যুবতী নারীর সৃষ্টিগত প্রকৃতি মাসিক রক্তস্রাব তার ইদ্দত ইত্যাদির হিসাব দেয়, গর্ভের খবর জানা যায়। আর ঐ স্রাবই তার গর্ভস্থিত ভ্রূণের আহার হয়।
গর্ভাবস্থাতেও মাসিক আসতে পারে। এমন হলে এই মাসিকে তালাক হারাম নয়। কারণ, তার ইদ্দত হল গর্ভকাল।[1]
অভ্যাসগত দিনে আগে-পিছে হয়ে মাসিক হলেও তা মাসিকের খুন, অভ্যাস ৭ দিনের থাকলে যদি ৬ দিনে পবিত্রা হয় তবে সে পবিত্রা, ৮ম দিনেও খুন বিদ্যমান থাকলে তা মাসিকের খুন।[2]
মাসিকের খুন সাধারণতঃ রক্তের ন্যায়। কিন্তু মাঝে বা শেষের দিকে যদি মেটে বা গাবড়া রঙের খুন আসে, তবে তাও মাসিকের শামিল। অবশ্য পবিত্রা হওয়ার পর যদি ঐ ধরনের খুন আসে, তবে তা মাসিক নয়।[3]
কোন স্ত্রীলোকের ১দিন খুন পরদিন বন্ধ; অনুরূপ একটানা সর্বদা হতে থাকে তবে তা মাসিক নয় বরং ইস্তিহাযা। (এর বর্ণনা পরে আসছে।)
অভ্যাসমত ঋতুর কয়দিনের ভিতরে যদি একদিন খুন একদিন বন্ধ থাকে, তবে তার পুরোটাই মাসিক ধর্তব্য। খুন বন্ধ থাকলেও পবিত্রতা নয়।[4]
তবে মাঝের ঐ দিনগুলিতে যদি পবিত্রতার সাদাস্রাব দেখা যায়, তবে তা পবিত্রতা।[5]
মাসিকের এই অশুচিতায় যে সব ধর্মকর্মাদি নিষিদ্ধ তা নিম্নরূপঃ-
১। নামাযঃ মাসিকাবস্থায় নামায পড়া বৈধ নয়। পবিত্রা হলে গোসল করে তবেই নামায পড়বে। যে অক্তে কেবল এক রাকআত নামায পড়ার মত সময়ের পূর্বে পবিত্রা হবে গোসলের পর সেই অক্তেরও নামায কাযা পড়তে হবে। যেমন যদি কেউ সূর্যাস্তের ২ মিনিট পূর্বে পবিত্রা হয় তবে (সূর্যাস্তের পর) গোসল করে আসরের নামায কাযা পড়বে অতঃপর মাগরিবের নামায আদায় করবে। যে অক্তে গোসল করবে কেবল সেই অক্ত থেকে নামায পড়া যথেষ্ট নয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ.
‘‘যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পায়, সে নামায (নামাযের সময়) পেয়ে যায়।’’[6]
مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ رَكْعَةً قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ وَمَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْفَجْرِ رَكْعَةً قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَك.
‘‘যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকআত পেয়ে যায়, সে আসর পেয়ে নেয় এবং যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রাকআত নামায পেয়ে যায়, সে ফজর পেয়ে নেয়।’’[7]
সুতরাং কোন ওয়াক্তে প্রবেশ হওয়ার পর অথবা ঐ নামায পড়তে পড়তে মাসিক শুরু হলে পবিত্রতার পর ঐ ওয়াক্তের নামাযও কাযা পড়তে হবে। যেমন যদি কারো সূর্যাস্তের ২ মিনিট পর ঋতু শুরু হয় (যাতে ১ রাকআত নামায পড়া যায়), তাহলে পবিত্রতার গোসলের পর মাগরিবের ঐ নামায কাযা পড়বে।[8]
২। কুরআন স্পর্শ ও পাঠঃ
নাপাকে কুরআন স্পর্শ অবৈধ।[9]
অনুরূপ মুখে উচ্চারণ করে ঋতুমতী কুরআন তেলাঅত করবে না। মনে মনে পড়তে দোষ নেই। অবশ্য যদি ভুলে যাওয়ার ভয় হয় অথবা শিক্ষিকা ও ছাত্রীর কোন আয়াত উল্লেখ করা জরুরী হয়, তবে উচ্চারণ করতে প্রয়োজনে বৈধ।[10]
পক্ষান্তরে দুআ দরূদ, যিকর, তসবীহ তহলীল, ইস্তেগফার, তওবা, হাদীস ও ফিক্হ পাঠ, কারো দুআয় আমীন বলা, কুরআন শ্রবণ ইত্যাদি বৈধ।[11]
কুরআন মাজীদের তফসীর বা অনুবাদ স্পর্শ করে পড়া দোষের নয়। সিজদার আয়াত শুনে সিজদা করাও বৈধ।[12]
ঋতুমতীর কোলে মাথা রেখে তার সন্তান অথবা স্বামী কুরআন তেলাঅত করতে পারে।[13]
৩। রোযা পালনঃ
মাসিকাবস্থায় রোযা পালন নিষিদ্ধ। তবে রমযানের ফরয রোযা পরে কাযা করা জরুরী। (কিন্তু ঐ অবস্থায় ছাড়া নামাযের কাযা নেই।)[14]
রোযার দিনে সূর্যাস্তের ক্ষণেক পূর্বে মাসিক এলে ঐ দিনের রোযা বাতিল; কাযা করতে হবে। সূর্যাস্তের পূর্বে মাসিক আসছে বলে মনে হলে; কিন্তু প্রস্রাবদ্বারে খুন দেখা না গেলে এবং সূর্যাস্তের পর দেখা দিলে রোযা নষ্ট হবে না।
ফজর উদয় হওয়ার ক্ষণেক পরে মাসিক শুরু হলে ঐ দিনে রোযা হবে না। ফজর উদয়ের ক্ষণেক পূর্বে খুন বন্ধ হলে গোসল না করলেও ঐ দিনের রোযা ফরয।[15]
ফজরের পর গোসল করে নামায পড়বে, অনুরূপ স্বামী-স্ত্রী সঙ্গম করে সেহরী খেয়ে পরে ফজরের আযান হয়ে গেলেও রোযার কোন ক্ষতি হয় না। গোসল করে নামায পড়া জরুরী।[16]
রোযা রেখে দিনের মধ্যভাগে খুন এলে রোযা নষ্ট ও পানাহার বৈধ। যেমন মাসিকের দিনগুলিতে মহিলা পানাহার করতে পারবে এবং দিনে মাসিক বন্ধ হলেও দিনের অবশিষ্ট সময়ে পানাহার বৈধ।[17]
৪। তওয়াফঃ
ফরয, নফল সর্ব প্রকার তওয়াফ অবৈধ। অবশ্য সায়ী এবং মিনা, মুযদালিফাহ ও আরাফাতে অবস্থান, পাথর মারা ইত্যাদি বৈধ। যেমন বিদায়ী তওয়াফের পূর্বে মাসিক শুরু হলে ঐ তওয়াফ করা ওয়াজেব থাকে না।[18]
কিন্তু হজ্জ বা উমরার তওয়াফ পাক হওয়ার পর করতেই হবে। নচেৎ হজ্জ বা উমরা হবে না।[19]
৫। মসজিদ ও ঈদগাহে অবস্থানঃ
মাসিক অবস্থায় মসজিদে বা ঈদগাহে বসা অবৈধ।[20] অবশ্য মসজিদের বাইরে থেকে মসজিদের ভিতরে স্থিত কোন বস্ত্ত উঠিয়ে নেওয়া অবৈধ নয়।[21]
৬। স্বামী-সঙ্গমঃ
মাসিকাবস্থায় সঙ্গম হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَيَسْأَلونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذىً فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ﴾
‘‘ওরা তোমাকে রজঃস্রাব (কাল ও স্থান) প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে, তুমি বল উহা অশুচি। সুতরাং রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংসর্গ থেকে দূরে থাক এবং পবিত্রা না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকট (সঙ্গমের উদ্দেশ্যে) যেও না। অতঃপর যখন তারা পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদেরকে এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকে ভালোবাসেন।’’[22]
মাসিকাবস্থায় সঙ্গম করে ফেললে এক দ্বীনার (সওয়া ৪ গ্রাম সোনা বা তার মূল্য) অথবা অর্ধ দ্বীনার সদকা করতে হবে।[23]
অবশ্য অসময়ে যৌনক্ষুধা নিবারণের জন্য স্ত্রী জাঙ্গিয়া পরে লজ্জাস্থান (প্রস্রাব ও পায়খানাদ্বার) পর্দা করে অন্যান্য স্থানে বীর্যপাত ইত্যাদি সর্বপ্রকার যৌনাচার বৈধ।[24]
যেমন, পায়ু ও যোনীপথে সঙ্গম করার আশঙ্কা না থাকলে বা ধৈর্য রাখতে পারলে স্ত্রীর ঊরু-মৈথুনও বৈধ।
প্রকাশ যে, ঋতুমতী স্ত্রীর এটো কিছু বা তার মুখের লালা নাপাক নয়।
৭। তালাক দেওয়াঃ
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, মাসিকাবস্থায় তালাক দেওয়া বৈধ নয়। আর দিয়ে ফেললেও ঐ তালাক বাতিল; ধর্তব্য নয়। অবশ্য স্ত্রীর সাথে বাসর করার পূর্বে, গর্ভকালে, অথবা খোলা তালাক প্রার্থনাকালে মাসিকাবস্থায় থাকলে তালাক দেওয়া অবৈধ নয়।[25]
মাসিকাবস্থায় বিবাহ আক্দ (বিয়ে পড়ানো) বৈধ। তবে বাসর না করাই উত্তম। বর মিলন না করে ধৈর্য রাখতে পারলে বাসর করবে; নচেৎ না।[26]
মাসিক বন্ধ হলেই গোসল ফরয। যে সময়েই হোক গোসল করতে হবে। দেশীয় প্রথা অনুযায়ী অথবা লজ্জার খাতিরে নির্দিষ্ট সময় থেকে গোসল পিছিয়ে নামায নষ্ট করলে গোনাহগার হবে। আরো খুন আসবে সন্দেহে কোন নামায পিছিয়ে দিলে কাযা পড়ে নেবে।
মহিলা গোসল নিম্নরূপে করবেঃ
প্রথমে সাবানাদি দিয়ে লজ্জাস্থান ভালোরূপে ধুয়ে হাত পরিষ্কার করে নেবে। অতঃপর গোসলের নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পূর্ণ ওযু করবে, তারপর ৩ বার মাথায় পানি নিয়ে ভালো করে এমনভাবে ধৌত করবে, যেন চুলের গোড়ায়-গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অতঃপর সারা শরীর ধুয়ে নেবে। পরে বস্ত্রখন্ডে বা তুলোর মধ্যে কোন সুগন্ধি লাগিয়ে লজ্জাস্থানে রেখে নেবে।
গোসলের পর আবার খুন দেখা দিলে যদি মেটে বা গাবড়া রঙের খুন হয়, তাহলে কোন ক্ষতি হবে না। মাসিকের মত হলে পুনঃ বন্ধ হলে আবার গোসল করবে।[27]
নামাযের অক্তে সফরে মাসিক বন্ধ হলে, অথবা পানি না থাকলে, অথবা পানি ব্যবহার ক্ষতিকর হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে।
সবাস্থ্যের ক্ষতি না হলে পরিজনের সাথে একই সঙ্গে হজ্জ বা রোযা পালনের উদ্দেশ্যে বা অন্য কোন প্রয়োজনে মাসিক বন্ধ রাখার ঔষধ ব্যবহার বৈধ। তবে এতে যেন স্বামীকে (ইদ্দতে) ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্য না হয়।[28]
[2] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা,১৪পৃঃ)
[3] (আবু দাঊদ ৩০৭ নং)
[4] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২০৭-২০৮পৃঃ)
[5] (ঐ ২০৭পৃঃ)
[6] (বুখারী,মুসলিম)
[7] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৬০১নং, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা,১৯পৃঃ)
[8] (ঐ১৮পৃঃ)
[9] (সূরা আল-ওয়াক্বিয়া (৫৬) : ৭৯)
[10] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২০-২১পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৬পৃঃ)
[11] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ১৯পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৮পৃঃ)
[12] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৭৪)
[13] (বুখারী, মুসলিম, জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৬৩)
[14] (বুখারী ৩২১নং, মুসলিম ২৬৫নং, আবু দাঊদ ২৬৩নং)
[15] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৭৩)
[16] (বুখারী, মুসলিম, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২২পৃঃ)
[17] (মুমঃ ৪/৫৪১-৫৪২)
[18] (বুখারী, মুসলিম)
[19] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৩-২৪পৃঃ)
[20] (বুখারী,মুসলিম)
[21] (মুসলিম, আবু দাঊদ প্রভৃতি, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৭পৃঃ)
[22] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২২)
[23] (আবু দাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২২পৃঃ)
[24] (বুখারী, মুসলিম, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৫পৃঃ)
[25] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৭পৃঃ)
[26] (ঐ ২৮ পৃঃ)
[27] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪০)
[28] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৩, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪১)
মাসিকের খুন একটানা আসতেই থাকলে অথবা ২/১ দিন ছাড়া সারা মাসে খুন বন্ধ না হলে এমন খুনকে ইস্তিহাযার খুন বলে। আর যে নারীর এমন খুন আসে তাকে মুস্তাহাযা বলে।
মুস্তাহাযার তিন অবস্থা হতে পারেঃ-
১- একজন মহিলার পূর্বে যথানিয়মে মাসিক হত। কিন্তু পরে ধারাবাহিক খুন এসে আর বন্ধ হয় না। সুতরাং এমন মহিলার অভ্যাসগতভাবে যে ক’দিন খুন আসত সেই ক’দিনকে মাসিক ধরে বাকী পরের দিনগুলিকে ইস্তিহাযার খুন ধরে নেবে। সুতরাং পরের এই দিনগুলিতে গোসলাদি করে নামায-রোযা করবে।[1]
২- একজন মহিলার শুরু থেকেই একটানা খুন আসে। মাসিক ও ইস্তিহাযার দিন তার অজানা। এমন মহিলা কোন লক্ষণ বুঝে মাসিক ও ইস্তিহাযার মাঝে পার্থক্য নির্বাচন করবে। যেমন যদি ১০ দিন কালো এবং বাকী মাসে লাল খুন, অথবা ১০দিন মোটা এবং বাকী মাসে পাতলা খুন, অথবা ১০ দিন দুর্গন্ধময় এবং বাকী মাসে গন্ধহীন খুন দেখে তবে ঐ কালো মোটা ও দুর্গন্ধময় খুনকে মাসিকের এবং বাকী ইস্তিহাযার খুন ধরে নিয়ে পবিত্রা হয়ে নামায-রোযা করবে।[2]
৩- এমন মহিলা যার মাসিকের কোন নির্দিষ্ট দিন জানা নেই এবং কোন লক্ষণও বুঝতে পারে না, সে যখন থেকে প্রথম খুন দর্শন করেছে তখন থেকে হিসাব ধরে ঠিক সেই সময় করে প্রত্যেক মাসে ৬ বা ৭ দিন (সাধারণ মহিলাদের অভ্যাসমত) অশুচিতার জন্য অপেক্ষা করে গোসল করবে এবং বাকী দিনগুলিতে নামায-রোযা করবে।[3]
কোন ব্যাধির ফলে গর্ভাশয় তুলে ফেললে বা কোন এমন অপারেশন করলে যাতে মাসিক চিরদিনের মত বন্ধ হয়ে যায়; যদি তার পরেও কোনক্রমে খুন দেখা যায়, তবে সে খুন মাসিক বা ইস্তিহাযার নয়। বরং সেই খুন পবিত্রতার পর মেটে বা গাবড়া বর্ণের খুনের সমপর্যায়ের। এতে মহিলা অপবিত্রা হয় না এবং নামায রোযাও বন্ধ করা বৈধ নয়। এতে গোসলও ফরয নয়। খুন ধুয়ে নামাযের জন্য অযু যথেষ্ট। অনুরূপ যোনীপথে সর্বদা সাদাস্রাব দেখা দিলেও একই নির্দেশ।[4]
সুতরাং উক্ত প্রকার মহিলারা (মুস্তাহাযাগণ) পবিত্রা মহিলার মত। অতএব এদের জন্য নামায, রোযা, হজ্জ, স্বামী-সহবাস ইত্যাদি সকল কর্ম পবিত্রতার মতই পালন করা ফরয ও বৈধ। তবে সর্বদা খুন থাকলে পবিত্রতার জন্য প্রথম গোসলের পর প্রত্যেক নামাযের জন্য অন্তর্বাস বদলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু করবে। খুন বাইরে আসার ভয় থাকলে কাপড় বা তুলা বেঁধে নেবে।[5]
[2] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৪পৃঃ)
[3] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৫পৃঃ)
[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/২৯৮)
[5] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৭-৩৮পৃঃ)
প্রসবের ২/১ দিন পূর্ব থেকে বা প্রসবের পর থেকেই লাগাতার ক্ষরণীয় খুনকে নিফাসের খুন বলে। এই খুন সর্বাধিক ৪০ দিন ঝরতে থাকে এবং এটাই তার সর্বশেষ সময়। সুতরাং ৪০ দিন পর খুন দেখা দিলেও মহিলা গোসল করে নামায-রোযা করবে। অবশ্য ৪০ দিনের মাথায় যদি প্রসূতির মাসিক আসার সময় হয় এবং খুন একটানা থেকে যায়, তবে তার অভ্যাসমত মাসিককালও অপেক্ষা করে তারপর গোসল করবে।
৪০ দিন পূর্বে এই খুন বন্ধ হলেও গোসল সেরে নামায-রোযা করবে। স্বামী সহবাসও বৈধ হবে। কিন্তু ২/৫ দিন বন্ধ হয়ে পুনরায় (৪০ দিনের পূর্বেই) খুন এলে নামায-রোযা ইত্যাদি বন্ধ করবে এবং পরে যখন বন্ধ হবে অথবা ৪০ দিন পূর্ণ হলে গোসল করে পাক হয়ে যাবে। মাঝের ঐ দিনের নামায-রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং স্বামী সঙ্গমেরও পাপ হবে না।[1]
৪০ দিনের ভিতরে খুন মেটে বা গাবড়া রঙের হলেও তা নিফাসের খুন।[2]
মানুষের আকৃতি আসার পর (সাধারণতঃ ৮০ দিন পর) গর্ভপাত হলে বা ঘটালে যে খুন আসবে তা নিফাসের খুন। এর পূর্বে হলে তা নিফাস নয় বরং ইস্তিহাযার খুন। এতে নামায-রোযা করতে হবে।[3]
[2] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৩পৃঃ)
[3] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪৩,২৪৫, ফাতাওয়াল মারআহ ২৪পৃঃ)