Saturday, September 16, 2023

আইনি সংসার!

'স্ত্রী শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে না!'
এই অযুহাতে তালাক দিতে চাওয়াকে
 কী দৃষ্টিতে দেখেন? 🤔


..
সাংসারিক সম্পর্কের রুপরেখা কখনো আইনি অধিকারের মাধ্যমে সুন্দর করা যায়না। সংসার সুন্দর হয় স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক ত্যাগ ও পরস্পরের পরিবারের প্রতি ইহসানের দ্বারা। এখানে যদি কোন এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ শুধুমাত্র আইনগত আবশ্যকীয় বিষয়াবলী পালন করে ক্ষ্যান্ত হয় তাহলে সংসার জাহান্নাম হতে খুব বেশি সময় লাগবেনা। উভয়ের উচিত পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সংসারকে সুসজ্জিত করা। স্বামী কর্তৃক সাধ্যের বাইরে অস্বাভাবিক পরিমাণ কাজকর্ম ও দায়িত্ব স্ত্রীর উপরে চাপিয়ে দেয়া কিংবা স্ত্রী কর্তৃক রাজরানী সুলভ আচরণ ও সাংসারিক ব্যস্ততা থেকে যথাসাধ্য পালিয়ে বেড়ানো সংসার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। মোটকথা উভয়কেই উভয়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগী, পরিশ্রমী, অনুগ্রহশীল, আন্তরিক হতে হবে। তাহলেই সংসার সুন্দর হবে।

স্ত্রীর মূল দায়িত্ব হচ্ছে সাধ্যের মাঝে সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়ে সংসারটাকে সুখী, সুন্দর করা। যদি স্বামীর বাবা মা কাছে থাকেন বা বেড়াতে আসেন সেক্ষেত্রে নিজের স্বামীর সেবা করার পাশাপাশি যথাসাধ্য শশুর শাশুড়ীর সেবা করাও তার নৈতিক দায়িত্ব। স্ত্রীর এই সেবাটুকু স্বামী ও স্বামীর পরিবারের প্রতি স্ত্রীর ইহসান। যেমনিভাবে স্ত্রীর জন্য সাধ্যানুসারে সর্বোচ্চ সুবিধা ও সমৃদ্ধ জীবনের ব্যাবস্থা করাটা স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর উপরে ইহসান। স্বামী যদি মনে করে যে, সে তার স্ত্রীকে মাস শেষে শুধু কোনরকমে বেঁচে থাকতে যতটুকু টাকা পয়সা লাগে (অর্থাৎ মৌলিক প্রয়োজন পূরন করতে যতটুকু লাগে) ততটুকু দিবে, আর কোন যত্ন নিবেনা, মেন্টাল সাপোর্ট দিবেনা; তাহলে সে আইনগতভাবে দোষী হবেনা। এমনকি স্ত্রীর বাবা মা তথা শশুর শাশুড়ী আসলে সে যদি নূন্যতম আপ্যায়ন না করে বা স্ত্রীকে বাবার বাড়ি যাওয়ার অনুমতি না দেয় তাহলেও সে আইনগতভাবে দোষী হবেনা। কিন্ত বাস্তবে তার সংসার শ্মশান হয়ে যাবে। এমন লোকের ঘর কোন মেয়েই করতে চাইবেনা। ঠিক তেমনিভাবে যে স্ত্রী স্বামী ও স্বামীর পরিবারের যত্নকে নিজের অন্যতম ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেনা এবং সাধ্যানুসারে সাংসারিক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেনা তেমন নারীকে নিয়ে সংসার করতেও ছেলেরা ইতস্তত বোধ করে। তাই এ ধরণের দায়িত্ব পালনের বিষয়টা উভয়ে মিউচুয়ালি সমাধান করা উচিত। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে দুজনের অবস্থা, সামর্থ্য অনুসারে দায়িত্ব ভাগ করা উচিত। এবং এ ধরণের ক্ষেত্রগুলোতে যদি একজন অপরজনের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার সামান্য ঘাটতি অনুভব করে তখনই মূলত শুরু হয় অশান্তি। তাই এ ধরণের সিচুয়েশনে পড়া সকল বোনেরা সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। স্বামীকে বুঝান যে, আপনি তো শশুর শাশুড়ীর জন্য সর্বোচ্চ করছেন। তবে সামর্থ্যের কমতির কারনে হয়তো পুরোটা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি যেন এতে মন খারাপ না করেন। দেখবেন, দুজনের সম্পর্ক দ্রুতই সুন্দর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও আন্তরিকতার পরেও যদি দেখেন যে মাসের পর মাস তারা অভিযোগ করেই যাচ্ছে তখন পরিবারের মুরুব্বীদের মাধ্যমে সালিশ সমঝোতা করবেন। 

আর স্বামীদের উচিত না পান থেকে চুন খসলেই তালাকের কথা তোলা। এটা ছোট মনের পরিচায়ক। আল্লাহ তায়ালা ছেলেদেরকে তালাকের অধিকার দিয়েছেন বলে একে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করা কিংবা এটাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে স্ত্রীর উপরে সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেয়াটা চারিত্রিক নীচতার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ পাক এমন অযাচিত, অসুন্দর ও অগ্রহনযোগ্য আচরণ থেকে সবাইকে রক্ষা করুন। 
সকলের সংসারকে আল্লাহ তায়ালা সুখময় করুন।

- মুফতি আফফান বিন শরফুদ্দিন হাফি.

No comments:

Post a Comment