কুরআনি আদব ও শিষ্টাচার-৫
পরিবারকর্তার কর্তব্য
-
পুরুষ পরিবারের কর্তা। এটা কুরআন কারীমের বিখ্যাত মূলনীতি। এই মূলনীতি নিয়ে কারো কারো অস্বস্তি আছে। নারীবাদ আক্রান্তরা এই আয়াতকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করতে চান।
اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوْنَ عَلَی النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلٰی بَعْضٍ وَّبِمَاۤ اَنْفَقُوْا مِنْ اَمْوَالِهِمْ ؕ فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِّلْغَیْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ ؕ وَالّٰتِیْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوْهُنَّ وَاهْجُرُوْهُنَّ فِی الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوْهُنَّ ۚ فَاِنْ اَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوْا عَلَیْهِنَّ سَبِیْلًا ؕ اِنَّ اللهَ کَانَ عَلِیًّا کَبِیْرًا ﴿۳۴﴾
পুরুষ নারীদের অভিভাবক, যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু পুরুষগণ নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে, পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহ প্রদত্ত হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) সংরক্ষণ করে। আর যে সকল স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশংকা কর, (প্রথমে) তাদেরকে বুঝাও এবং (তাতে কাজ না হলে) তাদেরকে শয়ন শয্যায় একা ছেড়ে দাও এবং (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদেরকে প্রহার করতে পার। অতঃপর তারা যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের পথ খুঁজো না। নিশ্চিত জেন, আল্লাহ সকলের উপর, সকলের বড় (নিসা: ৩৪)।
আদব: আল্লাহ তাআলা (وَالّٰتِیْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ) বলেছেন। অর্থাৎ যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে অবাধ্যতার আশংকা করো। আল্লাহ তাআলা কথাটা এভাবে বলেননি (واللاتي ينشُزْن) যারা অবাধ্যতা করে। এ থেকে বোঝা যায়, ‘অভিভাবক (قَوّٰم) পুরুষের দায়িত্ব তার যিম্মাদারিতে থাকা নারীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। অভিভাবক পুরুষ আহলে বাইত মনে তার ঘরে থাকা মানুষের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। কারো মধ্যে বিচ্যুতির সম্ভাবনা দেখলে, তাকে উপদেশ-নসিহত করে সংশোধন করবেন। সতর্ক দৃষ্টি রাখার মানে গোয়েন্দাগিরি নয়। মোটাদাগে খেয়াল রাখবেন, পরিবারের কে কী করছে। কে নামাজ পড়ছে, কে পড়ছে না। কে মোবাইলের অপব্যবহার করছে, কে করছে না। কে চলাফেরায়, কথাবার্তায় ভদ্রতা বজায় রাখছে, কে রাখছে না। কে সৎসঙ্গে থাকছে আর কে বদসঙ্গের পাল্লায় পড়ে গেছে।
বসিরা: কুরআনের বক্তব্যভঙ্গি থেকে বোঝা যায়, অভিভাবক তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ পুরোপুরি বিচ্যুত হওয়ার অপেক্ষা না করে, বিচ্যুতির পূর্বাভাস দেখার সাথে সাথেই সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। একটু খেয়াল রাখলেই বোঝা যায়, কার চালচলনে পরিবর্তন এসেছে, কার ওঠাবসায় ভিন্নতা এসেছে। অভিভাবক সচেতন থাকলে, আহলে বাইত বিচ্যুত হওয়ার আশংকা থাকে না বললেই চলে। সবার আগে অভিভাবকের চলাফেরাও ঠিক থাকা জরুরী।