কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে অহরহ একটি বিষয় লক্ষ করছি। তাই এটা নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু লিখার প্রয়োজন মনে করলাম।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট -১
কয়েকদিন ধরে চেনা-অচেনা অনেকেই ইনবক্সে একটি মেসেজ দিচ্ছেন। সেটা হচ্ছে একটি অ্যাপকে রেফার করা। আর সেই অ্যাপটি হচ্ছে সকলের সুপরিচিত ‘টিকটক’। আমরা দৈনন্দিন প্রয়োজনে বিভিন্ন অ্যাপ রেফার করে থাকি। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপ আমাদের সর্বদাই কাজে লাগে। কিন্তু এই টিকটক কি আসলেই নিত্যকার প্রয়োজনীয়?
টিকটকের কার্যক্রম কিরকম আর এই অ্যাপ কি নিয়ে কাজ করে সেটা কারোরই অজানা নয়। তাই এ নিয়ে আজ কিছু লিখতে চাই না। যুবসমাজের ধ্বংসের মূল একটি হাতিয়ার বললেও মনে হয় খুব বেশি ভুল হবে না। আর এই অ্যাপ প্রমোট করা, রেফার করা একজন মুসলিমের জন্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটাই ভাবার বিষয়।
কয়েকদিন ধরে যেটা লক্ষ করছি সেটা হচ্ছে যারা কোনদিন টিকটক ব্যবহার করেননি বা কোনভাবেই এর সাথে যুক্ত ছিলেন না তারাও এর রেফারেল মেসেজ দিচ্ছেন। কেন? কারণ একটি রেফার করলেই কিছু টাকা দিচ্ছে অথোরিটি। এরকম কয়েকটি রেফার করতে পারলেই হাতিয়ে নেওয়া যাবে হাজার দুয়েক টাকা। এতে অথোরিটির লাভ কি? সহজ উত্তর, এতে তাদের অ্যাপের প্রচার হচ্ছে যার ফলে তাদের ইনকাম সোর্স বাড়ছে আর সেখান থেকেই কিছু অংশ রেফারকারীকে দিচ্ছে তারা।
অনেকেই ভাবছেন, বাহ! সহজ তো। অল্প কষ্টে অধিক টাকা, তাও আবার বসে থেকেই।
থামুন!! একজন মুসলিম হিসেবে আপনার উচিৎ নয় যেখানে সেখানে আয়ের উৎস খোঁজা। একজন বিবেকবান মানুষ যেমন ডাস্টবিন থেকে পঁচা খাবার তুলে খাবে না, যতই সুস্বাদু হোক, তেমনি একজন মুসলিমও যেখানে সেখানে আয়ের উৎস খুজতে পারে না, যতই লাভজনক হোক।
কিন্তু আপনি বলতে পারেন, সমস্যা কি? আমি তো আর ভিডিও দেখছি না বা তৈরি করছি না। এবার আমি বলি, আপনি কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ জনকে রেফার করছেন। এই ১০ জনের কেউই যে তাদের ভিডিও দেখবে না বা তৈরি করবে না তার কি গ্যারান্টি? আবার এই ১০ জন অন্য যাদের রেফার করবে তারা যে দেখবে না তার কি গ্যারান্টি? এতে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ আপনার আমলনামায় যোগ হবে। আর এটা প্রজন্মের মতো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে।
এখন আপনি তো আবার আল্ট্রা প্রো-ম্যাক্স বুদ্ধি নিয়ে চলেন। আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি তো অন্য কাউকে রেফার করি না, আমি নিজেই ১০ টা একাউন্ট খুলে সেটাতে রেফারেল কোড ব্যবহার করছি। পরে আবার ডিলেট করে দিব। এক্ষেত্রে বুঝা যায় আপনার উদ্দেশ্য ভিডিও দেখা না, শুধু কিছু টাকা কামানো। এতে সমস্যা কি? এতেও সমস্যা আছে। কারণ তাদের যে আয়ের উৎস সেটা কিন্তু হারাম। অন্যরা তাদের অ্যাপ ব্যবহার করছে আর এতে তারা লাভবান হচ্ছে, আর সেখান থেকেই কিছু অংশ আপনাকে দিচ্ছে। এটা স্পষ্টত যে তাদের উৎস হারাম আর সেখান থেকেই আপনাকে টাকা দিচ্ছে।
একজন সুদখোরের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া একজন মুসলিমের জন্য জায়েজ নয়, কারণ তার আয়ের উৎস হারাম (ভিন্ন কোন উৎস থাকলে আলাদা ব্যাপার)। তাহলে যার একমাত্র আয়ের উৎস হারাম তার থেকে আপনি টাকা নিবেন কোন যুক্তিতে? সে তো আর অন্য কোন সোর্স থেকে আপনাকে টাকা দিবে না। একটি প্রশ্ন, এই সামান্য ক-টি টাকা না হলে কি আপনার বিরাট কোন লোকসান হবে, পরিবারের কেউ না খেয়ে মারা যাবে? তাহলে হারামে পা বাড়াচ্ছেন কেন?
এখন টাকা তুলেই ফেলেছেন, তাহলে করণীয় কি? টাকা তুললে আপনি সেই টাকা সাওয়াবের নিয়ত ব্যাতিত দান করে দিন। পাপে জড়ানোর কারণে তওবা করে নিন (নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালবাসেন)। আর যাদেরকে আপনি রেফার করেছেন তাদের হাতে পায়ে ধরে হলেও বলুন তারা যেন ডিলেট করে দেয়। কারণ তওবা করেও কোন লাভ হবে না যদি এর মাধ্যমে তারা ফায়দা নিয়ে থাকে। এতে আপনার আমলনামায় চক্রবৃদ্ধি হারে গুনাহ আসতেই থাকবে।
|| সমসাময়িক প্রেক্ষাপট: আমার কিছু ভাবনা||
“হাসান তারিক”