Wednesday, April 21, 2021

কখন কি বলা সুন্নাহ্‌

 

কখন কি বলা সুন্নাহ্‌ ? ১৫ টি কাজের গুরুত্বপূর্ণ ১৫ টি সুন্নাহ (রেফারেন্স সহ) !! এবং সেগুলোর বাংলা অনুবাদ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা ..
1) ভালো কোন কিছু খাওয়া বা পান করার সময়, কোন কিছু লেখা বা পড়ার সময়, কোন কাজ শুরু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করে । -(বুখারীঃ ৫৩৭৬)
2) ভালো কিছু খাওয়া বা পান করা শেষে, কোন শুভ সংবাদ শোনা হলে, কেউ কেমন আছো জিজ্ঞেস করলে- তার জবাবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা । -(ইবনে মাজাহঃ ৩৮০৫)
3) . কারো হাঁচি আসলে ”আলহামদু লিল্লাহী ‘আলা কুল্লী হা-ল” বলা । -(আত তিরমিযীঃ ২৭৪১)
4) কোন হাঁচি দাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে- ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা। -(বুখারীঃ ৬২২৪)
5) আল্লাহ তা’আলার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব বা বড়ত্বের কোন কৃতিত্ব দেখলে কিংবা শুনলে ‘আল্লাহু আকবর’ বলা । স্বাভাবিকের মধ্যে কোন ব্যতিক্রম দেখলে কিংবা আশ্চর্য ধরণের কোন কথা শুনলে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। -(বুখারীঃ ৬২১৮)
6) . ভালো যে কোন কিছু বেশি বা ব্যতিক্রম দেখলে ‘মা-শা আল্লাহ’ বলা। -(মুসলিমঃ ৩৫০৮)
7) . ভবিষ্যতে কোন কিছু করবে বললে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলা । -(আল কাহাফঃ ২৩-২৪)
😎 . কোন বাজে কথা শুনলে কিংবা আল্লাহর আজাব ও গজবের কথা শুনলে বা মনে পড়লে “না’উজু বিল্লাহ” বলা। -(বুখারীঃ ৬৩৬২)
9) . কোন বিপদের কথা শুনলে কিংবা কোন খারাপ বা অশুভ সংবাদ শুনলে, কোন কিছু হারিয়ে গেলে, কোন কিছু চুরি হয়ে গেলে, কোন কষ্ট পেলে ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলা। –(মুসলিমঃ ২১২৬)
10) . কথা প্রসঙ্গে কোন গুনাহর কথা বলে ফেললে, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা । -(সূরা মুহাম্মদঃ ১৯)
11) . উপরে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা এবং নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। -(বুখারীঃ ২৯৯৩)
12) . নিশ্চিতভাবে না জেনে কোন বিষয়ে কিছু বললে, কথা শেষে ‘ওয়াল্লাহু আলুম’ বলা। -(বুখারীঃ ৫৫৭০)
13) কেউ কিছু দিলে কিংবা কারো মাধ্যমে কোন কাজ হলে তার বদলে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলা। -(বুখারীঃ ৩৩৬)
14) কোন কিছু জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহী ওয়া আল্লাহু আকবর’ বলা। -(মুসলিমঃ ৫০৮৮)
15) . কোন বিজয় লাভ করলে কিংবা বিজয় লাভের আশায় শ্লোগান দিলে ‘আল্লাহু আকবর’ বলা । -(বুখারীঃ ৬১০)
==========০০০=========
কোন সময় কি বলতে হবে এবং সেগুলোর বাংলা অনুবাদ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা ..
✔ আল হামদুলিল্লাহ:-আল হামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ, সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোন সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমন ভাই আপনি কেমন আছেন? জবাবে বলা উচিত, আল হামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
✔ ইনশাআল্লাহ: - ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ, মহান আল্লাহ যদি চান তাহলে। ভবিষ্যতের হবে, করবো বা ঘটবে এমন কোন বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা সুন্নত। যেমন ইনশাআল্লাহ আমি আগামী কাল আপনার কাজটি করে দিবো। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।
✔ মাশা আল্লাহ:
মাশা আল্লাহ শব্দের অর্থ, আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। এটি আল হামদুলিল্লাহ শব্দের মতোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে কোনও সুন্দর এবং ভালো ব্যাপারে এটি বলা হয়। যেমন, মাশা আল্লাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো।
✔ সুবহানাল্লাহ:
সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্য জনক ভালো কোন কাজ হতে দেখলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমন সুবহানাল্লাহ! আগুনে পুরো ঘর পুরে গেলেও কুরআন শরীফ অক্ষত আছে।
✔নাউযুবিল্লাহ:
নাউযুবিল্লাহ শব্দের অর্থ, আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই। যে কোনও মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্ম-রক্ষার্থে এটি বলা হয়ে থাকে।
✔ আসতাগফিরুল্লাহ:
আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে আমরা এটি বলবো।
✔ ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন:
অর্থ, নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। যে কোনও দু:সংবাদ বা বিপদের সময় আমরা এটি বলবো।
✔লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ: অর্থ; মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোন আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোন ওয়াসওয়াসা বা দুরভিসন্ধিমূলক কোন প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য এটি পড়া উচিত।
✔ কারো সাথে দেখা হলে- হাই, হ্যালো না বলে বলুন- আস সালামু আলাইকুম (আপনার উপর মহান আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক)
✔ কেউ আপনার কোন উপকার করলে- তাকে থ্যাংক ইউ না বলে বলুন- জাযাকাল্লাহ খায়রান (মহান আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন)
✔ কারো কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময়- টা টা না বলে বলুন- আল্লাহ হাফেজ (মহান আল্লাহ সর্বোত্তম হিফাজতকারী) অথবা ফি আমানিল্লাহ।
 
No photo description available.

কুরআনের অলৌকিক ভাষাশৈলী

কুরআনের অলৌকিক ভাষাশৈলী 

 May be an image of one or more people and text

আয়াতুল কুরসী আয়াতটিকে মোট নয়টি বাক্যে ভাগ করা যায়। এই নয়টি বাক্যের মধ্যে চমৎকার একটি রিং স্ট্রাকচার লক্ষ্য করা যায়।
আয়াতুল কুরসীর প্রথম বাক্যটি খেয়াল করুন,
ٱللَّهُ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ
"আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক।"
এই বাক্যে আল্লাহর দুটো গুণবাচক নাম এসেছে। اَلۡحَیُّ এবং الۡقَیُّوۡمُ.
এবার আসুন শেষ বাক্য (৯ম) দেখি।
وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ
"এবং তিনি সুউচ্চ, সুমহান।"
এখানেও তাঁর দুটো গুণবাচক নাম উল্লেখ আছে। ٱلْعَلِىُّ এবং ٱلْعَظِيمُ.
অর্থাৎ, ১ম এবং শেষ বাক্যের চমৎকার মিল!
এবার আসি ২য় বাক্যে..
لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌۭ وَلَا نَوْمٌۭ
"তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা।"
তন্দ্রা ও নিদ্রা আসে সাধারণত ক্লান্তি থেকে। কেউ একটানা একটা একঘেয়ে কাজ করতে থাকলেও তন্দ্রা চলে আসে। কিন্তু, আল্লাহ এসব থেকে মুক্ত।
৮ম বাক্যে বলা হচ্ছে,
وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا
"আর এ দুটোর (আকাশ ও পৃথিবী) রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না।"
রক্ষণাবেক্ষণ বা দেখাশোনা করা একটা ক্লান্তিকর কাজ তাই না? ধরুন, একজন লোক সিসিটিভির সামনে বসে থাকে। তার কাজ সিকিউরিটির বিষয়াদি দেখাশোনা করা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে তাকিয়ে থাকে সিসিটিভির দিকে। এই কাজটা যথেষ্ট একঘেয়ে। আর একঘেয়ে কাজ ক্লান্তিকর।
আর ক্লান্তির সাথে সম্পর্কিত কী? তন্দ্রা ও নিদ্রা! যেটা বলা হয়েছে ২য় বাক্যে! অর্থাৎ, এই দুটো আয়াত মিলে বলা হয়েছে আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর রক্ষণাবেক্ষণ করেন, এতে তিনি বিন্দুমাত্রও ক্লান্ত বোধ করেন না, তাঁর তন্দ্রা-নিদ্রাও আসে না৷
এবার আসি ৩য় বাক্যে..
لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ
"আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর।"
এখানে কী বোঝানো হচ্ছে? এখানে বোঝানো হচ্ছে আসমান ও জমিনের সবকিছুর মালিক আল্লাহ। এই সবকিছু হচ্ছে তাঁর property.
আরবিতে মালিক শব্দটি দুটি অর্থ বহন করে। একটি হচ্ছে مَالِك যার অর্থ owner বা স্বত্বাধিকারী। আর অন্যটি হচ্ছে مَلِك যার অর্থ king বা রাজা।
এখন আল্লাহ আমাদের কোন মালিক? স্বত্বাধিকারী নাকি রাজা? উত্তর হচ্ছে দুটোই। তিনি বিশ্বজাহানের সবকিছুর স্বত্বাধিকারী (مَالِك) আবার সবার ওপর কতৃত্ববান (مَلِك)।
৩য় বাক্যটিতে তো শুধু স্বত্বাধিকারী বোঝাচ্ছে, তাহলে রাজা হওয়ার উল্লেখ কোথায় পাবো?
৭ম বাক্যেই পাচ্ছেন..
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ
"তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে।"
কুরসী কার থাকে? এক্সাকলি! রাজাদের থাকে। আল্লাহ তো বিশ্বজাহানের রাজা, সবার ওপর কতৃত্ববান (مَلِك)।
এবার আসি ৪র্থ বাক্যে..
مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِ
"কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে।"
এখানে দেখুন, একটা জেনারেল স্টেটমেন্ট- "হাশরের মাঠে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না" with an exception "তিনি অনুমতি দিলে পারবে"।
একই ব্যাপার ঘটেছে ৬নং বাক্যেও..
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍۢ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ
"একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারেনা।"
এখানেও একটা জেনারেল স্টেটমেন্ট- "তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা কেউ আয়ত্ত করতে পারেনা" with an exception "তিনি ইচ্ছা করলে পারে এবং যতটুকু ইচ্ছা করেন, ততটুকু পারে"।
এই দুটো বাক্যে আল্লাহ বেশ কিছু বিভ্রান্ত আকীদাকে ধূলিসাৎ করেছেন।
এক. যারা ভাবে পির আউলিয়া মাত্রই শাফায়াত করতে পারবে। (আল্লাহ অনুমতি না দিলে কেউই পারবে না, আল্লাহ বলছেন)
দুই. যারা ভাবে গায়েবের ইলম আল্লাহ ব্যতীত কারো আছে। যেমন- পীর আউলিয়া ইত্যাদি। (আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন গায়েবের ইলম দেন, যেমন রাসূলকে (স) তিনি বেশ কিছু বিষয় জানিয়েছিলেন। তাঁর ভবিষ্যৎবাণীগুলো পড়লে আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু, আল্লাহ না জানালে তিনি জানতে পারতেন না।)
চমৎকার বিন্যাস না?
১---৯
২---৮
৩---৭
৪---৬
এভাবে সামনের আর পেছনের বাক্যের চমৎকার সামঞ্জস্য!
চমক কিন্তু এখনো বাকি আছে। আর এটা বোধহয় সবচেয়ে বড় চমক। একেবারে মাঝের বাক্যটি লক্ষ্য করুন..
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
"তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন।"
এই বাক্যটির শিক্ষণীয় অর্থটি হচ্ছে আল্লাহ আদ্যোপান্ত জানেন। কিন্তু, আরেকটি চমৎকার বিষয় লক্ষ্য করুন! এটি একেবারে মাঝের বাক্য। এর সামনের এবং পেছনের প্রত্যেকটি আয়াত একে অপরের সাথে মিলসম্পন্ন। এবং, আল্লাহ বলছেন, তিনি জানেন সামনে ও পেছনে কী আছে!
এটা কি কো-ইনসিডেন্স? নাকি আল্লাহ ইঙ্গিত দিয়েছেন আয়াতুল কুরসীর এই লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য্যটি বের করার? সুবহান-আল্লাহ!
এবং, আল্লাহই অধিক অবগত।
...
কুরআনের অলৌকিক ভাষাশৈলী
মূলঃ উস্তাদ নোমান আলী খান
অনুবাদঃ আসিফ মাহমুদ
পর্বঃ ৪
[বিঃদ্রঃ রিং স্ট্রাকচার বোঝার জন্য কমেন্টে একটি ছবি সংযুক্ত করা হলো। ]