Thursday, April 29, 2021

পুরুষেরা যেদিন ' পৌরুষ ' হারিয়েছে, নারীরা সেদিন 'হায়া' হারিয়েছে

 

পুরুষেরা যেদিন ' পৌরুষ ' হারিয়েছে, নারীরা সেদিন 'হায়া' হারিয়েছে 

এক আলিমের ঘটনা, একদিন তিনি শুক্রবারে জুমআর আগে খুতবা তৈরি করছিলেন। সামনে কিতাবপত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন, নোট করছেন। শাইখের ছেলে সেসময় বাবার পাশেই খেলাধুলা করছিল। বারবার বাবাকে ডিস্টার্ব করছিল, শাইখ ও ছেলের দুষ্টমিতে কাজে মন দিতে পারছিলেন না। এদিকে জুমআর সময় ও আর বেশী নেই।তাই তিনি একটা ম্যাগাজিন খুলে সেখানে একটা পৃথিবীর মানচিত্রের ছবি দেখলেন। তিনি ম্যাগাজিন থেকে মানচিত্রটি কেটে নিলেন। সেটাকে এলোমেলো ভাবে কয়েক টুকরা করে ছেলের হাতে দিয়ে বললেন,যাও এই মানচিত্রের টুকরাগুলো জোড়া লাগিয়ে আনো, দেখি পারো কি না! 

শাইখকে অবাক করে দিয়ে তার ছেলে কয়েক মিনিট পরই মানচিত্রের টুকরা গুলো জায়গামতো বসিয়ে নিয়ে এলো।  শাইখ তো অবাক! ছেলের প্রতিভায় রীতিমত মুগ্ধ। তিনি মনে করেছিলেন এই করতে তার অনেক সময় লাগবে, এই ফাকে তিনি নিজের কাজ শেষ করে ফেলবেন! কিন্ত ছেলে তো পুরো ফাটিয়ে দিলো। তিনি খুবই কৌতূহল নিয়ে ছেলেকে জিগ্যেস করলেন, তুমি এটা কিভাবে করলে? ছেলে জবাব দিলো, আসলে মানচিত্রের পেছনে একটা মানুষের ছবি ছিলো। আমি মানচিত্র জোড়া লাগাইনি, মানুষ টা কে জোড়া লাগিয়েছি।  হাত,পা,মাথা  জায়গামতো বসিয়ে  দিয়েছি, এতে করে অপর পাশের পৃথিবীর মানচিত্রের ছবি টাও অটোম্যাটিক জায়গামতো জোড়া লেগে গেছে। শাইখ মনে মনে ভাবলেন, তিনি আজকের খুতবার টপিক পেয়ে গেছেন।

'When the man come together, the World also comes together ' 

সুতরাং এই ভাঙা পৃথিবী টাকে জোড়া লাগানোর জন্য উম্মাহর পৌরুষ ফিরিয়ে আনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।  

আজকাল অনেকে নারীদের বিপথে যাওয়া নিয়ে কথা তোলেন। দেখুন ভাই মেয়েরা কিভাবে বিপথে যাচ্ছে, পর্দা ছেড়ে দিচ্ছে, ফাহেশা কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু এটা একদিনে হয় নি। যেসব নারীরা বিপথে যাচ্ছে, তাদের আগে তাদের পুরুষরা বিপথে গিয়েছে।  বিপথে যাওয়া নারীরা হায়া হারানোর আগে, এসব নারীদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া তাদের পুরুষেরা হায়া,গীরাহ,পৌরুষ হারিয়েছে।  

যে ভাইগুলো বলছে নারীরা বিপথে যাচ্ছে, সেই একই ভাইয়েরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড দিচ্ছে। সেই ছবি তার হোয়াটস এপ এর প্রফাইল পিকচার হচ্ছে। তাই যাদের কাছেই তার ফোন নাম্বার আছে, তাদের কাছে এখন তার স্ত্রীর ছবি ও আছে। প্রতিদিন তার স্ত্রীর ছবি অন্যরা দেখছে। 

এক ভাই একদিন আমার কাছে এলেন, তার স্ত্রীকে নিয়ে। হাসতে হাসতে নিজের স্ত্রীকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। আমি বিব্রত হয়ে কোনোমত সালাম দিলাম।  কিন্ত্ সেই মহিলা হাসতে হাসতে আমার দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। আর পাশে স্বামী নির্লজ্জ এর মতো তখনো হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। আমি কাকে দোষ দিব? পৌরুষ হীন এই ভাই কে? নাকি তার,স্ত্রীকে? 

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, এমন তিন ব্যাক্তি আছে, যাদের দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কিয়ামতের দিন তাকাবেন না। তারা হচ্ছে, ১/যে পিতামাতার অবাধ্য, ২/যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে, ৩/ দাইয়ুস ব্যাক্তি। (নাসাঈ-২৫৬২)
এখানে দাইয়ুস হলো সেই পুরুষ, যে তার অধীনস্হ নারীদের (মা,বোন,স্ত্রী,মেয়ে) ব্যভিচার, ফাহেশা কাজে বাধা দেয় না  তারা পর্দা করছে না, এটা তার গায়ে লাগে না। তার স্ত্রী পরপুরুষের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে, এতে তার গা জ্বলে না। সে এমন ব্যাক্তি, যে তার পৌরুষ হারিয়েছে।  এই উম্মাহর একজন রিজাল( সত্যিকারের পুরুষ)  উমর ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) তখন ও পর্দার আয়াত নাযিল হয় নি। তিনি আল্লাহর রাসুল সাঃ এর কাছে গিয়ে বলছেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ!  আপনার কাছে ভালোমন্দ সব ধরনের লোকেরা আসে। আপনি যদি আপনার স্ত্রীদের পর্দা করার আদেশ দিতেন। বাইরের কেউ উম্মুল মুমিনীদের দেখবে, উমর ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) কাছে এটা পছন্দ হচ্ছিল না। ওয়াল্লাহি! স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা, এরপর পর্দার বিধান নাযিল করে আসমান থেকে কুরআন পাঠালেন( সুরাহ আহযাবের ৫৩ নং আয়াত)  নবি নয়, কিন্তু উম্মাহর একজন সত্যিকারের রিজাল, একটা মতামত দিয়েছেন, যার সমর্থনে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআন নাযিল করেছেন।  এমনই ছিলো উম্মাহর পুরুষেরা, তারাই ছিলো Real man

আরেকবার তো একজন আলিম আমাকে( মোহাম্মদ হোবলস) বলেছেন, ভাই! আপনার দাওয়া ভিডিও তে নারীদের আনেন না কেন? আপনার উচিত নারীদের কে ও নিয়ে আসা। আমি বিস্মিত হই, হতবাক হয়ে চেয়ে আছি, এ কি বলছেন আপনি?  আচ্ছা আপনি মেনে নিবেন?  আপনার স্ত্রী আমার সাথে বসে খোসগল্প করছে?  হাসাহাসি করছে? আর সেটা ভিডিও হচ্ছে, সারা দুনিয়ার মানুষ তা দেখছে!! 

আমাদের নারীরা হায়া হারানোর আগে উম্মাহর পুরুষ রা হায়া হারিয়েছে।  হায়া এটা কোনো সহজ বিষয় নয়। সমস্ত ইংরেজি ভাষায় এমন কোনো শব্দ নেই, যেটা এই হায়া শব্দটার যথার্থ অর্থ প্রকাশ করতে পারে! ওলামারা বলেন, যার অন্তরে হায়া নেই, তার মরে যাওয়াই শ্রেয়। 

আর আজ এই উম্মাহর পুরুষ রা হায়া হারিয়েছে,  সাথে তাদের অধীনস্হ নারীরাও বিপথে গিয়েছে। এই উম্মাহকে আবার তার আগের অবস্থায় জুড়ে দিতে হলে,  আগে এই উম্মাহর পুরুষ দের সত্যিকারের পুরুষ হয়ে উঠতে হবে।

মোহাম্মদ_হোবলস এর লেকচার থেকে নেওয়া।
আমিনুল_ইসলাম


পাত্রী বাছাই ও ইসলামিক নীতিমালা ও আমাদের করণীয়।

 

পাত্রী বাছাই ও ইসলামিক নীতিমালা ও আমাদের করণীয়।
পাত্র বাছাই এর ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকতে হলেও পাত্রীর ক্ষেত্রেও বলতে গেলে একই ব্যাপার ।মানে,সতর্ক থাকা প্রয়োজন ।
হাদিস মোতাবেক আমরা পাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৪ টা জিনিস পাইঃ
০১.দ্বীনদারিতা
০২.সৌন্দর্য্য
০৩.বংশ
০৪.সম্পত্তি
এর মধ্যে দ্বীনদারিতাকে অধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন পুস্তকাদি ও ভাইদের অভিজ্ঞতার আলোকে একটা ব্যাপার বেশ উল্লেখ করার মতো মনে হলো। আর তা হলো ,সৌন্দর্য্য।
আমাদের মূখ্য সমস্যা হলো ,সৌন্দর্য্য মানেই অনেকে চামড়ার গুরুত্বই বুঝি।মা’আযাল্লাহ।
আসলে সৌন্দর্য্য চামড়া বা গড়নে সুনির্দিষ্ট নয়।মোদ্দাকথা আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা সকলকেই সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
তাহলে সৌন্দর্য্যটা কিসের উপর নির্ভরশীল?ব্যক্তিবিশেষে সৌন্দর্য্যের ভিন্নতা বিদ্যমান।
মানে একেকজনের কাছে সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা একেকরকম ।সুতরাং এতে হতাশ হওয়া যাবে না যে ,ওরে আল্লাহ রে!আমি তো কালো বা শ্যামলা বা ফর্সা তাইলে কি আমার বিয়ে হবে না ?এরকম ভাবার কোন কারণ নেই।
সৌন্দর্য্যকে সংজ্ঞা বুঝার জন্য  কোরানের একটা আয়াতই যথেষ্ট মনে হয় ।তা হলো সূরা ফুরক্বানের ৭৪ নং আয়াত।এখানে খেয়াল করলে দেখবেন আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা আমাদের চক্ষুশীতলকারীনি চাইতে বলেছেন ।
দ্বীনদার ভাইয়েরা যারা চোখের হেফাজত করেন নিয়মিত তাদের কাছে তাদের স্ত্রীর চাইতে অধিক রূপসী এ দুনিয়ায় আছে কিনা জানা নেই ।অন্তত কিছু ভাইয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা শুনে তাই মনে হয়।
এক্ষেত্রে আমাদের উচিত চোখের হেফাজত করা।এটা তো আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালারই নির্দেশ।
এক ভাই বলছিলো  ,উনার উয়াইফকে নাকি অন্য মেয়েরা তেমন সুন্দর বলে না ।এখানে অন্য মেয়ে বলতে সম্ভবত মাহরাম মানে,মা-বোনদের কথা বলছিলেন সম্ভবত।অথচ ওই ভাইয়ের কাছে উনার উয়াইফকে রাণী মনে হয়।
সুবহানাল্লাহ।
কত্ত চমকপ্রদ ঘটনা।কারণ ?কারণ হলো ভাইটি আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার নির্দেশ মেনে চোখের হেফাজত করেছিলেন এবং করেই  যাচ্ছেন ।মাশা আল্লাহ।
তাহলে এ কথা আমরা বলতে পারি যে ,২ নং ক্রাইটেরিয়ার ক্ষেত্রে কোন মেয়ের সুন্দরের যাচাইয়ের পূর্বে নিজের চোখের হেফাজতকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।এটি তো আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালারই নির্দেশ ।
যার মাঝে দ্বীনদারিতা পাওয়া যাবে তাকে নিকাহ করার ব্যাপারে অধিক তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সাধারণ  দৃষ্টিতে একটা কথা বলা যায় যে ,স্বাভাবিকভাবেই স্বামীর দ্বারা স্ত্রী দ্বীনি ক্ষেত্রে অনেক প্রভাবিত হয়।তাই স্ত্রীকে স্বামী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকতে হবে।ব্যতিক্রম সবক্ষেত্রেই কখনোই উদাহরণ নয়।
কোন মেয়ের মাঝে দ্বীনি বিষয়ে আগ্রহ থাকলেই তাকে দ্বীনদার হিসেবে অভিহিত করা যায় সাধারণভাবে ।এক্ষেত্রে অনেকেই আছেন যারা দ্বীনের পথে ফিরেছেন জেনারেল লাইন থেকে।যারা দ্বীনের ব্যাপারে আক্বীদাগতভাবে বিশুদ্ধ সেসব ভাইদের উচিত তাদের নিকাহ করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেয়া।
স্বামী স্ত্রীর চেয়ে অধিক জ্ঞানী হলে তা বেশ উত্তমই হবে ইনশা আল্লাহ।
এতে স্ত্রী দ্বীনের ব্যাপারে অধিক জানতে পারবে ইনশা আল্লাহ।
কোন মহিলা আক্বীদাগতভাবে অশুদ্ধ বা জেনারেল লাইন থেকে ফিরে আসার ফলে দ্বীনের ব্যাপারে তেমন জানা নেই তবে উনাদের জানার আগ্রহ অত্যধিক সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় ভাইদের ইনাদের গুরুতে দেয়া উচিত ইনশা আল্লাহ ।
আর একটা প্রশ্ন থাকতে পারে তা হলো ,পাত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এত্ত এত্ত এত্ত প্রশ্ন উল্লেখ করলেও পাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুই তেমন উল্লেখ করা হয় নি কেন?
উত্তর সোজা।
কারণ ,বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কখনোই চাইবো না আমাদের উম্মাহর মেয়েরা বেনামাজী ,গণতন্ত্রপূজারি,হারাম চাকুরিজীবি কাউকে বিয়ে করে কাফেরের সাথে সংসার করুক।
মেয়েরা আক্বীদাগতভাবে বিভ্রান্ত থাকলেও দ্বীন মানার ইচ্ছে থাকলে ইজিলি স্বামীর দ্বারা চেঞ্জ হবে আক্বীদা ইনশা আল্লাহ।
কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ব্যাপার থাকায় ভ্রষ্ট আক্বীদার কাউকে নিকাহ করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কোরান –হাদিস অনুসারে।
(আবারো উল্লেখ্য ব্যতিক্রম গ্রহণযোগ্য নয় এক্ষেত্রে।)
নিম্নোক্ত ব্যাপারে প্রশ্নাবলী করা যায় বলে মনে হয় পাত্রীকেঃ
০১. স্বলাতের ব্যাপারে
০২.পর্দার ব্যাপারে
০৩.স্বামীর আনুগত্যের গুরুত্বের ব্যাপারে
০৪.দ্বীনের জন্য নিজেকে ইসলাহ করার ব্যাপারে বা সত্য জানার পর নিজেকে সংশোধন  করার ইচ্ছার ব্যাপারে।
০৫. অন্যান্য ফরজ বিধানসমূহের ব্যাপারে
***ফেমিনিজমের ব্যাপারে।
(((উল্লেখ্যঃআরেকটা ব্যাপার কুমারি মেয়েদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মানে এমন না যে ,ধর্ষণের স্বীকার দ্বীনি কাউকে আপনি নিকাহ করবেন না।আমাদের উচিত এই মেয়েদেরকেও প্রাধান্য দেয়া নিকাহ এর ব্যাপারে তারা যদি দ্বীনদার হয়।)))
আর বয়সের ব্যাপারে বিভিন্ন অভিমত ও শরঈ অভিমত থেকে এটাই সংক্ষেপে বলতে পারি যে,আপনি আপনার ইচ্ছেমতো বালেগা মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন এতে অসুবিধা নেই বা শরঈ বাঁধা নেই।
কারো ইচ্ছা ১৫-১৬  বছর বয়সী কুমারি ,কেউ বা সমবয়সী কেউবা সিনিয়র ।ইসলাম এতে আপত্তি করে নি ।কেবল ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী হলেই হলো ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা আমাদের সহায় হোক।
নিম্নোক্ত বইসমুহ পড়তে পারেনঃ
০১.ভালোবাসার চাদর=বিলাল ফিলিপ্স
০২.বিয়েঃস্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর= মির্জা ইয়ারওয়ার বেগ
০৩.ভালোবাসার বন্ধন= বিয়ে অর্ধেক দ্বীন
(বিয়ে নিয়ে বইসমূহের পোষ্ট এর লিংক কমেন্টে)