১. আমি যখন বাসায় থাকি তখন গোসল বা অজু করতে বাথরুমে যাওয়ার সময় বের হয়ে পরার জুতা নেই না। সরাসরি বাথরুমের দরজায় থাকা জুতা পরে ঢুকে যাই। কাজ সেরে বের হয়ে বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আমার মেয়েকে ডাক দেই। ছেলেরা সাধারণত মাদরাসায় থাকে। তো ডাক শুনে মেয়ে দৌড়ে এসে এক জোড়া জুতা পায়ের সামনে রেখে যায়। ছেলেরা বাসায় থাকলে তাদের কেউ একজন এসে রেখে যায়। আমি তখন তাদের জন্য দুআ করি,
اَللّٰهُمَّ عَلِّمْهُمُ الْكِتَابَ وَفَقِّهْهُمْ فِي الدِّيْنِ
(আল্লাহুম্মা আল্লিমহুমুল কিতাবা ওয়া ফাক্কিহ্হুম ফিদ দীন)
হে আল্লাহ, আপনি তাদেরকে কিতাবের (কুরআনের) ইলম এবং দীনের গভীর বুঝ দান করেন। [১]
হাদিসে দুআটি এক বচনে আছে। বাসায় জুতাও একজনই এগিয়ে দেয়। কিন্তু ছেলে মেয়েরা সবাই যেহেতু কাজটি করতে চায়, তাই সবার জন্য দুআ করা।
২. দুই বছর আগের কথা। আম্মাকে নিয়ে মগবাজারের এক চক্ষু হাসপাতালে গেলাম। আম্মা আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা। মহিলা ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলেন। আমি দেখলাম, আম্মার জুতা জোড়া একটু দূরে সরে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি এগিয়ে গিয়ে জুতা জোড়া আম্মার পায়ের সামনে রাখলাম। আম্মা জুতা পরে হাঁটা দিলেন। আমিও চললাম। পিছন থেকে আওয়াজ শুনলাম, এক মহিলা তার ছেলেকে বলছেন,
দেখছস, এত বড় বেডাও মায়ের জুতা আগায়া দেয়!
৩. আমার খালা বাসা পালটে খিলগাঁও থেকে মতিঝিল ওঠলেন। নতুন বাসা বহুতল ভবনের ৮ম তলায়। কয়েকজন দিনমজুর কুলি তাদের মালপত্র ওঠিয়ে দিল। কুলিরা নেমে যাওয়ার পর দেখা গেলো, একজন তার জুতা ওপরে রেখেই লিফট বেয়ে নেমে গেছেন।
খালা তার বড় ছেলেকে জুতা জোড়া দিয়ে নিচে পাঠালেন।
আমার খালাতো ভাই নিচে এসে জুতা জোড়া দিনমজুর মুরুব্বির পায়ের সামনে রাখলেন।
মুরুব্বী আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। তিনি ছোট ছেলেটার মাথায় হাত রেখে দিল থেকে দুআ করে দিলেন।
আসলে জুতা সামান্য বিষয়। কিন্তু এর মাধ্যমে অর্জন করার অনেক কিছু আছে। তাই নিজেরা অন্যের জুতার খিদমাত করি। সন্তানকেও শিক্ষা দেই। আর কেউ খিদমাত করলে দিল থেকে দুআ করি।
বি: দ্র: দিনমজুরের সামনে জুতা এগিয়ে দেয়া আমার সেই খালাতো ভাইয়ের বাবা অর্থাৎ আমার খালু মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছে। লাইফ সাপোর্টে আছে। সকলের কাছে ওনার সুস্থতা, হেদায়েত এবং আমলী জিন্দেগীর জন্য দুআর দরখাস্ত।
[১] দ্রষ্টব্য: সহীহ বুখারী, ৭৫, ১৪৩; সহীহ মুসলিম, ২৪৭৭।
- আহমাদ ইউসুফ শরীফ