Showing posts with label Horror Stories. Show all posts
Showing posts with label Horror Stories. Show all posts

Saturday, May 15, 2021

কিছু কমন প্রশ্নোত্তর। প্রসঙ্গ - বিয়ে

 

কিছু কমন প্রশ্নোত্তর। প্রসঙ্গ - বিয়ে

 

 

১। প্রশ্নঃ

ওয়ালী বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কি বিয়ে হবে?

উত্তরঃ

বিয়ের শুদ্ধতার জন্যে ওয়ালীর অনুমতি থাকা কী শর্ত? নাকি ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলেও বিয়ে হয়ে যাবে? এর উত্তর জানার আগে, আমরা আগে ওয়ালীর পরিচয় জেনে নেই। ** ওয়ালী বলতে কাদের বোঝানো হয়? ওয়ালী বলতে বোঝানো হয় পিতা, দাদা, প্রাপ্তবয়স্ক ভাই (ছোট হোক বা বড়), চাচা, প্রশাসক বা গভর্নর (অথবা তার নিযুক্ত প্রতিনিধি)। ক্রমানুসারে ওয়ালীর দায়িত্বের ভার তাদের উপর বর্তাবে। সর্বপ্রথম পিতা হবেন ওয়ালী। তিনি জীবিত না থাকলে, অথবা পাগল/হারিয়ে গেলে/কাফের হয়ে গেলে তখন ওয়ালীর দায়িত্ব আসবে দাদার উপর। এভাবে ক্রমান্বয়ে ভাই, চাচা ও অন্যদের উপর জিম্মাদারি আসবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলা ওয়ালী নয়। তিনি মা হন বা দাদী। আর প্রথম স্তরের ওয়ালী বিদ্যমান থাকাকালে দ্বিতীয় স্তরের আত্মীয় ওয়ালী হবে না। অর্থাৎ বাবা থাকাকালে দাদা, ভাই ইত্যাদি ওয়ালী হবে না। দাদা থাকলে অন্যরা হবে না। এভাবে ক্রমানুসারে... ** ওয়ালী ছাড়া কি বিয়ে বৈধ? ছেলেদের জন্যে ইসলাম ওয়ালীর অনুমতিকে শর্ত করে নি। এ ব্যাপারে প্রায় সব ইমাম ও আলেমগণ একমত। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে? "উলামায়ে কেরামের মধ্যে এই ব্যাপারটা বিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। ইমাম ও গবেষকদের একাংশের মতে, ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া যদি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বিয়ে করে, তাহলে তার বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো উক্ত মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং কুফু রক্ষা করে বিয়ে করতে হবে। যদি কুফু না মিলে, তাহলে বিয়ে হবে বটে। কিন্তু মেয়ের পিতা চাইলে উক্ত বিয়ে ভেংগে দিতে পারবেন। তবে পিতা যদি বিয়ে না ভেংগে বলবত রাখেন তাহলে বিয়ে ঠিক থাকবে। এ মতটি দিয়েছেন বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম জুহরী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাবী। ইমামদের অন্য অংশের মতে, বিয়েতে মেয়েদের জন্যে ওয়ালীর অনুমতি অত্যাবশ্যক। ওয়ালী অনুমতি না দিলে বা ওয়ালীর অজ্ঞাতসারে বিয়ে করলে মেয়ের বিয়ে সহীহ হবে না। এ মতের পক্ষে রয়েছেন, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ রহ. প্রমুখ। উভয়ের মতের সপক্ষে বিস্তর দলীলও রয়েছে। (দলীল উল্লেখ করলে লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায়, এখানে উল্লেখ করা হয় নি। যারা দলীল জানতে আগ্রহী, তারা আমার ওয়াল থেকে এই বিষয়ক লেখাটা প্রস্তুত হওয়ার পর পড়তে পারবেন ইনশাআল্লাহ) বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত ও যেসব অঞ্চলে হানাফী মাসলাক এর প্রচলন বেশি, সেসব জায়গায় প্রথম মত অনুযায়ী ফয়সালা দেয়া হয়। শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনাজ্জিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন, المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে , ওলী ছাড়া বিবাহকে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হবে । তারা এই বিয়ের উপর স্থির থাকবে। তাদেরকে ভেংগে ফেলতে বলা হবে না। উল্লেখ্য, শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ওয়ালী ছাড়া বিয়ের পক্ষে নন, তবুও তিনি এ অঞ্চলের হানাফী মাসলাকের মত অনুযায়ী বিয়েকে শুদ্ধ বললেন। এছাড়া, মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া লিবিন বাজ এর ২০ খন্ড, ৪১১ পৃষ্ঠায় বিয়ে অধ্যায়ে এক প্রশ্নের জবাব শায়েখ বিন বাজ রহ. বলেন, "ওয়ালী ছাড়া কেও যদি কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়। তাহলে উলামাদের দুই মতের প্রণিধানযোগ্য মত অনুযায়ী এই বিয়ে শুদ্ধ হবে না। ফাসেদ হয়ে যাবে। আর উলামাদের অন্য অংশের মতে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে।" সৌদি আরবের এই বিখ্যাত শায়েখদের ফতওয়া অনুযায়ী, দুটি মতই শুদ্ধ। সুতরাং যে অঞ্চলে যে মতের প্রচলন, সেখানে সে মোতাবেক আমল করাই বাঞ্ছনীয়। ** ওয়ালী যদি ধার্মিক না হন! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পিতা যদি দ্বীনদার না হন? তিনি যদি দ্বীনদার পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে রাজী না হন? প্রথম মত অনুযায়ী বাবার অনুমতি ছাড়া মেয়ে বিয়ে করলে বিয়ে সংগঠিত হয়ে যাবে। সে হিসেবে বাবার ধার্মিক হওয়া না হওয়া কোন বিষয় নয়। কিন্তু দ্বিতীয় মত অনুযায়ী ওয়ালীর অনুমতি শর্ত। ফিকহের পরিভাষায় প্রশ্নটা হবে "ওয়ালীর ক্ষেত্রে কি আ'দালাত শর্ত?" অর্থাৎ ওয়ালীর জন্যে কি দ্বীনদার হওয়া শর্ত? যদি ওয়ালী দ্বীনদার না হন, ফাসেক হন তাহলে কি তিনি ওয়ালী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন? উল্লেখ্য, যারা ওয়ালীর অনুমতিকে শর্ত বলেন তাদের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়েও দুটি মত রয়েছে। ১- ওয়ালী যদি নামাজ পরিপূর্ণভাবে ত্যাগকারী হন, তাহলে তিনি ওয়ালী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। (প্রায় সবাই একমত) ২- ওয়ালী ফাসেক। মাঝেমাঝে নামাজ ছেড়ে দেয়। অন্যান্য ফরজ বিধানেও শিথিল। প্রকাশ্য না জায়েজ ও হারাম কাজে লিপ্ত। তাহলে কি তিনি ওয়ালী হতে পারবেন? একদল ফকীহ ও বিশ্লেষক বলেন, তিনি ওয়ালী হতে পারবেন না। আরেকদল বলেন, এমন ব্যক্তিও ওয়ালী হতে পারবে। বর্তমান যুগের আলেমগণ দ্বিতীয় মতটাকেই প্রাধান্য দেন। উল্লেখ্য, পূর্বে আলোচনা গিয়েছে যে, প্রথমজন ওয়ালী না হতে পারলে দ্বিতীয় জন ওয়ালী হবেন। এভাবে ক্রমানুসারে.. কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে 'হাকেম' বা প্রশাসক মেয়ের ওয়ালী হবে না। সুতরাং বলা যায়, কোন মেয়ের পিতা যদি এমন হন, মোটেই নামাজই পড়েন না। তাহলে তার ওয়ালী হবেন তার দাদা। দাদাও যদি একইরকমের হন, তখন ভাই। এরপর চাচা মেয়ের ওয়ালী হবে। যদি এদের সবাই এমন হয় যে তারা কেউই একদমই নামাজ পড়ে না। তাহলে হানবলী/সালাফি মাসলাক অনুযায়ী এক্ষেত্রে ওয়ালীর পারমিশন জরুরী না। ফিকহী আলোচনা এখানেই শেষ হলো। এবার,  দেখুন! ইসলামে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং ছেলেমেয়েদের জন্য উচিত হলো ওলীর অনুমতি ও দুয়া নিয়ে বিবাহ করা। এতে আল্লাহ চাহেন তো সংসারও সুখী হবে। পারিবারিক অশান্তি ও ফেতনার পথও বন্ধ হবে। ওয়ালীর মতামত এর তোয়াক্কা না করা হলে সমাজে বিচ্ছৃংখলা দেখা দিবে। ছেলে মেয়েরা বিয়ের নিয়তে প্রেম শুরু করবে। শুরুটা হবে নেক সুরতে শয়তানের ধোকার মাধ্যমে। তাছাড়া বাবা মা যখন দেখবে, মেয়ে ইসলামিক হওয়ার প্রধান সমস্যা হচ্ছে, মেয়ে বাবা মায়ের আবেগের মূল্য দিচ্ছে না। ফতোয়াকে ব্যবহার করে নিজে নিজে পছন্দসই পাত্র খুঁজে বিয়ে করে ফেলছে। তখন অন্যান্য অভিভাবক চাইবে না যে তার সন্তান ইসলামিক হয়ে যাক। এই নানাবিধ বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং, যাদের পিতামাতা দ্বীনদার নয়, তাদের প্রধান কর্তব্য বাবামার দ্বীনের পথে নিয়ে আসার ফিকর ও চেষ্টা করা। তাদের জন্যে দুয়া করা। সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও যদি সম্ভব না হয়, তখন নিজের পছন্দ জানানো। "ধার্মিক ছাড়া যেন বিয়ের কথা না ভাবে।" আশা করি, বাবা মা তাদের পছন্দ রক্ষা করেই মেয়ের জন্যে দ্বীনদার পাত্র খুঁজবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এসবকে পাশ কাটিয়ে, শুরুতেই নিজে নিজে পাত্রের সন্ধানে ব্যস্ত হওয়া অথবা গায়রে মাহরামের সাথে বিয়ের নিয়তে ইনবক্সে আলাপচারিতাকে বৈধ বলার অবকাশ নেই। والله اعلم বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮ আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ ‘আলা মাজাহিবিল আরবা’ ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

২। প্রশ্নঃ

বিয়ের সুন্নত তরিকা একটু ডিটেলস জানতে চাই…

উত্তরঃ

বিবাহের কতিপয় সুন্নত সমূহঃ .(১) মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। (তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২) . (২) সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পূর্বে পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারী হাদিস নং-৫০৯০, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪: ২০০) . (৩) শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে। (মুসলিম ১৪২৩/ বায়হাকী ১৪৬৯৯) . (৪) বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (বুখারী/৫১৪৭) . (৫) সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা। (আবু দাউদ/২১০৬) . (৬) বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়াঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি” (আবু দাউদ/২১৬০) . (৭) স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তার পর যখনই সহবাস এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে নিবেঃ “বিসমিল্লাহ্‌। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪) . (উপরোক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা মাতাকে খুবই শতর্ক থাকা জরুরী) . (৮) বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা (মুসলিম/১৪২৭) . (৯) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম (আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩) . (১০) কনের ইযন এর জন্য স্বাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরুম বিবাহের এবং উকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম/১৪২১) . (১১) শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ/২০৭২২, বুখারী/২৬৯৭) . (১২) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত (আবু দাউদ /৩৭৫৪) . আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নত মোতাবেক বিবাহ করার তৌফিক দান করুন। আমীনউত্তর দিয়েছেন - মুহতারাম মুহাম্মদ তাফাজ্জল

৩) প্রশ্নঃ

কোনো মুসলমান মেয়ে হিন্দু ছেলেকে কি বিবাহ করতে পারবে?? কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চাইছি।

উত্তরঃ

না পারবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন। কোন কাফেরের সাথে মুসলিম নারীর বিয়ে হতে পারে না। আর এতে ইজমাও রয়েছে। যেমনটা ইমাম ইবনে আব্দুল বার উল্লেখ করেছেন। হিন্দু মুসলিম ছেলে হোক বা মেয়ে, বিয়ে করলেও বিয়ে হবে না। শরীয়তে এই বিয়ের বৈধতা নেই। এটা ব্যভিচার, জেনার অন্তর্ভুক্ত হবে। সুরা বাকারা ২২১ ও সুরা মুমতাহানাহ- ১১ উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

৪। প্রশ্নঃ

আচ্চা মোবাইলে কি বিয়ে করা জায়েজ আছে?

উত্তরঃ

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান মুসলিম সাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষে পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। আর শরয়ী এ শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে টেলিফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করা জায়েজ নয়। টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করার পদ্ধতি হল-উভয় পক্ষ থেকে এক পক্ষ অপরপক্ষ যেখানে থাকে সেখানের কোন ব্যক্তিকে ওকীল বানাবে। তারপর সে ওকীল দু’জন সাক্ষীর সামনে বিবাহ করিয়ে দিবে। তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া সরাসরি মোবাইলে বা টেলিফোনে প্রস্তাব ও কবুল করার দ্বারা বিবাহ সহীহ হবে না। {ফাতওয়ায় উসমানী-২/৩০৪,৩০৫, আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

৫। প্রশ্নঃ

মহিলা গর্ভবতী থাকা অবস্থায় বিয়ে করলে তা শুদ্ধ হবে কি?

উত্তরঃ

গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়।صح نكاح حبلى من زنا عند الطرفين وعليه الفتوى لدخوليها تحت النص, وفيه أشعار بانه لو نكح الزانى فانه جائز بالاجماع (مجمع الانهر، كت النكاح، باب المحرمات-1/485، فتح القدير، فصل فى المحرمات-3/241، الفتاوى الهندية، كتاب النكاح، القسم السادس المحرمات التى يتعلق بها حق الغير-1/280)

৬। প্রশ্নঃ

প্রথমে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করার পর, দ্বিতীয়বার পরিবারের সম্মতিতে আবার বিবাহ করা যাবে কি?

উত্তরঃ

যদি প্রথমবার বিয়ে শরয়ী মূলনীতি হিসেবে হয়ে থাকে, তাহলে আপনার জন্য পরিবারের সন্তুষ্ট করতে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রে মোহর নির্ধারণ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-১প্রথম বিয়ের সময় নির্ধারিত মোহরের সমপরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা এবং স্বামী প্রথম মোহরই মূল মনে করে দ্বিতীয়বারেরটি শুধুই প্রথমবারের স্বীকারোক্তি হিসেবে মনে করা।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা, আর দ্বিতীয়বারের মোহরও এক লাখ টাকা ধরা। আর দ্বিতীয়বার এক লাখ টাকা মোহর বলার সময় প্রথম মোহরের স্বীকারোক্তি হিসেবে ধরে নেয়া। অর্থাৎ শুধুই এক লাখ টাকা মোহর আদায়ের নিয়ত করে নিল।এ পদ্ধতি জায়েজ।২প্রথম মোহরের তুলনায় বেশি মোহর নির্ধারণ করা। সেই সাথে অতিরিক্ত নির্ধারিত মোহরকে প্রথম মোহরের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ধরার নিয়ত করা।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয়বার মোহর নির্ধারণ করা হয় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। স্বামী দ্বিতীয়বারের অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজারকে প্রথম মোহরের সাথে বাড়িয়ে মোহর দেয়ার নিয়ত করে নিল। অর্থাৎ একলাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা মোহর দেবার নিয়ত করে নিল।এটিও জায়েজ পদ্ধতি।৩প্রথম মোহরের মত বা কমবেশি মোহর নির্ধারন করা, সেই সাথে দ্বিতীয়বারের পূর্ণ মোহরকে প্রথমবারের মোহরের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ধরে নেয়া তথা মোহর বাড়িয়ে দেয়ার নিয়তে দ্বিতীয় মোহরকে শামিল করে নেয়া।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয়বারের মোহরও এক লাখ টাকা। স্বামী দ্বিতীয়বারের মোহর নির্ধারণের সময় প্রথম মোহরের সাথে দ্বিতীয়বারের মোহরকে বাড়িয়ে দেয়ার নিয়ত করে নিল। অথাৎ মোট দুই লাখ টাকা মোহর আদায়ের নিয়ত করে নিল।এটিও জায়েজ আছে।৪দ্বিতীয় মোহর প্রথম মোহরের চেয়ে কম নির্ধারণ করা। আর স্বামী দ্বিতীয় মোহর দেবার নিয়ত করে নিল।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় বার মোহর নির্ধারণ করা হল আশি হাজার টাকা। আর স্বামী আশি হাজার টাকা দেবার নিয়ত করে নিল।এ পদ্ধতিতে স্বামীর জন্য মোহর কমিয়ে দেয়া জায়েজ হবে না। বরং প্রথম মোহর আদায় করা আবশ্যক। হ্যাঁ, স্ত্রী যদি কম নিতে রাজি হয়, তাহলে কম করে দেয়া জায়েজ আছে।فى الدر المختار-وَفِي الْكَافِي: جُدِّدَ النِّكَاحُ بِزِيَادَةِ أَلْفٍ لَزِمَهُ أَلْفَانِ عَلَى الظَّاهِرِوَفِي الْخَانِيَّةِ: وَلَوْ وَهَبَتْهُ مَهْرَهَا ثُمَّ أَقَرَّ بِكَذَا مِنْ الْمَهْرِ وَقَبِلَتْ صَحَّ، وَيُحْمَلُ عَلَى الزِّيَادَةِوَفِي الْبَزَّازِيَّةِ: الْأَشْبَهُ أَنَّهُ لَا يَصِحُّ بِلَا قَصْدِ الزِّيَادَةِ (لَا يُنَصَّفُ) لِاخْتِصَاصِ التَّنْصِيفِ بِالْمَفْرُوضِ فِي الْعَقْدِ بِالنَّصِّ، بَلْ تَجِبُ الْمُتْعَةُ فِي الْأَوَّلِ وَنِصْفُ الْأَصْلِ فِي الثَّانِي.(وَصَحَّ حَطُّهَا) لِكُلِّهِ أَوْ بَعْضِهِ (عَنْهُ) قَبْلَ أَوْ لَا، وَيَرْتَدُّ بِالرَّدِّ كَمَا فِي الْبَحْرِوقال ابن عابدين الشامى- حَاصِلُ عِبَارَةِ الْكَافِي: تَزَوَّجَهَا فِي السِّرِّ بِأَلْفٍ ثُمَّ فِي الْعَلَانِيَةِ بِأَلْفَيْنِ ظَاهِرُ الْمَنْصُوصِ فِي الْأَصْلِ أَنَّهُ يَلْزَمُ الْأَلْفَانِ وَيَكُونُ زِيَادَةً فِي الْمَهْرِ. وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ الْمَهْرُ هُوَ الْأَوَّلُ لِأَنَّ الْعَقْدَ الثَّانِيَ لَغْوٌ. فَيَلْغُو مَا فِيهِ. وَعِنْدَ الْإِمَامِ أَنَّ الثَّانِيَ وَإِنْ لَغَا لَا يَلْغُو مَا فِيهِ مِنْ الزِّيَادَةِ، كَمَنْ قَالَ لِعَبْدِهِ الْأَكْبَرِ سِنًّا مِنْهُ هَذَا ابْنِي لَمَّا لَغَا عِنْدَهُمَا لَمْ يَعْتِقْ الْعَبْدُ. وَعِنْدَهُ إنْ لَغَا فِي حُكْمِ النَّسَبِ يُعْتَبَرُ فِي حَقِّ الْعِتْقِ كَذَا فِي الْمَبْسُوطِ. اهـ. وَذَكَرَ فِي الْفَتْحِ أَنَّ هَذَا إذَا لَمْ يَشْهَدَا عَلَى أَنَّ الثَّانِيَ هَزْلٌ وَإِلَّا فَلَا خِلَافَ فِي اعْتِبَارِ الْأَوَّلِ، فَلَوْ ادَّعَى الْهَزْلَ لَمْ يُقْبَلْ بِلَا بَيِّنَةٍ ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ بَعْضَهُمْ اعْتَبَرَ مَا فِي الْعَقْدِ الثَّانِي فَقَطْ بِنَاءً عَلَى أَنَّ الْمَقْصُودَ تَغْيِيرُ الْأَوَّلِ إلَى الثَّانِي، وَبَعْضُهُمْ أَوْجَبَ كِلَا الْمَهْرَيْنِ لِأَنَّ الْأَوَّلَ ثَبَتَ ثُبُوتًا لَا مَرَدَّ لَهُ وَالثَّانِي زِيَادَةٌ عَلَيْهِ فَيَجِبُ بِكَمَالِهِ. ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ قَاضِي خَانْ أَفْتَى بِأَنَّهُ لَا يَجِبُ بِالْعَقْدِ الثَّانِي شَيْءٌ مَا لَمْ يَقْصِدْ بِهِ الزِّيَادَةَ فِي الْمَهْرِ، ثُمَّ وَفَّقَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ إطْلَاقِ الْجُمْهُورِ اللُّزُومَ بِحَمْلِ كَلَامِهِ عَلَى أَنَّهُ لَا يَلْزَمُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى فِي نَفْسِ الْأَمْرِ إلَّا بِقَصْدِ الزِّيَادَةِ وَإِنْ لَزِمَ فِي حُكْمِ الْحَاكِمِ لِأَنَّهُ يُؤَاخِذُهُ بِظَاهِرِ لَفْظِهِ إلَّا أَنْ يَشْهَدَ عَلَى الْهَزْلِ، وَأَطَالَ الْكَلَامَ فَرَاجِعْهُ: (رد المحتار، كتاب النكاح، باب المهر، مطلب فى احكام المتعة-3/112-113

৭। প্রশ্নঃ

বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে সর্বনিম্ন মোহরের পরিমাণ কত?

উত্তরঃ

সর্বনিম্ন মোহর হচ্ছে বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে ৩০ গ্রাম ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা।আর তোলা হিসেবে ৩ তোলা, ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৩/৬৫১] আর মোহরে ফাতেমী ১৩১তোলা ৩মাশা রূপা বা তার সমমূল্য।গ্রাম হিসেবে দেড় কিলো, ৩০গ্রাম, ৯৯০মিলিগ্রাম রূপা। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৩/৬৫৩]

৮। প্রশ্নঃ

মোহরানা পরিশোধ ছাড়া স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপনের হুকুম কী?

উত্তরঃ

দেনমোহর বিয়ের আকদের পর প্রদান করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বাকি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪]فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪]وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥]তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫]وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٦٠:١٠]তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]

৯। প্রশ্ন:

আমাদের এলাকার শরীফ সাহেব তার বন্ধুকে কথা দিয়েছিলেন যে নিজের বড় মেয়েকে বন্ধুর ভাতিজার সাথে বিয়ে দিবেন। দুই পরিবার মিলে যখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার উদ্যোগ নেয় তখন হঠাৎ মেয়ে এ বিয়েতে অসম্মতি জানায়। মেয়ের বয়স ২১ বছর। এখন শরীফ সাহেব চাচ্ছেন, মেয়ের অমতেই বিয়ে পড়িয়ে দিবেন। এভাবে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে কি?

উত্তর:

প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের সম্মতি ব্যতীত তাকে বিয়ে দেওয়া জায়েয নেই। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে সেখানে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে না। অবশ্য পিতা যদি এ অবস্থায় বিয়ে পড়িয়েই দেন তাহলে এ বিয়ে সহীহ হওয়া মেয়ের সম্মতির উপর নির্ভর করবে। সে যদি এ বিয়েকে মেনে নেয় তাহলে তা সহীহ হবে। অন্যথায় তা বাতিল গণ্য হবে।প্রকাশ থাকে যে, পিতামাতার পছন্দের ব্যাপারে মেয়ে বা ছেলের অমত থাকলে তা শুরুতেই বলা উচিত। আলোচনা অগ্রসর হয়ে যাওয়ার পর ছেলে বা মেয়ের অসম্মতি প্রকাশ করা ঠিক নয়। তাই আলোচনা একেবারে অগ্রসর হয়ে গেলে অভিভাবকের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।এছাড়া এমনিতেও মা বাবার সিদ্ধান্ত যেমনিভাবে মমতাপূর্ণ হয় তেমনি তা অভিজ্ঞতার কারণে মূল্যবানও হয়ে থাকে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত ও পছন্দের মূল্যায়ন করা উচিত। অমত করলেও তা ভেবে চিন্তে করা উচিত।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/১১০; ফাতহুল কাদীর ৩/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৮

১০। প্রশ্নঃ

আল্লাহ ও নবীকে সাক্ষ্যি রেখে বিবাহ করলে তা শুদ্ধ হয়ে যায় কি?

উত্তরঃ

ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যথা-১বর ও কনেকে কিংবা তাদের প্রতিনিধিকে ইজাব তথা প্রস্তাবনা ও কবুল বলতে হয়।২উক্ত ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে।৩ইজাব ও কবুলটি উভয় সাক্ষ্যি স্বকর্ণে শুনতে হবে।উক্ত তিনটির কোন একটি শর্ত না পাওয়া গেলে ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হয় না।সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত সূরতে আপনার কাজিন ও হাফেজ ছেলেটির মধ্যকার বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কে সাক্ষ্যি রেখে বিবাহ করার দ্বারা কোন বিবাহ শুদ্ধ হয় না। আর নবীকে সাক্ষ্যি রেখে বিবাহ করা একটি কুফরী কাজ। কারণ তখন নবীকে হাজির নাজির বিশ্বাস করতে হয়। নতুবা কিভাবে নবীকে সাক্ষ্যি রাখবে? কারণ সাক্ষী হবার জন্য উপস্থিত থাকা ও উক্ত কথাটি শুনা জরুরী। আর রাসূল সাঃ সবার কথা যেমন শুনতে পান না, তেমনি সকল স্থানে উপস্থিতও নয়।তাই এ উদ্ভট শব্দে কোন বিবাহতো শুদ্ধই হয় না। বরং এর দ্বারা মারাত্মক ধরণের গোনাহ সংঘটিত হয়। যা থেকে তওবা করা আবশ্যক। فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}
১১। প্রশ্নঃ আমার নাম সাইফুল। গত একবছর পূর্বে আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করে তার পরিবারের কিছু লোকের উপস্থিতিতে বিবাহ করি। কিন্তু আমার পরিবারের কেহ জানতনা। আমরা স্বামী স্ত্রী দেখা করেছি এবং এক সাথে থেকেছি। এখন আমার মা বাবা জানতে পেরেছেন যে, আমি পালিয়ে বা তাদের না জানিয়ে বিবাহ করেছি। তাই তারা এই বিবাহ মেনে নিতে পারছেন না। তারা আমাকে স্রেফ বলে দিয়েছেন যে, আমি আমার স্ত্রী কে রাখতে পারবনা আর রাখলে তাদের কে ছেরে দিতে হবে। এর পিছনে কিছু কারন হচ্ছে, আমার বাবা একজন ইসলামিক মাইন্ডের লোক এবং সমাজে তার ভাল সুনাম রয়েছে। তিনি চাননা তার এই সুনাম নষ্ট হোক। তাই এমনটি করছেন। তাদের মানসিক অবস্থা দেখে আমিও তাদের পক্ষেই চলে গেছি। আমি আমার স্ত্রী র সাথে কথা বলিনা। আমার পরিবার চাচ্ছে আমার স্ত্রী কে অনেকটা চাপ দিয়ে আমাকে ডিভোর্স দিতে । কিন্তু আমার পরিবার মোহরানা টাকা দিতে রাজি নয়। এর পরিবর্তে কিছু খরচ বাবাদ অতি নগণ্য একটি পরিমাণ টাকা দিতে চাচ্ছে। আমি আমার পরিবারের পক্ষে থাকলেও খানিক ভাল আবার খানিক মন্দ থাকি। আমি আসলে বুঝতে পারছি না। আমি কাকে ছেড়ে থাকব? আমার মা বাবাকে নাকি আমার স্ত্রী কে? আমাকে কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা সমাধান দিবেন। আরও কোন কিছু জানার থাকলে আমাকে রিপ্লে করলে আমি জানিয়েদিব।আল্লাহ্ হাফেজ।উত্তরوعليكم السلام ورحمة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحيمবিয়ে শাদী বাচ্চাদের কোন ঘরবাড়ি বানানোর খেলা নয় যে, ইচ্ছে হলেই যতেœর সাথে বানানো হবে, আবার ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে।বিয়ে শুধুই জৈবিক চাহিদা পূরণ নয় এটি একটি ইবাদতও বটে। বিয়ে সম্পর্কে যেমন আল্লাহ তাআলা কর্তৃক রয়েছে নির্দেশনা, তেমনি রাসূল সাঃ থেকে রয়েছে এর কার্যকরী পদ্ধতির বর্ণনা। ইচ্ছেমত যেভাবে ইচ্ছে, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করার মানসিকতা বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কটিকেই কলুষিত করার নামান্তর।শুধু শারিরিক চাহিদা পূরণের হীন লালসায় যারা বিয়ে করে থাকেন, তাদের কাছে বিয়ে একটি আনন্দ উপভোগের বস্তু হলেও ইসলামী শরীয়তে বিয়ের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। এর মাধ্যমে ছেলে ও মেয়ের চরিত্র ও ও সম্মান যেমন নিরাপদ হয়। তেমনি পরিবার পরিবারে সৃষ্টি হয় আত্মীয়তার মধুর সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় একটি অনন্য শালিন ও সুন্দর নজির উপস্থাপিত হয়। মানুষ যে অন্য সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ তাও প্রতিভাত হয়ে উঠে বিয়ের অনুপম বন্ধনের দ্বারা। কারণ মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণীর মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু সবার মাঝেই জৈবিক চাহিদা পূরণের মানসিকতা আছে। বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা আর নোংরামী থেকে মুক্ত থাকতে ইসলামী শরীয়তে জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বিয়েকে করেছে অলঙ্ঘণীয় বিধি। সেই সাথে মোহর, বাসস্থান, খোরপোষ ইত্যাদি আবশ্যক করে দিয়ে বিয়েকে করেছে একটি অর্থবহ সম্পর্কের মাধ্যম।কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, সুন্দর ও শালীন এ মধুর সম্পর্ককে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কতিপয় ভাইয়েরা খেল-তামাশার বস্তু বানিয়ে নিয়েছে। বিয়ে করতে যেমন কোন বাইন্ডিং নেই, তেমনি তালাক দেয়ার জন্যও কোন চিন্তা-ফিকির বা ধর্মীয় বিষয়ের লেহাজ নেই। এ যেন ছেলে খেলা। ইচ্ছে হলেই গড়ে দিল। ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে দিল।এরকম ছেলেমানুষী করা থেকে সকলকেই বেঁচে থাকতে হবে। বিয়ে করার সময় যেমন ইসলামী শরীয়তকে সামনে রেখে চিন্তা ফিকির করে, পরিবারের সাথে আলাপ করে, মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে করা উচিত। তেমনি তালাক দেয়ার ক্ষেত্রেও দ্বীনকে সামনে রেখে চিন্তা ফিকির করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মনে চাইতেই হুট করে বিয়ে করে ফেলা যেমন বোকামী, তেমনি হুট করে তালাক দিয়ে ফেলাটাও আহমকী।পিতা-মাতার রক্ত-ঘামের উপর প্রতিষ্ঠিত আপনার শরীর। তাদের কুরবানীতেই আজ যৌবনদীপ্ত হয়েছে আপনার শরীর। আপনার শরীরের এ শক্তি, যৌবনের এ উন্মাদনা শরীরে সিঞ্চিত করতে আপনার পিতা-মাতাকে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বলাই বাহুল্য। মায়ের অসংখ্য নির্ঘুম রাত, মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও আপনাকে বাঁচানোর আকুতি, পিতার রক্ত পানি করা উপার্জন ধীরে ধীরে আপনাকে যৌবনময় করেছে। আপনাকে দুর্বল থেকে সবলে পরিণত করেছে। কিন্তু বিয়ের মত এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সেই পিতা-মাতার মতামতকে ভুলে গেলেন ? পিতা-মাতার অমতে বিয়ে করাটা যেমন অমানবিক ও দোষণীয় কাজ।তার চেয়েও কম দোষণীয় নয়, যে মেয়ে তার পিতা-মাতা, ঘর-বাড়ি সব কিছু ছেড়ে কেবলি আপনার জন্য আপনার কাছে ছুটে এসেছে তাকে নিষ্ঠুরের মত তাড়িয়ে দেয়া।পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া, তাদের অসন্তুষ্টিতে বিয়ে করাটা যেমন ঠিক হয়নি। আর বর্তমানে বিয়ে করা মেয়েকে তালাক দিয়ে দেয়াও হবে অমানবিক ও জুলুম।তাই আপনি আপনি আপনার পিতা-মাতাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন। “আপনার পিতা মাতা বিয়েটা মেনে নিচ্ছে না” শুধু এই কারণে তালাক দেয়া জায়েজ হবে না।أَمَّا بِاعْتِبَارِ أَصْلِ الْجَوَازِ فَلَا يَلْزَمُهُ طَلَاقُ زَوْجَةٍ أَمَرَاهُ بِفِرَاقِهَا، وَإِنْ تَأَذَّيًا بِبَقَائِهَا إِيذَاءً شَدِيدًا؛ لِأَنَّهُ قَدْ يَحْصُلُ لَهُ ضَرَرٌ بِهَا، فَلَا يُكَلَّفَهُ لِأَجْلِهِمَا؛ إِذْ مِنْ شَأْنِ شَفَقَتِهِمَا أَنَّهُمَا لَوْ تَحَقَّقَا ذَلِكَ لَمْ يَأْمُرَاهُ بِهِ فَإِلْزَامُهُمَا لَهُ مَعَ ذَلِكَ حُمْقٌ مِنْهُمَا، وَلَا يُلْتَفَتُ إِلَيْهِ، (مرقاة المفاتيح، باب الكبائر، الفصل الثالث-1/132)وَأَمَّا الطَّلَاقُ فَإِنَّ الْأَصْلَ فِيهِ الْحَظْرُ، بِمَعْنَى أَنَّهُ مَحْظُورٌ إلَّا لِعَارِضٍ يُبِيحُهُ، وَهُوَ مَعْنَى قَوْلِهِمْ الْأَصْلُ فِيهِ الْحَظْرُ وَالْإِبَاحَةُ لِلْحَاجَةِ إلَى الْخَلَاصِ، فَإِذَا كَانَ بِلَا سَبَبٍ أَصْلًا لَمْ يَكُنْ فِيهِ حَاجَةٌ إلَى الْخَلَاصِ بَلْ يَكُونُ حُمْقًا وَسَفَاهَةَ رَأْيٍ وَمُجَرَّدَ كُفْرَانِ النِّعْمَةِ وَإِخْلَاصِ الْإِيذَاءِ بِهَا وَبِأَهْلِهَا وَأَوْلَادِهَا، (رد المحتار، كتاب الطلاق-4/428، منحة الخالق على البحر الرائق-3/413)বিঃদ্রঃআমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস নয়। আমাদের গ্রহণযোগ্য দলীল হল চারটি। যথা-১-কুরআন। ২-সুন্নাত। ৩-ইজমায়ে উম্মত। ৪-কিয়াসে শরয়ী।ইসলামী শরীয়তের বিধান উক্ত চারটি বিষয় দ্বারাই প্রমাণিত। শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল চাওয়া মানে হল, পরোক্ষভাবে বাকি দুই দলীল তথা ইজমা ও কিয়াসকে দলীল হতে অস্বিকৃতি জানানো। সেই সাথে হাদীসের অসংখ্য প্রকারের মাঝে শুধু এক প্রকার হাদীসকে দলীলযোগ্য বলে অসংখ্য হাদীসকে অস্বিকার করার নামান্তর। কারণ হাদীস শুধু সহীহ নয়। হাসান লিজাতিহী হয়, হাসান লিগাইরিহী হয়, মুরসাল হয় ইত্যাদি ও হাদীস।তাই “কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল চাই” টাইপের বক্তব্য পরিহার করা উচিত।

১১) প্রশ্নঃ

মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স?

উত্তরঃ

ইসলামের মেয়েদের বিবাহের কোন বয়সসীমা নির্দিষ্ট করে দেয়নি। নাবালেগের বিবাহও শুদ্ধ হয়ে যায়। {আলবাহরুর রায়েক-৩/২০৬)তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিবাহ করা উচিত মর্মে কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারা ইংগিত পাওয়া যায়।وَابْتَلُوا الْيَتَامَى حَتَّى إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُمْ مِنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْআর এতীমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। {সূরা নিসা-৬}এমন সময় বিবাহ করা উচিত, যখন বিয়ে করার দ্বারা মেয়েদের সতিত্ব ও সম্মান হিফাযত করা বিষয়ে কোন শংকা বাকি না থাকে।

১২। প্রশ্নঃ

বিয়ের আগে নারী-পুরুষের প্রেম সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ?

উত্তরঃ

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। আল্লাহ বলেন - • "তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়।" (সূরা মায়িদা : ৫) সুতরাং তারা স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না । পর্দার আয়াতে আল্লাহ বলেন - • মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সূরা নুর 30) এখানে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। • "ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা নুর 31) এখানে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে • হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাব 32) • হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব 33:59) এখানে পর্দাকরার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। নবীপত্নীদের উল্লেখ করা হলেও তা সকল মুসলিম নারীর উপর প্রযোজ্য । যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা,কোমল ভাবে কথা না বলা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম। ব্যভিচারের ব্যপারে আল্লাহ আরো বলেন । • আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল 32) জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুণাহ।আল্লাহ বলেন - • এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। (সূরা ফুরকান 68- 69) বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ বলেন - • আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। ( সূরা বাকারা 165) ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রেম তৈরি হবে তখনই যখন তারা দুজনই হিজাব ভঙ্গ করলে । কোন একজন যদি হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ না করে তবে কোন মতেই প্রেম দাঁড়াবে না । যেসব ছেলে মেয়ের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে তারা হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ করে না । মনে মনে কাউকে ভাল লাগলেও তারা হিজাব ভঙ্গ করে পথচ্যুত হয় না । হিজাব মানে শুধু পোশাক নয় । পোষাক থকে আচার- আচরণ পর্যন্ত সব কিছুই এর অন্তর্ভূক্ত । তারা বিয়ের প্রস্তাব দেয় তা না হলে সবর করে । মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনদের এই হারাম কাজ থেকে হিফাজত করুন। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন ।

১৩। প্রশ্নঃ

আমার একজনকে ভালো লাগে, আমি তাকে ভুলে থাকতে চাই কিন্তু মাঝে মাঝে তার কথা মনে পড়ে। তার কথা আমি কাউকে বলি নি। আমি আমার বাবা-মাকে দুঃখ দিতে চাই না। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর :

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আপনার যদি কোন ছেলেকে ভালো লেগে যায়, তাহলে দুইটা কাজ করা যায়ঃ
  1. ছেলেকে বিয়ে করে ফেলা।
  2. তাকে বিয়ে করা সম্ভব না হলে, ধৈর্য্যধারণ করা।
ইসলামের বিধান হলো, ছেলেমেয়ে বালেগ হলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা। এটাই রাসূলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশ। জলদি বিয়ে করার মাধ্যমে নানা রকম ফিতনা থেকে দূরে থাকা অনেক সহজ হয়ে যায়। আর বিয়েকে বলা হয় দ্বীন ইসলামের অর্ধেক, তাহলে চিন্তা করুন, একে কতো বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সুবহান আল্লাহ! আজকাল তো বাবা-মা ২৫-২৬ বছর বয়স না হলে বিয়ের কথা চিন্তাতেই আনেন না, ফলে ছেলেমেয়েরা নানা রকম ফিতনায় জড়িয়ে পড়ে, আর আমাদের সমাজে সেটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক! তাই যতো জলদি সম্ভব বিয়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে। লজ্জা কাটিয়ে উঠে বাবা-মা কে বিয়ের ব্যাপারে বলতে হবে, তারা রাজি না হলে, রাজি করানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইনশা আল্লাহ তখন আল্লাহ তাদের মনকে গলিয়ে দেবেন। এবারে, আরেকটা জরুরি বিষয়। যাকে ভালো লেগে গেছে, তাকেই কি বিয়ে করা উচিত? ইসলামে বলা হয়েছে, "নারীদেকে সাধারণত চারটি কারণে বিয়ে করা হয়ে থাকেঃ
  1. তাকওয়া (আল্লাহ ভীরুতা)
  2. সৌন্দর্য
  3. বংশমর্যাদা বা স্ট্যাটাস
  4. প্রাচুর্য
যদি কেউ তো দ্বীন দেখে বিয়ে করলো, সে লাভবান হলো।" [ বুখারী, মুসলিম ] সুতরাং বিয়ের ক্ষেত্রে, একজন পাত্র বা পাত্রীর মাঝে কতোটা তাকওয়া আছে- সেটাই সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। দেখা গেলো, আপনি আপনার পছন্দের একজনকে বিয়ে করলেন, অথচ সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজটা পর্যন্ত ঠিক মত পড়ে না! তাহলে এমন ছেলে যখন একদিন আপনার সন্তানের বাবা হবে, তাকে দেখে সন্তানেরা কি শিখবে? এটা মনে রাখা দরকার, আমরা বিয়ে করে শুধু স্বামী/স্ত্রী বাছাই করি না, বরং আমাদের সন্তানদের জন্য বাবা/মা নির্ধারণ করি। তাই সে কতোটা আল্লাহভীরু সেটাই দেখবার বিষয়। # আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’[তিরমিযী: ১০৮৪] আজকাল বাবা-মা বিয়ের সময় অনেক কিছু দেখতে যান, এতোকিছু দেখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়েটাই হয় না! তাই বিয়ের সময় যতোটা সম্ভব সমঝোতা করার চেষ্টা করতে হবে। আর বাবা-মাকেও এই হাদীসের ওপর আমল করার চেষ্টা করতে হবে। আচ্ছা, এই গেলো বিয়ের কথা। যদি ছেলের দ্বীন ও চরিত্র ভালো হয়, এবং আপনি তাকে বিয়ে করতে চান, তাহলে ইসলাম আপনাকে সে অনুমতি দিয়েছে। তবে ছেলে যদি ভালো ঈমানদার ও সচ্চরিত্রের না হয়, তবে তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। মনের মধ্যে তার কথা আসলে, "আসতাগফিরুল্লাহ" বলে অন্য কোন ভালো কাজে মনোনিবেশ করুন এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চান। তার কথা কখনোই ইচ্ছাকৃত ভাববেন না, কিংবা তাকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে ডুবে যাওয়া উচিত হবে না। আল্লাহ আমাদের গুনাহ ও ভুল-ত্রুটি মাফ করুক, আমীন! আমার দেখা বিভিন্ন ঘটনায় এমন হয়েছে যে, অনেকে জাহেলিয়াতে থাকা অবস্থায় প্রেম করতো। পরে ইসলামের বুঝ পাওয়ার পরে, ভালো দ্বীনদার পাত্রকে বিয়ে করেছে। কিন্তু এরপরে তাদের আর কখনো পুরনো প্রেমিকের কথা স্মরণে আসে নাই। সুতরাং এইসব শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে দূরে থাকার একটি উত্তম উপায়ও হলো বিয়ে করে ফেলা। আর আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন।

 

Wednesday, May 12, 2021

মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায় : যাদুগ্রস্ত ১২

 

মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায় : যাদুগ্রস্ত ১২

 

বিসমিল্লাহ! যারা যাদু আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা তো বটেই, তাদের সাথে আমাদের সবারই যাদু এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া আমলগুলো যত্নসহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বাড়ে।

সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের; বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ণ অনেক দুয়া ও যিকর হাদিসে আছে, সবকিছু বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করা তো সম্ভব না। আর সবসময় সবগুলোর ওপর আমলও সম্ভব না। তাই আমরা এখানে অল্প কিছু মাসনুন দোয়া এবং আমল নিয়ে আলোচনা করবো। এর পাশাপাশি বদনজর থেকে বাচার উপায় (১) এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় (২) লেখা দুটো দেখতে পারেন।

 

আল্লাহ আমাদের এসবের প্রতি যত্নবান হবার তাওফিক দেন। আমিন।


সংযুক্তি:

➫ প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করার সুবিধার্থে এই প্রবন্ধের দোয়াগুলোর সাথে প্রয়োজনীয় আরও অনেক দোয়াসহ একটি অ্যা‌ন্ড্রয়েড অ্যাপ বানানো হয়েছে। যা পাওয়া যাবে এই লিংকে- http://bit.ly/masnun-app

➫ অ্যাপের ওয়েব সংস্করণ আছে এই লিংকে- http://ruqyahbd.org/dua


আর হ্যাঁ! আরবি দোয়া অথবা কোরআনের আয়াতের উচ্চারণ বাংলায় লেখতে আমার কাছে কেমন যেন লাগে! কিন্তু অতীতে এই ধরনের পোস্টে অনেকেই উচ্চারণ চেয়ে পীড়াপীড়ি করেছে, তাই কয়েকটার উচ্চারণ লিখে দিলাম।

 

[ক] সকাল-সন্ধ্যার আমল

১. আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

২. বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম।

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ

সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে..। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৩. সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াতের অংশ-

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় সাতবার এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (সুনানে আবি দাউদ)

৪. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে হিফাজতের জন্য এটা রাসুল স. এর শিখানো আমল। (সুনানে আবি দাউদ)

৫. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

প্রতিদিন সকালে ১০০বার পড়া। এর অনেক বেশি ফজিলত, এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটা পরিক্ষিত আমল। (বুখারি, মুসলিম হাদিস নং ৪৮৫৭) একশতবার না পারলে, অন্তত ফজর ও আসরের পর ১০বার করে পড়া। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

৬. জিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় (১বার) আয়াতুল কুরসি পড়া। (মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫৬২)

 

download hd quality image

[খ] ঘুমের আগের আমল

ক. ওযু করে ঘুমানো, তাহলে ফিরিশতারা হিফাজতের জন্য দুয়া করতে থাকে। ডান কাত হয়ে ঘুমানো। এমনিতেও সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা সুন্নাত। (আল-মু’জামুল আওসাত)
খ. শোয়ার পূর্বে কোন কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়া। (মুসলিম)
গ. আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারী) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। (বুখারী)
ঘ. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দেয়া, এরপর পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

[গ] অন্যান্য সময়ের আমল

১. সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করা, না হয় যে কোন আজওয়া খেজুরেও হবে। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী)

২. ঘুমের মাঝে ভয় পেলে বা অন্যসময় খারাপ অনুভূতি হলে পড়া

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ الله التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وشَرّ عِبَادِهِ ، ومِنْ هَمَزَاتِ الشّيَاطِينِ وأَنْ يَحْضُرُونِ

আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত্তা-ম্মাতি মিন্ গাদ্বাবিহি ওয়া ইক্বা-বিহি ওয়া শাররি ‘ইবা-দিহি ওয়ামিন হামাযা-তিশ্শায়া-ত্বীনি ওয়া আন ইয়াহ্দুরূন।

৩. টয়লেটে ঢুকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ 

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ জ্বিন ও খারাপ পরী থেকে। (সহীহ মুসলিম, ৩৭৫)

৪. বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে পড়া [*]

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ

[*] এবিষয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, অনেকে এটি স্ত্রীর মাথায় হাত রেখেই পড়তে হবে। কিছু হাদিসে মাথায় হাত রেখে পড়ার কথা থাকলেও, প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোতে কিন্তু স্ত্রীর কাছে গিয়ে শুধু পড়ার কথা আছে। (সুনানে আবি দাউদ ২২৪৩ এবং ইবনে মাযাহ ১৯০৮ দ্রষ্টব্য)

৫. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া।

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা-রযাকতানা। (বুখারী, ৪৮৭০)

৬. দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া

أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। (সুনানে আবি দাউদ, ৩৯৩)

৭. বিসমিল্লাহ বলে দরজা-জানালা লাগানো। খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা।

 

 

 

(১)

বদনজর থেকে বাচার উপায়, কিছু ঘটনা : বদনজর ৩

 

গত পর্বে আমরা বদনজর বিষয়ে সালাফের মতামত এবং বদনজর লাগার কিছু লক্ষণ জেনেছি। আজ বদনজর থেকে বাঁচার উপায় এবং এসম্পর্কিত কিছু সত্য ঘটনা জানবো।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়া পর্যন্ত সেটা গোপন রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো! কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারীর সাথেই হিংসুক থাকে!” (তাবারানী)

এটা নজর এবং হিংসা থেকে বাচার একটা টিপস। নিয়ামত গোপন রাখার মানে হচ্ছে অন্য কারো সামনে অহেতুক নিজের, নিজের সম্পদের, প্রশংসা না করা, সন্তানের প্রশংসা না করা, মেয়েরা নিজ স্বামীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা, ছেলেরা নিজ স্ত্রীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা। নিজের প্রজেক্টের প্রপার্টির ব্যাবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। অনেকে অহেতুক অন্যদের সামনে গল্প করেন, অমুক প্রজেক্টে এতো লাভ হলো, অমুক চালানে এতো টাকার বিক্রি হলো।

মোটকথা: অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম। প্রসঙ্গক্রমে করলেও কথার মাঝে যিকর করা। যেমনঃ ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবছর ব্যাবসায় কোনো লস যায়নি।’ “আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে!” “মা-শা-আল্লাহ ভাবি! আপনি তো কাপড়ে অনেক ভালো ফুল তুলতে পারেন!!” ইত্যাদি ইত্যাদি.

শুধু খারাপ মানুষের নজর লাগে এমন কিন্তু না। ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারে। বদনজর লাগার আসল কারণ হচ্ছে, আমরা যখন কোনো বস্তুর বা ব্যাক্তির প্রশংসা করি তখন এর মাঝে আল্লাহকে স্মরণ করি না। মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ বলি না। কোন কিছু দেখলে আমরা ওয়াও, অসাম! বাপরে! কি দেখাইলো মাইরি! হেব্বি হইছে! এক্কেরে ফাডালাইছে-এসব বলি। অথচ আমাদের উচিত ছিলো মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ, বলা।

সূরা কাহাফে এক ঘটনায় আল্লাহ্‌ বলেন: “যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন ‘মা-শা-আল্লাহ; লা-কুও্ওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (সব আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) কেন বললে না?” (১৮:৩৯)

এখন অন্য কেউ যদি আপনার কিছুর প্রশংসা করে, তাহলে উনি যিকর না করলে আপনার উচিত হবে যিকর করা। উদাহরণ স্বরুপ কেউ বললো- ভাবি আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট! আপনি বলুন- আলহামদুলিল্লাহ্‌… মনে মনে বলুন- আল্লাহর কাছে বদনজর থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি অন্যের প্রশংসা করতে গিয়ে কথার মাঝে যিকর করুক। “মাশা-আল্লাহ! আপনার রান্না অনেক সুন্দর।”
আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে।

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!”

নজর থেকে বাচার একটা দুয়া, রাসুল সা. এটা পড়ে হাসান এবং হুসাইন রা.কে ফুঁ দিয়ে দিতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দু’আ আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ.-ও ইসমাইল আ. এবং ইসহাক আ. এর জন্য পড়তেন। দুয়াটি হচ্ছে-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
.
উচ্চারণঃ আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ। মিং-কুল্লি শাইত্বনিও ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং-কুল্লি ‘আইনিল্লা-ম্মাহ।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

এই হাদিসটি আছে- বুখারি, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মুসতাদরাকে হাকেম, তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে বাযযার, মুসান্নাফ, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে..

এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ তাবিজ-কবচ টোটকা ইত্যাদির কোনো দরকার হবেনা। আল্লাহই হিফাজত করবে।

বদনজর বিষয়ে অনেকগুলো ঘটনা আগেরবার (প্রথম সিরিজে) বলা হয়েছে, সেসব আর উল্লেখ না করি.. আমি আগের পোস্টগুলোর লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি। তবে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর ঘটনা; যা মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাযাহ এবং নাসাঈ শরিফে আছে! সেটা এটা এখানে না বললেই নয়.

সাহল ইবনে হুনাইফ রাযি. কোথাও গোসলের জন্য জামা খুলেছিলেন। উনি বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। বদরী সাহাবী আমির ইবনে রবী’আ রাযি. তাঁকে দেখতে পেয়ে বললেন, এতো সুন্দর মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। এমনকি এত সুন্দর কোন যুবতীকেও দেখিনি। আমির রাযি. কথাটা বলার পরপরই সাহাল রাযি. সেখানে বেহুশ হয় পড়ে গেলেন। তাঁর গায়ে জ্বর চলে আসলো। মারাত্মক জ্বরে ছটফট করতে লাগলেন হযরত সাহাল রাযি.।
অন্য সাহাবিরা রাসূল সা. কে জানালেন, সংবাদ পেয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবস্থা দেখতে আসলেন। সাহল রাযি. কে হঠাৎ করে এমনটা হবার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনাটা খুলে বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: “তোমরা কেন তোমাদের ভাইকে নজর দিয়ে হত্যা করছো?” আমির ইবনে রবী’আকে ডেকে বললেন: “তুমি যখন তাকে দেখলে, তখন আরো বরকতের দু’আ কেন করলেনা? বারাকাল্লাহ কেন বললে না?” (অর্থাৎ দুয়া করলে নজর লাগতো না)
এরপর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমির রাযি. কে বললেন: অজু কর! আমির রাযি. অজু করলেন। অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নির্দেশে অযুর পানি সাহল এর গায়ে ঢেলে দিলেন। আল্লাহর রহমতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।”
এটা বিশুদ্ধ সনদে নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহতে বর্ণিত প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা, যা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি, ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারেরে, এখানে আমির ইবনে রবিয়া রা. তো বদরি সাহাবি, বদরী সাহাবিদের আগের পরের সব গুনাহ মাফ!! এরকম মানুষের নজর লেগেছে, সেখানে অন্যরা কোন ছার..

আরেকটা হাদিস, উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. কোনো সাহাবির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে রাসুল সা.কে ওদের হালহাকিকত শোনালেন। বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওই সাহাবির সন্তানরা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকে.. রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আসলে বদনজর তাদের দিকে খুব দ্রুত কাজ করে!”
আসমা রা. এর ব্যাপারেও এরকম ঘটনা পাওয়া যায়.. (হাদিসগুলো সহীহ মুসলিমে  আছে)

আমার বাড়ির একটা গল্প বলি, এবার ছুটিতে গিয়ে আম্মুকে আমার বদনজর নিয়ে লেখা আগের প্রবন্ধগুলো দেখালাম। সেখানে “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” হাদিসটা দেখিয়ে আমি হাসতে হাসতে বললাম ‘হাদিসটা মজাদার না’?!!
আম্মু দেখি মন খারাপ করে বলছে- কয়েকদিন আগে আমার একটা মুরগী মরে গেছে..
জিগাইলাম কিভাবে?
আম্মু বলছে- “সন্ধ্যায় সব মুরগিকে খাওয়ার দিয়ে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, তখন ওই মুরগিটার দিকে তাকায়া বললাম ইশ! এরকম আর একটা মুরগিও হলোনা.. একটা মুরগিও এরকম বড়সড় না, আর এর মতো একটাও ডিম দেয় না… তারপর সব মুরগি কুটিরে উঠেছে, ওই বড়সড় মুরগিটাও উঠেছে। পরদিন সকালে দেখি ওই মুরগিটা আর বের হয়না! পরে কুটিরের ভিতরে তাকায়া দেখি মুরগিটা এক কোণায় মরে পড়ে আছে… একদম ভালো মুরগি, কোনো অসুখ ছিল না, আমার ওই কথাগুলা বলার সময় কি নজর লাগছিল?”
– আমি বললাম.. “হ্যা….”

 

(২)

 

জ্বিন আসরের লক্ষণ এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় : জিনের স্পর্শ ৪

 

আজ শুরুতে আমরা জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ জানবো। গতপর্বে ব্যখা করা হয়েছে, মানুষ কয়েকভাবে জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের সমাজে whole body possession বা যেটাকে জ্বিনে ধরা বলে এটাকেই শুধু জ্বিনের সমস্যা ভাবা হয়, পুরো শরীর পজেসড না হলে সচরাচর কেউ বিশ্বাস করে না যে জ্বিন আছে শরীরে। কিন্তু আসলেই এটা সম্ভব যে, কারো শরীরে জ্বিন ঢুকে আছে.. আর দিনের পর দিন ধীরেধীরে সে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা জরুরী, আমরা যে লক্ষণগুলো আলোচনা করতে যাচ্ছি এক-দুদিন এসব দেখলেই জ্বিন আক্রান্ত হয়েছে ভাববার কারণ নেই, কারণ এগুলো স্বাভাবিক অসুখবিসুখ এর কারণেও হতে পারে। এই লক্ষণগুলো কারো মাঝে যদি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকে, তাহলে ধরে নিবেন সমস্যা আছে।

আলোচনার সুবিধার্থে পজেসড হওয়ার লক্ষণগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। ঘুম সংক্রান্ত এবং অন্য সময়ের..।

ঘুম সংক্রান্ত লক্ষণ সমূহঃ

১। নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয়না
২। উদ্বিগ্নতা: যেজন্য রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া। 
৩। বোবায়ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া
৪। ঘুমের মাঝে প্রায়শই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা
৫। ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking)
৬। স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ (*)
৭। স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা
৮। কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত যায়গা, অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা
৯। বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে
১০। জ্বিন-ভুত দেখা

দ্রষ্টব্যঃ যদি স্বপ্নে সবসময় দুইটা বা তিনটা প্রাণী আক্রমণ করতে আসছে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে দুইটা বা তিনটা জ্বিন আছে।

ঘুম ব্যতীত অন্য সময়ের লক্ষণ

১। দীর্ঘ মাথাব্যথা (চোখ, কান, দাত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)
২। ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া
৩। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা..
৪। ব্যাপক অলসতা; সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা
৫। মৃগীরোগ
৬। শরীরের কোনো অংঙ্গে ব্যাথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।

আবারও মনে করিয়ে দেই, শারীরিক রোগের কারণেও এসব হয়ে থাকে। তবে যখন দীর্ঘদিন যাবত যখন এসব লক্ষণ দেখা যাবে, তখন ভাববেন কোনো সমস্যা আছে।

জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাচার জন্যঃ

আগামী পর্বে হয়তো বাসাবাড়ি থেকে জিন তাড়ানোর পদ্ধতি, এরপর জ্বিনদ্বারা আক্রান্ত রুগীকে রুকইয়াহ করার নিয়ম আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে পোস্ট অনেক লম্বা হতে পারে। এজন্য দুই পর্বে দেয়ার ইচ্ছা আছে।
যাহোক, আজ সবশেষে খবিস জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কয়েকটি মৌলিক বিষয় জেনে নিন।

১। জামা’আতে নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ পড়া। এই দুটি আপনার আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

২। গানবাজনা থেকে বিরত থাকা।

৩। সর্বদা পাকপবিত্র থাকা। বিশেষত: ঘুমের আগে অযু করে বিছানায় যাওয়া।

৪। ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।

৫। সব কাজে বিসমিল্লাহ বলা, বিশেষত: খাবার সময় এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতে। এছাড়া উঁচু থেকে লাফ দেয়ার সময়, কিছু ফেলার সময়, অন্ধকারে কিছু করার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা ভালো।

৬। কুকুর – বিড়াল না মারা, সাপ মারতে চাইলে আগে জোর আওয়াজে ৩বার বলা “জ্বিন হলে চলে যাও..”

৭। কোনো গর্তে প্রসাব না করা। হাদিসে এব্যাপারে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে।

৮। ঘরে প্রবেশের এবং বের হওয়ার দোয়া পড়া, দোয়া না জানলে অন্তত বিসমিল্লাহ বলা।

৯। সন্ধ্যার সময় ঘরের জানালা বন্ধ করা, বাচ্চাদের বাহিরে বের হতে না দেয়া। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাচ্চাদের বের হতে কিংবা জানালা খুলতে পারেন।

১০। স্ত্রী সহবাসের পুর্বে অবশ্যই দু’আ পড়া। বিয়ের প্রথম রাতের দোয়াটি পড়া।

১১। টয়লেটে ঢোকার সময় দু’আ পড়া।

১২। প্রতিদিন “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর” ১০০বার পড়া। একশতবার না হলে, অন্তত সকাল – সন্ধ্যায় ১০বার করে পড়া।

১৩। সকাল সন্ধ্যার অন্যান্য মাসনুন আমলগুলো নিয়মিতভাবে প্রতিদিন করা

১৪। সুরা ইখলাস ফালাক নাস, তথা তিনকুল-এর আমল গুরুত্ব সহকারে করা। আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে এব্যাপারে চল্লিশটিরও বেশি সনদে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সা. জীবনের শেষ পর্যন্ত এর আমল করেছেন।
আমল হলো, রাসূল সা. প্রতিরাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস তিনবার, সূরা ফালাক তিনবার ও সূরা নাস তিনবার পড়ে দুইহাতের তালুতে ফুঁ দিতেন। ফুঁ এর সাথে হালকা থুতু বেরিয়ে আসতো। এরপর সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন।

দ্বিতীয়ত: প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সূরা ইখলাস, একবার সূরা ফালাক ও একবার সূরা নাস এভাবে তিন সূরা তিনবার পড়তেন। এসময়ে ফুঁ দেয়া লাগবে না।
হাদীসের শেষাংশে আল্লাহর রাসূল সা বলেন, এআমলই তোমার জন্য যথেষ্ট।অন্য হাদিসের আছে এই সুরাগুলো পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিতেন।

উপরে উল্লেখিত পরামর্শ বিভিন্ন হাদিস থেকে নেয়া, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে এজন্য সবগুলো হাদিস উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।

আর উপরে বলা কিছু দুয়া (এই লিখার শুরুতেই আছে) পাবেন। এছাড়া বাকিগুলো প্রসিদ্ধ অনেক বইতে পাবেন, যেমনঃ হিসনে হাসিন, গুলজারে সুন্নাহ, হিসনুল মুসলিম। আরো সহজে পাবেন নুরানী মাদরাসার বাচ্চারা একটা নীল রঙের বই পড়ে (নুরানী পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা এরকম নাম), বেলায়েত সাহেবের লেখা, সেখানে।

যাহোক, অনেকগুলো ব্যাপার আলোচনা হলো, আল্লাহ আমাদের সতর্ক থাকার তাওফিক দিন, আমিন।

 

 

 

 

Monday, May 6, 2013

*শবসাধকের কাল্ট – ১ম পর্ব* [Ghost Stories-horror-23]


*শবসাধকের কাল্ট ১ম পর্ব*


জ্যোস্নার আবছা আলোয় দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক (নাকি শব?) বেরিয়ে এল। আশ্চর্য! কে লোকটা? এতরাতে কি করছিল মর্গে?এখন প্রায় শেষরাত। জানলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম। অনেক দূরে কুকুর ডাকছিল। হঠাৎ মর্গের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম। ভালো করে লোকটাকে দেখাও গেল না। চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল কলাঝোপের আড়ালে। চোখের ভুল? লাশকাটা ঘরটা অবশ্য বেশ দূরে।

চারতলা সরকারি কোয়ার্টারের জানালার পাশ থেকে দেখছি। রাতজাগার ফলে হয়তো আমি চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখছি। বছর খানেক ধরে ইনসমনিয়ায় ভুগছি। রাতে ভালো ঘুমও হয় না। বই পড়ে,মুভি দেখে,ঘরে পায়চারী করে কিংবা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে, সিগারেট টেনে রাত কাটে। আবছা অন্ধকারে টেবিলের কাছে এলাম। এলজিটা তুলে দেখলাম: দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। ইশতিয়াক বিছানার ওপর হাত পা ছড়িয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমাচ্ছে। ঘরে বেনসনের গন্ধ ভাসছিল। শালা চেইন স্মোকার। আজই ঢাকা থেকে এসেছে। কালই চলে যাবে। ইশতিয়াক আমার ছেলেবেলার বন্ধু। চারুকলা থেকে পাস করেছে। খুবই আমুদে আর অস্থির। চাকরি- বাকরিতে মন বসে না। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়। মুভি পাগল। আমার জন্য ৬/৭টা ডিভিডি এনেছে। আজ রাত জেগে ল্যাপটপে একটা মুভি দেখছিলাম। নেকক্রোমানটি। পুরনো দিনের জার্মান হরর ছবি। শসম্ভোগ বা নেক্রোফিলিয়ার ব্যাপারটার জন্য ছবিটা বিতর্কিত। যদিওকাল্ট ফিলিম- এর মর্যাদা পেয়েছে নেকক্রোমানটি। আমি নির্জনতাপ্রিয় মুখচোরা মানুষ। ডাক্তারি করি জেলা সদরে সরকারি হাসপাতালে। নির্জন এই শহরটাও আমার বেশ ভালো লেগে। বড়োখেবড়ো হলেও ছিমছাম নির্জন পথঘাট। ঘুমন্ত দোকানপাট, ঘরবাড়ি। লাল রঙের নিঝঝুম রেলস্টেশন। শীতল সর্পিল রেললাইন। হলুদ-হলুদ সরকারি কোয়ার্টারস। প্রাচীন মন্দির। অ-দূষিত বাতাস।

মর্গটা আমার কোয়ার্টারের পিছনেই। হাসপাতালে আসতে যেতে চোখে পড়ে। একতলা হলুদ দালান। সামনে বড় সিমেন্ট বাঁধানো একটি চাতাল। চারপাশে ঘন গাছপালা। পচা পাতাভরা পুকুর। শ্যাওলাধরা দেয়াল। নাড়িকেল গাছ। তারপর রেললাইন। নিরিবিলি এই মফস্বল শহরে দিনগুলি বেশ কেটে যাচ্ছে। রোজ দুবেলা হাসপাতালে যাই, রোগী দেখি। ধৈর্যশীল চিকিৎসক হিসেবে সামান্য নামও ছড়িয়েছে। স্থানীয় লোকজন শ্রদ্ধভক্তি করে। মাঝেমধ্যে ইশতিয়াক-এর মতন দু-একজন বন্ধুও আসে বেড়াতে। দু-একদিন থেকে চলে যায়।

আমার একজন পিয়ন আছে। নাম মুখতার। মধ্যবয়েসি লোক। মিশমিশে কালো থলথলে শরীর। মুখতারকে শার্ট-প্যান্টে একেবারেই মানায় না। মাথাটা মুড়িয়ে রাখে। মাথার তালুও কালো। সেই কালো তালুর মাথায় খোঁচা খোঁচা চুল। কানে ছোট্ট একটা পিতলের রিং। মুখতার সন্ন্যাস নিয়েছে কিনা বোঝা গেল না। কথা কম বলে। তবে কথাবার্তায় অনেকবারই অসংলগ্নতা টের পেয়েছি। তবে মুখতার-এর রান্নার হাত ভালো। আর বেশ বিশ্বস্ত। রাতে অবশ্য চোখ লাল থাকে তার। নেশাটেশা করে মনে হল। বাজার সদাই মুখতারই করে। মাছমাংস খায় না দেখি। মুখতার মনে হয় গৃহীসন্ন্যাসী। সকালবেলা ইশতিয়াক কে বিদায় দিতে রেলস্টেশনে এসেছি।

ইশতিয়াক বেশ রোম্যান্টিক জীবন কাটাচ্ছে। ট্রেন পেলে বাসে চড়বে না। ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে রেলস্টেশন বাইরে চলে এসেছি। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। দেখলাম একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে জিন্নাত আলী দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখেই সালাম দিল। লোকটার বয়স ষাটের কাছাকাছি। রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সে। থাকে পিছনের রেলওয়ে কলোনিতে । জিন্নাত আলী বিপত্নীক। একটি মেয়ে বাবার সংসারে থাকে । মধ্যবয়েসি মেয়ের নাম মুমতাজ। মুমতাজ রক্তশূন্যতায় ভুগছিল। মাস কয়েক আগে অবস্থা কাহিল হলে ওরই ট্রিটমেন্ট করতে গিয়েছিলাম। আমি সাধারণত স্থানীয় গরিব লোকদের কাছ থেকে ফি-টি নিইনা। জিন্নাত আলী সেটা মনে রেখেছে। মাঝেমধ্যে দেখা হলে সালাম দেয়।

জিন্নাত আলী বলল,রিকশা নিবেন স্যার? ডাইকা দিমু? না,না। আমি হেঁটেই যাব। বিসটি ছার। অসুবিধে নেই। বলে হাঁটতে থাকি। স্টেশন থেকে আমার কোয়ার্টারটা কাছেই। বড় রাস্তায় খানিক হেঁটে বাঁয়ে মোড় নিলে কালিবাড়ির গলি। সে গলি পেরিয়ে মর্গের পিছন দিয়ে মিনিট দশকের পথ । কালিবাড়ির গলিটা বেশ সরু। গলিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঝিরঝির বৃষ্টিটা থেমে রোদ উঠল। গলির বাঁ পাশে একটা কালো রঙের লোহার গেইটের সামনে দেখলাম গফুর আসকারী সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। ভদ্রলোক আমার মোটামুটি পরিচিত। ধ্যাপক। এখন অবশ্য রিটায়ার করেছেন। লোকটা বেশ অদ্ভূত। বয়স ষাটের কাছাকাছি। মাথায় টাক-টাক নেই;একমাথা ধবধবে চুল। চোখে পুরু লেন্সের কালো ফ্রেমের চশমা। চশমার কাঁচ বেশ ধূসর। বৃদ্ধ বেশ লম্বা আর ফরসা। স্বাস্থও ভালো। তবে মুখ কেমন ফ্যাকাশে।

অ্যানিমিক মনে হয়। ভদ্রলোক আমাকে দেখে কেন যেন গেইটের ভিতরে ঢুকে যেতে চাইলেন। তার আগেই আমি সালাম দিয়ে বললাম,কেমন আছেন? গফুর আসকারী মুহূর্তেই ভোল পালটে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন,আরে ইয়াংম্যান যে। খবর কী? ভালো । বললাম। বলে হাসলাম। গফুর আসকারী গেইটটা খুলে বললেন,এসো এসো। বাসায় এসো। এক কাপ চা খেয়ে যাও।

গেইটের ওধারে ছোট্ট শ্রীহীন বাগান। বাগান মানে পেঁপে, শুপারি আর এঁটে কলার অযত্ন লালিত ঝোপ। গফুর আসকারী বিপত্নীক এবং নিঃসন্তান। দেখাশোনার জন্য আবদুর রহমান নামে একটা লোক আছে। মাস ঝয়েক আগে তারই অসুখ হয়েছিল। আমিই তখন টিট্রমেন্ট করেছিলাম। তখনই গফুর আসকারীর সঙ্গে পরিচয়। কলাঝোপের মাঝখান দিয়ে সরু পথ। তারপর একতলা লালটালির ছাদের বাংলোবাড়ি। ছোট্ট লাল মেঝের বারান্দা। বসার ঘরে সোফা কিংবা আসবাবপত্রের বদলে শ্রীহীন কাঠের তিনটে চেয়ার আর চার-পাঁচটা আলমারী।

আলমারী ভর্তি বাংলা- ইংরেজি বই। গফুর আসকারী অধ্যাপনা করেছেন দর্শনশাস্ত্রে । বইয়ের এরকম কালেকশন থাকাই স্বাভাবিক। গফুর আসকারী বললেন,তুমি ঐ চেয়ারে বস। আমি একটা চেয়ারে বসতে যাব গফুর আসকারী বললেন,না,না। ডানপাশেরটায় বস । হ্যাঁ। ঠিক আছে। বস। আমি চা করে আনি। হাসি চেপে বৃদ্ধের দেখিয়ে দেওয়া চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম, চা আপনি বানাবেন? কেন?আবদুর রহমান কি বাসায় নাই? বৃদ্ধ বললেন,আর বলো না ডাক্তার। দেশে যাব বলে দুদিনের ছুটি নিয়ে ছেলেটা সেই যে গেল। প্রায় দু সপ্তাহ হল-এখনও ফিরে এল না। দেখ দেকি কী কান্ড। বৃদ্ধের ফরসা মুখে অবশ্য বিরক্তির কোনও চিহ্ন দেখতে পেলাম না। ফিরে এল না? আশ্চর্য! কেন? কি ভাবে বলি বল? যাক,সে ছেলে চুলায় যাক। তুমি বস। চলে যেও না। আমি এখুনি চা তৈরি করে নিয়ে আসি। বৃদ্ধ ভিতরে চলে গেলেন। বসার ঘরে ঢুকেই কেমন পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। ইঁদুর বিড়াল মরে পচে গেলে যে রকম গন্ধ ছড়ায়। ঠিক সেই রকম। গন্ধের উৎস বোঝা গেল না। বাগানে কিছু মরে পড়ে থাকতে পারে। বুড়োর খেয়াল নেই। ছন্নছাড়া লোকের ছন্নছাড়া সংসার। বইয়ের আলমারীতে একটা বইয়ের ওপর চোখ আটকে গেল।

গ্যাবরিয়েলি উইটকপ-এর দি নেকক্রোফিলিয়াক ;একেই বলে কোইন্সিডেন্স। গতরাত্রেই নেকক্রোমানটি ছবিটা দেখছিলাম। শবদেহের প্রতি এক ধরনের যৌন আকর্ষনকে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয়নেকক্রোফিলিয়া । এই যৌন আকর্ষনকে আমেরিকান সাইক্রিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন- এর ডাগায়নোস্টিক অ্যান্ড স্ট্রাটেস্টিটিকাল ম্যানুয়ালপ্যারাফিলিয়া বর্গের অন্তর্ভূক্ত করেছে। প্যারাফিলিয়া শব্দটি গ্রিক । এর অর্থ প্রেম। তবে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় শব্দটির মানে স্বাভাবিক উপায়ের বদলে অস্বাভাবিক বিষয়ে বা পরিস্থিতিতে যৌনবোধ জাগ্রত হওয়া। এতে ব্যক্তির আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে । মনে পড়ল কাল অনেক রাতে দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল।শবদেহের প্রতি এক ধরনের যৌন আকর্ষনকে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয় নেকক্রোফিলিয়া । কেউ লাশকাটা ঘরে ওই কাজটা করে না তো? অবশ্য এমনটা ভাবার কোনওই কারণ নেই। গফুর আসকারী এক কাপ চা নিয়ে ফিরলেন। কাপ নিতে বললাম,আপনার চা কই? লাজুককন্ঠে বৃদ্ধ বললেন,চা আমি রান্নাঘরে বসেই খেয়ে এসেছি। বলেই ধপ করে কাঠের চেয়ারের ওপর বসলেন। অরেকটু হলেই উলটে পড়তেন। আগেই লক্ষ্য করেছি গফুর আসকারী বেশ মজার মানুষ । লেবু চা । চুমুক দিয়ে বোঝা গেল চিনির বদলে গুড় দিয়েছেন। আরও বোঝা গেল দর্শনের এই অধ্যাপকটি বেশ উদ্ভট আর উৎকেন্দ্রীক মানুষ। বৃদ্ধকে দেখে বরাবারই আমার বেশ খানিকটা খাপছাড়া আর উদভ্রান্ত মনে হয়েছে। চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম,কাল রাত্রে অদ্ভূত এক দৃশ্য দেখলাম। কি বল তো শুনি? বৃদ্ধ ঝুঁকে পড়লেন। দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল।তখন অনেক রাত। এই ধরুন শেষ রাত। হুমম। তো? গফুর আসকারী সাহেব স্থির চোখে আমার দিকে চেয়ে আছেন। চশমার কাঁচে কুয়াশা জমে আছে। বড় বড় দুটি কর্নিয়া দেখা যায়। তবে কাঁচ এত ঘোলা হওয়ায় তিনি দেখছেন কীভাবে তা ঠিক ভেবে পেলাম না। বললাম, না,মানে নেক্রোফিলিয়াক কেউ হতে পারে কি? এই নিয়ে তো আপনি বেশ পড়াশোনা করেছেন দেখলাম।

বলে চায়ে চুমুক দিলাম। গফুর আসকারী যতই পাগলাটে লোক হোক, চায়ের স্বাদ দারুন হয়েছে। যাওয়ার সময় রেসিপিটা জেনে নিতে হবে। বৃদ্ধ বললেন,হুমম হতে পারে। তেমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন প্রবণতা অতি সাধারণ মানুষের ভিতরেও সুপ্ত থাকতে পারে। শোন একটা ঘটনা বলি। তখন আমি সোহাগপুর কলেজে পড়াই। সেই সময়টায় আমি তন্ত্র,শবসাধনা এসব নিয়ে খুব পড়াশোনা করছিলাম। বয়স কম । জানে সাহস ছিল। রাতবিরেতে শ্মশানে-গোরস্থা নে ঘুরে বেড়াতাম। ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম। আমি আতকে উঠে বললাম, বলেন কী! হ্যাঁ। আমি একটা বিষয়ে আগ্রহ বোধ করলে তার শেষ দেখেই তবে ছাড়ি,বুঝলে। বুঝলাম। তা আপনি শ্মশানে- কবরস্থানে মাঝরাতে ঘাপটি মেরে বসে থাকতেন কেন? বলে ছোট্ট চুমুকে চাটুকু শেষ করে কাপটা সামনের বেতের টেবিলের ওপর রেখে দিলাম। বৃদ্ধ বললেন,হাতেনাতে শবসাধকদের ধরব বলে। ধরতে পেরেছেন কখনও?

আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগার। হুমম। একবার ধরেছি। তখন আমি সৈয়দনগর মহিলা কলেজে বদলি হয়েছি। শহরের উপকন্ঠে নদীর ধারে কবরখানা। এক মধ্যরাত্রে একটা বহেড়া গাছের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে আছি। দেখি গুটিশুটি পায়ে কে যেন এসে কবরের মাটি খুঁড়তে লাগল। গিয়ে জাপটে ধরলাম। কে সে?আবদুর রহমান। আবদুর রহমান! ঠিক আছে,ধরলেন। তারপর? আমার কৌতূহল চরমে উঠেছে। ধরার পর কতক্ষণ চলল ধস্তাধস্তি। আবদুর রহমান-এর বয়স তখন এই আঠারো কি উনিশ। টেনে- হিচঁড়ে ঘরে নিয়ে এলাম। কিছুতেই বলবে না কবরখানায় কেন গিয়েছিল। সে যা হোক। ওকে ধীরে ধীরে থেরাপি দিয়ে সুস্থ করে তুললাম। এখন ও সুস্থ। তবে আবার কেন পালাল ঠিক বুঝতে পারছি না। পালিয়েছে মানে? প্রায়ই তো পালায়। পাজী,নচ্ছাড় ছেলে একটা। বলতে বলতে গফুর আসকারী হাই তুললেন । বললেন,আমার এখন ঘুম পাচ্ছে ডাক্তার। তুমি না হয় চুপটি করে বস। আমি ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নিই। না। না। আমি ঘুমান। আমি এখন যাই। পরে সময় করে একদিন আসব। আর একটা কথা। ইয়ে মানে আপনি কি বইটই ধার দেন?

বই? না,না। আমি ওই কাজটি কক্ষনো করি না। তুমি বরং অন্যকিছু ধার নাও। এই ফুলদানীটা ধার নেবে? ফুলদানী? না থাক। আমি বরং এখন যাই। বই যখন ধার দেন না। তখন গুড় দেওয়া লেবু চায়ের রেসিপিও বলবেন না। বাগান পেরিয়ে গলিতে বেরিয়ে মনে মনে হাসলাম। কিন্তু আমার হাসা উচিত নয়। আমি ডাক্তার। গফুর আসকারী এমনিতে ভালো মানুষ তবে ঐ একটু

মর্গের পিছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি। আবদুর রহমান পালিয়ে গেল কেন? সে গোরস্থানে কবর খুঁড়ত? কেন? কথাটা বৃদ্ধ এড়িয়ে গেলেন। কেন? বসার ঘরে পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। কেন? গফুর আসকারীর পাগলামী কোনও কারণে চরমে পৌঁছে যায়নি তো?  রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠল।রহস্য যখন ঘনীভূত হয়ে উঠলই তখন কাউকে না কাউকে তো সন্দেহ করতেই হয়।


১ম পর্ব সমাপ্ত
গল্প: ইমন জুবায়ের