আমি বিভিন্ন সেমিনারে দ্বীনি বোনদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখেছি। তার মধ্যে আমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মনে হয়েছে একটু বয়স করে দ্বীনে ফেরা বোনদের প্রশ্নগুলো। সাধারণত ২৬-২৭ বছর বয়সে পড়াশোনা শেষ করে যেসব বোনেরা দ্বীনের বুঝ অর্জন করে, তাদের কমন প্রশ্ন থাকে, এই বয়সে তারা কোনো দ্বীনদার ছেলের জন্য অপেক্ষা করবে কিনা। তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে সেমিনারের সকল স্পিকার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেছেন, নাহয় কিছু সময় চুপ থেকে বলেছেন, ‘এই প্রশ্নের তেমন কোনো উত্তর নেই। আপনারা দু’আ করতে থাকুন’। প্রথমত তাদের দ্বীনের বুঝ দেরিতে হয়েছে, তারপর আবার এই বয়সে কোনো দ্বীনদার ছেলের জন্য অপেক্ষা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা ২৬-২৭ বছর বয়সী দ্বীনদার বোনদের জন্য নূন্যতম ২৭-৩৫ বছর বয়সের কোনো দ্বীনি জীবনসঙ্গী প্রয়োজন। যেসব দ্বীনি ভাইদের বয়স ২৭-২৮ বছর, তারা স্বাভাবিক ভাবেই ২২-২৫ বছর বয়সী কাউকে চাইবে। আর যাদের বয়স আরো বেশি, তারা অলরেডি বিয়ে করে ফেলেছে। তাই এমন একটা অবস্থায় এই বোনদের দ্বীনদার কারো জন্য অপেক্ষা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সবাই দু’আ করতে বলে।
এবার আসি মূল পয়েন্টে...
আসলে দ্বীনি বোনদের এই প্রশ্নের জবাবে আমিও বলব দু’আ করতে। কারণ দু’আর থেকে শক্তিশালী কোনো অস্ত্র নেই। হয়ত আমার এই পোস্ট শুধুমাত্র তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য একটু সাহায্য করবে। আমি চাই আমার বোনেরা যেন কখনো হতাশ না হয়।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। হজরত ইব্রাহীম (আ.) কিন্তু ১০০ বছর বয়সে পিতা হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী সারা (আ.) নিজেকে বন্ধ্যা বলতেন। তাঁরা বার্ধক্যের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে সন্তান লাভ করেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তাঁদের কাছে ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁদের অনাগত সন্তানের আগমনের সংবাদ দিয়েছিলেন। আরো বলেছিলেন, সেই সন্তান হবেন নবি। আবার সেই সন্তানের সন্তানও হবেন নবি।
এরপর আমি আমার নিজের জীবন থেকে একটা বাস্তব উদাহরণ দেই। মাত্র তিন-চারদিন আগে আমার হলের এক আপু মেসেজ দিয়ে জানাল আমার এক ক্লাসমেটের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং সে যেমন জীবনসঙ্গী চেয়েছিল, ঠিক তেমন পেয়েছে। সুবাহানাল্লাহ। সে আমার থেকে পরে দ্বীনে ফিরেছিল। তারও দ্বীন পালনে প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এত সহজে বিয়ে হয়ে গিয়েছে শুনে ভেতরে ভেতরে একটা ধাক্কা খাই আর সেই আপুকে বলি, ‘কিছু মানুষের সমস্যাগুলো আল্লাহ কত সহজে সমাধান করে দেন!’ আমার কথা শুনে আপু বলে, সেই মেয়েটা কখনো তাহাজ্জুদ বাদ দেয়নি। তখনই বুঝতে পারি, এত তাড়াতাড়ি মন মত জীবনসঙ্গী পাওয়ার কারণ।
জীবনের অন্তিম প্রহরে ইব্রাহিম (আ.)-এর সন্তান লাভের উছিলা আর আমার হলের সেই বান্ধবীর এত জলদি বিয়ে হওয়া, তার সকল সমস্যার সমাধান হওয়ার পেছনে একটাই কারণ। তা হচ্ছে, পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী অস্ত্র দু’আ, যা সরাসরি আরশে গিয়ে পৌঁছায়। এগুলো কখনো বৃথা যায় না।
আল্লাহর কাছে অসাধ্য বলে কিছু নেই। পার্থিব অপার্থিব কোনো শক্তির সাথে আল্লাহর তুলনা চলে না। তিনি চাইলেই পারেন। তিনি শুধু বলেন ‘হও’। আর সাথে সাথে সেটা হয়ে যায়। শুধু যারা দেরিতে দ্বীনের বুঝ পেয়েছে তাদের জন্য নয়, দু’আ আমাদের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান মুহূর্তেই করে দিতে পারে। শুধুমাত্র আমাদের ইখলাসের সহিত দু’আ করতে হবে।
.
.
.
|| সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র ||
-সাওদা সিদ্দিকা নূর