Wednesday, June 23, 2021

৫৭. প্রশ্ন: স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ? Marriage education series

No photo description available.

প্রশ্ন: স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ?
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর:
বিষয়টি সামাজিক রীতিনীতি, ভদ্রতা এবং প্রচলন এর উপর নির্ভরশীল। যে সমাজে এটিকে অসম্মানজনক মনে করা হয় না সেখানে তাতে আপত্তি নেই কিন্তু যেখানে এটিকে সম্মানহানি ও বেয়াদবি মনে করা হয় সেখানে তা করা উচিত নয়।
 
আমাদের ভারত উপমহাদেশে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়। সুতরাং এখানে স্বামীকে নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। কেননা স্ত্রীর কর্তব্য, স্বামীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা এবং এমন আচরণ না করা যাতে তার সম্মানহানী হয়। অন্যথায় তাদের মাঝে মনোমালিন্য এবং দাম্পত্য জীবনে কুপ্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া সাধারণ ভদ্রতা হল, মানুষকে এমন শব্দ প্রয়োগে সম্বোধন করা যাতে সে খুশি হয়। বিশেষ করে দাম্পত্য জীবনে এটাই ভালবাসার দাবী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অবশ্য স্বামী যদি এতে মনে কষ্ট না পায় বা নিজের সম্মানহানী মনে না করে তাহলে নাম ধরে ডাকায় কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন: বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহর রাসূল ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী হাজের এবং শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে ডাকলেন এভাবে:
يَا إِبْرَاهِيمُ أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الْوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ ؟
“হে ইব্রাহিম, তুমি আমাদেরকে এমন জনমানবহীন উপত্যকায় রেখে কোথায় যাচ্ছ?” (সহিহ বুখারী)
এছাড়া বিভিন্ন দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সামাজিক নিয়ম-নীতি, সম্মান ও ভদ্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
 
প্রশ্ন: কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে স্বামীর নাম মুখে নিয়ে কারো সাথে গল্প করে তাহলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
যদি কোথাও স্বামীর নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে উচ্চারণ করতে কোন সমস্যা নেই। তবে বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে গল্প করার সময় তার নাম নিলেও সম্মানের সাথে নেয়া কতর্ব্য। বার বার নাম উচ্চারণের ফলে মানুষের নিকট যেন তার প্রতি আপনার শ্রদ্ধাহীনতা প্রকাশ না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA
fb/AbdullaahilHadi

 

৫৬. স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায় Marriage education series

May be an image of text that says 'স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায় আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী'

স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: এক বোনের পক্ষ থেকে প্রশ্নঃ
আমার হাজবেন্ড অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করে। তার সাথে আমার তেমন শারীরিক সম্পর্কও হয় না। আমার মনে হয়, পরকীয়ার কারণে সে আমার প্রতি আগ্রহী নয়। তবে সে আমাকে খাওয়া-পরা নিয়ে কোনো অভাবে রাখে না। আমার দুটা সন্তান আছে। এই যন্ত্রণা আমার সহ্য হয় না। সে একবার আমার কাছে ধরা পড়ার পর ক্ষমাও চায়। কিন্তু ঐ মেয়ের পাল্লায় পড়ে আবারও তার সাথে সম্পর্ক করে। এই ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
উত্তর:
আল্লাহ তাআরা আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
পরকীয়া নি:সন্দেহে দাম্পত্য জীবন, সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার বিরাট হুমকি। এটি নিজের হালাল স্ত্রীর সাথে আমানতের খেয়ানত, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল এবং আল্লাহ তাআলা ক্রোধের কারণ।
যাহোক, কোন স্বামী এই ফিতনায় জড়িয়ে গেলে স্ত্রীর করণীয় হল:
◼ ১. কুরআন-হাদিসের আলোকে তাকে পরকীয়া, অবৈধ প্রেমপ্রীতি ও যিনাব্যাভিচারের ভয়াবহতা, ইসলামী আইন অনুযায়ী দুনিয়াতে এর কঠিন শাস্তি, আখিরাতের আযাব, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝানো। এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসে পর্যাপ্ত ব্ক্তব্য রয়েছে। তাই এ সংক্রান্ত যে কোন ভালো ইসলামী বই বা ইসলামী আলোচনার ভিডিও কাজে লাগানো যেতে পারে।
◼ ২. তার হেদায়েতের জন্য দয়াময় আল্লাহর নিকট দুআ করা।
◼ ৩. স্ত্রীর মাঝে স্বামীর নিকট অপছন্দীয় কোন আচার-আচরণ থাকলে তা পরিবর্তন করা এবং যথাসাধ্য তাকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা। দাম্পত্য জীবনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক স্বামী-স্ত্রী এ বিষয়ে অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে সময়ের ব্যবধানে তারা দাম্পত্য জীবনের উষ্ণতা ও আবেদন হারায়। ফলে দুজনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং অবশেষে ঈমানী দূর্বলতা, কুপ্রবৃত্তির তাড়না এবং শয়তানের কুমন্ত্রণায় তারা ভিন্ন পথ খুঁজা শুরু করে।
◼ ৪. প্রয়োজনে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে ‌আরেকটি বিয়ে করার সম্মতি দেয়া।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর দেয়া এ বিধানটির ব্যাপারে অনেক স্ত্রীর কঠোর ও ভয়াবহ আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক দুর্বল ইমানদার স্বামী অবৈধ পথের দিকে পা বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীও এই অন্যায়ের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত হবে।
◼ ৫. সম্ভব হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে পারিবারিক বা সামাজিক সালিশ অথবা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
◼ ৬. এগুলোর মাধ্যমে কোন উপকার না হলে হয় স্ত্রীকে ধৈর্য ধারণ করে স্বামীকে এ পথ থেকে ফিরানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় সবশেষে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে পৃথক হয়ে যেতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব