Thursday, June 17, 2021

১১. স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে? Marriage education series

 May be an image of bedroom and text that says 'FB/Guidance2TheRightPath স্বামী- স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে?'

 

 

 

১১. স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে?
 
 
প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে?
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
উত্তর:
নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
◈◈ ১. শয়ন:
ঘুমানোর সাধারণ সুন্নতি পদ্ধতি হল, ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ
"যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওজুর মত ওজু করবে। অতঃপর ডান কাঁথ হয়ে ঘুমাবে।" (সহিহ মুসলিম, হা/২৭১০)
- উপুড় হয়ে ঘুমানো নিষেধ।
◆ প্রখ্যাত সাহাবি ইয়ায়ীশ রা. বলেন, আমার পিতা তিখফা ইবনে কায়েস আল গিফারি রা. ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেছেন, “আমি একদিন (ভোররাতে) মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে পা দিয়ে নাড়াচ্ছেন আর বলছেন, হে জুনাইদিব,
إِنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللَّهُ
“শোয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ ঘৃণা করেন।” আমি চোখ মেলে দেখি, সে ব্যক্তিটি হচ্ছে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ প্রমুখ এবং আলবানি এটিকে হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।]
◆ আবু যার জুনদুব ইবনে জুদানাহ আল গিফারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উপুড় হইয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলেছিলেন,
إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ
“এটি জাহান্নামিদের শয়ন পদ্ধতি।” (ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২৪)
[এ হাদিসটি সহিহ-জইফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মাঝে দ্বিমত দেখা যায়। ইমাম বুখারি, দারাকুতনি, ইবনে আবি হাতিম প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ জঈফ বলেছেন পক্ষান্তরে ইমাম আহমদ, আলবানি, আহমদ শাকের প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ সহিহ বলেছেন)
যাহোক, উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাঁপাশে বা পেটের ভরে উপুড় হয়ে শোয়া উচিত নয়। এ বিধানটি পুরুষ-নারী সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
ইমাম ইবনে কাইয়েম রহ.বলেছেন, “বাঁপাশে অথবা পেটের উপর ভর করে শয়ন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।”
তাছাড়া বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেও ডান কাঁথে শয়ন করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা প্রমাণিত। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, ডান কাঁথে শয়ন করা অনিদ্রা দূর করা, শান্তিময় ঘুম আনয়ন, নাক ডাকার সমস্যা থেকে মুক্তি, খাদ্য হজম, পাকস্থলী ও হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা, শরীরে রক্ত চলাচল ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়ক।
তবে স্বামী-স্ত্রী তাদের সুবিধা ও ভালোলাগা অনুযায়ী ডান-বাম যে দিকে খুশি ঘুরে ঘুমাতে পারে। অনুরূপভাবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাঁপাশে কাত হয়ে ঘুমালেও কোনও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন: গর্ভবতী নারী, অসুস্থতা, শরীরের ডান পাশে কোন সমস্যা থাকা ইত্যাদি। তবে যথাসাধ্য ডান কাঁথে ঘুমানোর অভ্যাস করাই উত্তম।
 
◈◈ ২. হাঁটা-চলাফেরা ও বসা:
◍ অনুরূপভাবে হাঁটা বা বসার ক্ষেত্রেও ইসলামে স্বামী-স্ত্রী কে কোন দিকে বসবে সে ব্যাপারে ধরাবাঁধা কোনও নিয়ম নেই। 
 
সুতরাং তারা যেভাবে বসলে বা চলাফেরা করলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেভাবে করত পারে। এতে কোন সমস্যা নেই।
 
◍ আমাদের সমাজ কিছু মানুষ মনে করে যে, স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময়, যানবাহনে চলার সময় বা কোথাও বসার সময় স্ত্রীকে ডানপাশে রাখতে হয়। অন্যথায় তাদের জীবনে অমঙ্গল নেমে আসে। এমন বিশ্বাস নিতান্তই কুসংস্কার পূর্ণ। স্বামী-স্ত্রী ডানে-বামে থাকার সাথে জীবনের মঙ্গল-অমঙ্গলের কোনও সম্পর্ক নাই। এ ধরণের বিশ্বাস রাখা শিরক। 
 
◍ ডান পাশে রাখার পক্ষে একটি যুক্তি দেয়া হয় যে, স্ত্রী যদি ডানে থাকে তাহলে যে কোনও হঠাৎ দুর্ঘটনা, শত্রুর আক্রমণ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে স্ত্রীকে ডানহাতে আগলে রেখে বামহাত ও শরীরে বাম পার্শ্ব দ্বারা আত্মরক্ষা রক্ষা করা সহজ হয়। কারণ ডানহাতে আগলে রেখে বামহাতে শত্রুকে প্রতিহত করা বা দুর্ঘটনায় আত্মরক্ষা তুলনামূলক ভাবে অধিক উপযোগী ও সহায়ক। যাহোক, কেউ যদি এ উদ্দেশ্যে এমনটি করে তাহলে তাতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
 
◍ স্ত্রী ও বাচ্চাদেরকে নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে চলা সময় যে পাশে গাড়ি চলাচল করে তাদের নিরাপত্তা স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে সে পাশে না রাখাই ভালো। বরং পুরুষ ব্যক্তি ওপাশে থাকবে এবং সতর্কতার সাথে পথ চলবে। এটা শরিয়তের বিষয় নয় বরং নিরাপত্তা ও সতর্কতা মূলক বিষয়।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

১০. স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান'

 

 

১০. স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান
 
স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমি যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেই তাহলে কি আমার পাপ হবে?
উত্তর:
 
কোন মুমূর্ষু রোগীকে জীবন বাঁচানোর স্বার্থে জরুরি রক্ত দানের প্রয়োজন হলে একজন মহিলার জন্য তার রক্ত দান করতে কোনও আপত্তি নাই যদিও স্বামীর অনুমতি না নেয়া হয় বা অনুমতি নেয়ার সময় না পাওয়া যায়। এমনকি স্বামীর নিষেধ স্বত্বেও সে তার রক্ত দান করতে পারে (যদি নিষেধের শরিয়ত সম্মত কোনও কারণ না থাকে)। কারণ এখানে একজন মৃতপ্রায় মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া একজন নারী যেমন স্বামীর অনুমতি ছাড়াই নিজস্ব অর্থ-সম্পদ দান করতে পারে তেমনি তার শরীরের রক্তও দান করতে পারে।
এ হল, জরুরি অবস্থার কথা।
আর স্বাভাবিক অবস্থায় (জরুরি প্রয়োজন না হলে) রক্ত দানের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নেয়া উত্তম; জরুরি নয়। অর্থাৎ স্বামীর সাথে কথা বলে তার সম্মতিক্রমে রক্ত দিবে। এটা অবশ্যই ভালো। কারণ স্বামীর মন রক্ষা করা সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে হাদিসে একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
 
- কখন রক্ত দেয়া উচিৎ নয়?
সাধারণ অবস্থায় রক্ত দেয়ার কারণে যদি স্ত্রী শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, এ কারণে সন্তানকে দুগ্ধ দান, সন্তান প্রতিপালন, বাড়ির দায়-দায়িত্ব পালন বা স্বামী হক আদায়ে অপারগ হয়ে যায় তাহলে রক্ত দেয়া বৈধ হবে না। (যদিও পরিমিত রক্ত দেয়ার ফলে সাধারণত: এমনটা ঘটে না)।
 
- কোন নারীর জন্য এমন ব্যক্তিকে রক্ত দেয়া বৈধ নয় যাকে রক্ত দিলে দাতা বা গৃহীতা উভয়ের জন্য ফিতনার কারণ হতে পারে। কারণ সাধারণত: মানুষ এমন ব্যক্তির প্রতি দুর্বল হয় যে তার উপকার করে। সুতরাং কাউকে রক্ত দেয়ার কারণে যদি উভয়ের মাঝে ফেতনা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে তাহলে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
 
- স্বাভাবিক অবস্থায় এমন ব্যক্তিকে রক্ত দেয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য, যার সাথে স্বামীর শত্রুতা বা মনোমালিন্য আছে বা স্বামী যার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। কেননা, এমন ব্যক্তিকে রক্ত দেয়ার ফলে স্বামী স্ত্রীর উপর ক্রোধান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে-যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অথচ মানুষের উপকার করার চেয়ে স্বামীকে খুশি রাখা ও নিজের দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
আব্দু্ল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব