই পাপ কাজ করার দুসাহস দেখাইনি নাই।কথাটা নানার কাছ থেকে শোনা।কুরআন শরীফের সুরা উলটা পড়ে,আরো বিভিন্ন হাদীস কালাম, শয়তানের পথ ধরে কালো যাদু চর্চা কর তারা মানুষের ক্ষতি করে নিজের পকেট ভরে।বাজারে তো এ সমস্ত বই ওপাওয়া যায়।নীলক্ষেত গিয়ে খোজ করলেই পাওয়া যায়।এসকল তান্ত্রিক লোকেরা অত্যন্ত ভয়ংকর।নিজের মনুষ্যত্ব কে শয়তানের কাছে বেচে শয়তানের কাছ থেকে অনিষ্টের সার্টিফিকেট কিনে এ দলের লোকেরা।এ দুনিয়া তো কর্মক্ষেত্র।বেত ন পরের দুনিয়ায় পাবেন।আমরা যেন কখনোই এসব কালোযাদু চর্চা না করি এবং কোন তান্ত্রিক লোকের কাছে ধর্ণা না দেই।কোন কিছু দেওয়ার মালিক একমাত্র তিনি।অনেকেই বলেন,এই মেয়েটারে তাবিজ করমু।আমাকে দাম দেয় না।।আমার স্বামী আমাকে ভালবাসে না।ওরে তাবিজ করব।।চাইলে তো আল্লাহ কেও পাওয়া যায়।উনার কাছেই চান।এসব ফন্দি ফিকিরি মোটেও কল্যান বয়ে আনেনা।।বয়ে আনলেও আপনি আর মুমিন থাকছেন না।আজকাল টিভি তে অনেক বিজ্ঞাপন দেখি,ইজমা পাথর,জাপানি ব্রেস্লেট...আরো অনেক কিছুই...।এগুলোর কর্মক্ষমতা নিয়ে আমার যথেষ্ট প্রশ্ন আছে।।
যদি এ প্রতিমূলক উপস্থাপন আপনাদের ভাল লাগে,তাহলে অবশ্যি লাইক দিবেন।আপনাদেরলাইক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা লেখতে বসি।।