Wednesday, June 23, 2021

৬১. নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাদের শোক পালন করার বিধিবিধান Marriage education series

 No photo description available.

নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাদের শোক পালন করার বিধিবিধান:
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
 
যদি পিতা, মাতা, ভাই, বোন, সন্তান, স্বামী বা অন্য কোন নিকটাত্মীয় মারা যায় তবে মহিলার জন্য শোক পালন করা বৈধ। স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন ওয়াজিব (আবশ্যক)। আর অন্যদের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ তিন দিন বৈধ; আবশ্যক নয়। তবে স্ত্রী স্বামীকে খুশি রাখতে যদি অন্য কোন মানুষের মৃত্যুতে স্ত্রী শোক পালন না করে তবে সেটাই উত্তম। কারণ, স্বামীর সুখ কামনাতেই নারীর জন্য অজস্র কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
◈◈ শোক পালনের দলিল:
 
স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً
 
"আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো, নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা।" (সূরা বাকারা: ২৩৪)
 
আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন, শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর তৃতীয় দিন (তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনিন) উম্মে হাবিবা রা. কিছু হলুদ বা জাফরান (অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতে বললেন। অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার চেহারার দু পাশে ও দু গালে এবং দু বাহুতে মাখলেন। অত:পর বলেন, এটা করার আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু আমি এজন্যই এমনটি করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 
« لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا »
 
"যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বামী ছাড়া কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।" (সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা)।
 
◈◈ শোক পালনের পদ্ধতি:
● ১) মৃতের প্রতি শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে মহিলা সকল প্রকার সৌন্দর্য গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে।
● ২) আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধির জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
● ৩) সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক না পরা। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোশাক পরিধান করতে হবে-এমন ধারণা ঠিক নয়।
● ৪) সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৫) মেহেদী, খেজাব বা আলাদা রং ব্যবহার না করা।
● ৬) কোন ধরণের অলংকার-যেমন: দুল, চুরি, নাক ফুল, আংটি, নূপুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৭) বিয়ের প্রস্তাব বা বিয়ে থেকে বিরত থাকা।
● ৮) শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন-যেমন: বিপদের আশংকা, প্রয়োজন বশত: বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরি কাজে অন্যত্র যেতে পারবে।
● ৯) স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে অথবা চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হলে তখন উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা সমূহ উঠে যাবে এবং অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।
মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব ধরণের আচরণ বা সৌন্দর্য অবলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
 
এটা এ কারণে যে এর মাধ্যমে, স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়, তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতিতে সহমর্মিতা প্রকাশ হয় সর্বোপরি আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

 

৭১. প্রশ্ন: বন্ধ্যা ব্যক্তির জন্য কি বিয়ে করা জায়েজ? খাসি হওয়ার বিধান কি? Marriage education series

 No photo description available.

প্রশ্ন: বন্ধ্যা ব্যক্তির জন্য কি বিয়ে করা জায়েজ?
খাসি হওয়ার বিধান কি?
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর:
 
কেউ যদি নিজের সম্পর্কে জানতে পারে যে সে বন্ধ্যা, তারপরেও সে বিয়ে করতে পারবে। তবে শর্ত হল, যদি সে স্ত্রীর ভরণপোষণ এবং জৈবিক চাহিদা পূরণে সামর্থ্যবান হয়। অন্যথায় বিয়ে করা বৈধ নয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
 
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
 
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত করতে সব চেয়ে বেশি সহায়ক। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোজা) পালন করে। কেননা তা প্রবৃত্তিকে দমন করে।” [বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫ ও মুসলিম ১৪০০]
 
বন্ধ্যত্ব দূর করার জন্য যথাসাধ্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দুয়া ও কান্নাকাটি করতে হবে। আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের একটা সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মহান আল্লাহ মানুষকে সন্তান দান করেছেন-এর বহু নজির আছে।
 
মহান আল্লাহ সম্মানিত রসূল ইবরাহীম আলাইস সালাম কে বহু বছর বন্ধ্যত্ব কাটানোর পর বৃদ্ধ বয়সে তাঁর স্ত্রীর সারা আ. এর গর্ভে ইসহাক আ. কে দান করেছিলেন।
 
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছে সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ার ভুক্ত বিষয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
 
لِّلَّـهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَن يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاءُ الذُّكُورَ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَن يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
 
“নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।” (সূরা শূরা: ৪৯ ও ৫০)
 
সুতরাং বিয়ের পর আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ না হয়ে যথাসম্ভব চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে। দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে অবশ্যই সন্তান দানের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম প্রজ্ঞাবান ক্ষমতাশীল।
 
প্রশ্ন: খাসি হওয়া কি জায়েজ?
উত্তর:
 
প্রথমে আমরা জানব, খাসি করা বলতে কী বুঝায়?
সহজ কথায়, পুরুষের অণ্ডকোষে অস্ত্রোপচার করে অথবা মেডিসিন বা কেমিক্যাল প্রয়োগের মাধ্যমে তার যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করাকে খাসি করা বলা হয়। 
 
পূর্ব যুগে বিভিন্ন দেশে ধর্ষণ এবং বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অথবা দাস যেন তার মহিলা মনিবের প্রতি যৌন বাসনা অনুভব করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে বা আরও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তাদের যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হতো। 
 
আবার কিছু মানুষ হয়তো বিশেষ কারণে যেন নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে সে উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় এমনটি করত। 
 
ইসলামের দৃষ্টিতে এটি নিষিদ্ধ কাজ।
 
খাসি হওয়া জায়েজ নয়। কেননা এ মর্মে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন:
 
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا نَغْزُو مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَيْسَ مَعَنَا نِسَاءٌ، فَقُلْنَا: أَلاَ نَخْتَصِي فَنَهَانَا عَنْ ذَلِكَ،
 
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুদ্ধে বের হতাম। তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না। বিধায় আমরা একবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম: আমরা কি খাসি হয়ে যাব না? 
 
তখন তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছেন। 
(বুখারী পর্ব ৬৫/৫ হা/৬১৫, মুসলিম পর্ব ১৬/২, হাঃ ১৪০৪)
আল্লাহু আলাম
 
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA