Monday, June 17, 2024

কাদের নিয়ে মাতামাতি ? 02

সমাজে অশ্লিলতার প্রচারক সেলিব্রিটি, নায়ক, নায়িকা, মডেল, প্রতিষ্ঠানের প্রতি যারা আবেগ, ভালবাসা ও উন্মাদনা রাখেন তারা একনিষ্ঠভাবে কেবল একবার পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি নিয়ে ভেবে দেখুন।

যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জাননা। (সুরা নুর, আয়াত ১৯)

আপনি কাদেরকে নিয়ে উন্মাদন হয়ে আছেন, কাদের ভালবাসায় আপনি অন্ধ হয়ে আছেন, কাদের প্রতি আপনি মুগ্ধতা অনুভব করছেন, কাদের মত হওয়ার জন্য আপনি আপ্রাণ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন! 

যাদেরকে আপনার রব আযাবের ভীতি প্রদর্শন করছে, যাদেরকে আপনার সৃষ্টিকর্তা অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করছে, যাদেরকে আপনার ইলাহ দুনিয়া ও আখেরাতে অপদস্থতার বাণী শোনাচ্ছে, যাদেরকে আপনার প্রতিপালক অসম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরছে।

অমুক সেলিব্রেটির ফ্যানগ্রুপ খুলে গ্রুপে তাকে নিয়ে যত ধরণের উন্মাদনা আছে প্রকাশ করছেন। অশ্লিলতার প্রচারক কোন অভিনেতাকে নিয়ে গেট টু গেদার করার জন্য আত্মহারা হয়ে যাচ্ছেন। তার হাতের ছোঁয়া কিংবা কথার শব্দে আপনি আনন্দে ভেসে যাচ্ছেন। মুগ্ধ হয়ে তার ছবি, ভিডিও কিংবা গান শেয়ার দিচ্ছেন, অনুপ্রেরণা বা মুগ্ধতা প্রকাশকারী কমেন্ট করছেন, রিয়েক্ট দিচ্ছেন।

আপনি ভাবছেন এগুলো জাস্ট এমনি। কক্ষনো না। আপনি ভুল ধারণায় আছেন। এগুলোই তার প্রতি আপনার ভালবাসা ও মুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। এই এক্টিভিটিগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার রবের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। সমাজে অশ্লিলতার প্রসারে আপনিও ভূমিকা পালন করছেন। উল্লেখিত প্রতিটি কর্মের হিসেব আপনাকে দিতে হবে, তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন।আপনার লাইক, কমেন্ট, ভিউ তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়। তাদের কর্মকে আরো প্রভাবশালী করে। 

একদিকে আপনি আপনার রবের অবাধ্যতায় লিপ্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে আপনি এগুলোর মাধ্যমে কী পাচ্ছেন সেটা ভেবে দেখেছেন? কিছুই না। উন্মাদনা আর ফ্যান্টাসি ছাড়া কিছুই না। কিন্তু হারাচ্ছেন অনেক কিছু। তারা আপনার দ্বীন, কর্মোদ্যমতা, সৃজনশীলতা, বৈধ প্রতিভা, যোগ্যতা সব কিছুকে কেড়ে নিচ্ছে। আপনাকে অথর্ব ও প্রতিবন্ধী এক খেলনার পাত্রে পরিণত করছে। আপনাকে আপনার দ্বীন ও দুনিয়ার দায়িত্ব ও অধিকার থেকে বেখবর করে রাখছে। সেই সুযোগে আপনি হয়ে বসেছেন পৃথিবীর কিছু মানুষের দাস।

ইফতেখার সিফাত (হাফি.)

কাকে নিয়ে মাতামাতি? 01

বর্তমান সময়ে আমাদের প্রজন্ম যেই বিষয় বা যেই ব্যক্তিগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাদের অধিকাংশই হল মুসলিম সমাজে অশ্লিলতা কিংবা অনর্থক বিষয়ের প্রচারক ও প্রসারক। আপনি কেবল সেসব ও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চ্যানেল, আইডি ইত্যাদির ব্যাপারে একটু পর্যবেক্ষণ চালালেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন। 

তরুণদের মেইনস্ট্রিমে যেসব পাবলিক ফিগার, ব্লগার ও সেলিব্রেটিরা বসবাস করছে তারা যে সমাজকে ক্রিয়েটিভ ও সৃজনশীল কিছু দিচ্ছে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং প্রজন্মকে তারা ট্যুর নিয়ে উন্মাদনা, ফুড নিয়ে মাতলামি, নাচ, গান, মুভি নিয়ে মগ্নতা, পার্টি, ট্রিট ইত্যাদি সহ একটা ফ্যান্টাসির জালে আবদ্ধ করে রাখছে। ফলে একটা প্রতিবন্ধি প্রজন্ম আমাদের চোখের সামনে গড়ে উঠছে। যাদের দ্বীন ও দুনিয়া নিয়ে সিরিয়াস কোন চিন্তা নেই। নীল লাল জগতে ভেসে বেড়ানোই যাদের স্বপ্ন। 

এই বিষয়টি পার্থিব দিক থেকেও জাতিগত একটি ভয়াবহ সংকট। যার বাস্তব প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান সমাজে আমরা দেখতে পাচ্ছি।আমাদের উপর জুলুম, বেকারত্ব, ডিপ্রেশন, সংকীর্ণতা এমনি এমনিই চেপে বসেনি। এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ নিজেদের হাতের কামাই। আমাদের তারুণ্য ও যৌবন যেখানে যেভাবে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে না। সেটা নষ্ট হচ্ছে কেবলই বিনোদন, অশ্লিলতা ও লালনীল ফ্যান্টাসির জগতে। 

আর দ্বীনি দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা দুটি আয়াতের দিকে নজর দিলেই এর ভয়াবহতা বুঝতে পারব। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জাননা। (সুরা নুর, আয়াত ১৯) 

তিনি আরো বলেন, আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।( সুরা লুকমান, আয়াত ৬) 

যাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তির ঘোষণা দিচ্ছেন, যাদেরকে তিনি তিরস্কার করছেন তারাই হয়ে গেছে বর্তমান মুসলিম প্রজন্মের আইডল ও আদর্শ। তারাই হয়ে গেছে তরুণ তরুণীর একমাত্র ব্যস্ততা। মুসলিম উম্মাহর জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ বিষয় আর কী হতে পারে!


ইফতেখার সিফাত (হাফি.)