Thursday, June 24, 2021

৭৭. একাধিক বিয়ে করা Marriage education series

 

একাধিক বিয়ে করা
-------------
প্রশ্ন:
ক) পুরুষদের ৪টি বিয়ে করা তো জায়েয। কিন্তু তা কি সুন্নত?
খ) কোনো স্ত্রী যদি চায় তা, বিয়েরস্বামী পরে আর বিয়ে না করুক সে জন্য কি জোর করে বলতে পারবে বা তাকে বাধা দিতে পারবে?
গ) কিংবা বিয়ের কাবিনে কি উল্লেখ করা যাবে যে, প্রথম স্ত্রীর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আরেক বিয়ে করতে পারবে না?
উত্তর:
 
🔹 ক. একাধিক বিয়ে করা সুন্নাত নয় বরং তা প্রয়োজনের স্বার্থে শর্ত স্বাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারণ দুনিয়ার সকল মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যা এক রকম নয়। তবে ইসলামে এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হল, ২ অথবা ৩ অথবা ৪। ইসলামের আগে এর কোন সীমা-সংখ্যা ছিল না।
 
তবে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম কঠিন শর্ত দিয়েছে। তা হল, সকল স্ত্রীর মাঝে সমতা রক্ষা করা। সমতা রক্ষা করতে না পারলে একটির অধিক বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ শর্ত পূরণে ব্যর্থ পুরুষদের জন্য আখিরাতে কঠিন খারাপ পরিণতির কথা বলা হয়েছে।
 
🔹 খ. বিয়ের সময় স্ত্রী যদি কাবিন নামায় ‘১ম স্ত্রী মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী ২য় বিয়ে করতে পারবে না’ বলে শর্ত জুড়ে দেয় আর স্বামী যদি তাতে সম্মতি দেয় তাহলে এই শর্ত পালন করা স্বামীর জন্য অপরিহার্য। কারণ, হাদীসের আলোকে মুসলিম তার শর্ত পালনে বাধ্য। ওয়াদা রক্ষা না করা মুনাফিকীর আলামত।
 
🔹গ. বিয়ের পূর্বে ‘২য় বিয়ে করা যাবে না’ মর্মে কোন শর্ত না থাকলে স্বামীকে তার প্রয়োজনে ২য় বিয়ে করতে বাধা দেয়া স্ত্রীর চরম অন্যায় এবং তাকে মহান আল্লাহ প্রদত্ব অধিকার পালনে হস্তক্ষেপের শামিল। এ ক্ষেত্রে সে বিপথে গিয়ে অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হলে উভয়েই গুনাহগার হবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দশ্য হল, নিজেকে পবিত্র রাখা।
 
আল্লাহু আলাম।
➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa

৭৬. ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে কি নারীদেরকে অপমানিত করেছে? Marriage education series

 May be an image of text that says 'ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে কি নারীদেরকে অপমানিত করেছে?'

ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে কি নারীদেরকে অপমানিত করেছে?
------------------
উত্তর:
ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থার নাম যা সকল যুগের জন্য সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে ইসলাম সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিস্থিতির কারণে মানুষ ২য় বিবাহ করতে বাধ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার অধিকার সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
তাই ইসলাম ২য় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়েছে যে, সকল স্ত্রীর সাথে ন্যায়পরায়ণতা সুলভ আচরণ করতে হবে। কোন মহিলাকে এ বিয়েতে বাধ্য করা যাবে না এবং এ বিয়েতে ২য় স্ত্রী শর্তারোপ করতে পারে।
ইসলামে একাধিক বিয়ে করা আবশ্যক করা হয়নি, উত্তমও বলা হয়নি। বরং তা শুধু বৈধ বলা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি চারটি বিয়ে করতে পারে তবে শর্ত হচ্ছে, তাকে শরীয়ত নির্ধারিত অলঙ্ঘনীয় শর্তাবলী অবশ্যই পূরণ করতে সক্ষম হতে হবে। সেগুলো হল, ন্যায়-পরায়নতা বজায় রাখা, প্রত্যেক স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হওয়া, ভরণ-পোষণ সহ জীবন-যাপনের উপকরণের ব্যবস্থা করা।
মোটকথা, শুধু প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। আর তাও শর্ত সাপেক্ষে। সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তব প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ইসলাম এ অনুমতি প্রদান করেছে।
সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যারা ইসলামের এ বিধানকে অনৈতিক এবং এতে নারীদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তারাই যখন নিজের স্ত্রী বাদ দিয়ে অন্য মহিলাকে ‘র্গাল ফ্রেন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে তখন তার এটাকে অনৈতিক বলতে নারাজ! তারাই নারীদেরক পণ্যের মত পুরুষের উপভোগের বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর প্রতি এর থেকে চরম অপমান আর কী হতে পারে?
প্রকৃতপক্ষে এই আইনের মাধ্যমে ইসলাম তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে লাঞ্ছনা ও অপমানের হাত থেকে উদ্ধার করে বৈধ পন্থায় সম্মানের সাথে ঘরে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
তাই পরিশেষে বলব, একাধিক বিবাহের বৈধতা দিয়ে ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, প্রকৃতিগত চাহিদা এবং নানা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করেছে। নারীকে পরপুরুষের ভোগ্য বস্তু থেকে উদ্ধার করে তাকে মর্যাদা এবং সম্মানের আসনে আসীন করেছে।
তবে প্রয়োজন, ইসলামী আইনের ব্যাপারে মুসলমানদের গণসচেতনতা এবং সঠিকভাবে তা ব্যবহার করা। তাহলেই যে উদ্দেশ্যে ইসলাম এ আইনকে মানবতার কল্যাণে দান করেছে সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন॥
-------------------------
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব