ইদানীংকালে ফেসবুকে ডুকলেই বাংলাদেশী প্যারেন্টসদের প্যারেন্টিং নিয়ে কঁাটাছেড়া দেখা যায়। এখন এসব ক্রিটিসিজমের অনেক বড় একটা অংশ নেটফ্লিক্স দেখে ওয়েস্টার্ন বাপ মায়ের সাথে বাংলাদেশী বাপ মায়ের তুলনা করে যদিও তাদের ওয়েস্টার্ন সোসাইটির রিয়েলিটি নিয়ে খুব কমই প্র্যাকটিকাল নলেজ আছে, মিডিয়া দেখে যেইটুকু জানা যায় অইটুকুই আরকি।
এখন বাংলাদেশী প্যারেন্টসদের একটা বড় ক্রিটিসিজম হইলো, তারা সব সময় চায় ছেলে মেয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোক, ক্রিকেটার, ফুটবলার , মিউজিশিয়ান, কবি এগুলা হইতে চাইলে ওয়েস্টার্ন বাপ মা সাপোর্ট দিলেও বাংলাদেশি বাপ মা সাপোর্ট দেয়না।এখন ওয়েস্টার্ন বাপ মা কেন সাপোর্ট দেয় আর দেশী বাপ মা দেয়না, এইটারও কারন আছে। প্রথমত, ওয়েস্টার্ন সব দেশেই সবাই পড়াশুনা করে নিজের টাকায়। যেসব দেশে টিউশন ফি আছে এগুলাতে সবাই ব্যাংক থেকে ধার করে পড়াশুনা যেগুলা পরে পরিশোধ করতে হয় আর যেসব দেশে টিউশান ফি নাই, যেমন: সুইডেন, এখানেও থাকার খরচ পার্ট টাইম জব করে নিজেরাই বহন করে অথবা সরকার থেকে লোন নিয়ে, সোজা কথায়, আপনার নিজের দায়িত্ব নিজের, তো যেখানে বাপ মা আপনার পেমেন্ট দিতেছেনা সেখানে তারা কোথায় কি পড়বেন ঠিক করে দেয়ার কে, আপনি যদি ফিলোসোফার হইতে যাইয়া নিজের বঁাশ নিজে মারেন তাইলে কার কি বলার আছে, কনসিকুয়েন্সও আপনার নিজের উপরেই আসবে, সব টাকা আপনার ঘাড়ে।
দ্বিতীয়ত, ওয়েস্টার্ণ দেশে আপনি যদি মিউজিশিয়ান, কমেডিয়ান হইতে যাইয়া ফেল মারেন তাহলে আপনার নিজের খরচ নিজেই বহন করতে হবে, রেস্টুরেন্টে জব করবেন, কন্ট্রাশকশানে কাজ করবেন, ১৮ বছরের পর থাকা খাওয়ার রেস্পন্সিবলিটি আপনার বাপ মা নিবেনা। আর বাংলাদেশে আপনি যদি মিডেল ক্ল্যাস বা তার উপরে হোন আর আপনার ক্যারিয়ারে যদি ফেইল মারেন মিউজিশিয়ান, ফিলোসোফার আর কবি হইতে যাইয়া, তাহলে রেস্টুরেন্টে থালা বাসন মাজবেন? অথবা রিকশা চালাবেন? চালাবেন না, তখন কিন্তু ঠিকি বাপ মায়ের ঘাড়ে উঠবেন।
আপনার বাপ মা তাদের লাইফ সেভিংস আপনার উপর বিনিয়োগ করে যাতে আপনি তাদের ঘাড়ে না উঠেন আর যাতে তাদেরকে সাপোর্ট দিতে পারেন যখন তারা রিটায়ার্ড করে। এখন বাংলাদেশী আর্থ সামাজিক অবস্থা চিন্তা করলে, বাংলাদেশী প্যারেন্টসদের কি কম ঝুঁকিপূর্ণ ক্যারিয়ারের দিকে পুশ করা যুক্তিযুক্ত না?
যাইহোক, রিসেন্টলি মোরসালিনের মায়ের একটা ইন্টারভিউ ভাইরাল হইছে যেখানে সবাই তার মাকে তুলাধোনা করতেছে কেন তার মা ছোটবেলায় বুট কিনে দেয়নাই। মোরসালিন আজকে সফল কিন্তু ভুলে যাবেন না, এইরকম হাজারো মুরসালিন রাস্তার ঘুরেবেড়াচ্ছে যাদের কোন ক্যারিয়ার নাই। কিছুদিন আগেই একটা পোস্ট ভাইরাল হইছিলো, বাংলাদেশী বয়সভিত্তিক দলের একটা ফুটবলার এ সি এল ইঞ্জুরি হয়ে পংগু হওয়ার দশা, ফেডারেশন বা সরকার কেওই তাকে সাহায্য করছেনা, তার পরিবারই তাকে নিয়ে এখানে ওখানে নিয়ে বেড়াইতেসে যদি সাহায্য পাওয়া যায় কিছু। এইরকম কিছু যদি মোরসালিনের হইতো তাইলে কিন্তু আপনি তখন আগায়েও যাইতেন না, ফেসবুকে একটু হা হুতাশ করতেন হয়তো, দায়িত্ব কিন্তু তার মাকেই নিতে হইতো। ফেসবুকে চাপাবাজি করা আর প্যারেন্টিং শিখানো অনেক সহজ, কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন।
©কবির হুমায়ুন