সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এই আমলগুলো করবেন।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
(১) যাকারিয়া (আ.)-এর সেই বিখ্যাত দু‘আ:
.
নবি যাকারিয়া (আ.) তখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা (সন্তানহীনা)। এমন কঠিন ‘অসম্ভবতা’ সত্ত্বেও যাকারিয়া (আ.)-এর মনে হঠাৎ বাসনা হলো—সন্তানের পিতা হবেন!
.
সেজন্যে তিনি দু‘আ করেছিলেন, ‘...হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যের কারণে মস্তক (চুল) শ্বেত-শুভ্র হয়ে গেছে। হে রব! আপনাকে ডেকে আমি কখনো নিরাশ হইনি। আমি ভয় করি—আমার পরবর্তী বংশধরের। অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব, আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন...।’ [সুরা মারইয়াম]
.
তিনি দু‘আ করেছিলেন—
.
رَبِّ لَا تَذَرْنِيْ فَرْدًا وَّأَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِيْن
.
‘‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না। তুমিই তো উত্তম ওয়ারিশ।’’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯]
.
আল্লাহ্ তাঁর দু‘আ কবুল করেন। যাকারিয়া (আ.)-এর স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেন ইয়াহইয়া (আ.)। সুতরাং, এই দু‘আটি আকুতি-মিনতি করে বেশি বেশি পড়তে পারেন। বিশেষত দু‘আ কবুলের সময়গুলোতে। এটি পড়ার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই।
.
(২) বেশি বেশি ইস্তিগফার করা:
.
ইস্তিগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নির্দিষ্ট বড় বড় গুনাহের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সকল গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইস্তিগফার সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে। তাই, সন্তান লাভের জন্য ইস্তিগফার করুন।
.
কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘‘(নূহ আ. বলেন) অতঃপর আমি বললাম: তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে বাগ-বাগিচা স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’’ [সূরা নূহ, আয়াত: ১০–১২]
.
একবার হাসান বাসরি (রাহ.)-এর নিকট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিতে আসেন। তখন তিনি উপরের আয়াতগুলোর আলোকে সবাইকে ইস্তিগফারের পরামর্শ দেন।
.
.
(৩) দরুদ পাঠ করা:
.
একজন সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর দু‘আর সবটুকুই নবিজির উপর দরুদ পাঠের জন্য বরাদ্দ করবেন। তখন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৫৭; হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ২/৪৫৭; হাদিসটি সহিহ]
.
এই হাদিসের আলোকে আলিমগণ বলেছেন, দরুদ পাঠের মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন পূরণ হয়।
.
(৪) আন্তরিকভাবে দু‘আ করা:
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলমানের দু‘আয় যদি পাপ কাজ ও রক্ত-সম্পর্ক ছিন্ন করার দু‘আ না থাকে, তবে তার দু‘আ এই তিনটি উপায়ে কবুল হয়ে থাকে। (এক.) দুনিয়াতেই তার প্রার্থিত বস্তু দিয়ে দেওয়া হবে; (দুই.) অথবা পরকালের জন্য এর প্রতিদান রেখে দেওয়া হবে; (তিন.) কিংবা তার অনুরূপ কোনো (অনাগত) বিপদ দূর করে দেওয়া হবে।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১১১৩৩; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৩; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৬৩৩]
.
.
(৫) সাদাকাহ্ (দান) করা:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা সাদাকার মাধ্যমে তোমাদের রোগের চিকিৎসা করো।’’ [বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ৩৫৫৭; আলবানি, সহিহুল জামি’: ৩৩৫৮]
.
এছাড়া আরেকটি দ্বঈফ হাদিসে এসেছে, সাদাকাহ মুসিবত দূর করে। তাই, সাধ্যানুযায়ী সাদাকাহ করুন। বিপদ-মুসিবত দূর করতে সাদাকার ভূমিকা বিস্ময়কর।
.
(৬) নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা:
.
মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘‘হে ইমানদারগণ! তোমরা সবর (ধৈর্য) ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই এটি কঠিন কাজ, তবে যারা বিনয়ী তারা ব্যতীত।’’ [সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৫]
.
(৭) বিশেষ কিছু কুরআনি দু‘আ পাঠ:
.
এটিও যাকারিয়া (আ.)-এর দু‘আ—
.
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
.
অর্থ: হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮]
.
নেককার জীবনসঙ্গী ও সন্তান কামনায় এই দু‘আটি খুবই সুন্দর।
.
رَبَّنَا هَبْ لَـنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
.
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানান। [সূরা আল-ফুরক়ান, আয়াত: ৭৪]
.
নির্দিষ্টভাবে পুত্র-সন্তান লাভের জন্যও দু‘আ করা যাবে। যদিও ইসলামে পুত্রসন্তানের কোনো বিশেষত্ব নেই। বরং মেয়ে-শিশুর ব্যাপারে পজিটিভ কথা বলা হয়েছে। যাহোক, পুত্রসন্তানে আগ্রহীরা পড়তে পারেন এই দু‘আটি—
.
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ
.
অর্থ: হে আমার রব! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০০]
.
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা:
.
❖ হাদিসে এসেছে, আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক রোগের প্রতিষেধক দিয়েছেন। কিন্তু সবকিছু আমাদের জানা নেই। তাই, উপরের আমলগুলোর পাশাপাশি সন্তান না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করুন। ভালো ডাক্তার দেখান।
.
❖ আল্লাহই সন্তান দেওয়ার মালিক। অতএব, বিশ্বাসটা শুধু আল্লাহর উপরই রাখতে হবে। অন্য কিছুতে নয়। সুতরাং সন্তান লাভের আশায় কোনো ভণ্ড পির এবং কবিরাজের কাছে গিয়ে নিজের ঈমান বিসর্জন দেবেন না। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, শক্তিমান।’’ [সুরা শুরা, আয়াত:৪৯-৫০]
.
❖ অনেকের ক্ষেত্রে জ্বিনঘটিত ব্যাপার থাকতে পারে। অথবা কেউ জাদুর শিকার হয়ে থাকতে পারে। এটা অসম্ভব নয়। এমতাবস্থায় ভালো কোনো রাক্বির পরামর্শে রুকইয়াহ্ (শরিয়তসম্মত ঝাড়-ফুঁক) করা যেতে পারে।
.
❖ অনেকে হিজামা (কাপিং থেরাপি) করতে বলেন। এরও উপকারিতা আছে। এই ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে পারেন।
.
❖ হাদিসে এসেছে, মুমিনের জন্য আল্লাহ যে সিদ্ধান্তই নেন, তাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে এবং সেটিই তার জন্য কল্যাণকর হয়। সুতরাং, মহান রব আপনার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকুন। দুনিয়াতে আপনাকে আল্লাহ্ কোনোকিছু থেকে বঞ্চিত করলে আখিরাতে এর প্রতিদান দেবেন।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেকের বৈধ মনোবাসনা পূর্ণ করুন। নেককার সন্তান দিয়ে ঘরকে আলোকিত করুন। আমিন।
.
No comments:
Post a Comment