আমি মনে করি প্রতিটা মানুষের বাসায় এখন একটা জিনিস থাকা ফরজ। জিনিসটা হচ্ছে দর্জির দোকানের ইঞ্চি/সেন্টিমিটারের ফিতা।
ওয়েট মেশিনের চেয়েও এটা বেশি জরুরী, বেশি জরুরী আপনার বাসায় টুথপেস্ট বা সাবান আছে কিনা তার চেয়ে।
কেন??
সহজ করে বলি।
মানুষেরর কাধ, বুক, কোমর, পেট এবং পাছার মাপ থেকে আমরা বুঝতে পারি, ঐ মানুষটা ডায়বেটিক হওয়ার দিকে যাচ্ছে কি না, তার ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, তার লিপিড প্রোফাইলে সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কতটুকু এবং সে হার্ট এটাকের ঝুকিতে আছে কি না।
হাজার হাজার টাকার টেস্ট আপনাকে যে তথ্য দিতে পারবে তার প্রায় কাছাকাছি এস্টিমেশানে আপনি চলে যেতে পারবেন যদি আপনি শুধু এই ফিতা, নিজের ডায়েট, শারীরিক সমস্যার উপসর্গগুলি এবং বডি ওয়েটকে ঠিকভাবে রিড করতে জানেন।
আমি একটা কথা প্রায়ই বলি, আপনার শরীরে আপনার আমলনামা লেখা থাকে। যে পড়তে জানে, সে পড়তে পারে।
যাই হোক, ফিতাটা দিয়ে কিভাবে কি বুঝবেন আমি বলি।
ছেলেদের জন্য, নিজের কোমরের মাপ যদি দেহের উচ্চতার ৪৭% এবং মেয়েদের জন্য যদি কোমরের মাপ ৪১% এর বেশি হয়, তাহলে বুঝবেন আপনার শরীর আপনাকে বিপদসংকেত দিচ্ছে।
ছেলেদের পেটের মাপ যদি বুকের মাপের ৯০% এর বেশি এবং মেয়েদের পেটের মাপ যদি পাছার মাপের ৯০% এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বুঝবেন আপনার শরীর আপনাকে বিপদসংকেত দিচ্ছে।
এই বিপদসংকেত কি??
এই বিপদসংকেত হচ্ছেঃ
১)আপনার শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, সামনে হয়তো প্রিডায়বেটিক হবেন, এরপরেও হুশ না ফিরলে ডায়বেটিস হবে
২)আপনার বাড়তি ভিসেরাল ফ্যাট তৈরি হয়েছে
৩)আপনার সম্ভবত ফ্যাটি লিভার হয়ে গেছে, কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ হচ্ছে না
৪)আপনার টিজি লেভেল সম্ভবত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আছে
৫)আপনার লো গ্রেড ইনফ্ল্যামেশান আছে যা মিডিয়াম গ্রেডে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র
৬)আপনার সাব ক্লিনিক্যাল স্কার্ভি থাকার সম্ভাবনা আছে
এই বিপদসংকেত থেকে কি বোঝা যায়??
১)আপনি সঠিক ডায়েটে নাই
২)আপনি যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করেন না
৩)আপনি হেলদি ফ্যাট খান না
৪)আপনি অতিরিক্ত কার্ব খান
৫)আপনি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স(এস্পেশালি ১,২,৩ ও ৬) ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন
৬)আপনি খুব সম্ভবত ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন
আরেকটা বিষয়, ব্লাড গ্লুকোজ মেপে গ্লুকোজ নরমাল দেখে আনন্দে লাফালাফি করবেন না।
টানা কয়েকবার র্যান্ডমলি গ্লুকোজ বেশি আসা মানে ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেছে।
কিন্তু গ্লুকোজ লেভেল নরমাল থেকেও শুধু হাইপারইনসুলিনেমিয়া থেকে অনেক রকম ড্যামেজ হওয়া সম্ভব।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এক নম্বর ড্যামেজ হচ্ছে ফ্যাটি লিভার ও হাই টিজি লেভেল, চলতি ভাষায় হাই কোলেস্টেরল।
নারীদের ক্ষেত্রে এক নম্বর ড্যামেজ হল, ওভারিয়ান সিস্ট। ফ্যাটি লিভার পরে আসবে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে নাম্বার টু হচ্ছে, হাইপারটেনশান,
নারীদের ক্ষেত্রে প্রিডায়বেটিস-ডায়বেটিস। অনেক সময় এগুলো স্রেফ টের পাওয়া যায় না, প্রায় ৭০% ক্ষেত্রেই টেস্ট করে জানতে জানতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
পুরুষদের নাম্বার থ্রি হচ্ছে, হাই টিজি বা হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া।
নারীদের ক্ষেত্রে নাম্বার থ্রি ড্যামেজ হল ফ্যাটি লিভার।
ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি মেয়েদের ক্ষেত্রে আরেকটা ঝামেলা ধরায়, ডিপ্রেশন-এংজাইটি-প্যানিক এটাক এবং মুড সুইং।
মুড সুইং নিয়ে আবেগী ফেইসবুক পোস্ট লেখা বাদ দিয়ে নিজের শরীরের মাপ নেন। এরপর দেখেন আপনি কার্ব দিয়ে ভরা ফুড খাচ্ছেন কি না, আপনার ডায়েটে পালংশাক, কাঠবাদাম, কুমড়ার বিচি, শিম, বীফ এসব আছে কি না??
এরপর কানেক্ট করেন।
তাই, যা বলছিলাম, সবাই বাসায় একটা করে ফিতা রাখবেন।
আপনাকে রাইট ডায়েট এবং লাইফস্টাইলে আসতে হবে, বেশি দেরি হওয়ার আগেই।
হাইপারইনসুলিনেমিয়া থেকে সুস্থ হতে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, কার্ডিও ও হিট এক্সারসাইজ করুন।
আরেকটা বিষয়! আমাদের ওয়েট লস ক্যাম্পেইনের থার্ড ব্যাচের রেজিষ্ট্রেশনের আর কিন্তু ৩ দিন বাকি আছে। একই সাথে অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন, তলপেটে মেদ আছে, ফ্যাটি লিভার, হাইপোথায়রয়েড, হাইপারইনসুলিনেমিয়া, পিসিওএসে ভুগছেন এবং বাসায় বসেই প্রফেশনাল নিউট্রিশনিস্টের আন্ডারে থেকে ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা কিন্তু চাইলেই ডেডলাইনের আগে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলতে পারেন।
সজল ভাইয়ের লিখা