▪ || কুফর থেকে সাবধান || ▪
••• || কুফরের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, ব্যাখ্যা ও কিছু উদাহরণ...|| •••
▪ কুফর কি ?
= 'ইসলামে অবিশ্বাস করাকে বলা হয় কুফর, এবং ইসলামে যে অবিশ্বাস করে, তাকে বলা হয় কাফির !'
.
.
.
.
না, ইসলামে কুফরের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ এতোটা সংকীর্ণ নয়...।
সরাসরি
ইসলামে অবিশ্বাস, কুরআন-হাদিসের সত্যতাকে অস্বীকার করা, রাসুল (স.)-কে নবী
বলে বিশ্বাস না করা, বা অমুসলিম-নাস্তিক্যবাদী হওয়াতেই কুফর বা কুফরী
সীমাবদ্ধ নয়। এগুলোর বাইরেও বিক্ষিপ্তভাবে নানা রকম কুফর রয়েছে...। রয়েছে
সেগুলোর নানান ধরনের প্রকারভেদ ও উদাহরণ... যেগুলোতে আমরা আজ চরমভাবে
নিমজ্জিত, কিন্তু সেগুলোকে কুফর হিসেবেই জানি না...।
▪ তাই কুফর থেকে বাচঁতে কেবল "৫ মিনিট" সময় ব্যয় করে পুরোটা লেখা অবশ্যই কমপক্ষে এক বার বুঝে বুঝে পড়ুন...।
.
.
.
|| ❌ || ১৬ প্রকারের কুফর, সেগুলোর ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত উদাহরণঃ
[১]
ইমানের
সাতটি বিষয়, কুরআন কিংবা হাদীসে বর্ণিত যেকোনো কিছু... যেমন তাওহীদ, শিরক,
বিদআত, রিসালাত, তাকদির, জ্বীন-ফেরেশতার অস্তিত্ব, আসমানি কিতাব, নজর
লাগার বাস্তবতা, হাদিসের সত্যতা, ফিতনাহ'র যুগে ঈসা (আ.) ও ইমাম মাহদীর
আগমন, হদ-কি[সা]স, জি[হা]দ-কি[তা]ল, আল ওয়ালা ওয়াল বা'রাহ ইত্যাদি যেকোনো
কিছুর বাস্তবতা বিষয়ে সন্দেহ কিংবা অবিশ্বাস করাই আভিধানিকভাবে কুফর...।
[২]
আল্লাহর কোন গুণাবলী বা সিফাতকে অস্বীকার করা, বা সন্দেহ করা...
• কুরআনের কোন আয়াতের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা, অযৌক্তিক মনে করা বা অপছন্দ করা...
• ইসলামের কোন বিধান বা কুরআনের কোন আয়াতকে এই যুগে অচল-অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর মনে করা,
• ইসলাম বা ইসলামের কোন বিধানকে প্রাচীন বা পশ্চাৎপদ-সেকেলে কিছু মনে করা,
• ইসলামের কোন বিধান বা কোন নবী-রাসুলকে গালি দেওয়া, তাদের প্রতি অশালীন বা বাজে ভাষায় কিছু বলা,
• কুরবানী, হদ-কি[সা]স বা অন্য কোনো ইসলামী বিধানকে অনৈতিক-বর্বর মনে করা,
•
কিংবা কুরআন-সুন্নাহ-ফিকহের কোনো সংস্কার' বা পরিবর্তন' প্রয়োজন আছে বলে
মনে করা স্পষ্টত কুফর... এবং এই কুফরে লিপ্ত ব্যক্তি স্পষ্টত কাফির...।
[৪৭:৮, ৬:২১, ৯:৩]
[৩]
যেকোন
ইসলামি আকিদাহ বা ইসলামী বিধান... যেমন পর্দা, বোরখা, দাড়ি, সুন্নতি
পোশাক, গীবতের বিধান, যিকির-আযকার ইত্যাদি কিছু নিয়ে কোন ধরনের
হাসি-ঠাট্টা তামাশা বা বিদ্রূপ করাই কুফর...। [৯:৬৫, ৪:১৪০]
—
কাউকে পালন করতে দেখে ঠাট্টা-তামাশা মজা করা বা মশকরা-উপহাস করাই কুফর...
এমন কোন কিছুর প্রতি বিদ্বেষ বা খারাপ-নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখাও
কুফর...।
— মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-ওলামা, হুজুর, দাড়ি-টুপি বা এধরনের ইসলামের কোনো শিআর (চিহ্ন) এর প্রতি বিরূপ ধারণা রাখাও কুফর,
—
কাউকে ইসলামের কোন বিধান যেমন দাড়ি, সুন্নাতি লেবাস, বোরখা, পর্দা ইত্যাদি
পালন করতে গিয়ে এমন কিছু বলা যাবে না, বা এমন কোন আচরণ করা যাবে না,
ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা যাবে না, যা কিনা তাকে সেটা পালনে নিরুৎসাহিত করে,
কেননা এটা মূলত কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়...।
•••
উল্লেখ্য, "ইসলামে প্রবেশ করতে ইসলামের প্রতিটি ছোট-বড় বিষয়েই পরিপূর্ণ
বিশ্বাস ও আনুগত্য করতে হয়, কিন্তু ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য
ইসলামের কোন একটি সামান্যতম-নগণ্য বিষয়ের প্রতি সামান্যতম নেতিবাচক ধারণা
রাখাই যথেষ্ট...।"
[৪]
কোন
হালাল জিনিসকে হারাম প্রমাণের চেষ্টা, কোন হারাম-নাজায়েয জিনিসকে হালাল
মনে করা, বা কোন হারাম-নাজায়েয জিনিসকে হালাল সাব্যস্ত করার চেষ্টা করাও
কুফর...। [৯:২৯]
— যেমন মদ, বিড়ি-সিগারেট,
জুয়া-লটারিতে অংশগ্রহণ, বাজি ধরা, ফ্রি-মিক্সিং, ভাগ্যগণনা, চোখের যিনা,
মিউজিক, সুদ-ঘুষ, কাউকে নাম বিকৃত করে ডাকা বা বিদ্রুপ করা ইত্যাদি
সুস্পষ্টত হারাম, এগুলো করলে কেউ কেবল পাপীষ্ঠ বা গুনাহগার হবে, কিন্তু
এগুলোকে হালাল বা জায়েয মনে করা স্পষ্ট কুফরি...।
—
এগুলোর কোনোটিকে জায়েয-হালাল প্রমাণের চেষ্টা করলে একজন ইসলাম থেকেই
বেরিয়ে যাবে...। এগুলো পরিপূর্ণরূপে ত্যাগ করতে না পারলেও তাই সমস্ত হারাম
ও নাজায়েয কাজ চিনে রাখার চেষ্টা করুন...।
[৫]
জাদু করা ও বান-টোনা মারা কুফর ও শিরক, অন্য কাউকে দিয়ে তা করানোও কুফর...। [২:১০২]
— কাফির-মুশরিকদের কুফরি-শিরক করার কাজে সহায়তা করাও হারাম ও কুফর...।
—
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন গাইরুল্লাহের ইবাদতের কাজ যেমন পূজা-অর্চনা,
অন্যান্য ধর্মের উপাসনা বা কোন কিছুতে কোন প্রকার সহায়তা করাও কুফর ও
শিরক...।
[৬]
তাকদীর
বা 'নির্ধারিত ভাগ্য' অস্বীকার করা। আল্লাহ 'আলিমুল গায়েব', তাই তিনি
আমাদের 'অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ' সবই জানেন এবং তা 'লাওহে মাহফুযে' লিপিবদ্ধ
করে রেখেছেন, সেখানে সামান্য সন্দেহ বা অবিশ্বাস করাও কুফর...।
—
আল্লাহ আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, ভালো-খারাপ বোঝার ক্ষমতা
দিয়েছেন, আমরা সেটা অনুযায়ী চলবো৷ আর যেহেতু আল্লাহ 'আলিমুল গায়েব', তাই
আমরা এর মাধ্যমে কি করবো না করবো সেটাও আল্লাহ জানেন, আর সেটাই নির্ধারিত
ভাগ্য, যা লাওহে উঠে মাহফুজে [কপালে নয়] আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন...।
এটাতে অবিশ্বাস বা সন্দেহ প্রকাশ করাই কুফর...৷ [৫৪:৪৯, ৬:৫৯]
•••
উল্লেখ্য, কপালে বিশ্বাস করা শরীয়াহসম্মত নয়। হিন্দুদের একটি বিশ্বাস
হচ্ছে সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে ভাগ্যদেবতা এসে মানুষের ভাগ্য তার কপালে ও
হাতে লিখে দিয়ে যায়, তাই ভাগ্য থাকে কপালে ! কিন্তু ইসলামে এমন কোন ধারণা
বা বিশ্বাস নেই। ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদাহ হচ্ছে 'এই বিশ্বজগতের ভাগ্য বা
তাকদির আল্লাহ তায়ালা মাহফুযে লিখে রেখেছেন...।' ভাগ্য বুঝাতে তাই কপাল
শব্দটি ব্যবহার করবেন না।
[৭]
কোন
মুসলিমকে বিনা দলিলে 'কাফের' বলা কবিরা গুনাহ। হুজ্জাত কায়েম' বা শারঈ
নির্দিষ্ট রূপরেখা সম্পন্ন 'দলিল প্রতিষ্ঠা' ব্যতিরেকে কাউকে কাফের বলা বা
কাফির সাব্যস্ত করা স্পষ্টত হারাম, এবং এটা করাও স্পষ্টত কুফরী কাজ...।
—
কেউ অন্যকে কাফের বললো... তবে সে যদি প্রকৃত অর্থেই পুরোপুরি কাফের না
হয়, তবে তা পূর্বের ব্যক্তির দিকেই ফিরে আসবে। তাই কাউকে কাফের-মুনাফিক
বলে ফেলা থেকে সাবধান...৷ [বুখারী ৬১০৩, মুসলিম ৬০]
[৮]
ইচ্ছাকৃতভাবে
কাফির-মুশরিক ও তাগুতের অনুকরণ করা, তাদের সমর্থন করা, তাদের ধর্মীয়
চিহ্ন বা পোশাক ব্যবহার করা ও যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতি'র অনুসরণ করা
স্পষ্টত কুফর...।
— যেমন ক্রিসমাস, পূজা,
বুদ্ধপূর্ণিমা, হ্যালোইন, ভ্যালেন্টাইনস ডে, নিউ ইয়ার পালন ও আকাশে ফানুশ
উড়ানো, তাদের ধর্মীয় পোশাক পরা, টিভি'তে বা সরাসরি তাদের উপাসনা... যেমন
পূজা, চার্চের উপাসনা দেখাও হারাম ও কুফর,
— এবং অপরকে এ-সম্পর্কিত সম্ভাষণ জানানো;
— অথবা এমনটা করাকে সমর্থন করা, বা অপরকে করতে বাধা না-দেওয়া'ও কুফরী সমতুল্য...। [মুসলিম ২৬৬৯, আবু দাউদ ৪০৩১]
[৯]
যেকোন
মৌলিক ইবাদত বা শরীয়াহের অন্তর্ভুক্ত বিধান যেমন নামাজ-রোজা,
হজ-যাকাত-পর্দা, হদ-কিসাস, জি[হা]দ-কি[তা]ল, ওয়াজিব পরিমাণ দাড়ি,
জ্ঞান-অর্জন, তাকওয়া অবলম্বন' ইত্যাদির কোনোটিকে অস্বীকার করা, বা অপছন্দ
করা, বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও অপ্রয়োজনীয়' মনে করা, তা অন্যকে পালন করতে
নিরুৎসাহিত করাও কুফর...। [৪৭:৯, ৯:৬৫]
— নামাজ ফরজ হওয়ার পর ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামাজ ত্যাগ করা কুফর...।
— যাকাত ফরজ হওয়ার পর না দেওয়া বা অন্যান্য বিধান ফরজ পর্যায়ে আসার পর সেগুলো না করাও কুফর সমতুল্য...।
—
অন্যান্য কিছু বিধান যেমন ওয়াজিব পরিমাণ দাড়ি রাখা, ফরজ পর্দা, তাকওয়া
অবলম্বন করা, ই[দা]দ বা বর্তমান উম্মাহের উপর ফরজ হওয়া জি[হা]দ ইত্যাদি
ফরজ হওয়ার পর পালন করতে না পারলে একজন কেবল পাপীষ্ঠ হবে, ফাসিক হবে, তবে
কাফির হবে না। কিন্তু কেউ যদি তা সরাসরি অস্বীকার করে বা মনে করে এখনো এটা
তার জন্য আবশ্যক হয়নি, তবে সেটা স্পষ্ট কুফরী...। তাই অন্তত কমপক্ষে
আকীদাহ ঠিক রাখতে হবে।
•••
উল্লেখ্য, সরাসরি বলতে গেলে ইসলাম আসলে কোন ধর্ম নয়, বরঞ্চ ইসলাম একটি
জীবনব্যবস্থা... ধর্ম যার একটি অংশ কেবল। ইসলামের রয়েছে নিজস্ব
রাষ্ট্রব্যবস্থা, নিজস্ব সরকারব্যবস্থা, নিজস্ব সমাজব্যবস্থা-কূটনীতি,
মৌলিক যুদ্ধব্যবস্থা বা সমরনীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ছোট
গোপনীয় কাজগুলোর দিকনির্দেশনা পর্যন্ত...।
• আর তাই ইসলামকে কেবল একটি ধর্ম হিসেবে বিশ্বাস করা, এবং ইসলামকে কেবল ব্যক্তিজীবনে আবদ্ধ করে রাখার চিন্তা করাটা স্পষ্টত কুফর...।
•
ইসলামের রয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব আইন-কানুন বা শরীয়াহ। প্রত্যেক মুসলিমের
জন্য সমস্ত দ্বীন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার-সরকারব্যবস্থা বা সমাজব্যবস্থা উৎখাত
করে শরীয়াহ আইন বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে
যাওয়া ফরজ...। তবে কেউ যদি ইসলামকে শুধু ব্যক্তিজীবনে আবদ্ধ করে রাখে, এবং
ইসলামী রাষ্ট্র গড়া বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ধারণাকে অবজ্ঞা
করে, অপ্রয়োজনীয় মনে করে, বা অবহেলা করে, তবে সেটা স্পষ্টত কুফর...।
•
একইভাবে কোন প্রকার মানবরচিত আইন ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা
কুফর ও শিরক। তাই সব রকমের মানবরচিত কুফরী সংবিধান ও আইনকানুন উৎখাত করে
কুরআনের আইন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা'কে অবজ্ঞা-অবহেলা করা বা অনর্থক মনে
করাও কুফর...।
[১০]
আল্লাহর
দেওয়া ওহী 'কুরআন' ব্যতিরেকে অন্য কোন 'মানবরচিত সংবিধান' বা আইন দ্বারা
বিচার-শাসন করাই কুফর...। কুরআন ব্যতিরেকে অন্য কোন মানবরচিত সংবিধান,
দ্বীন বা আইনের আনুগত্য করাই স্পষ্টত কুফর...। [৫:৪৪, ২৬:২১, ১৬:৩৬]
—
এবং যে বা যারাই তার অধীনস্থ কিছুতে শরীয়াহ আইন বা কুরআন ব্যতিরেকে অন্য
কোন মানবরচিত আইন প্রনয়ণ করবে, বা ব্যবহার করবে, আল্লাহর দেওয়া
শরীয়াহ-আইনের বাইরে নিজে কোনো আইন প্রণয়ন করবে, সে-ই 'তাগুত' হিসেবে
বিবেচিত হবে... এবং এটা করাও স্পষ্টত কুফর...।
— এবং জেনে-বুঝে এমন কুফরে নিমজ্জিত কোনো দল, মত, সংগঠন বা তাগুতকে সমর্থন করা, বা সমর্থন করাকে জায়েয মনে করাও কুফর...।
•••
উল্লেখ্য, আল্লাহ ব্যতীত সকল প্রকার গাইরুল্লাহ বা তাগুত এবং ইসলাম ব্যতীত
অন্যান্য সব দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা বর্জন করা ঈমানের অন্যতম রুকন...।
[১১]
যেকোন কুফরি বাক্য জেনে-বুঝে উচ্চারণ করা...। এমন অনেক কিছুই আমরা প্রতিনিয়ত বলি, যেমন...
— বিসমিল্লায় গলদ' বলা ! [আস্তাগফিরুল্লাহ !]
—
মহভারত কি অশুদ্ধ হয়ে গেল ! [ইসলামই একমাত্র সত্য দ্বীন।
হিন্দুত্ববাদীদের মহাভারত যদি শুদ্ধ বা সত্যই হয়, তাহলে এখনো আপনি মুসলিম
কেন !]
— মন ঠিক থাকলে পর্দা লাগে না, মনের পর্দাই বড় পর্দা ! [ইসলামের অন্যতম একটি শিআর ও বিধানকে অপ্রয়োজনীয়' বানানোর ধান্দা।]
— নামাজ না পড়লেও ঈমান ঠিক আছে ! [অথচ হাদীস মোতাবেক ঈমান ও কুফরের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে সালাত।]
— মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়া' বলা ! [মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য, এবং সে ধাপ, যার মাধ্যমে মানুষ তার রবের সান্নিধ্যে পৌঁছায়...।]
—
নির্মল চরিত্র বোঝাতে ধোয়া তুলশি পাতা বলা ! [তুলসী পাতাকে বিশুদ্ধতার
প্রতীক ও কল্যাণকর-দেবতাতুল্য হিসেবে ধরা হয় হিন্দু ধর্মে, ইসলামের
দৃষ্টিতে এমন বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী।]
— মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত ! [ইসলামের একটি শিআর বা চিহ্নকে সরাসরি নিচু করা।]
—
কোন কিছুকে 'মধ্যযুগীয় বর্বরতা' বলা ! [মধ্যযুগ ইসলামের স্বর্ণযুগ,
পশ্চিমা-লিবারেল আদর্শের দৃষ্টিতে ইসলাম মানেই বর্বরতা ও অমানবিকতা।]
— জীবে প্রেম করে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর !
[মাখলুক
বা আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টিকে ভালোবাসা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য এবং আল্লাহর
আদেশ। কিন্তু পৌত্তলিক বিশ্বাস অনুযায়ী সমস্ত জীবের মধ্যেই স্রষ্টা
বিদ্যমান, সৃষ্টিকর্তা সমস্ত জীব বা পশু-পাখি, গাছ-পালার মধ্যেই রয়েছেন,
এগুলোর ইবাদত-আনুগত্য-সেবাই স্রষ্টার সেবা-আনুগত্য ! নাউযুবিল্লাহ !]
•••
উল্লেখ্য, আমাদের ইমান ও জ্ঞানের দূরবস্থা, অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের
কারণে এমন আরও অসংখ্য কুফরী-শিরকি বিশ্বাস-বাক্য আমাদের মধ্যে রয়েছে,
সেগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি, তাই ব্যক্তিগতভাবে
সচেতন হোন।
[১২]
স্পষ্ট কুফর ও শিরকে নিমজ্জিত মুরতাদ' বা কাফির-মুশরিকদের 'কাফির-মুশরিক' মনে না করাও কুফর...। [৪:১৫০]
—
অহেতুক কাউকে তাকফীর করা (কাফির ঘোষণা করা) যেমন ঈমান ভঙ্গের কারণ হতে
পারে, ঠিক তেমনি বাহ্যিকভাবে স্পষ্ট বড়-কুফরী বা বড় শিরকে নিমজ্জিত কাউকে
কাফির-মুশরিক মনে না করাও কুফর...।
— ইসলাম থেকে
স্পষ্টত খারিজ হয়ে যাওয়া কোনো ব্যক্তিকে মুসলিম মনে করাটাই কুফর...। যেমন
ইসলাম থেকে প্রকাশ্যে খারিজ হয়ে যাওয়া কাদিয়ানি সম্প্রদায়, শিয়া
সম্প্রদায় বা তাকফিরি খারেজী'দের মুসলিম-মুমিন মনে করাটাই কুফর...।
[১৩]
'আল
ওয়ালা, ওয়াল বারাহ' বা 'কেবল আল্লাহর জন্য মিত্রতা ও আল্লাহর জন্যই
বৈরিতা'র বিধানকে অস্বীকার করা বা অপছন্দ করাও কুফরি...। [৬০:১০, ৯:৫১,
৯:৮০, ৫৮:২২, ৩:১৯]
— হারাম জাতীয়তাবাদ' এর দাবিতে 'আল-ওয়ালা' বা 'ঈমানের দাবীতে মিত্রতা গড়া'র বিধানকে অস্বীকার বা অপছন্দ করা কুফর...।
—
আবার 'ওয়াল বারাহ' বা 'কুফরের কারণে বৈরিতা'র বিধানকে অস্বীকার-অপছন্দ
করাও কুফরী, অর্থাৎ ইসলাম বা মুসলিমদের শত্রুদের সাথে মিত্রতা গড়া বা তাদের
সাহায্য-সমর্থন কিছু করাই কুফর...৷
— আবার
আদর্শিকভাবে ইসলামের শত্রু বা বিপরীত কোনো মতাদর্শ বা দ্বীন যেমন
পুঁজিবাদ-জাতীয়তাবাদ, লিবারেলিজম, পশ্চিমের বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা,
রাজতন্ত্র-গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রকে...
• ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর মনে করা,
• মুক্তির উপায় বলে মনে করা,
• ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় জীবনে উন্নয়নের শর্ত বলে মনে করা,
• শান্তি প্রতিষ্টার মাধ্যম বলে মনে করা,
• বা এগুলো প্রতিষ্ঠায় কাজ করা স্পষ্টত কুফরী এবং জেনে-বুঝে কেউ এমন করলে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যেতে পারে...।
•••
উল্লেখ্য, মুসলিমদের সাথে বৈরীতা বা শত্রুতা তৈরি ও কাফেরদের সাথে সখ্যতা
তৈরি করা 'আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ' এর বিধানকে ধ্বংস করে। ফলে এটা ঈমান
বিনষ্টের একটি বড় কারণ, এবং মারাত্মক পর্যায়ে কুফর...। [৯:৫১]
•••
ইসলাম ব্যতীরেকে অন্য কোনো ধর্ম, জীবনবিধান,
রাষ্ট্রব্যবস্থা-সরকারব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা বা নীতি-মূল্যবোধ যেমন
হিন্দুত্ববাদ, খ্রিষ্টানিজম, জাতীয়তাবাদ-পুজিবাদ, লিবারেলিজম, পশ্চিমা
ব্যক্তিস্বাধীনতা-বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রতে সমর্থন দেওয়া,
এগুলোর আদলে বা এগুলো প্রচারে গঠিত সংবিধান-সংগঠন, এনজিও বা দলকে
সামগ্রিকভাবে সাহায্য-সমর্থন দেওয়াও কুফর ও মুনাফিকি...। মূলত এগুলোও এক
ধরনের তাগুত বা উপাস্য...৷ [৩:৮৫, ১৬:৩৬, ২:২৫৬]
[১৪]
ইসলামের
বিরুদ্ধে আদর্শিক বা সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত কোন দল-মত, জাতি-দেশ বা
এনজিও-সংগঠন-জোট'কে কোনভাবে সহায়তা করা বা সমর্থন করাও স্পষ্ট কুফরী ও
ঈমান ভঙ্গের কারণ...। যেমন আমেরিকা-ইসরাইল, ভারত-চীন-ফ্রান্স বা তাদের
সেনাবাহিনী, জাতিসংঘ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী, ইউনিসেফ, ন্যাটো জোট,
সিরিয়ার আসাদ রেজিম ইত্যাদি... এরা প্রত্যেকেই শরীয়াহ'পন্থী দল'গুলোর সাথে
কোন না কোনভাবে যুদ্ধরত, যা সুস্পষ্টত কুফর ও ঈমানের সংঘাত...। আর এই
সংঘাতে কোনো ভাবে কুফফার শক্তিকে সমর্থন বা সাহায্য করাই একজনের মুরতাদ
হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট...। [৪:৯৭, ৪:৫১]
[১৫]
কোনো
নির্দোষ মানুষ হত্যা করাও কুফরি। শরীয়াহ নির্ধারিত শর্ত ব্যতিরেকে, শরীয়াহ
নির্দেশিত মৃত্যুদণ্ড ছাড়া, ফিকহ মোতাবেক কতলের [মৃত্যুদণ্ডের] অযোগ্য
নিরীহ-নির্দোষ কাউকে হত্যা করা স্পষ্টত কুফর...। এক্ষেত্রে হত্যায় সরাসরি
বা পরোক্ষভাবে সাহায্যকারী, কিংবা একে সমর্থনকারীও সমান পাপী, কুফরে
লিপ্ত...। [৫:৩২, বুখারী ৭০৭৭]
[১৬]
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া স্পষ্টত কুফর...। আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা পোষণ করাও কুফর, যেমন—
• আল্লাহ আর ক্ষমা করবেন না,
• আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন না...
• এমন মনে করা যে আমাদের উপর আযাব/জাহান্নাম নিশ্চিত, আর বাঁচার কোন পথ নেই ! [৩৯:৫৩]
— কারো মৃত্যু, দুনিয়াবী কোন কষ্ট বা বিপদে আল্লাহকে দোষারোপ করাও কুফর, যেমন প্রিয় কেউ মারা গেলে বলে ওঠা যে...
• আল্লাহ ওকে ছাড়া আর কাউকে চোখে দেখলো না !
• আল্লাহ আমার বাচ্চাটাকে কেন নিয়ে গেল !
—
মিরাস বণ্টন বা কোন কিছুতে আল্লাহ সঠিক ইনসাফ করতে পারেননি বলে মনে করা,
সময়ের সাথে সাথে যুগ পাল্টানোর ফলে কুরআনের কোন আইন পরিবর্তন হওয়া
প্রয়োজন বলে মনে করা স্পষ্টত কুফর...।
•••
উল্লেখ্য, খাঁটি মনে করা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবার ফলে আল্লাহ শিরক ব্যতীত যেকোনো
রকমের মারাত্মক পর্যায়ের কবিরা গুনাহও মাফ করে দেন...। না জেনে-বুঝে শিরক
করে ফেললে সেখান থেকেও বাঁচার পথ আছে ইনশাআল্লাহ।
হাদিসে
তাই 'আল্লাহর প্রতি সুধারণা' নিয়ে মৃত্যু বরণ করতে বলা হয়েছে... এর ফলে
আমল কম হলেও বিশুদ্ধ ঈমান-আকিদার বলে জান্নাতী হওয়া সম্ভব ইনশাআল্লাহ।
আর
আমাদের চোখে হয়তোবা আল্লাহর দেওয়া কোন বিধান এর প্রকৃত হিকমাহ ধরা পড়ছে
না, আমাদের অজ্ঞানতার ফলে নেতিবাচকভাবে ধরা পড়ছে, কিন্তু তাই বলে কোন
বিধানের প্রতি বিরূপ ধারণা রাখা যাবে না, কেননা আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ
ইনসাফকারী ও ন্যায়বিচার।
.
.
.
.
[উল্লেখ্য] বিভিন্ন প্রকার কুফরের মধ্যেও শ্রেণীবিভাজন রয়েছে, ছোট কুফর (আমলী কুফর) ও বড় কুফর (বিশ্বাসগত কুফর) হিসেবে...।
•
তো এখানে ছোট কুফর ও বড় কুফর দুটো কখনোই সমান নয়, বড় কুফর একজনকে
পুরোপুরি ইসলাম থেকে বের করে দেয়, মুরতাদ-জিন্দিকে পরিণত করে। আর ছোট কুফর
কেবলই ঈমানকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ইমান বিনষ্ট করে, তবে পুরোপুরি
কাফিরে পরিণত করে না...।
•
কোনো সম্প্রদায় বা কেউ স্পষ্ট কুফরে লিপ্ত থাকলেও 'হুজ্জাত কায়েম' বা শারঈ
দলীল প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কাউকে সরাসরি কাফের ঘোষনা করা বা তাকফীর করাটা
জায়েয নয়, এটি করা পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় খারেজীদের স্বভাব, বরঞ্চ 'তাকফির'
একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়...।
•
তাই আমরা ছোট-বড় সমস্ত প্রকার কুফর থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো, মূলকথা
এটাই...। অপরকে করতে দেখলে যথাসম্ভব বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবো...।
*
মাশাআল্লাহ সচেতন কিছু মুসলিম ভাই-বোনের প্রচেষ্টায় মানুষ এখন প্রচলিত
শিরক ও বিদআত নিয়ে সচেতন হচ্ছে, কিন্তু প্রচলিত কুফর নিয়ে বাস্তবে কথা কমই
হয়, তাই কুফর নিয়ে কলম ধরলাম... সম্ভব হলে লেখাটি শেয়ার করে অন্যদের
নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন।
(R)
লেখার কলেবর বড় হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবেই বিস্তারিত রেফারেন্স সংযোজন করা
হয়নি, তবে কেউ আগ্রহী হলে সাথে দেওয়া অল্প কয়েকটি কুরআনের আয়াতের
তর্জমা ও তাফসীর পড়ে দেখতে পারেন, ইনশাআল্লাহ এই সামান্য রেফারেন্স থেকেই
বেইসিক ধারনা পাবেন...।
[ '★:★' = 'সূরা নম্বর : আয়াত নম্বর'...। যেমন, '১০:১৫' অর্থ কুরআনের ১০ নং সুরার ১৫ নং আয়াত, বা সূরা ইউনুসের ১০ নং আয়াত।]
▪
ইসলামী জ্ঞান অর্জনে শুধু ওয়াজ শোনা, মাহফিল-লেকচারে উপস্থিত হওয়া,
জুমআর বয়ান আর ইউটিউব ভিডিও-ই যথেষ্ট নয়। তাই নিয়মিত ইসলামী বই পড়ার
অভ্যাস গড়ে তুলুন, মোটামুটি অথেনটিক আলেমদের লেখা ঈমান, আকীদাহ, আমল,
আখলাক ও ফিতান বিষয়ক কিছু বই অবশ্যই পড়ুন...। ইসলামী বইয়ের মধ্যে কি কি
বই পড়তে হবে, না পড়তে হবে— বিস্তারিত জানতে 'ইসলামী বই' নামক গ্রুপগুলোতে
এড হতে পারেন। বাজারে ইসলামী বই রয়েছে হাজার, কিন্তু বিশুদ্ধ-সহীহ জ্ঞান
দিয়ে লেখা ভুল-ত্রুটিহীন বই হাজারে সর্বোচ্চ দু-একটাই পাবেন !
সম্ভব
হলে কোন বিশ্বস্ত আলেমের সাহায্য নিন এবং যেভাবেই হোক, যেকোনো মাধ্যমেই
হোক, অবশ্যই ইলম আহরণ বা জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করুন। হাদিসের ভাষ্যে,
'অ-জ্ঞানী কখনো জান্নাতি হবে না।' তাই প্রকৃত সত্যের সন্ধান পেতে
'ঈমান-আক্বীদা-আমল-আখলাক' বিষয়ে বেইসিক জ্ঞানটুকু অন্তত অর্জন করুন।
•••
দয়া করে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সকলের সাবধানতার জন্য, এবং দ্বীন
প্রচারের স্বার্থে, ইসলামের খেদনতে, এই লেখাটুকু কপি-পেস্ট করে আরো কিছু
লোকের নিকট পৌঁছে দিবেন...।
••• "প্রচার করো যদি একটি আয়াতও হয়।" [সহীহুল বুখারী, হাদিস ৩৪৬১]
|| আল্লাহ আমাদের পরিবার-পরিজন, দেশ-জাতি, সর্বোপরি উম্মাহকে কুফর থেকে রক্ষা করুন...। আমীন। ||