১
আহসান সাহেব শহরের একজন দক্ষ ব্যবসায়ী। ব্যবসা সম্পর্কে অগাধ পান্ডিত্ব্য থাকা সত্ত্বেও, হঠাৎ-ই বড় ধরণের বিপর্যয়ের শিকার হলেন। কোটি টাকার ধসে- যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!
এই মহা বিপর্যয়ে আহসান সাহেবের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে? হয়ত অধিক শোকে পাথর, নয়তো কেঁদেকেটে আশপাশের মানুষজন এক করা, কিংবা ক্ষোভে-দুঃখে ব্যবসা বন্ধ করে বনবাসী হওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া, ইত্যাদি।
যদি তার প্রতিক্রিয়া উপরের কোনো একটি হয়, তাহলে পরিণতি কী হতে পারে?
অপরদিকে, আসাদ সাহেব বেশ আজিব ব্যবসায়ী।
জীবনের এক উৎফুল্ল সকালে তিনিও কোটি টাকার লোকসানের শিকার হলেন। তবে আহসিন সাহেবের মতো ভেঙ্গে পড়লেন না। বিপর্যয়ের কারণে দুঃখ-দুশ্চিন্তা ভর করতে পারতো তার উপর, কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ব্যাপারটা হাসিমুখে সামলে নিলেন ভিন্ন পন্থায়।
কেন কীভাবে লোকসানটা হল- সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নবউদ্যমে ফের শুরু করলেন। বছর খানেক পর, তার আত্মবিশ্বাস ও ঘুরে দাঁড়ানো তাকে পৌঁছে দিল বিশ্বের সেরা ব্যবসায়ীদের একজনের স্থানে।
অবশেষে উষ্ণ চায়ের কাপে প্রশান্তির চুমুক।
এদিকে আমাদের রহিম চাচা একজন সাদামাটা ব্যবসায়ী। তিনিও একদিন ব্যবসায় চরম ধরা খেলেন। তাৎক্ষণিক খবরটা পেয়ে কিছুটা বিচলিত হলেও পরমুহূর্তেই প্রশান্তচিত্তে বিশ্বাস রাখলেন, এটি মহান আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাতেই ঘটেছে। আল্লাহর থেকে প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে কষ্ট সহ্য করলেন। তারপর আসাদ সাহেব যে পথে এগিয়েছিলেন, সেই পথ ধরলেন।
উপরের তিন ব্যক্তির মধ্যে কে উত্তম? কে আসলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
আহসান, আসাদ কিংবা রহিম সাহেবদের জীবনের পর্যালচনা করা মুখ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্যে এটি উদঘাটন করা যে- বিপদের মতো এক অনিবার্য বিষয়, যার সাথে আমাদের সবারই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সাক্ষাৎ হয়ে যায়- এহেন দূর্দশা যখন ঘিরে ধরে, তখন আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
কেমন হলে তা আমাদের চলার পথকে বিষাক্ত কণ্টকযুক্ত না করে, করবে ফুলের মতো মসৃণ?
২
নিয়ত ও ইয়াকীন বা বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি
দৃষ্টিভঙ্গির শক্তি- একই পরিস্থিতিতে একজনের কাছে যা বিপদ, অন্যজনের কাছে তা-ই নিয়ামতঃ
আলী বানাত (রহ.) এর ঘটনা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা, ক্যান্সার যার জীবনে এক মহান নিয়ামত হয়ে এসেছিল।
আমরা আলী বানাত (রহ.)কে দাঁড়িপাল্লার একদিকে রেখে, ঠিক তার পরিস্থিতিতে থাকা আর একজন ক্যান্সারের রোগীকে অপর প্রান্তে রেখে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করবো।
দুজনের অবস্থা ও পরিস্থিতি একই হওয়া সত্ত্বেও আলী বানাত রহ. কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রশান্ত ছিলেন? অন্যজন কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুঃখী? পার্থক্যটা কোথায়?
দৃষ্টিভঙ্গিতে। মনোযোগে। লক্ষ্যে। নিয়তে।
আলী বানাত রহ:-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল কৃতজ্ঞতা। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর স্রষ্টাকে।
অপরদিকে অন্য রোগীটির দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল হতাশা। তিনি মগ্ন ছিলেন অন্যদিকে- জীবন বুঝি শেষ হয়ে আসছে, এই চাকচিক্যময় পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে অনিশ্চিত গন্তব্যে।
আমরা ভাবি, আমাদের সাথে যা ঘটে তার ওপর নির্ভর করে- আমরা সুখী হবো নাকি দুঃখী। গবেষক ও লেখিকা Gallagher এর মতে, যুগ যুগ ধরে হয়ে আসা গবেষণা এর সাথে বিরোধ করে বলে- আমাদের জীবন কেমন হবে তা নির্ভর করছে- আমরা কোথায় মনোযোগ দিচ্ছি- তার উপর। আমাদের ব্রেইন সেই অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে নেয়।(১)
দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি বিশ্বাসের উপর। বিশ্বাস পরিণত হয় চিন্তায়, চিন্তা পরিণত হয় শব্দে, শব্দ পরিণত হয় কর্মে, কর্ম পরিণত হয় অভ্যাসে।(২)
দ্বীন আমাদের এই অভ্যাস বা স্বভাবে পরিণত করতে হবে।
এই অভ্যাসের মূল ভিত্তিই যেহেতু বিশ্বাস, বারবার বিশ্বাস পরিশুদ্ধ ও দৃঢ় করাতে মনোযোগী হন।
৩
শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী (হাফি) বলেন,
"এই দ্বীন মূলত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের নাম। ওই কাজটিই যদি আপনি আরেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করেন, আরেক নিয়তে করেন, অন্য উদ্দেশ্যে করেন, তা হলে সেই জিনিসটিই-যেটি নিরেট দুনিয়া ছিল-দ্বীন হয়ে যায়।"(৩)
এই দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ কী? এর অর্থ হলো, আমরা আমাদের আশপাশে যা ঘটছে তা কীভাবে দেখছি, বুঝছি ও উপলব্ধি করছি এবং ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আমাদের কাছে কী অর্থ বহন করছে। এটা আমাদের বিশ্বাস দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
দৃষ্টিভঙ্গিই হতে পারে আমাদের বিপদের উৎস কিংবা নিয়ামতের। যে পরকালে বিশ্বাস করে ও যে করে না, যেকোন পরিস্থিতিতে তাদের সিদ্ধান্ত ও অন্তরের অবস্থা কখনোই এক হবে না।
মানুষ বস্তু বা ঘটনার চেয়ে বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অধিক প্রভাবিত হয়। মানুষ বস্তু বা ঘটনা দ্বারা বিশৃঙ্খলতার শিকার হয় না, বরং তা থেকে সে যে দৃষ্টিভঙ্গি নেয়, তা দ্বারা হয়।(৪)
আমাদের জীবনের অধিকাংশ সমস্যাগুলোর সমাধানই হলো- দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। উপরের উদাহরণেই দেখেছি- কেবল দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা কীভাবে একই পরিস্থিতিতে থাকা দুজন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে দুরকম মানসিক অবস্থায় রাখতে পারে।
যার বিশ্বাসের গন্তব্য শেষ হয় জান্নাতে, পার্থিব কোনো বিপদই তার পথে বাঁধা হতে পারে না, বরং বিপদ যেন তার সামনে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে।
রাসূল সা. এর দুটো অমিয় বাণী উল্লেখ করতে চাই- যা আমাদের অস্থির অন্তরে প্রশান্তির এই পরশ বুলিয়ে দেবে- কীভাবে আমাদের জীবনের সমস্ত বিপদও হতে পারে নিয়ামত।
একটি বিখ্যাত হাদিস, কিন্তু আলোচ্য বিষয়ের সাথে কীভাবে তা সম্পৃক্ত সে সম্পর্ক হয়তো অনেকেরই ভাবা হয়নি গভীরভাবে।
রাসূল(সাঃ) বলেছেন, মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন হয়, তখন সে সবর করে, আর সবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়।(৪)
কিছু ক্ষেত্রে শব্দগুলো পড়ে গেলেই হয় না, গভীরভাবে অনুভব করতে হয়; যেন তা অন্তরে গেঁথে যায়, শরীরের শিরা-উপশিরায় মিশে যায়।
এই হাদিসের দৃষ্টিতে চিন্তা করতে পারলে, ভবিষ্যত কেন্দ্রিক সমস্ত ভয় দূর হয়ে যাবে। কারণ আমরা জেনে গেছি, যা-ই ঘটুক, তা মুমিনের জন্য কল্যাণকর।
আরেক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন, শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহ মুমিনদের জন্য এমন কোনো বিষয় নির্ধারণ করেন না, যাতে তাঁর উপকার নেই। আর এই বিশেষত্ব মুমিনগণ ছাড়া আর কারও জন্যেই নয়।“(৫)
সুতরাং জীবনের সমস্ত সচেতনতা ও মনোযোগ একটি খাতে ব্যয় করুন- কীভাবে মুমিন হওয়া যায়, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত হওয়া যায়। একবার মুমিন হতে পারলে, যা কিছুই ঘটুক না কেন, হতাশ হওয়ার কারণ নেই। যা ঘটেছে তাতে উপকার আছে বলেই ঘটেছে।
নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (৬)
যেকোন বিপদের সময়ই রাসূল(সাঃ) এর এই বাণী হতে পারে আমাদের অন্তরের স্বস্তি ও শীতলতা।
সমস্যা হল, সুখের সময় অনেক কিছুই করা যায়, বলা যায়; কিন্তু বিপদে যে পড়ে সে-ই জানে এর বাস্তবতা। বিপদে পতিত ব্যক্তির সচেতনতা অনেকাংশে লোপ পায়, বিবেকের চেয়ে আবেগ অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তাই উত্তম হলো, যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির জমিনে এই দুটো হাদিসের বীজ বপন করে দেওয়া, যেন তা শেকড় গজিয়ে অন্তরের গভীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা বিপদের সময়ও আমাদেরকে রাখবে দৃঢ় ও প্রশান্ত।
এই প্রশান্তির ব্যাপারে শাইখ সালমান আল আওদাহ বলেন,
"ঈমানের পর আপনার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো অন্তরের প্রশান্তি, স্থিরচিত্ত ও সুখ।"(৭)
৫
বিপদ-আপদে কীভাবে শোকর করা যায়?
এক্ষেত্রে মূলনীতিটা হল, দুনিয়ার ক্ষেত্রে নিজ অবস্থানের নিচে দৃষ্টি দেয়া, আখেরাতের ক্ষেত্রে উপরে।
যেমন- যার এক হাত ভাঙলো, তার জন্য শুকরিয়ার বিষয়, দুই হাত ভাঙ্গেনি। যে দুই হাত হারাল, তার শুকরিয়ার বিষয়- দুই পা হারায়নি। যে দুই পা হারালো, তার শুকরিয়ার বিষয়- জীবন যায়নি।
সবর ও শোকর একজন মানুষের জীবনের সার্বক্ষণিক কাজ। কীভাবে? মানুষের যে কোন অবস্থাই হয় তার মনমত, অথবা তার মনের বিপরীত। প্রথম অবস্থায় শোকরের নির্দেশ রয়েছে, আর দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে সবরের নির্দেশ।(১০)
৬
ইমাম বুখারী রহ. এর লিখিত হযরত আনাস(রাঃ) এর আম্মার ঘটনা।
তাঁর ছোট ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি রাতে এটা স্বামীকে জানায় না। স্বাভাবিকভাবেই খাবার তৈরি করেন। ভাল কাপড় পরেন। সুগন্ধি মাখেন। খাবার খাওয়ার পর রাতে তাঁদের মিলন হয়। স্বামী ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ছেলের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেন, নামাজের পর দাফন করতে। সেই রাতের মিলনে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহর ঔরসে এমন ন’জন সন্তান লাভ করে, যারা প্রত্যেকে ছিলেন কুর’আনের হাফিজ।(৮)
শাইখুল হাদিস জাকারিয়া রহঃ এর কাছে যখন মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহঃ এর মৃত্যুর সংবাদ আসে, সে মুহূর্তের ব্যাপারে তিনি লিখেন,
“মৃত্যুর জন্য তো কোন সময় অসময় নেই এবং এটা অসম্ভব কোন ব্যাপারও নয়।“(৯)
তাঁর মৃত্যুর খবর শুনার পরপরই জাকারিয়া (রহঃ) বাহ্যিক দুনিয়ার মানুষের ভিড়, কথাবার্তা উপেক্ষা করে ওঠে ওযূ করে নামাজের নিয়ত বাঁধেন।
তিনি আল্লাহর কাছে নিজেকে সপর্দ করে বিপদের সময়টা কীভাবে নিয়ামতে পরিণত করলেন দেখুন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন-
“এ সময়টা খুব গুরুত্বপুর্ণ ও মূল্যবান। খুব বরকতের সময়। এ সময়টাতে মন দুনিয়া ভুলে আখেরাতমুখী হয়, এ সময়ের তেলাওয়াত দা্মী, যিকর ও ধ্যানও দামী।“(১০)
প্রিয় পাঠক, কল্পনাও যেখানে হার মানে! আল্লাহর ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার কোন স্থরে পৌঁছেছিলেন তাঁরা একবার ভাবতে পারেন?
“বিপদের তীরের লক্ষ্যস্থল হয়ে ‘উঃ’ শব্দ না করাই প্রকৃত সবর।“
“আরেফ অর্থাৎ খোদার তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি সর্বদা ‘রেযা’ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার বিধানের প্রতি সন্তুষ্টির গহ্বরে অবতরণ করে।“(১১)
বিপদ মোকাবেলা করার সবচেয়ে ইফেক্টিভ যে উপায় আমার কাছে মনে হয়, তা হল, 'Accept–then act' নীতি।
যা ঘটেছে তা এমন ভাবে বিনা বাধায় গ্রহণ করে নিন, যেন আপনি তা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন। তারপর বিপদটাকে বন্ধু ভেবে কাজ করুন, শত্রু ভেবে নয়।
“If you take any action—leaving or changing your situation—drop the negativity first, if at all possible. Action arising out of insight into what is required is more effective than action arising out of negativity.”(১২)
এটুকু করা গেলে বিপদ মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আপনার কাজ হলো, আপনার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া। সমাধান করা গেলে গেল, না গেলে তাকদীরে যা আছে।
৭
আমলঃ
বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করা
সুলতান মুহাম্মদ গাযনাওয়ী রহিমাহুল্লাহ একবার তার গোলাম ‘আওয়ায’কে একটি আংটি দিয়ে বললেন, আংটিতে এমন কিছু লিখে দাও যা আমি সুখের সময় দেখলে চিন্তিত হয়ে পড়বো এবং দুঃখের সময় দেখলে আনন্দ অনুভব করবো।
বুদ্ধিবান সেই গোলাম আংটিতে লিখল, ‘এই সময়টাও অতিবাহিত হয়ে যাবে।‘
সময় তার আপন গতিতেই অতিবাহিত হয়ে যাবে, বিপদও কেটে যাবে, কেবল আমল রয়ে যাবে।
বিপদের কারণে অন্তরে যে অস্থিরতা বা পেরেশানির সৃষ্টি হয়, মানুষ দুনিয়ার কাছেই এর সমাধান চায়। অথচ যিনি এই কষ্ট নিমিষেই দূর করে দিতে পারেন, তাঁর কাছে যাওয়া হয় না, তাঁর কথা স্মরণে থাকে না; অন্তরে থাকে সেই হাহাকার–"দুনিয়া, দুনিয়া, দুনিয়া..."
আদীব হুজুর কত চমৎকারভাবে বলেছেন,
"আশ্চর্য! এই একটি ভুল জীবনে বারবার করি। 'মাটির পুতুল', আমরা আশা করি তার কাছে কিছু পাওয়ার, যার না আছে দেওয়ার ইচ্ছা, না আছে সাধ্য৷ আশা করি এবং নিরাশ হই। অথচ শান্তি ও সান্ত্বনার ডালি সাজিয়ে যিনি প্রতীক্ষায় আছেন আমার জন্য, কখন হাত পেতে দাঁড়াবো তাঁর দুয়ারে, তাঁর কথা আমরা ভুলে যাই।"(১৩)
বিপদ তখনই নিয়ামত, যখন তা আমাদের সাথে আমাদের রবের বন্ধন দৃঢ় করে; আর তখন শাস্তি, যখন তা আমাদেরকে রবের থেকে দূরে সরায়।
চলুন দেখে নেই কী করলে- বিপদগুলো স্রেফ বিপদ হয়ে আমাদের কিছুদিন কষ্টে রেখেই সময়ের স্রোতে বয়ে যাবে না, বরং তা বিদায় নেয়ার সময় আমাদের সাথে আমাদের মহান রবের বন্ধন আরও দৃঢ় করে দিয়ে যাবে।
ইস্তিরজা:
যেকোন বিপদে পতিত হলেই পড়ুন ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয় আমরা আলাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।‘(১৪)
বিশ্বাস ও ধৈর্য:
বিশ্বাস: কোন বিপদ ঘটে গেলে এই বিশ্বাস রাখুন যে, এটি আল্লাহর ফায়সালা ও নির্দেশমতোই ঘটেছে।
ধৈর্য: আল্লাহর থেকে প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে সেই কষ্ট সহ্য করুন।
ঈমাম ইবনু কাসির (রহ.) মতে, এই দুটি কাজ করতে পারলে, আপনার কষ্টের ক্ষতিপূরণ স্বরুপ আল্লাহ অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন, ঈমানকে সুদৃঢ় করবেন, যা কিছু হারিয়েছেন তাঁর পরিবর্তে সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ অথবা এরচেয়েও ভাল কিছু আপনাকে দান করবেন। (১৫)
দু'আঃ
ধৈর্য, প্রশান্তি ও নিরাপত্তা- এই শক্তিশালী বিষয়গুলো দুর্বল মানবচিত্ত থেকে উৎসারিত হয় না, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত হিসেবে আসে।(১৬) বিপদে পড়লে আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হলো, কল্যাণের ফায়সালার জন্য দু’আ করে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, ধৈর্য ও প্রশান্তি চাওয়া। যদি এ দুটো সম্বল থাকে, তবে তা-ই আপনার জন্য দৃঢ় ও অটল-অবিচল থাকার জন্য যথেষ্ট।(১৭)
আল্লাহ তা'আলার কাছে এমন দৃঢ়তা অর্জনের দু’আ করুন, যেন যত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় জীবনে বয়ে যাক না কেন, আকাশপানে তাকিয়ে বলতে পারেন–"যা-ই ঘটুক, তাতে কী এমন হবে? আমার দ্বারা আমার রব্ব অসন্তুষ্ট হবার মতো কিছু না হলেই হলো।"
তাওয়াক্কুলঃ
পরিস্থিতি যতোই কঠিন হোক, পুরো বিষয়টা আল্লাহর উপর ন্যস্ত করে নির্ভার হয়ে যান।(১৮) হৃদয় দিয়ে অনুভব করে এই দুটো আয়াত পড়ে দেখুন তা কীভাবে আপনার সমস্ত দুঃখ ও কঠিন বোঝাকে হালকা করে দেয়-
“যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।“(১৯)
যেসব বিষয় অনিশ্চিত, অজানা কিংবা আশঙ্কার, সেসব ব্যাপারে আমরা কেন তাঁর উপর ভরসা করতে পারি না যিনি আমাদের প্রতি আমাদের মায়ের চেয়েও দয়াশীল?
প্রিয় পাঠক, আসুন আল্লাহর কাছে দু'আ করে, ভিক্ষা চেয়ে একবার আল্লাহর উপর ভরসা করা শিখে ফেলি; তারপর দুনিয়ার কোনো বিপদকেই বিপদ মনে হবে না। ভীষণ বিপদেও প্রশান্তি ব্যতিত অস্বস্তিকর কোনো অনুভূতিই অন্তরে জায়গা পাবে না।
আল্লাহর রহমতঃ
যত বড় বিপদের কালো মেঘই জড়ো হোক না কেন; আপনি সেই মুহূর্তেও আল্লাহর রহমতের বারিধারা বর্ষণের আশা করুন, অন্বেষণ করুন।
মূলত, রবের সাথে সম্পর্ক যত গভীর হবে, রবের প্রতি সুধারণা যত দৃঢ় হবে, বিপদ তত তুচ্ছ মনে হবে, বিপদের সময়ও তত বেশি মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারবেন।
৮
তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি:
আমাদের অশান্তির সিংহ ভাগই বোধহয় এমন কিছু, যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না, বা করা সম্ভব নয়। এই অযথা অশান্তিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আমাদের কাজ হলো, ইচ্ছেশক্তি প্রয়োগ করে যা আমরা , তা মেনে নিয়ে তাকদিরের উপর সন্তুষ্ট হওয়া।
যে বিষয়গুলো স্মরনে রাখা প্রয়োজন:
• জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদই পূর্বনির্ধারিত।(২০)
• আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন বিপদই আসে না।(২১)
• মুমিনের জীবনে যে বিপদই আসুক না কেন, তা তার জন্য কল্যাণকর।
• মুমিন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই জান্নাতি-সুখ অনুভব করে, কারণ সে আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্ট থাকে। এটা সেই জান্নাতি সুখ, ইবনে তাইমিয়া রহঃ দুনিয়ার যে জান্নাতের কথা বলেছেন। আর এই সুখের ভিত্তি হলো তাকদীরের উপর সন্তুষ্টি। যতক্ষণ কেউ আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্টির বিশ্বাস স্থাপন করবে না, ততক্ষণ সে প্রশান্তি লাভ করতে পারবে না।
যত সম্পদ, যশ-খ্যাতি-সম্পদ-প্রতিভা কারও থাকুক না কেন, সে চাইলেই তার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে না। মানুষকে দুর্বলভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে সে অসহায় হতে বাধ্য।
হাদিসে দুনিয়াকে মুমিনের জন্য কারাগার বলা হয়েছে, যা ইচ্ছে পূরণের কারখানা নয়।
মূলকথা, এই মূলনীতি বিশ্বাসে গেঁথে নিন- আল্লাহ যা চান তা-ই করেন। আমাদের উপর যে বিপদ এসেছে, তা না-আসার ছিল না। আর যে বিপদ আসেনি, তা আসার ছিল না। কলম শুকিয়ে গেছে। সুতরাং অভিযোগ ও হা-হুতাশ না করে আল্লাহ তা’আলার ফায়সালার সামনে আত্মসমর্পন করুন।
সর্বাবস্থায় তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার সিদ্ধান্ত নিন। অজ্ঞাত শঙ্কা থেকে চিরমুক্তি মিলবে ইনশা আল্লাহ।(২২)
৯
রবের ফায়সালার ব্যাপারে সুধারণা
আল্লাহ আপনার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা আপনার নিজের নির্বাচনের থেকে উত্তম।(২৩) প্রত্যেক কাজেই আল্লাহ তা'আলার হিকমাহ রয়েছে, যে ব্যাপারে আমরা অজ্ঞ। দৃশ্যমান জগতেই আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ।
এই ব্যাপারে মালিক ইবনে দিনার (রহঃ) এর একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে। আল্লাহ তাঁর মেয়েকে দুনিয়া থেকে নিয়ে, মূলত তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর মেয়েকে হারানোর পর তিনি হয়েছিলেন পৃথিবীর বুকে হেঁটে যাওয়া শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন; পেয়েছিলেন এমন এক নির্মল জীবন, যে জীবনের প্রতি পদে পদে উন্নীত হয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।
তাঁর দুনিয়াবী জীবনের এইযে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি হারানো- তাঁর জন্য মূলত বিপদ ছিল, নাকি নিয়ামত?
আলেমগণ বলেন, অনেক সময় এমন হয়, আল্লাহ তা’আলা বাহ্যিকভাবে আপনাকে দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে বঞ্চিত করেছেন। এমনও হতে পারে, বাহ্যিকভাবে বঞ্চিত করেছেন, বাস্তবে দান করেছেন। (২৪)
আমাদের জ্ঞান বড় সীমিত, যা দ্বারা আমরা অনেকসময় বুঝতে সক্ষম হই না- পার্থিব স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা রবের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির নির্ণায়ক হতে পারে না।
১০
চিরস্থায়ী বিপদ ও নিয়ামতঃ
আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে দুনিয়ায় এমন কোন বিপদে ফেলেন না, যা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।(২৫) আমাদেরকে বরং সেই মহা বিপদ নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত- যার সময়সীমা ১ দিন হলেও, তা ভোগ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
মৃত্যুটা খুব বড় বিপদ নয়, বরং ভয়াবহ বিপদ হলো সেটাই, যা মৃত্যুর পর ঘটবে।(২৬)
দুনিয়ার বিপদও ক্ষণস্থায়ী, নিয়ামতও ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়াতে যত বড় বিপদই আসুক না কেন, তা একসময় কেটে যায়। কিন্তু আখেরাতের বিপদে? মৃত্যুর পরে যদি গন্তব্য হয় জাহান্নাম, সেই লেলিহান শিখার এক মুহূর্তের স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা কি আছে আমাদের?
দুনিয়ার অনিশ্চিত কোনো বিপদের সামান্য আশঙ্কাও আমাদের কাবু করে ফেলে; অথচ আখেরাতের মতো একটি অনিবার্য বিষয় আমাদের মাঝে কোন প্রভাব ফেলে না!”(২৭)
এখন একটা চমৎকার বিষয় লক্ষ করুন- জাহান্নামের স্মরণ ও কল্পনাকে যদি কাজে লাগানো যায়, গুনাহ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে।
আমার কথা হলো, জাহান্নামের মতো এক ভয়াবহ বিপদ থেকেও যদি ভাল কিছু বের করে আনা যায়; তাহলে আপনিই বলুন, দুনিয়ায় কি এমন কোন বিপদ থাকতে পারে, যে বিপদ থেকে ভাল কিছু বের করে আনা যাবে না!
১১
টাটকা গরম পানির মধ্যে আলু দিলে, তা ভেতর থেকে নরম হয়ে আসে, আবার ডিম দিলে তা ভেতর থেকে শক্ত হয়। একই গরম পানিতে কফির দানা দিলে, তা পানিটাকেই পরিবর্তন করে দেয়, কফিতে পরিণত করে।
প্রিয় পাঠক, আমরা ৩ জন ব্যক্তির কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এতটুক পর্যন্ত আসলে, আপনি বুঝে গেছেন, সেই তিন জনের মধ্য থেকে রহিম সাহেবই সফল ছিলেন। তিনি দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা করা প্রয়োজন তা করতে যেমন ভুল করেননি, সেই সাথে আখেরাতের পুঁজি অর্জন করতেও ভুলে যাননি। বিপদ ছিল তার জন্য নিয়ামত, দুনিয়া ও আখেরাত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে।
রহিম সাহেবের মতো আমাদেরও দৃঢ় হওয়া উচিত- জমিনে যা-ই ঘটুক, ফায়সালা তো হয় আসমানে।
“যাদের ফয়সালা হয় আসমানে তারা তো জমিনের ভয়ে ভীত নয়।“ আল্লাহ তা'আলা তো এজন্যই আপনাকে বিপদে ফেলেন, যেন আপনার অন্তরে এই চেতনা জাগ্রত হয়–এই দুনিয়ার বেলা ফুরাবার আগে যেন আপনি রবের কাছে ফিরে আসেন। আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কি হতে পারে? (২৮)
যে বিপদ আপনার মাঝে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্খার বীজ বপন করে দিয়ে যায়, তাঁর সাথে ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ করতে সহযোগিতা করে, যে বিপদ তাওবার বদ্ধদুয়ার উন্মোচন করে; সেই বিপদের চেয়ে বড় নিয়ামত এই ক্ষণিকের জীবনে আর কী হতে পারে বলুন তো?
এমন বিপদে পড়লে তো আপনি বাস্তবে কিছুই হারাননি, বরং বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুনিয়ার মাপকাঠিতে যত বড় ক্ষতিই হোক না কেন, আপনি সবকিছুই পেয়ে গেলেন।
যে বিষয় আপনার উদাসীনতা দূর করে আপনার অন্তরে এক তীব্র অনুভূতি জাগ্রত করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির মতো সবচেয়ে বড় নিয়ামত অর্জনের জন্য, এরচেয়ে উত্তম কিছু আর কী হতে পারে?
আমাদেরকে বিপদকে নিয়ামত হিসেবে নেয়ার মাঝে এক বিরাট বাঁধা হল বস্তুজগতে অভ্যস্ততা। আমাদের চশমা (পড়ুন, দৃষ্টিভঙ্গি) বদলাতে হবে। পার্থিব লাভ-ক্ষতির চশমায় দুনিয়া দেখলে চলবে না। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত যে, তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন তাঁর দ্বীন মেনে চলার জন্য।
আমাদের চোখের সামনে থাকতে হবে সেই চশমা, যা দিয়ে সমস্ত কিছু আখিরাতের লাভ-ক্ষতির ফিল্টার হয়ে প্রবেশ করবে আমাদের অন্তরে। তবেই আমরা এই পার্থিব জীবনের বিপদগুলো নিয়ামতরূপে দেখতে পারবো।
বিপদ কীভাবে নিয়ামত হতে পারে কুর’আনে এর চমৎকার একটি উদাহরণঃ
অসহনীয় যন্ত্রণাও অনেক সময় লুকায়িত রহমত হয়ে থাকে।
মারইয়াম (আঃ) যন্ত্রণার কারণে মৃত্যু কামনা করেছিলেন।
"হায়! এর আগে যদি আমার মৃত্যু হতো।"(২৯) অথচ তাঁর গর্ভে ছিলেন একজন নবী যিনি মানুষের জন্য রহমত হয়ে এসেছেন।(৩০)
প্রিয় পাঠক, যদি কখনো মনে হয় যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, গোটা জীবন তছনছ হয়ে গেল; যদি এমন পরিস্থিতে হারিয়ে আপনার মন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়; সবর করুন ও আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট হয়ে অন্তরের সেই ভাঙ্গা টুকরো গুলো নিয়েও স্বপ্ন দেখুন সেই জীবনের– যে জীবনে কোন কিছুই ভেঙ্গে যায় না, যে জীবনের প্রশান্তি অনন্তকালের, যে জীবনে বিপদের কোন ছিটেফোঁটা নেই, আছে কেবল নিয়ামতের অসীম বারিধারা।
প্রিয় দুটো লাইন দিয়ে শেষ করছি; যে দুটো লাইন পুরো লেখার মূল বক্তব্যের সাথে মিলে যায়-
“সে কি পেল, যে আল্লাহকে হারাল?
সে কি হারালো, যে আল্লাহকে পেল?”(৩১)
.
বিপদ যখন নিয়ামত
তাহসিন কামাল