Showing posts with label ভূতের গল্প. Show all posts
Showing posts with label ভূতের গল্প. Show all posts

Friday, May 14, 2021

অলসতা, ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদির জন্য রুকইয়াহ - Ruqyah for removing distress, physical weakness, mental weakness

 No photo description available.

 

 

অলসতা, ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদির জন্য রুকইয়াহ

-----------------
প্রথমে আমরা হাদিসটা খেয়াল করি,
আলী রা. থেকে বর্ণিত, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার খবর পান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কয়েকজন বন্দী আনা হয়েছে। তিনি আটা পিষার কষ্টের কথা জানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে একজন খাদিম চাওয়ার জন্য গেলেন। (অন্য বর্ণনায় কূপ থেকে পানি তোলার কষ্টের কথাও আছে) কিন্তু তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেলেন না, তখন বিষয়টা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার কাছে জানালেন। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে বললেন।
.
(বর্ণনাকারী বলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা বিছানায় শুয়েছিলাম। আমরা (তাকে দেখে) উঠতে লাগলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাক। আমি আমার বুকে তাঁর পায়ের স্পর্শ অনুভব করলাম। (অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ উনার বুকের কাছে বসলেন) এরপর বললেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তোমাদের তাঁর চাইতে উত্তম বস্তুর সন্ধান দিব? "যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করবে, তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহ আকবার’ তেত্রিশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ এবং তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে"। এটা তোমরা যা চেয়েছো তোমাদের জন্য তাঁর চাইতে উত্তম।
(বুখারী, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, হাদিস নং ২৮৯৩)
.
হাদিসটা আমরা অনেকেই জানি। শুধু জানি না, ভালোভাবেই জানি। এই হাদিসটির প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমাদের দেশে প্রচলিত তাসবিহ গুলোতে একশটা করে গুটি থাকে। এই হাদিসটা বয়ান করার সময় সাধারণত এভাবে বলা হয়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁরা দুনিয়াবী প্রয়োজন নিয়ে এসেছিলেন আর রাসুলুল্লাহ তাদেরকে আখেরাত মুখি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অথবা এরকম কিছুই বলে..।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, হাদিসটির ফজিলত আমরা অনেকেই খেয়াল করিনি।
আমরা হাদীসটিকে আরেকবার দৃষ্টিপাত করি, এর সারাংশ এরকম, ফাতিমা রাযিয়াল্লাহু আনহার ঘরের কাজে কষ্ট হচ্ছিল, তাই তিনি খাদেমের জন্য রাসূলুল্লাহর কাছে গিয়েছিলেন। রাসুল্লাহ তাদেরকে ঘুমের আগে ৩৩বার সুবহানাল্লাহ ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৪বার আল্লাহু আকবার পড়তে বললেন।
.
আমি নিজে দেখেছি এবং বেশ কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতা আমার কাছে বর্ণনা করেছে, এই হাদীসের উপর আমল করলে সত্যি কর্মক্ষমতা বাড়ে, অলসতা দূর হয়, একটুতেই ক্লান্ত হওয়ার ভাব চলে যায়।
সেদিন ফুফু বলছিল, নামাযে বা অন্যান্য ইবাদাতে আলসেমি লাগে, এরকম সমস্যা থাকলে এই সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়লে সেটা চলে যায়।
এবার আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি, গতমাসে মাঝের দিকে বেশ দৌড়ের উপর ছিলাম, পাসপোর্ট অফিসে একটু কাজ ছিল, সেটা শেষ করে বাজারে এরপর ব্যাংকে যাওয়া লাগবে, ওখানে কাজ সেরে এক বড় ভাইয়ের দোকানে যাওয়া লাগবে, এরপর আবার বাসে করে বহুদূরে আমার বাড়ি। সবমিলিয়ে হঠাৎ করেই বেশ বড় ধকল, আর অল্প সময়ের মাঝে অনেকগুলো কাজের চাপ পড়ে গেল।
দুপুরে যখন আমি ব্যাংকে যাব ক্লান্তিতে পা চলছিলই না। রাজশাহী নিউমার্কেট থেকে রেলগেটের রিক্সা-অটোরিকশা স্টপেজ ৩-৪ মিনিটের রাস্তা, এতোটুকুই আমি যেতে পারছিলাম না। ক্লান্তিতে মনে হচ্ছিল রাস্তার মধ্যেই বসে পড়ি। তখন হঠাৎ আমার মাথায় ৩ তাসবির কথা আসলো, আমি সম্ভবত দশবার করে পড়ছিলাম, তিনটা পড়া শেষ হয়নি, কখন ক্লান্তি চলে গেছে, আমি ফ্রি হয়ে ফাস্টট্র্যাকে টাকা জমা দিয়ে রিক্সাতে উঠে অনেক দূর চলে গেছি টেরই পাইনি!
অনেকক্ষণ পর মনে হল "অহহো! আমি না তাসবিহ পড়ছিলাম!!" আলহামদুলিল্লাহ্‌।
.
সবচেয়ে মজাদার এবং শেষ কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ যে বলেছেন "এটা তোমরা যা চেয়েছিলে তাঁর থেকে উত্তম" তাঁর কারণ বুঝতে পারছেন?
- এতে ক্লান্তি দূর হচ্ছে, কাজ সহজেই হয়ে যাচ্ছে, খাদেমের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বেঁচে যাচ্ছে। উপরন্তু ১০০বার তাসবিহ পড়ার জন্য আখিরাতের একাউন্টে অনেক সম্পদ জমে যাচ্ছে।
এর চেয়ে উত্তম টিপস কি হতে পারে!!
-Abdullah Almahmud
 
 
অলসতা, ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদির জন্য রুকইয়াহ - Ruqyah for removing distress, physical weakness, mental weakness

Monday, May 6, 2013

*শবসাধকের কাল্ট – ১ম পর্ব* [Ghost Stories-horror-23]


*শবসাধকের কাল্ট ১ম পর্ব*


জ্যোস্নার আবছা আলোয় দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক (নাকি শব?) বেরিয়ে এল। আশ্চর্য! কে লোকটা? এতরাতে কি করছিল মর্গে?এখন প্রায় শেষরাত। জানলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম। অনেক দূরে কুকুর ডাকছিল। হঠাৎ মর্গের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম। ভালো করে লোকটাকে দেখাও গেল না। চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল কলাঝোপের আড়ালে। চোখের ভুল? লাশকাটা ঘরটা অবশ্য বেশ দূরে।

চারতলা সরকারি কোয়ার্টারের জানালার পাশ থেকে দেখছি। রাতজাগার ফলে হয়তো আমি চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখছি। বছর খানেক ধরে ইনসমনিয়ায় ভুগছি। রাতে ভালো ঘুমও হয় না। বই পড়ে,মুভি দেখে,ঘরে পায়চারী করে কিংবা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে, সিগারেট টেনে রাত কাটে। আবছা অন্ধকারে টেবিলের কাছে এলাম। এলজিটা তুলে দেখলাম: দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। ইশতিয়াক বিছানার ওপর হাত পা ছড়িয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমাচ্ছে। ঘরে বেনসনের গন্ধ ভাসছিল। শালা চেইন স্মোকার। আজই ঢাকা থেকে এসেছে। কালই চলে যাবে। ইশতিয়াক আমার ছেলেবেলার বন্ধু। চারুকলা থেকে পাস করেছে। খুবই আমুদে আর অস্থির। চাকরি- বাকরিতে মন বসে না। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়। মুভি পাগল। আমার জন্য ৬/৭টা ডিভিডি এনেছে। আজ রাত জেগে ল্যাপটপে একটা মুভি দেখছিলাম। নেকক্রোমানটি। পুরনো দিনের জার্মান হরর ছবি। শসম্ভোগ বা নেক্রোফিলিয়ার ব্যাপারটার জন্য ছবিটা বিতর্কিত। যদিওকাল্ট ফিলিম- এর মর্যাদা পেয়েছে নেকক্রোমানটি। আমি নির্জনতাপ্রিয় মুখচোরা মানুষ। ডাক্তারি করি জেলা সদরে সরকারি হাসপাতালে। নির্জন এই শহরটাও আমার বেশ ভালো লেগে। বড়োখেবড়ো হলেও ছিমছাম নির্জন পথঘাট। ঘুমন্ত দোকানপাট, ঘরবাড়ি। লাল রঙের নিঝঝুম রেলস্টেশন। শীতল সর্পিল রেললাইন। হলুদ-হলুদ সরকারি কোয়ার্টারস। প্রাচীন মন্দির। অ-দূষিত বাতাস।

মর্গটা আমার কোয়ার্টারের পিছনেই। হাসপাতালে আসতে যেতে চোখে পড়ে। একতলা হলুদ দালান। সামনে বড় সিমেন্ট বাঁধানো একটি চাতাল। চারপাশে ঘন গাছপালা। পচা পাতাভরা পুকুর। শ্যাওলাধরা দেয়াল। নাড়িকেল গাছ। তারপর রেললাইন। নিরিবিলি এই মফস্বল শহরে দিনগুলি বেশ কেটে যাচ্ছে। রোজ দুবেলা হাসপাতালে যাই, রোগী দেখি। ধৈর্যশীল চিকিৎসক হিসেবে সামান্য নামও ছড়িয়েছে। স্থানীয় লোকজন শ্রদ্ধভক্তি করে। মাঝেমধ্যে ইশতিয়াক-এর মতন দু-একজন বন্ধুও আসে বেড়াতে। দু-একদিন থেকে চলে যায়।

আমার একজন পিয়ন আছে। নাম মুখতার। মধ্যবয়েসি লোক। মিশমিশে কালো থলথলে শরীর। মুখতারকে শার্ট-প্যান্টে একেবারেই মানায় না। মাথাটা মুড়িয়ে রাখে। মাথার তালুও কালো। সেই কালো তালুর মাথায় খোঁচা খোঁচা চুল। কানে ছোট্ট একটা পিতলের রিং। মুখতার সন্ন্যাস নিয়েছে কিনা বোঝা গেল না। কথা কম বলে। তবে কথাবার্তায় অনেকবারই অসংলগ্নতা টের পেয়েছি। তবে মুখতার-এর রান্নার হাত ভালো। আর বেশ বিশ্বস্ত। রাতে অবশ্য চোখ লাল থাকে তার। নেশাটেশা করে মনে হল। বাজার সদাই মুখতারই করে। মাছমাংস খায় না দেখি। মুখতার মনে হয় গৃহীসন্ন্যাসী। সকালবেলা ইশতিয়াক কে বিদায় দিতে রেলস্টেশনে এসেছি।

ইশতিয়াক বেশ রোম্যান্টিক জীবন কাটাচ্ছে। ট্রেন পেলে বাসে চড়বে না। ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে রেলস্টেশন বাইরে চলে এসেছি। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। দেখলাম একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে জিন্নাত আলী দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখেই সালাম দিল। লোকটার বয়স ষাটের কাছাকাছি। রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সে। থাকে পিছনের রেলওয়ে কলোনিতে । জিন্নাত আলী বিপত্নীক। একটি মেয়ে বাবার সংসারে থাকে । মধ্যবয়েসি মেয়ের নাম মুমতাজ। মুমতাজ রক্তশূন্যতায় ভুগছিল। মাস কয়েক আগে অবস্থা কাহিল হলে ওরই ট্রিটমেন্ট করতে গিয়েছিলাম। আমি সাধারণত স্থানীয় গরিব লোকদের কাছ থেকে ফি-টি নিইনা। জিন্নাত আলী সেটা মনে রেখেছে। মাঝেমধ্যে দেখা হলে সালাম দেয়।

জিন্নাত আলী বলল,রিকশা নিবেন স্যার? ডাইকা দিমু? না,না। আমি হেঁটেই যাব। বিসটি ছার। অসুবিধে নেই। বলে হাঁটতে থাকি। স্টেশন থেকে আমার কোয়ার্টারটা কাছেই। বড় রাস্তায় খানিক হেঁটে বাঁয়ে মোড় নিলে কালিবাড়ির গলি। সে গলি পেরিয়ে মর্গের পিছন দিয়ে মিনিট দশকের পথ । কালিবাড়ির গলিটা বেশ সরু। গলিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঝিরঝির বৃষ্টিটা থেমে রোদ উঠল। গলির বাঁ পাশে একটা কালো রঙের লোহার গেইটের সামনে দেখলাম গফুর আসকারী সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। ভদ্রলোক আমার মোটামুটি পরিচিত। ধ্যাপক। এখন অবশ্য রিটায়ার করেছেন। লোকটা বেশ অদ্ভূত। বয়স ষাটের কাছাকাছি। মাথায় টাক-টাক নেই;একমাথা ধবধবে চুল। চোখে পুরু লেন্সের কালো ফ্রেমের চশমা। চশমার কাঁচ বেশ ধূসর। বৃদ্ধ বেশ লম্বা আর ফরসা। স্বাস্থও ভালো। তবে মুখ কেমন ফ্যাকাশে।

অ্যানিমিক মনে হয়। ভদ্রলোক আমাকে দেখে কেন যেন গেইটের ভিতরে ঢুকে যেতে চাইলেন। তার আগেই আমি সালাম দিয়ে বললাম,কেমন আছেন? গফুর আসকারী মুহূর্তেই ভোল পালটে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন,আরে ইয়াংম্যান যে। খবর কী? ভালো । বললাম। বলে হাসলাম। গফুর আসকারী গেইটটা খুলে বললেন,এসো এসো। বাসায় এসো। এক কাপ চা খেয়ে যাও।

গেইটের ওধারে ছোট্ট শ্রীহীন বাগান। বাগান মানে পেঁপে, শুপারি আর এঁটে কলার অযত্ন লালিত ঝোপ। গফুর আসকারী বিপত্নীক এবং নিঃসন্তান। দেখাশোনার জন্য আবদুর রহমান নামে একটা লোক আছে। মাস ঝয়েক আগে তারই অসুখ হয়েছিল। আমিই তখন টিট্রমেন্ট করেছিলাম। তখনই গফুর আসকারীর সঙ্গে পরিচয়। কলাঝোপের মাঝখান দিয়ে সরু পথ। তারপর একতলা লালটালির ছাদের বাংলোবাড়ি। ছোট্ট লাল মেঝের বারান্দা। বসার ঘরে সোফা কিংবা আসবাবপত্রের বদলে শ্রীহীন কাঠের তিনটে চেয়ার আর চার-পাঁচটা আলমারী।

আলমারী ভর্তি বাংলা- ইংরেজি বই। গফুর আসকারী অধ্যাপনা করেছেন দর্শনশাস্ত্রে । বইয়ের এরকম কালেকশন থাকাই স্বাভাবিক। গফুর আসকারী বললেন,তুমি ঐ চেয়ারে বস। আমি একটা চেয়ারে বসতে যাব গফুর আসকারী বললেন,না,না। ডানপাশেরটায় বস । হ্যাঁ। ঠিক আছে। বস। আমি চা করে আনি। হাসি চেপে বৃদ্ধের দেখিয়ে দেওয়া চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম, চা আপনি বানাবেন? কেন?আবদুর রহমান কি বাসায় নাই? বৃদ্ধ বললেন,আর বলো না ডাক্তার। দেশে যাব বলে দুদিনের ছুটি নিয়ে ছেলেটা সেই যে গেল। প্রায় দু সপ্তাহ হল-এখনও ফিরে এল না। দেখ দেকি কী কান্ড। বৃদ্ধের ফরসা মুখে অবশ্য বিরক্তির কোনও চিহ্ন দেখতে পেলাম না। ফিরে এল না? আশ্চর্য! কেন? কি ভাবে বলি বল? যাক,সে ছেলে চুলায় যাক। তুমি বস। চলে যেও না। আমি এখুনি চা তৈরি করে নিয়ে আসি। বৃদ্ধ ভিতরে চলে গেলেন। বসার ঘরে ঢুকেই কেমন পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। ইঁদুর বিড়াল মরে পচে গেলে যে রকম গন্ধ ছড়ায়। ঠিক সেই রকম। গন্ধের উৎস বোঝা গেল না। বাগানে কিছু মরে পড়ে থাকতে পারে। বুড়োর খেয়াল নেই। ছন্নছাড়া লোকের ছন্নছাড়া সংসার। বইয়ের আলমারীতে একটা বইয়ের ওপর চোখ আটকে গেল।

গ্যাবরিয়েলি উইটকপ-এর দি নেকক্রোফিলিয়াক ;একেই বলে কোইন্সিডেন্স। গতরাত্রেই নেকক্রোমানটি ছবিটা দেখছিলাম। শবদেহের প্রতি এক ধরনের যৌন আকর্ষনকে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয়নেকক্রোফিলিয়া । এই যৌন আকর্ষনকে আমেরিকান সাইক্রিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন- এর ডাগায়নোস্টিক অ্যান্ড স্ট্রাটেস্টিটিকাল ম্যানুয়ালপ্যারাফিলিয়া বর্গের অন্তর্ভূক্ত করেছে। প্যারাফিলিয়া শব্দটি গ্রিক । এর অর্থ প্রেম। তবে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় শব্দটির মানে স্বাভাবিক উপায়ের বদলে অস্বাভাবিক বিষয়ে বা পরিস্থিতিতে যৌনবোধ জাগ্রত হওয়া। এতে ব্যক্তির আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে । মনে পড়ল কাল অনেক রাতে দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল।শবদেহের প্রতি এক ধরনের যৌন আকর্ষনকে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয় নেকক্রোফিলিয়া । কেউ লাশকাটা ঘরে ওই কাজটা করে না তো? অবশ্য এমনটা ভাবার কোনওই কারণ নেই। গফুর আসকারী এক কাপ চা নিয়ে ফিরলেন। কাপ নিতে বললাম,আপনার চা কই? লাজুককন্ঠে বৃদ্ধ বললেন,চা আমি রান্নাঘরে বসেই খেয়ে এসেছি। বলেই ধপ করে কাঠের চেয়ারের ওপর বসলেন। অরেকটু হলেই উলটে পড়তেন। আগেই লক্ষ্য করেছি গফুর আসকারী বেশ মজার মানুষ । লেবু চা । চুমুক দিয়ে বোঝা গেল চিনির বদলে গুড় দিয়েছেন। আরও বোঝা গেল দর্শনের এই অধ্যাপকটি বেশ উদ্ভট আর উৎকেন্দ্রীক মানুষ। বৃদ্ধকে দেখে বরাবারই আমার বেশ খানিকটা খাপছাড়া আর উদভ্রান্ত মনে হয়েছে। চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম,কাল রাত্রে অদ্ভূত এক দৃশ্য দেখলাম। কি বল তো শুনি? বৃদ্ধ ঝুঁকে পড়লেন। দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল।তখন অনেক রাত। এই ধরুন শেষ রাত। হুমম। তো? গফুর আসকারী সাহেব স্থির চোখে আমার দিকে চেয়ে আছেন। চশমার কাঁচে কুয়াশা জমে আছে। বড় বড় দুটি কর্নিয়া দেখা যায়। তবে কাঁচ এত ঘোলা হওয়ায় তিনি দেখছেন কীভাবে তা ঠিক ভেবে পেলাম না। বললাম, না,মানে নেক্রোফিলিয়াক কেউ হতে পারে কি? এই নিয়ে তো আপনি বেশ পড়াশোনা করেছেন দেখলাম।

বলে চায়ে চুমুক দিলাম। গফুর আসকারী যতই পাগলাটে লোক হোক, চায়ের স্বাদ দারুন হয়েছে। যাওয়ার সময় রেসিপিটা জেনে নিতে হবে। বৃদ্ধ বললেন,হুমম হতে পারে। তেমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন প্রবণতা অতি সাধারণ মানুষের ভিতরেও সুপ্ত থাকতে পারে। শোন একটা ঘটনা বলি। তখন আমি সোহাগপুর কলেজে পড়াই। সেই সময়টায় আমি তন্ত্র,শবসাধনা এসব নিয়ে খুব পড়াশোনা করছিলাম। বয়স কম । জানে সাহস ছিল। রাতবিরেতে শ্মশানে-গোরস্থা নে ঘুরে বেড়াতাম। ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম। আমি আতকে উঠে বললাম, বলেন কী! হ্যাঁ। আমি একটা বিষয়ে আগ্রহ বোধ করলে তার শেষ দেখেই তবে ছাড়ি,বুঝলে। বুঝলাম। তা আপনি শ্মশানে- কবরস্থানে মাঝরাতে ঘাপটি মেরে বসে থাকতেন কেন? বলে ছোট্ট চুমুকে চাটুকু শেষ করে কাপটা সামনের বেতের টেবিলের ওপর রেখে দিলাম। বৃদ্ধ বললেন,হাতেনাতে শবসাধকদের ধরব বলে। ধরতে পেরেছেন কখনও?

আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগার। হুমম। একবার ধরেছি। তখন আমি সৈয়দনগর মহিলা কলেজে বদলি হয়েছি। শহরের উপকন্ঠে নদীর ধারে কবরখানা। এক মধ্যরাত্রে একটা বহেড়া গাছের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে আছি। দেখি গুটিশুটি পায়ে কে যেন এসে কবরের মাটি খুঁড়তে লাগল। গিয়ে জাপটে ধরলাম। কে সে?আবদুর রহমান। আবদুর রহমান! ঠিক আছে,ধরলেন। তারপর? আমার কৌতূহল চরমে উঠেছে। ধরার পর কতক্ষণ চলল ধস্তাধস্তি। আবদুর রহমান-এর বয়স তখন এই আঠারো কি উনিশ। টেনে- হিচঁড়ে ঘরে নিয়ে এলাম। কিছুতেই বলবে না কবরখানায় কেন গিয়েছিল। সে যা হোক। ওকে ধীরে ধীরে থেরাপি দিয়ে সুস্থ করে তুললাম। এখন ও সুস্থ। তবে আবার কেন পালাল ঠিক বুঝতে পারছি না। পালিয়েছে মানে? প্রায়ই তো পালায়। পাজী,নচ্ছাড় ছেলে একটা। বলতে বলতে গফুর আসকারী হাই তুললেন । বললেন,আমার এখন ঘুম পাচ্ছে ডাক্তার। তুমি না হয় চুপটি করে বস। আমি ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নিই। না। না। আমি ঘুমান। আমি এখন যাই। পরে সময় করে একদিন আসব। আর একটা কথা। ইয়ে মানে আপনি কি বইটই ধার দেন?

বই? না,না। আমি ওই কাজটি কক্ষনো করি না। তুমি বরং অন্যকিছু ধার নাও। এই ফুলদানীটা ধার নেবে? ফুলদানী? না থাক। আমি বরং এখন যাই। বই যখন ধার দেন না। তখন গুড় দেওয়া লেবু চায়ের রেসিপিও বলবেন না। বাগান পেরিয়ে গলিতে বেরিয়ে মনে মনে হাসলাম। কিন্তু আমার হাসা উচিত নয়। আমি ডাক্তার। গফুর আসকারী এমনিতে ভালো মানুষ তবে ঐ একটু

মর্গের পিছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি। আবদুর রহমান পালিয়ে গেল কেন? সে গোরস্থানে কবর খুঁড়ত? কেন? কথাটা বৃদ্ধ এড়িয়ে গেলেন। কেন? বসার ঘরে পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। কেন? গফুর আসকারীর পাগলামী কোনও কারণে চরমে পৌঁছে যায়নি তো?  রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠল।রহস্য যখন ঘনীভূত হয়ে উঠলই তখন কাউকে না কাউকে তো সন্দেহ করতেই হয়।


১ম পর্ব সমাপ্ত
গল্প: ইমন জুবায়ের