Monday, July 5, 2021

উত্তম ও পবিত্র জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য আমরা কি করব?

 

উত্তম ও পবিত্র জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য আমরা কি করব?
 
সবাই নিজের জীবনে উত্তম-পবিত্র জীবনসঙ্গী চাই, কিন্তু তা কখনো নিজ ইচ্ছায় চাইলেই পাওয়া যায় না, আল্লাহ যদি চায় তাহলেই পাওয়া যায়। আল্লাহর পক্ষে আপনার ধারণা থেকেও উত্তম কিছু দেওয়া কোন ব্যাপার না। তাই শুধু তাঁরই অভিমুখি হোন। তাঁর কাছেই চাইতে থাকুন। শুধু শুধু অকারণেই চিন্তা করে কোনো লাভ হবে না।
 
মনে রাখবেন, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তায়ালা যদি না চান, তাহলে তা কখনোই ঘটবে না। আবার, আল্লাহ্ তা'আলা যদি চান তাহলে কেউই তা রুখতে পারবে না, যতোই প্রতিকূলতা থাক না কেন।
 
তাই, যিনি দিতে পারবেন, তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন, শুধু তাঁর রহমতের জন্য নিজের জীবনকে প্রস্তুত করুন, রবের আদেশ পালনে সর্বদা নিজের নফসকে(আত্মা) নিয়োজিত রাখুন।
 
আর যেহেতু দু'আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাই আমাদের উচিত সর্বদা দোয়া করে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। এই যেমন, নেককার জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া, উত্তম স্বামী পাওয়ার দোয়া, নেককার স্ত্রী পাওয়ার দোয়া ইত্যাদি।
 
১.
অতিদ্রুত হালাল, উত্তম ও সম্মানজনক রুজি এবং উত্তম ও দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়ার জন্য বেশি করে মুসা 'আলাইহিস সালাম এর দোয়াটি পড়তে পারেন:
 
َ رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ
 
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (আল-কাসাস ২৮:২৪)
 
২.
উত্তম জীবনসঙ্গী, নেককার সন্তান-সন্ততির জন্য নিচের দোয়টি গুরুত্বপূর্ণ :
 
رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّاجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا .
 
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।
(আল ফুরকান ২৫:৭৪)
 
৩.
বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফার করুন। কারণ এটা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম একটি আমল। আর, আপনার জীবনের প্রতিটি নিয়ামত ও প্রশান্তি আপনার রিজিকেরই অন্তর্ভুক্ত।
 
৪.
সবসময় তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য চান। কারণ এটা দ্রুত বিয়ে ও দ্বীনদার স্বামী/স্ত্রী পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল।
 
৫.
বিবাহ প্রয়োজন এমন মুসলিম ভাইবোনদের জন্য দোয়া করুন ও তাদের জন্য চেষ্টা করুন। কারণ কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে ফেরেশতারা‌ও আপনার জন্য দোয়া করবেন। আর তাদেরকে সাহায্য করলে, আল্লাহ্ তা'আলা আপনাকে সাহায্য করবেন।
 
৬.
দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণের জন্য এবং সমস্ত অকল্যাণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি নিচের দোয়াটি পড়ুন:
 
‎ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
 
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও আর আমাদেরকে দোজখের শাস্তি হতে রক্ষা কর।
(সুরা বাকারা ০২: ২০১)
 
সর্বোপরি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রেখে হালাল পন্থায় ভালো স্বামী/স্ত্রী পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকুন। কারণ এক্ষেত্রে দোয়া, আমল ও আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখাই মূল বিষয়। এছাড়া পবিত্র ও দ্বীনদার স্বামী/স্ত্রী পেতে নিজেকেও পবিত্র রাখতে হবে।
 
অর্থাৎ উওম জীবনসঙ্গী পেতে আল্লাহর নিকট দোয়া করাই ‌সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কারণ আমাদের সকল সমস্যা সমাধানে দোয়া খুবই কার্যকরি।
 
দোয়ার মাধম্যেই আমরা আমাদের জীবনে উওম জীবনসঙ্গী পেতে পারি।
"আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি দোয়া করা এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুক।" আমিন♥
:
সংগৃহীত

গার্লস গ্রুপ ও স্বামী-স্ত্রীর অবস্থা

 May be an image of one or more people and text that says 'স্বামী-স্ত্রীর তোরা মাঝে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত। (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৫) THEPATHOF ighteousness thepathofrighteous thepathofrighteousness e_pathofrighteousness'

 

গার্লস গ্রুপগুলোতে অনেকে ইনভাইট করে। সজ্ঞানে কেটে পড়ার চেষ্টা করি। এ পর্যন্ত যতগুলো গার্লস গ্রুপে এড হয়েছি বেশির ভাগ স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির বদনাম ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে নাই। আমার অনেক দ্বীনি বোনদের দেখি আবার এসব ফিলথি পোস্টে লাইক কমেন্ট করেন। ব্যাপারটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
.
স্বামী খারাপ, স্বামী মাম্মি'স বয়, স্বামী ক্যাবলাকান্ত হাবা গোবা, স্বামী অলস কোন কাজ করে না, স্বামী বাসার কাজে সাহায্য করে না, স্বামী ঘুরতে নিয়ে যায় না, স্বামী বদরাগী, স্বামী এই, স্বামী সেই এন্ড দ্যা লিস্ট গো অন এন্ড অন ...
.
সুব'হানাল্লাহ! দ্বীনের জ্ঞান যখন একদমই ছিলো না তখন স্বামীর প্রতি আচরণের ব্যাপারে নিজের বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি, যেগুলো কুরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যা জানার পর আল্লাহর অশেষ রহমতে শোধরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি (present continuous tense)। এর মধ্যে যখন দেখি দ্বীনি ঘরানার বোনেরাও এইসব নোংরা পোস্টগুলো সমর্থন করেন তখন আফসোসের পাশাপাশি কিঞ্চিৎ কনফিউশান চলে আসাটা বোধ করি অস্বাভাবিক না।
.
কুরআনে আল্লাহ সুব'হানাহু তা’আলা সূরা বাক্বারায় স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের লিবাস বা পোশাক বলেছেন।
‎هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمۡ وَاَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّهُنَّؕ
-
"তারা তোমাদের লিবাস (পোশাক) এবং তোমরা তাদের।" [ সূরা আল বাক্বারা : ১৮৭]
.
আল্লাহ সুব'হানাহু ওয়া তা’আলা কেন স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের লিবাস বলেছেন ? লিবাস বা পোশাকের কাজ কি? এর ব্যাখ্যায় স্কলারগণ যা বলেছেন -
.
১. পোশাক মানুষের ইনকমপ্লিটনেস বা অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে। যে কোন শারীরিক খুঁত বা ত্রুটি পোশাক ঢেকে দেয়, দৃষ্টির আড়াল করে দেয়। স্বামী স্ত্রী তেমনি একে অপরকে সম্পূর্ণ করবে। একে অপরের কমতিগুলো পূরণ করে নিবে। সকল প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো বাইরের মানুষদের কাছ থেকে ঢেকে রাখবে, আড়াল করে নিবে।
.
২. পোশাক বাইরের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। শীতের সময় শীতের প্রকোপ থেকে, গরমের সময় রোদের উত্তাপ থেকে। তাছাড়া পোশাককে ঋতুর পরিবর্তনের সাথে এডজাস্ট করে নিতে হয়। গরম কালে সুতির আরামদায়ক কাপড় আবার শীতকালে ভারী কাপড়। স্বামী স্ত্রী অনুরূপ একে অপরকে প্রটেক্ট করবে। যে কোন বাহ্যিক অনিষ্ট থেকে একে অপরকে হিফাযত করবে। একে অপরের সম্মান অটুট রাখবে। আবার ঋতুর পরিবর্তনের মত কখনও স্বামী রাগান্বিত (মানবিক বৈশিষ্ট্য) হবে, স্ত্রী তাকে শীতলতা দান করবে কিংবা স্ত্রী রাগান্বিত হলে স্বামী নরমে তা হ্যান্ডেল করবে।
.
৩. পোশাক মানুষের জন্য স্বস্তি ও প্রশান্তির কারণ। স্বামী স্ত্রী সেরূপ একে অন্যের মাঝে স্বস্তি ও প্রশান্তি খুঁজে নিবে।
.
এছাড়াও আরও অনেক ব্যাখ্যা আছে। আমি কেবল আপাতত তিনটা উল্লেখ করলাম।
.
যা হোক, এখন আমার বোনদের কাছে প্রশ্ন, এই যে মেয়েদের গ্রুপগুলোতে এসে আপনারা সম্পূর্ণ বাইরের মানুষদের কাছে নিজের স্বামীর পুঙ্খানুপুঙ্খ বদনাম করেন (সাথে শ্বশুর বাড়ি ফ্রি), এতে কি স্বামীকে তাদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা ছাড়া আর কি অহেতুক ফায়দা হয় আপনাদের?
.
অনেক বোন পোস্টের শেষে এসে লিখেন, আপুরা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম একটু স্বস্তির বা সমাধানের আশায় কারণ কাউকে একথাগুলো বলতে পারি না!!!
.
স্বস্তি কিংবা সমাধান ... এগুলো কি কোন মানুষের পক্ষে আদৌ দেওয়া সম্ভব? মানুষের কাছে গিয়ে আপনারা সমাধান খুঁজে বেড়ান আপুরা অথচ মানুষের রবের কাছে কতবার নিজেকে ধরণা দিয়েছেন? যদি দিয়েও থাকি তবে রবের জবাবের জন্য বা রব কর্তৃক প্রদত্ত পরীক্ষার বিপরীতে সবর করতে পারছি কি?
.
অস্বীকার করছি না যে খারাপ, যালিম স্বামী একদমই নেই। কিন্তু তার জন্য কি কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক স্বামীকে মানুষের কাছে খারাপ করে তুলে ধরার লাইসেন্স আমরা পেয়ে যাচ্ছি? স্বামী আপনার হক্ব আদায় করে না তাই বলে স্বামীর হক্ব আপনি যথাযথ আদায় না করলে রবের পাকড়াও থেকে বেঁচে যাবেন কি আমার বোনেরা??
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একবার এক মহিলা নিজ প্রয়োজনে এলেন। ফিরে যাবার সময় রাসূল তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার কি স্বামী আছে?"
তিনি বললেন, "জ্বী আছে।"
নবীজি বললেন, "তার সাথে তোমার আচরণ কেমন?"
মহিলা বললেন, "আমি যথাযথ তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি।"
নবীজি বললেন, "তার সাথে (স্বামী) তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থেকো কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম।"
[ মুসনাদে আহমাদ, মুআত্তা মালিক, মুসতাদরাকে হাকিম ]
.
আমার বোনেরা, উপরের হাদীস থেকে কি আমরা কিছুই শিখতে পারছি না? দুনিয়ার মানুষের কাছে স্বামীর বদনাম করে, স্বামীকে ছোট করে ক্ষতিটা কার হয় আপনার নিজের ছাড়া। আপনার স্বামী আপনার পোশাক যেটা আল্লাহ সুব'হানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেছেন। আপনি তাকে যত্ন করবেন, পোশাক ছিদ্র হলে তা সুঁই সুতা দিয়ে নিজে মেরামত করে নিবেন। অথচ আমরা নিজেরাই আজ নিজের পোশাককে ছিঁড়ে ফেলছি, পোশাককে মানুষের কাছে ত্রুটিযুক্ত করে তুলে ধরছি।
.
সেদিন মেইন স্ট্রিম নিউজ পোর্টালগুলোতে দেখলাম ঢাকায় দিনে ৩৮ টা ডিভোর্স হয়!!! জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ডিভোর্সের আবেদন জমা পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি! সংবাদে আরও বলা হয়েছে এই ডিভোর্সের আবেদনগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশ এসেছে নারীদের পক্ষ থেকে!!!
.
আহা! কোথায় আমাদের উম্মাহর মেয়েদের হিকমাহ? কি করুন দশা আজ তাদের চিন্তা ভাবনার!! অথচ আল্লাহ সুব'হানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেছেন -
"আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।" [ সুরা আর-রুম, ২১ ]
.
কেন আমাদের মাঝে আজ আমাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া নেই? কারণ ঐ যে, আমাদের সাথে আমাদের রবের দূরত্ব। যিনি এই রাহমাহ্ ও মাওয়াদ্দাহ (আরবী আয়াতে এভাবে এসেছে) সৃষ্টি করে দেন বলেছেন, আমরা তাঁর কাছে স্বস্তি ও সমাধান খুঁজি কি? যদিও সমাধানের পরিপূর্ণ ওয়াদা এসেছে স্বয়ং আমাদের রবের নিকট থেকেই -
"তারা উভয়ের (স্বামী-স্ত্রী) মাঝে মীমাংসা (reconciliation) চাইলে আল্লাহ‌ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।"
[ সূরা আন-নিসা, ৩৫ ]
.
আহা! আমরা আজ কোথায় স্বস্তি খুঁজে বেড়াই, কার কাছে সমাধান খুঁজে বেড়াই?
কার কাছে?
লিখেছেন: নুসরাত জাহান