Tuesday, June 27, 2023

parenting

পড়াশোনা করাকালীন আমি উইকেন্ডে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম, তো সেখানে ইমানুয়েল নামে ১৮ কি ১৯ বছর হবে একটা ছেলেও কাজ করতো। ওর বাবা সুইডিশ আর মা কিউবান, দুইজনেই আলাদা থাকে। তো এক সময় কথা বলতে বলতে আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, ওর কাকে বেশী পছন্দ, বাবা নাকি মা। উত্তরে, ইমানুয়েল আমাকে বললো যে, ওর মাকে বেশী পছন্দ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? উত্তরে, ছেলেটা আমকে যেটা বললো আমি সেটার জন্য মোটেও রেডি ছিলাম না। ওই বললো যে, ওর মাকে বেশী পছন্দ কারন ওর মা তার এপার্টমেন্টে ওকে ফ্রিতে থাকতে দেয় কোন ভাড়া নেয়না আর মাঝে মাঝে খাবার দাবার ও শেয়ার করে। এইটা শোনার পর আমার বাপ মায়ের উপর আমার যত রাগ ছিলো এযাবতকালের, সব চলে যায়। এক বাপের এক ছেলে হওয়ায় ছোটবেলায় থেকেই আমার মা আমকে কড়া শাসনে রাখতো আর অনেক বেশী প্রোটেক্টিভ ছিল। আমার সাইকেল কেনার অনেক শখ ছিল কিন্তু কখনো কিনে দেয়নাই কারন আমার মায়ের বিশ্বাস আমি চালাইতে পারবোনা, একসিডেন্ট করবো। স্কুল থেকে কোন শিক্ষাসফরে যাইতে দিতোনা কারন আমার আম্মার বিশ্বাস পিকনিকের গাড়ি বেশী দুর্ঘটনায় পরে। এগুলা কারনে এক সময় আমার রাগ লাগতো অথবা বলা যায় মনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু এই ছেলেটা শুধুমাত্র ওর মা বেয়ার মিনিমাম করে দেখে এত থ্যাংকফুল সেখানে আমি যদি ওকে বলি যে, আমার বাপ মা নিজেদের টাকায় আমাকে পড়াশুনা করাইছে, লাইফ সেভিংস আমার পিছে ঢালসে এবং বিদেশ পর্যন্ত পাঠাইসে যাতে ভাল কিছু করতে পারি কিন্তু আমি রাগ, কেন? আমাকে সাইকেল কিনে দেয়নাই ছোটবেলায়। ওই ছেলে সিউর আমাকে জুতাপেটা করবে। 

ইদানীংকালে ফেসবুকে ডুকলেই বাংলাদেশী প্যারেন্টসদের প্যারেন্টিং নিয়ে কঁাটাছেড়া দেখা যায়। এখন এসব ক্রিটিসিজমের অনেক বড় একটা অংশ নেটফ্লিক্স দেখে ওয়েস্টার্ন বাপ মায়ের সাথে বাংলাদেশী বাপ মায়ের তুলনা করে যদিও তাদের ওয়েস্টার্ন সোসাইটির রিয়েলিটি নিয়ে খুব কমই প্র‍্যাকটিকাল নলেজ আছে, মিডিয়া দেখে যেইটুকু জানা যায় অইটুকুই আরকি। 

এখন বাংলাদেশী প্যারেন্টসদের একটা বড় ক্রিটিসিজম হইলো, তারা সব সময় চায় ছেলে মেয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোক, ক্রিকেটার, ফুটবলার , মিউজিশিয়ান, কবি এগুলা হইতে চাইলে ওয়েস্টার্ন বাপ মা সাপোর্ট দিলেও বাংলাদেশি বাপ মা সাপোর্ট দেয়না।এখন ওয়েস্টার্ন বাপ মা কেন সাপোর্ট দেয় আর দেশী বাপ মা দেয়না, এইটারও কারন আছে। প্রথমত, ওয়েস্টার্ন সব দেশেই সবাই পড়াশুনা করে নিজের টাকায়। যেসব দেশে টিউশন ফি আছে এগুলাতে সবাই ব্যাংক থেকে ধার করে পড়াশুনা যেগুলা পরে পরিশোধ করতে হয় আর যেসব দেশে টিউশান ফি নাই, যেমন: সুইডেন, এখানেও থাকার খরচ পার্ট টাইম জব করে নিজেরাই বহন করে অথবা সরকার থেকে লোন নিয়ে, সোজা কথায়, আপনার নিজের দায়িত্ব নিজের, তো যেখানে বাপ মা আপনার পেমেন্ট দিতেছেনা সেখানে তারা কোথায় কি পড়বেন ঠিক করে দেয়ার কে, আপনি যদি ফিলোসোফার হইতে যাইয়া নিজের বঁাশ নিজে মারেন তাইলে কার কি বলার আছে, কনসিকুয়েন্সও আপনার নিজের উপরেই আসবে, সব টাকা আপনার ঘাড়ে।
 
দ্বিতীয়ত, ওয়েস্টার্ণ দেশে আপনি যদি মিউজিশিয়ান, কমেডিয়ান হইতে যাইয়া ফেল মারেন তাহলে আপনার নিজের খরচ নিজেই বহন করতে হবে, রেস্টুরেন্টে জব করবেন, কন্ট্রাশকশানে কাজ করবেন, ১৮ বছরের পর থাকা খাওয়ার রেস্পন্সিবলিটি আপনার বাপ মা নিবেনা। আর বাংলাদেশে আপনি যদি মিডেল ক্ল্যাস বা তার উপরে হোন আর আপনার ক্যারিয়ারে যদি ফেইল মারেন মিউজিশিয়ান, ফিলোসোফার আর কবি হইতে যাইয়া, তাহলে রেস্টুরেন্টে থালা বাসন মাজবেন? অথবা রিকশা চালাবেন? চালাবেন না, তখন কিন্তু ঠিকি বাপ মায়ের ঘাড়ে উঠবেন।  

আপনার বাপ মা তাদের লাইফ সেভিংস আপনার উপর বিনিয়োগ করে যাতে আপনি তাদের ঘাড়ে না উঠেন আর যাতে তাদেরকে সাপোর্ট দিতে পারেন যখন তারা রিটায়ার্ড করে। এখন বাংলাদেশী আর্থ সামাজিক অবস্থা চিন্তা করলে, বাংলাদেশী প্যারেন্টসদের কি কম ঝুঁকিপূর্ণ ক্যারিয়ারের দিকে পুশ করা যুক্তিযুক্ত না? 

যাইহোক, রিসেন্টলি মোরসালিনের মায়ের একটা ইন্টারভিউ ভাইরাল হইছে যেখানে সবাই তার মাকে তুলাধোনা করতেছে কেন তার মা ছোটবেলায় বুট কিনে দেয়নাই। মোরসালিন আজকে সফল কিন্তু ভুলে যাবেন না, এইরকম হাজারো মুরসালিন রাস্তার ঘুরেবেড়াচ্ছে যাদের কোন ক্যারিয়ার নাই। কিছুদিন আগেই একটা পোস্ট ভাইরাল হইছিলো, বাংলাদেশী বয়সভিত্তিক দলের একটা ফুটবলার এ সি এল ইঞ্জুরি হয়ে পংগু হওয়ার দশা, ফেডারেশন বা সরকার কেওই তাকে সাহায্য করছেনা, তার পরিবারই তাকে নিয়ে এখানে ওখানে নিয়ে বেড়াইতেসে যদি সাহায্য পাওয়া যায় কিছু। এইরকম কিছু যদি মোরসালিনের হইতো তাইলে কিন্তু আপনি তখন আগায়েও যাইতেন না, ফেসবুকে একটু হা হুতাশ করতেন হয়তো, দায়িত্ব কিন্তু তার মাকেই নিতে হইতো। ফেসবুকে চাপাবাজি করা আর প্যারেন্টিং শিখানো অনেক সহজ, কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন।

©কবির হুমায়ুন

No comments:

Post a Comment