এটাই ভালবাসা . .. . .
দিন টা ছিল বুধবার ;
ক্যালেন্ডার এর হিসেব মতো ২০০৮ সালের এপ্রিল
মাসের ৮ তারিখ । ঢাকা মেডিক্যাল
কলেজ ছুটি হয়ে গেছে ।
আমি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাব।
আকাশে মেঘ ছিল । মহাখালির
কাছে আসতেই টিপটিপ বৃষ্টি পরতে শুরু
করল । এরই
মধ্যে তাড়াহুড়া করে ময়মনসিংহ
গামী সৌখিন এক্সপ্রেস বাস এ
উঠে পড়লাম । আমি ও বাস উঠলাম আর
মুষলধারে বৃষ্টি ও শুরু হল।
আমার আজীবনের অভ্যাস হল বাসের
জানালা খুলে হাওয়া খাওয়া । মিনিট
পনের পরে বৃষ্টিটা একটু
ধরে এলে আমি জানালা টা খুলেদিলাম ।
বৃষ্টিভেজা বাতাস আমার চুল
ছুঁয়ে যাচ্ছিল । হোটেল র্যাডিসনের পাশ
দিয়ে যাবার সময় কি একটা অচেনা ফুলের
ঘ্রাণ আমার মন টা মাতাল
করে তুলছিল। কি হয়েছিল
জানি না কিন্তু কেন জানি আমার
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল ‘ হৃদি ই
ই...... আমি তোমাকে ভা... লো... বা...
সি...।’
পাশের সিট টা খালি ছিল। মনেহল
হৃদিতা যদি পাশে বসে আমার
কাঁধে মাথা রাখত, স্রষ্টার কাছে আর
কিছু চাইবার থাকতো না। ভালোবাসার
আবেশে মগ্ন আমি ভুলেই গিয়েছিলাম,
হৃদিতা আমার জীবনে একই সাথেআনন্দ
আর বেদনার আশ্চর্য সংমিশ্রণ ;
স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের যৌথ
যুগলবন্দী।
আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি।
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র।
বৃত্তি কোচিং করতাম স্থানীয়
একটি কোচিং সেন্টারে। যথাসাধ্য
চেষ্টা ছিল স্কুলের সুনাম ধরে রাখার।
ক্লাস টেস্টগুলোতে ভাল ফলাফলই
করতাম। অগোছালো পোশাক,
এলোমেলো চুল, চোখে ভারী পাওয়ার এর
চশমা – সব মিলিয়ে আঁতেল সমাজের
আদর্শ প্রতিনিধি বলতে যা বঝায়,
আমি ছিলাম ঠিক তাই। সব টিচারের
ক্লাসেই একান্ত মনযোগী ছাত্র ছিলাম।
বিশেষ করে ইংলিশ ক্লাসে মামুন স্যারের
লেকচারগুলো গোগ্রাসে গিলতাম আমি।
আমার জীবনের রঙ্গিনতম স্বপ্নটির
সুচনা ও মামুন স্যারের ক্লাসেই।
জানুয়ারী মাসের কোন এক
তারিখে বিকেলে স্বয়ং পরিচালক ক্লাস
এ নিয়ে এলেন একটি মেয়েকে।মামুন স্যার
কে বলে গেলেন, ‘ মামুন, মেয়েটা গাজীপুর
থেকে নতুন এসেছে। ওর দিকে খেয়াল
রেখো। ’’ ক্লাসের এর সবার মতআমি ও
মেয়েটাকে দেখলাম। শ্যামলা,
মোটামুটি লম্বা, কাঁধ পর্যন্ত
খোলা চুল। এক নজর দেখেই ক্লাস এ মন
দিলাম আমি।
মামুন স্যার ক্লাসে অসম্ভব
মজা করতেন। মাঝে মাঝে ক্লাসে হাসির
রোল পড়ে যেত তার কথা শুনে।
হাসতে হাসতে কতবার
যে চোখাচোখি হয়েছিল আমার আর
হৃদিতার মাঝখানে।
কখনো কখনো আড়চোখেও
ওকে দেখতাম। আসলে ওকে নয়, ওর
মায়াবী চোখজোড়া দেখতাম, ওর নিষ্পাপ
হাসিটাকে দেখতাম। অই হাসি দেখেই
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম – আমিকেবল
ওকেই ভালবাসবো। আত্মার সবটুকু
পবিত্রতা উজাড় করেই ভালবাসবো।
ওকে বহুবার বলতে চেয়েছি বহুব্যবহত
কিন্তু চিরনতুন কথাটা – ‘
আমি তোমাকে ভালবাসি।’কিন্তু
বলা হয়নি। বলা হয়নি কারণ,
আমি জানতাম না আমি আদৌ তার
উপযুক্ত হতে পারব কিনা।
ওকে পেলে ধরে রাখতে পারব কিনা।
কিন্তু ওর প্রতি আমার আকর্ষণটাই
আমাকে প্রতিনিয়ত ভাল
করতে উৎসাহিত করল।
যে বয়সে ছেলেরা সিগারেট এ স্মার্টনেস
খোঁজে, আনন্দের সন্ধান
করে পর্ণোমুভিতে,
সে বয়সটাতে আমি আশ্চর্য রকমশান্ত
থেকেছি। বারবার নিজেকে বুঝিয়েছি,
আমাকে প্রস্তুত হতে হবে। আমার
ভালবাসাকে জয়ী করার
জন্যে তৈরি থাকতে হবে সবসময়। হ্যাঁ,
আমি পেরেছি। এখন আমি ঢাকা মেডিকেল
এর ছাত্র। অ্যানাটমি, প্যাথলজি,
বায়োকেমিস্ট্রি, হিসটোলজি এ রকম
অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমি ব্যস্ত।
পড়াশোনা আর পরীক্ষার চাপে হৃদিতার
স্মৃতিতে খানিকটা ধুলো জমেছিল
বোধহয়। তারপর.........
তারপরের কাহিনী তো আগেই
বলেছি.........
পরিশেষ: এই ফেসবুক জমানায় পরিচিত
একজনকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কিছু
না। হৃদিতাকেও আমি খুঁজে পেয়েছি। ও
ঢাকা ইউনিভার্সিটির
মাইক্রোবায়োলজি তে পড়ছে। ওর
সাথে দেখাও হয়েছে। ও নিজেই
আমাকে ওর মনের মানুষের সাথেপরিচয়
করিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা ভাল, বুয়েটের
EEE তে আছে। পরশুদিন
দেখা হয়েছে আমার সাথে। ওর চাচার
এবি পজিটিভ রক্তের দরকার ছিল।
আমিই রক্ত দিয়েছি।।
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/Golpo143/posts/217050395036859