Thursday, June 24, 2021

৬৩. ক্রসিং বিয়ে: কখন বৈধ কখন অবৈধ Marriage education series

 No photo description available.

ক্রসিং বিয়ে: কখন বৈধ কখন অবৈধ
▬▬▬❣💚❣▬▬▬
প্রশ্ন: এক দীনি ভায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। অন্য আরেক দীনি ভায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তারা দুই ছেলে মেয়ের সাথে দুই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিতে চায়। এভাবে কি বিয়ে দেয়া যাবে? শরিয়তে কি এমন ক্রসিং বিয়ে নিষিদ্ধ?
উত্তর:
নিকাহে শিগার বা ক্রসিং বিয়ে (যাকে অদল-বদল বিয়েও বলা হয়) এর তিনটি পদ্ধতি আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হারাম, আরেকটি বিরোধপূর্ণ হলেও সঠিক মতানুযায়ী হারাম এবং আরেকটি হালাল।
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
➰ ১ম পদ্ধতি-হারাম:
যদি কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলে যে, আমি আমার ছেলেকে তোমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিব। তবে শর্ত হল, তোমার ছেলেকে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে কোনো মোহর থাকবে না।
অথবা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রস্তাব দিলো, তুমি আমার সাথে তোমার মেয়েকে অথবা বোনকে বিয়ে দাও এবং তার পরিবর্তে আমি আমার মেয়েকে অথবা বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো। আর এতে কোন মোহর থাকবে না।
অর্থাৎ এখানে দুটি বিষয় থাকবে। যথা:
▪ এক. বিয়েতে এই শর্ত থাকবে যে, 'একে অপরের ছেলে/মেয়ের বিয়ে দিবে বা অদল-বদল বিয়ে হবে। এই শর্ত পূরণ না হলে বিয়ে হবে না।
▪ দুই. উপরোক্ত শর্তানুযায়ী বিয়েকেই মোহরের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে। আলাদা কোনো আর্থিক মোহর নির্ধারণ করা হবে না।
এটি নিষিদ্ধ শিগার বা ক্রসিং বিবাহের অন্তর্ভুক্ত। এটি হারাম।
এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। 
 
💠 তন্মধ্যে একটি হল:
 
حديث ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهى عَنِ الشِّغَارِ الشِّغَارُ أَنْ يُزَوِّجَ الرَّجُلُ ابْنَتَهُ عَلَى أَنْ يُزَوِّجَهُ الآخَرُ ابْنَتَهُ، لَيْسَ بَيْنَهُمَا صَدَاقٌ
 
ইবনে ‘উমার (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিগার নিষিদ্ধ করেছেন।
‘শিগার’ হলোঃ "কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যক্তির পুত্রের সাথে বিয়ে দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের সাথে বিয়ে দিবে এবং এক্ষেত্রে কোনো মোহর থাকবে না।" (বুখারী পর্ব ৬৭/২৭ হাঃ ৫১১২, মুসলিম ১৬/৬ হাঃ ১৪১৫)
 
💠 আরেকটি হাদিস হল:
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ الشِّغَارِ وَالشِّغَارُ أَنْ يَقُولَ الرَّجُلُ لِلرَّجُلِ زَوِّجْنِي ابْنَتَكَ أَوْ أُخْتَكَ عَلَى أَنْ أُزَوِّجَكَ ابْنَتِي أَوْ أُخْتِي وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا صَدَاقٌ
 
ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিগার বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, শিগার বিবাহ এই যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রস্তাব দিলো, তুমি আমার সাথে তোমার মেয়েকে অথবা বোনকে বিয়ে দাও এবং তার পরিবর্তে আমি আমার মেয়েকে অথবা বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো, আর এতে কোন মাহর থাকে না। [সহীহুল বুখারী ৫১১২, ৬৯২০, মুসলিম ১৪১৫]
 
➰ ২য় পদ্ধতি- অগ্রাধিকার যোগ্য মতে হারাম:
উপরে বর্ণিত হুবহু একই পদ্ধতি। তবে পার্থক্য হল, এখানে আর্থিক মোহর নির্ধারণ করা হবে (কম বেশি যাই হোক)।
অর্থাৎ এখানে 'একে অপরের ছেলে/মেয়ের বিয়ে বা আদল-বদল বিয়ের' শর্ত ঠিক থাকবে। কিন্তু পাশাপাশি মোহরও নির্ধারণ করা হবে।
এ বিয়ের ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও সঠিক কথা হল, এটিও নিষিদ্ধ শিগার বা ক্রসিং বিয়ের অন্তর্ভুক্ত। এটি হারাম। কেননা, এখানে বদল বিয়ের শর্তারোপ করা হয়েছে। সুতরাং তা ‘শিগার’ বিয়ে হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ পক্ষে মত দিয়েছেন আল্লামা বিন বায এবং সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি (লাজনাহ দায়েমা)। 
 
➰ ৩য় পদ্ধতি- বৈধ/হালাল:
উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী একে অপরের মেয়ে বা বোনের বিবাহ দিবে। কিন্তু এখানে উপরোক্ত দুটি জিনিস থাকবে না। যথা:
▪ এক. একে অপরের মেয়ে বা বোনের বিয়ের শর্ত থাকবে না। অর্থাৎ এক বিয়ের সাথে অপর বিয়ে নির্ভরশীল হবে না।
▪ দুই. উভয় পক্ষের ছেলে/মেয়ের বিয়ে যথারীতি মোহর থাকবে।
 
এই বিয়ে হালাল। এটি নিষিদ্ধ শিগার বা ক্রসিং বিয়ের অন্তর্গত নয়।
 
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত বিয়ে যদি ৩য় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাহলে তা বৈধ; অন্যথায় বৈধ নয়। অর্থাৎ উক্ত বিয়েতে অদল-বদল বিয়ের শর্তারোপ থাকবে না এবং শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করা হবে। তাহলে তা বৈধ হবে।
আল্লাহু সবচেয়ে ভালো জানেন।
▬▬▬❣💚❣▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

Wednesday, June 23, 2021

৬২. পিতা সুদি কারবার বা অন্যান্য হারাম কর্মে যুক্ত থাকলে তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ কি? Marriage education series

 May be an image of text that says 'পিতা সুদি কারবার বা অন্যান্য হারাম কর্মে যুক্ত থাকলে তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ কি?'

পিতা সুদি কারবার বা অন্যান্য হারাম কর্মে যুক্ত থাকলে তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ কি?
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে কিন্তু তার সুদের ব্যবসা আছে। তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিত হবে কি?
উত্তর:
নি:সন্দেহে সুদি কারবার করা হারাম ও ইসলামের ভয়াবহ গুনাহ সমূহের অন্যতম। কোন মুসলিমের জন্য সুদের সাথে সম্পর্ক রাখা জায়েজ নাই। কিন্তু আপনি যে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চান তাকে যদি আপনার ভাল লাগে বা পছন্দ হয় এবং তার মধ্যে দীনদারি, পরহেজগারিতা ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি নেই। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا ، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
“মহিলাকে চারটি দিক দেখে বিয়ে করা হয়। যথা: বংশমর্যাদা, সৌন্দর্য, অর্থ-সম্পদ এবং দ্বীনদারী। অত:এব তুমি দ্বীনদারী নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও...।" (বুখারি ও মুসলিম)
◍ আর পিতার পাপাচার, হারাম উপার্জন ও অন্যায়-কর্মেরে জন্য মেয়ে দায়ী নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ
"কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।" (সূরা ইসরা: ১৫)
তিনি আরও বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ
"প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী।" (সূরা আল মুদ্দাসসির: ৩৮)
বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক অভিভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَلاَ لاَ يَجْنِي جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ لاَ يَجْنِي وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُودٌ عَلَى وَالِدِهِ
‘‘জেনে রাখ, যে অপরাধ করবে তাকে তার দায় বহন করতে হবে। পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে দায়ী করা যাবে না।" [ইবনে মাজাহ, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
সুতরাং কনো পিতা যদি সুদি কারবার, হারাম উপার্জন, মদপান বা অন্যান্য পাপাচার করে কিন্তু তার মেয়ে যদি ভালো, সৎ ও দীনদার হয় তাহলে তাকে বিয়ে করতে কনো বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে আপনি যৌতুক নিবেন না বা বিয়ের পরও শ্বশুরের দেয়া দান ব্যবহার থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকবেন। পাশাপাশি আপনার শ্বশুরকে সুদি কারবার ও হারাম কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করতে নসিহত করার চেষ্টা করবেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব