কে কে ওখানে?
আমি।
আমি কে ?
বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ?
আমি !
আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আমি কেউ না।
তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম। এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয়। এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে। ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনে দেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রী তিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু’দিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা ।
অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম ।
হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়াল করে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেই খুট খুট শব্দ । কখন যে হুস হুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে । চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকা করে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ?
পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ার আগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো ? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী ।
বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়ে গেলো । মনে হলো কেউ পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি । ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না ।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়ে হাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে ।
কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার ।
শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম ।
একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার করে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে ।
তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ । তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না ।
অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না ।
হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দু’জন চোখাচোখি তাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপ করে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দু’হাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।
অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া ।
আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলো আমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ?
এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো ।
আমি আবার বললাম কে ?
-আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না ।
-আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে ।
-আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো ।
-আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো ।
এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে ।
(২)
পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটা শব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমার ঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবার মনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমন হয় । নিজেরই পছন্দ হলো না ব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । চিন্তা করতে পারছি দেখে ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তি সূর্চক শব্দ “চুক”বেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ।
আপনি কে ? দয়া করে বলবেন ?
মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো ।
এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ?
-আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ ।
-কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না ।
-চলে যেতে বলছেন ?
আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম ।
-আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম ।
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর । আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ও যদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ?
আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে । আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ?
আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম ।
মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে ।
আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?
দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো ।
আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছি আমার থর্ট রিড করতে পারছে ।
আপনি কেন এসেছিলেন ...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না ।
-এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে ।
কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি ।
-আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো ।
জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম ।
আমাকে না দেখাই ভাল । আমরা দেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত ।
তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ?
না ।
আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ?
আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি ।
মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না ।
আমি এখন যাবো ।
কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ?
আরেক দিন বলবো ।
তার মানে এখনই চলে যাবেন ?
হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমন সময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ।
আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম ।
পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না । সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন ,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি ।।
আমি।
আমি কে ?
বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ?
আমি !
আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আমি কেউ না।
তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম। এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয়। এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে। ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনে দেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রী তিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু’দিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা ।
অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম ।
হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়াল করে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেই খুট খুট শব্দ । কখন যে হুস হুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে । চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকা করে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ?
পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ার আগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো ? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী ।
বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়ে গেলো । মনে হলো কেউ পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি । ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না ।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়ে হাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে ।
কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার ।
শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম ।
একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার করে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে ।
তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ । তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না ।
অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না ।
হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দু’জন চোখাচোখি তাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপ করে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দু’হাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।
অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া ।
আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলো আমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ?
এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো ।
আমি আবার বললাম কে ?
-আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না ।
-আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে ।
-আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো ।
-আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো ।
এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে ।
(২)
পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটা শব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমার ঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবার মনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমন হয় । নিজেরই পছন্দ হলো না ব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । চিন্তা করতে পারছি দেখে ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তি সূর্চক শব্দ “চুক”বেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ।
আপনি কে ? দয়া করে বলবেন ?
মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো ।
এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ?
-আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ ।
-কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না ।
-চলে যেতে বলছেন ?
আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম ।
-আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম ।
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর । আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ও যদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ?
আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে । আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ?
আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম ।
মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে ।
আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?
দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো ।
আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছি আমার থর্ট রিড করতে পারছে ।
আপনি কেন এসেছিলেন ...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না ।
-এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে ।
কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি ।
-আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো ।
জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম ।
আমাকে না দেখাই ভাল । আমরা দেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত ।
তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ?
না ।
আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ?
আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি ।
মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না ।
আমি এখন যাবো ।
কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ?
আরেক দিন বলবো ।
তার মানে এখনই চলে যাবেন ?
হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমন সময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ।
আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম ।
পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না । সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন ,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি ।।