Friday, December 16, 2011

অপেক্ষা... [ Collection of Love Stories - 01 ]



আজ সবুজকে শক্ত করে ধরে রেখেছি। আমাদের ৪ বছরের সম্পর্কে আগে কখনও ওকে এভাবে আকঁড়ে ধরি নি,সবুজই বাঁধন ছাড়াল। যেতে যেতে বলল,যত দেরী হোক না কেন তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি কিছুই বলতে পারলাম না,মাথা নেড়ে চুপ থাকলাম।সবুজ যুদ্ধে যাচ্ছে,হঠাত্‍ পুরানো সব কথা একে একে মনে হতে লাগল।আমাদের ১ম দেখা,ভাললাগা সেখান থেকে ভালবাসা,তার থেকে স্বপ্নের শুরু।আমাদের ১টি ১চালা ঘর হবে,আর ১টি ছোট্ট ফাতেমা/ছোট্ট সবুজ। ও তো তার নাম ও রেখেছে বাংলা। সবুজ দেশ নিয়ে খুব ভাবতো, ওর এই দেশপ্রেম দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।আমাদের পণ ছিল স্বাধীন দেশেই ঘর বাঁধবো আমরা,সব সময় বলতো ও আমার বাংলার জন্ম স্বাধীন বাংলায় হবে।বাংলা স্বাধীন করতে গেল ও আজ,খুশি হব কি কেঁদে আমি একাকার করছি।

৩ মাস পরের কথা...
শুনছি আমাদের গ্রামে মেলেটারী আসছে,সব বাড়ি ঘর জ্বালায় দিচ্ছে।বাবা বলল আজ রাতেই পালাব আমরা কিন্তু পালানো হল না।বিকালেই বাড়িতে মেলেটারী এল।আমার চোখের সামনে বাবা মা ভাই সবাইকে মারল ওরা,গ্রামের আরও কিছু মেয়ের সাথে আমার ঠাই হল ওদের ক্যাম্পে।তারপর ১ প্রহরহীন রাতের শুরু,নিজেকে তখন মানুষ মনে হত না।মনে হত ১টি রক্তপিন্ড,প্রতি মুহুর্তে শকুনেরা খুবলে খুবলে খেত আমায়,দিনের পর দিন এভাবে চলছিল,এর মাঝে কজন আত্বহত্যাও করেছে।আমার ১টি বারও মরার কথা মনে হয়নি,শুধু বাঁচতে ইচ্ছা হয়েছে সবুজের জন্য,আমাদের স্বপ্নগুলোর জন্য।তাই পিশাচগুলোর প্রতিদিনের অত্যাচার সত্বেও আমি বাঁচার আশা করতাম।দেশ একসময় স্বাধীন হল,যখন সমাজে ফিরে এলাম তখন আমি ৪ মাসের অন্তসত্তা। সমাজে আমার জায়গা হল না,তারমাঝে আমার শরীরে প্রতিদিন বেড়ে উঠছে সেই দুঃসহ রাতগুলোর সাক্ষী। আমি জানি সবুজ ফিরে এসে আমায় ঠিক ঠাই দেবে,তাইতো অপেক্ষা করছি।
 
 
দিন কেটে যেতে লাগল,একদিন আমার শরীরের সমস্ত উষ্ণতা নিয়ে সেই কীটের জন্ম হলো। আমি বলেছিলাম ওকে মেরে ফেলতে কিন্তু যখনই ওকে দেখলাম শকুন গুলোর অংশ আর মনে হল না।ওর মাঝে আমি শুধুই আমাকেই দেখলাম। নাম দিলাম ওর বাংলা। যুদ্ধ শেষ দেশ আমার স্বাধীন হয়েছে ঠিকই,কিন্তু আমি আর বাংলা সেই দেশে সম্মান পেলাম না।সবুজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসোনা,আমাদের বাংলাকে নিয়ে এক নতুন যুদ্ধে নামতে হবে। তোমার অপেক্ষায় রইলাম আমি আর বাংলা।

----সানজিদা মারিয়া
গল্পটি নেয়া :      https://www.facebook.com/abegmoy.valobasha
 

No comments:

Post a Comment