Wednesday, June 23, 2021

৫১. স্বামী-স্ত্রীর বিনোদনের সময় কখন গোসল ফরয হয় আর কখন হয় না Marriage education series

 No photo description available.

 

স্বামী-স্ত্রীর বিনোদনের সময় কখন গোসল ফরয হয় আর কখন হয় না
▬▬▬🌹🧡🌹▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী স্ত্রীর নিজেদের মধ্যে বিনোদন করতে গিয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ যদি কাপড়ের আড়াল ছাড়া স্ত্রীর যৌনাঙ্গ সরাসরি স্পর্শ করে -কিন্তু সহবাস হয় নি, বীর্য পাতও ঘটে নি- তাহলে তাতে কি তাদের উভয়ের জন্য গোসল ফরজ হয়ে যাবে?
 
এক কিতাবে পড়ে ছিলাম যে, স্বামী-স্ত্রীর লজ্জা স্থান যদি কোন আড়াল ছাড়া একে অন্যকে স্পর্শ করে, তাতেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে। যদিও তাতে প্রবেশ করানো হই নি। শুধু মাত্র স্পর্শ করার কারণেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে-কথা টা কি সঠিক?
 
উত্তর:
কাপড়ের আড়াল ছাড়া স্বামী-স্ত্রী একে অপরের লজ্জা স্থানে হাত, পা বা শরীরে অন্য কোন অঙ্গ লাগলে তাতে গোসল ফরজ হয় না। এমন কি স্বামী এবং স্ত্রীর লজ্জা স্থান একটির সাথে আরেকটির কেবল স্পর্শ হলে তাতেও গোসল ফরয হয় না যতক্ষণ না পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (মাথা) নারীর লজ্জা স্থানে প্রবেশ করে (বীর্যপাত ঘটুক অথবা না ঘটুক)।
 
♦ নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদিস সমূহ পেশ করা হল:
🔸 ১) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 
‏ إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ وَتَوَارَتِ الْحَشَفَةُ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
 
“দু’বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ অদৃশ্য হয়ে গেলেই গোসল ওয়াজিব হয়।” 
[সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়। সনদ সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৩/২৬০।]
 
🔸 ২) আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 
قَعَدَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ وَأَلْزَقَ الْخِتَانَ بِالْخِتَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
 
“তার (স্ত্রী) চার অঙ্গ (দু হাত ও দু পা অথবা দু রান ও দু পা) এর মাঝখানে বসলে এবং এক যৌনাঙ্গ অপর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিলেই গোসল আবশ্যক হবে।” 
অন্য বর্ণনায় আছে, و إن لم ينزل “বীর্য নির্গত না হলেও।” অন্য বর্ণনায় আছে, বীর্যপাত হোক অথবা না হোক।
 
(সহিহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ বুখারী গোসল অধ্যায়। অনুচ্ছেদ: যখন দুটি বিপরীত লিঙ্গ মিলিত হবে।)
 
🔸 ৩) আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
 
إِذَا جَلَسَ الرَّجُلُ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ ‏
 
“যখন কোন ব্যক্তি তার (স্ত্রীর) চার অঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে উপবিষ্ট হয় এবং তার সাথে সঙ্গম করে, তখন গোসল ওয়াজিব হয়।” 
[সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়, মুসনাদ আহমাদ ৬৬৩২ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবু দাউদ ২০৯, ইরওয়াহ ১২২।]
 
🔸 ৪) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 
 
إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
 
“এক লজ্জা স্থান অপর লজ্জা স্থানে প্রবেশ করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়।” 
(তিরমিযী, পরিচ্ছদ: ৮০. পুরুষের লজ্জা স্থান ও স্ত্রীর লজ্জা স্থান একত্রে মিলিত হলে গোসল করা ওয়াজিব)
 
➰ তবে আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত যে হাদিসে বলা হয়েছে:
 إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ 
 
“দু’ বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলেই গোসল ওয়াজিব হয়।”
[তিরমিযী ১১০, আবু দাউদ ২১৪-১৫, তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ} 
অনুরূপভাবে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে কেবল দুটি বিপরীত লিঙ্গ স্পর্শ করলেই গোসল ফরজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে- সেগুলো থেকে কেবল ষ্পর্শ করা উদ্দেশ্য নয় বরং সহবাস করা উদ্দেশ্য-যেমনটি উপরোল্লিখিত হাদিস সমূহ থেকে প্রমাণিত হয়।
 
▪ সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নওবী বলেন, “গোসল ফরয হওয়া বীর্যপাতের উপর নির্ভর করে না বরং পুরুষাঙ্গেরে অগ্রভাগ স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হবে। এ ব্যাপারে সাহাবী ও তৎপরর্তীদের মধ্যে কিছু দ্বিমত থাকলেও বর্তমানে কোন দ্বিমত নাই অর্থাৎ এ ব্যাপারে ইজমা সংঘটিত হয়েছে।”
 
▪ সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারী, এ বিষয়ে ইজমা বা সর্বসম্মত অভিমত উল্লেখ করেছেন।
 
▪ শাইখ খালেদ আব্দুল মুনঈম রিফাঈ বলেন, এ ব্যাপারে ইজমা তথা ফুকাহাদের সর্বসম্মত অভিমত রয়েছে যে, কেবল স্পর্শ দ্বারা গোসল ফরয হয় না যতক্ষণ না পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে।
♦ সহবাসে বীর্যপাত না হলেও গোসল ফরয হবে:
উবাই ইবনু কা’ব রা. থেকে বর্ণিত:
 
إِنَّمَا جَعَلَ ذَلِكَ رُخْصَةً لِلنَّاسِ فِي أَوَّلِ الإِسْلاَمِ لِقِلَّةِ الثِّيَابِ ثُمَّ أَمَرَ بِالْغُسْلِ وَنَهَى عَنْ ذَلِكَ
 
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় লোকদের কাপড় চোপড়ের স্বল্পতার কারণে কেবল সহবাসে বীর্য নির্গত না হলে গোসল না করার অনুমতি প্রদান করেন। তবে পরবর্তীতে এরূপ অবস্থায় (বীর্যপাত না হলেও) তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন এবং গোসল ত্যাগ না করতে বলেন। [সুনানে আবু দাউদ অধ্যায়: পবিত্রতা অর্জন অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৫ সহবাসে বীর্যপাত না হলে-সহিহ]
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
অর্থাৎ ইসলামের প্রথম যুগে বীর্যপাত হলেই কেবল গোসলের নির্দেশ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে যায়। সুতরাং পুরুষাঙ্গ নারীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হবে-বীর্যপাত ঘটুক অথবা না ঘটুক। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৫০. ইসলামের দৃষ্টিতে 'গোপন বিয়ে Marriage education series

 May be an image of text that says 'ইসলামের দৃষ্টিতে গোপন বিয়ে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল'

 

 

ইসলামের দৃষ্টিতে 'গোপন বিয়ে'
▬▬▬❖❣❖▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী যদি ২য় বিয়ে করার পর ১ম স্ত্রীর নিকট তা গোপন রাখে বা স্বীকার না করে যে, সে ২য় বিয়ে করেছে তাহলে এটা কি তার জন্য বৈধ হবে?
উত্তর:
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: আহমদ বিন আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
أَعْلِنُوا هَذَا النِّكَاحَ
"তোমরা এই বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করো।" (ইরওয়াউল গালিল, হা/১৯৯৩-শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)
সুতরাং সাধারণ অবস্থায় বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা অবলম্বন করা উচিত নয়। বরং বিয়ের ব্যাপারটি সমাজের লোকজনকে জানানো এবং সবার সামনে প্রকাশ করা উচিৎ-যেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে মানুষের মনে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। অন্যথায় সমাজে গোপন অভিসার ও অবৈধ সম্পর্ক সৃষ্টির পথ প্রশস্ত হতে পারে।
কিন্তু যদি বিয়ের শর্তাবলী ঠিক রেখে শরিয়ত সম্মত ভাবে বিয়ে সংঘটিত হয় অর্থাৎ কনের অভিভাবকের অনুমতি, মোহর নির্ধারণ ও দু জন সাক্ষীর উপস্থিতে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে বিয়ে হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি বিয়ের বিষয়টি সমাজের প্রকাশিত হওয়ার ফলে নিজের ক্ষয়-ক্ষতি ও জেল-জুলুমের আশঙ্কা করে তাহলে তার জন্য বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখা জায়েয রয়েছে। যেমন, ২য় বিয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী, তার পরিবার বা প্রচলিত মানব রচিত আইনে হয়রানীর শিকার হওয়ার আশঙ্কা।
অবশ্য, অভিভাবকের সম্মতিক্রমে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে হলে সেটাকে গোপন বিয়ে বলা যায় না। বরং তা হাদিসের "তোমরা বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করো" এ নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে সমাজ ও এলাকাবাসীর নিকট বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করা নি:সন্দেহে উত্তম।
🔰 অনুরূপভাবে ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে স্বামীর জন্য স্ত্রী বা তার পরিবারের নিকট ২য় বিয়ের বিষয়ে সরাসরি মিথ্যা না বলে তাওরিয়া করা (দ্ব্যর্থবোধক কথা বলা) শরিয়ত সম্মত। অর্থাৎ এমন ভাষায় কথা বলবে, যেটা সরাসরি মিথ্যা হবে না কিন্তু শ্রোতা সত্য মনে করবে।
ইসলামী শরিয়তে সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কার ক্ষেত্রে সরাসরি মিথ্যা না বলে একটু ঘুরিয়ে পরোক্ষ ভাষায় কথা বলে শ্রোতার নিকট মূল বিষয়টিকে আড়াল করার বৈধতা রয়েছে। এটাকে তাওরিয়া বলা হয়।
আল্লাহু আলাম।
 
 
▬▬▬❖❣❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব