Thursday, June 17, 2021

কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ? Marriage education series

 May be an image of text that says 'সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোনো মহিলা যদি বিনা দোষে স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাতের সুগন্ধি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে"। [মুসনাদে আহমদ; তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৩২৭৯]'

 

 

কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ?
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর:
🔰 ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি কারণ ছাড়া স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া বৈধ নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠিন পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছ। যেমন,
সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏ أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ ‏‏
“যদি কোন মহিলা অহেতুক তার স্বামীর নিকট তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: খোলার বর্ণনা, হা/২২২৬, সহীহ)
🔰 প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য যে, অনেক সময় কিছু খারাপ চরিত্রের মানুষ কোন সহজ-সরল স্ত্রীর নিকট তার স্বামীর বদনাম গেয়ে তার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালায় অথচ ইসলামে এ ব্যাপারে কঠোর হুমকি এসেছে। যেমন,
আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيِّدِهِ ‏
“যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: অনুচ্ছেদ-১ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে হা/২১৭৫, সহীহ)
🔰 অনেক সময় স্ত্রী তার সতীনকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীর নিকট দাবি করে অথবা বাইরে কোন মহিলা কোন পুরুষকে বিবাহ করার জন্য শর্ত দেয় যে, তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে তাহলে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। অথচ এ ধরণের দাবি বা শর্তারোপ কোনটাই ইসলামে বৈধ নয়।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَسْأَلِ الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّمَا لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا ‏"‏ ‏
“কোন নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে।” ( সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ। অনুচ্ছেদ, বিয়েতে যে সকল শর্ত করা বৈধ নয়। সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা হা/২১৭৬, সহীহ)
➰ যে সব কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয:
সম্মানিত ফিকহবিদগণ বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা হওয়ার আশংকা করে তাহলে তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয রয়েছে। এই ক্ষয়-ক্ষতি শারীরিক, মানসিক, আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে হতে পারে।
নিম্নে এ বিষয়ে মৌলিক ১০টি দিক তুলে ধরা হল:
----------------
১. স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণের হক আদায় করতে অপারগ হয়।
২. স্বামী যদি স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।
৩. স্বামী যদি পরকীয়া, পাপাচারিতা এবং অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়।
৪. স্বামীর প্রতি মনে প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি হলে ( তা যে কারণেই হোক না কেন)।
৫. স্বামী দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি থাকার কারণে স্ত্রী যদি নিজের নিরাপত্তা হীনতা অনুভব করে বা ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
৬. স্বামী দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার কারণে স্ত্রী যদি এতে নিজের ঈমান-আখলাকের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করে।
৭. স্বামী যদি স্ত্রীকে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে মারপিট, জুলুম-নির্যাতন, অপমান-অপদস্থ, অভিসম্পাত ও গালাগালি করে।
৮. স্বামী যদি এমন কোন দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার কারণে স্ত্রী তাতে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করে।
৯. স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবার-পরিজন বিশেষ করে পিতামাতার সাথে দেখা-সাক্ষাতে সম্পূর্ণভাবে বাধা দেয়।
১০. স্বামী যদি নিজে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন গঠন, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান পালন না করে অথবা ইসলামের কোন বিষয়কে অস্বীকার করে অথবা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করে অথবা স্ত্রীকে নামায, রোযা, পর্দা ইত্যাদি ফরয ইবাদতে বাধা দেয়...ইত্যাদি।
♻ মোটকথা, স্বামীর অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে স্ত্রী নিজের ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করলে এবং স্ত্রীর প্রতি অবধারিত হক আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রীর খোলা তালাক চাওয়া বৈধ।
স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে সে কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হল, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন।আল্লাহু আলাম
আল্লাহু তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা Marriage education series

 May be an image of text that says 'শালী- দুলাভাই, দেবর- ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক যোগাযোগ, সম্পর্ক ও পর্দা আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল r'

 

 

শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা
▬▬▬◄◉►▬▬▬
প্রশ্ন: আমি জানি, আমার ছোট বোনের স্বামী আমার জন্য নন মাহরাম। তার সাথে আমার মেসেঞ্জারে কথা বলা জায়েজ আছে কি? তার সাথে কথা না বলার কারণে সে আমার বোনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চায় এবং কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এটা কি ঠিক? এ ক্ষেত্রে আমার কী করণীয়?
 
উত্তর:
শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদি শ্বশুর গোষ্ঠির নন মহরাম নিকটাত্মীয়কে হাদিসের ভাষায় ‘মৃত্যু’ সমতুল্য বলা হয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
 
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ ‏"‏ الْحَمْوُ الْمَوْتُ ‏"‏
 
উকবা ইবনে আমির রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাবধান! মহিলাদের সাথে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না। 
 
আনসারদের এক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, শ্বশুর গোষ্ঠির নিকটাত্মীয় (যেমন: দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, বেয়ায়-বেয়াইন ইত্যাদি ব্যক্তিগণ যারা পরষ্পরের জন্য মাহরাম নয়) সম্পর্কে আপনার মত কি?
তিনি বললেন: “সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)।”
 
(বুখারী ও মুসলিম। সুনান আত তিরমিজী [তাহকীক কৃত] হাদিস নম্বর: [1171] অধ্যায়ঃ ১০/ শিশুর দুধ পান (كتاب الرضاع) পরিচ্ছদ: ১৬. যার স্বামী অনুপস্থিত তার সাথে দেখা করা নিষেধ)
ইমাম নওবী রাহ. বলেন:
 
فمعناه: أن الخوف منه أكثر من غيره، والشر يُتوقع منه والفتنة أكثر لتمكُّنه من الوصول إلى المرأة والخلوة من غير أن يُنكَر عليه بخلاف الأجنبي
 
(স্বামীর নন মাহরাম নিকটাত্মীয়কে ‘মৃত্যু সমতুল্য’ বলার) অর্থ হল: অন্যদের তুলনায় তার ব্যাপারে ভয় বেশি। তার মাধ্যমে ক্ষতি ও ফেতনার সম্ভাবনা অধিক। কারণে সে বিনা বাদ-প্রতিবাদে যেভাবে একজন নারীর কাছে পৌঁছুতে পারে এবং একাকী তার কাছে যেতে সক্ষম হয় বাইরের অন্য কারো দ্বারা তা সম্ভব নয়।” (শরহে মুসলিম-ইমাম নওবী রহ.)
 
সুতরাং এ সকল নন মাহরাম নিকটাত্মীয়দের মাঝে পর্দা বিহীনভাবে দেখা-সাক্ষাৎ, অবাধে উঠাবসা, হাসি-কৌতুক, দুষ্টুমি, নির্জনে বসে গল্প করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন, মেসেঞ্জার বা সরাসরি কথা বলা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কথা বললেও কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠ পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
 
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।”(সূরা আহযাব: ৩২)
 
আপনি তার সাথে মেসেঞ্জারে কথা না বলার কারণে যদি আপনার বোন (তার স্ত্রী) এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চায় বা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে এটা নি:সন্দেহে আল্লাহর বিধান অমান্য করার শামিল। এতে সে দু দিক থেকে গুনাহগার হবে। যথা:
 
এক. বিনা প্রয়োজনে নন মাহরাম মেয়ের সাথে কথা বলা।
দুই. হালাল স্ত্রীর সাথে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কথা বন্ধ করা বা তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের হুমকি দেয়া।
 
এগুলো স্পষ্ট ফাসেকি কাজ। সুতরাং এমন ব্যক্তির শরিয়া বিরোধী দাবী পূরণ করে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করার সুযোগ নাই। অন্যের কারণে নিজে গুনাহগার হতে যাবেন না। বরং সে যদি আপনার সাথে ফোন বা মেসেঞ্জারে কথা বলার জন্য জোরাজোরি করতে চায় তাহলে বিষয়টি আপনার বাবা-মা, পরিবার বা যার মাধ্যমে সম্ভব তাকে জানিয়ে প্রতিকার করা উচিৎ।
আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।
 
▬▬▬◄◉►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi