Saturday, April 24, 2021

মধু-মিলন

 

হৃদয়ের আদান-প্রদানের এই প্রথম সাক্ষাতে যৌন-মিলন করতে চেষ্টা না করাই স্বামীর উচিৎ। অবশ্য স্ত্রী রাজী ও প্রস্ত্তত থাকলে সে কথা ভিন্ন। স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর ইঙ্গিতে সাড়া দেওয়া। এমন কি গোসলের পানি না থাকলেও স্ত্রীর ‘না’ করার অধিকার নেই।[1]

যেহেতু স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানার দিকে ডাকে, তখন স্ত্রী যেতে অস্বীকার করলে এবং স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটালে প্রভাতকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ স্ত্রীর উপর অভিশাপ করে থাকেন।[2]

স্ত্রী রান্নাশালে রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও (অথবা সফরের জন্য সওয়ারীর পিঠে থাকলেও) স্বামীর ডাকে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব।[3]

এই মিলনে রয়েছে সদকার সম-পরিমাণ সওয়াব।[4]

একটানা নফল ইবাদত ত্যাগ করেও স্ত্রী-মিলন করা ইসলামের বিধান।[5]

এই জন্যই স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে না।[6]

সুতরাং অন্যান্য ব্যস্ততা ত্যাগ করে সঙ্গমের মাধ্যমে উভয়ের মনে মহাশান্তি আনয়ন একান্ত কর্তব্য।

মিলনে কেবল স্বামীর নিজের যৌনতৃষ্ণা নিবারণই যেন উদ্দেশ্য না হয়। কেবল নিজের উত্তেজনা ও কামাগ্নি নির্বাপিত করতে এবং স্ত্রীর মানসিক, শারীরিক, প্রভৃতি অবস্থা খেয়াল না করে অথবা তাকে উত্তেজিতা না করে অথবা তার বীর্যস্খলন বা পূর্ণতৃপ্তির কথা না ভেবে কেবল নিজের বীর্যপাত ও তৃপ্তিকেই প্রাধান্য দিয়ে মিলন মধু-মিলন নয়। উভয়ের পূর্ণ তৃপ্তিই হল প্রকৃত মধুর মিলন। সুতরাং সঙ্গমের পূর্বে বিভিন্ন শৃঙ্গার; আলিঙ্গন, চুম্বন, দংশন, মর্দন প্রভৃতির ভূমিকা জরুরী। নচেৎ স্ত্রী এই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলে তার নিকট প্রেমের কোন স্বাদই থাকবে না। পতি পেয়েও উপপতির চিন্তায় দিনপাত করবে। অতএব সচেতন যুবক যেন এতে ভুল না করে বসে। নচেৎ বিয়ের আসল উদ্দেশ্য (ব্যভিচার উৎখাত) বিফল হয়ে যাবে।[7]

প্রকাশ যে, শৃঙ্গারের সময় স্ত্রীর স্তনবৃন্ত দংশন ও চোষন কোন দোষের নয়।[8]

অবশ্য একে অন্যের লজ্জাস্থান লেহন ও চোষণ অবশ্যই ঘৃণিত আচরণ।

মিলনের জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ বা সময় নেই। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং মনের চাহিদা থাকলে তা করা যায়। অবশ্য অধিক নেশায় স্বাস্থ্য হারানো উচিৎ নয়। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বিনা স্পর্শ ও যৌন চিন্তায় যখন যৌনাঙ্গ স্ফীত হয়ে উঠে ঠিক সেই সময়েই করা উচিৎ। তবে মনে রাখার কথা যে, একে অপরের যৌনক্ষুধা মিটাতে অসমর্থ হলে এবং যৌনবাজারে একজন গরম ও অপরজন ঠান্ডা হলে সংসারে কলহ নেমে আসে।

যেমন সঙ্গমের নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতিও ইসলামে বর্ণিত হয়নি। এই সময় করলে সন্তান নির্বোধ হয়, ঐভাবে করলে সন্তান অন্ধ, বধির বা বিকলাঙ্গ হয় ইত্যাদি কথার স্বীকৃতি ইসলামে নেই।

আল্লাহ পাক বলেন,

﴿نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ﴾

‘‘তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের শষ্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।[9]

অতএব সমস্ত রকমের আসন বৈধ। সমস্ত বৈধ সময়ে সঙ্গম বৈধ। অমাবস্যা-পূর্ণিমা প্রভৃতি কোন শুভাশুভ দিন বা রাত নয়। এতে সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় না।[10]

স্ত্রীর মাসিক হলে সঙ্গম হারাম। কারণ, এই স্রাব অশুচি। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীর নিকট সঙ্গমের জন্য যাওয়া নিষিদ্ধ।[11]

মাসিকাবস্থায় সঙ্গম করা এক প্রকার কুফরী।[12]

সহবাস করে ফেললে এক দ্বীনার (সওয়া চার গ্রাম পরিমাণ সোনা অথবা তার মূল্য, না পারলে এর অর্ধ পরিমাণ অর্থ) সদকাহ করে কাফ্ফারা দিতে হবে।[13]

এ ছাড়া এই অবস্থায় সঙ্গমে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যগত বিশেষ ক্ষতিও রয়েছে অনেক।[14]

অবশ্য মাসিকাবস্থায় সঙ্গম ছাড়া অন্যান্যভাবে যৌনাচার বৈধ।[15]

যেমন, এই সময় বা অন্যান্য সময় স্ত্রীর ঊরুমৈথুন বৈধ। এতে বীর্যপাত হলেও দোষ নেই।[16]

তবে স্ত্রীর পায়ুপথে (মলদ্বারে) সঙ্গম হারাম। যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে অভিশপ্ত।[17] এমন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকিয়েও দেখবেন না।[18] এমন কাজও এক প্রকার কুফরী।[19] সুতরাং এই সঙ্গমে স্ত্রীর সম্মত না হওয়া ফরয।

উল্লেখ্য যে, নেফাসের অবস্থাতেও সঙ্গম হারাম। গর্ভাবস্থায় যদি ভ্রূণের কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে খুবই সতর্কতার সাথে বৈধ।[20]

নির্জন কক্ষে কোন পর্দার ভিতরেই মিলন করা লজ্জাশীলতার পরিচয়। অবশ্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ নগ্নাবস্থায় দেখতে পারে।[21]

এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই। ‘ স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রাঃ) কখনও স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হয়। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়।[22]

পক্ষান্তরে আল্লাহ বলেন,

﴿هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ﴾

‘‘ওরা (স্ত্রীরা) তোমাদের লেবাস এবং তোমরা তাদের লেবাস।’’[23]

ঘুমন্ত হলেও নিজ সন্তান বা অন্য কেউ কক্ষে থাকলে সঙ্গম করা উচিৎ নয়। তবে শিশু একান্ত অবোধ হলে ভিন্ন কথা।

প্রকাশ যে, মেয়েদের যৌন-মিলন না করার সাধারণ ধৈর্য-সীমা চার মাস। তাই পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া এবং উভয়ের সম্মত চুক্তি ব্যতীত এর অধিক সময় বিরহে কাটানো বৈধ নয়।[24]

সঙ্গমের পূর্বে নিম্নের দুআ পাঠ কর্তব্য;

بِسْمِ اللهِ، اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا.

চ্চারণঃ- বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রাযাক্বতানা

অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের নিকট থেকে শয়তানকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তার নিকট থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।

এই দুআ পাঠ করে সহবাস করলে উক্ত সহবাসের ফলে সৃষ্টি সন্তানের কোন ক্ষতি শয়তান করতে পারে না।[25]

প্রকাশ যে, শয়তানও মানুষের সন্তান-সন্ততিতে অংশগ্রহণ করে থাকে; যদি সঙ্গমের পূর্বে আল্লাহর নাম না নেওয়া হয় তাহলে।[26]

সঙ্গম বা বীর্যপাতের পর গোসল (মাথা শুদ্ধ সর্বশরীর ধোয়া) ফরয। তবে নগ্নাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী আলিঙ্গনাদি করলে, বীর্যপাত না হলে এবং মযী (বীর্যের পূর্বে নির্গত আঠাল তরল পদার্থ) বের হলেও গোসল ফরয নয়। লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।

লিঙ্গাগ্র যোনী-মুখে প্রবেশ করালে বীর্যপাত না হলেও উভয়ের উপর গোসল ফরয। অনুরূপ লিঙ্গাগ্র যোনীপথে প্রবেশ না করিয়েও যে কোন প্রকারে বীর্যপাত করলে গোসল ফরয।[27]

স্ত্রীর ঊরু-মৈথুন করে বীর্যপাত করলে স্বামী গোসল করবে। স্ত্রী (বীর্যপাত না হলে) গোসল করবে না। ঊরু ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।[28]

একাধিক বার সঙ্গম অথবা গোসল ফরযের একাধিক কারণ হলেও শেষে একবার গোসলই যথেষ্ট।[29] স্বামী-সঙ্গম করার পর-পরই স্ত্রীর মাসিক শুরু হয়ে গেলে একেবারে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর গোসল করতে পারে।[30] অর্থাৎ মাসিকাবস্থায় পূর্ব-সঙ্গমের জন্য গোসল জরুরী নয়।

প্রথমে স্বামী গোসল করে স্ত্রীর গোসল করার পূর্বে শীতে তার দেহের উত্তাপ নেওয়া কোন দোষের নয়।[31]

একই রাত্রে বা দিনে একাধিকবার সহবাস করতে চাইলে দুই সহবাসের মাঝে ওযু করে নেওয়া উচিৎ। অবশ্য গোসল করলে আরো উত্তম। এতে পুনর্মিলনে অধিকতর তৃপ্তি লাভ হয়।[32]

নিদ্রার পূর্বে সঙ্গম করে ফজরের পূর্বে গোসল করতে চাইলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু অথবা তায়াম্মুম করে শয়ন করা উত্তম।[33]

অবশ্য সর্বোত্তম হলো ঘুমাবার পূর্বেই গোসল করে নেওয়া।[34] কারণ, দীর্ঘক্ষণ নাপাকে না থাকাই শ্রেয়। তবে গোসল না করে যেন কোন নামায নষ্ট না হয়। যেহেতু যথাসময়ে নামায আদায় করা ফরয।

রোযার দিনে স্ত্রীচুম্বন ও শৃঙ্গারাচারে বীর্যপাত না হলে রোযা নষ্ট হয় না।[35] যদিও প্রেমকেলিতে মযী স্খলন হয় তবুও কোন ক্ষতি নেই।[36]

স্ত্রীর হস্তমৈথুনে বা সমকামে বীর্যপাত করলে রোযা নষ্ট হয়।[37]

স্বামী-স্ত্রী কোন প্রকার ভুলে রোযার দিনে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়লে মনে পড়া মাত্র পৃথক হয়ে যাবে। এর জন্য কাযা কাফ্ফারা নেই।[38]

ইচ্ছাকৃত সঙ্গম করলে তওবা, রোযা কাযা এবং কাফ্ফারা ওয়াজেব; একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে, না পারলে (যথার্থ ওজর ছাড়া) নিরবচ্ছিন্নভাবে দুই মাস একটানা রোযা পালন করবে, তা না পারলে ষাটজন গরীবকে (মাথাপিছু ১কিলো ২৫০ গ্রাম করে) খাদ্য (চাল) দান করতে হবে।[39]

অবশ্য স্ত্রী সম্মত না হলে জোরপূর্বক সহবাস করলে স্ত্রীর রোযা নষ্ট হয় না।[40]

ই’তিকাফ অবস্থায় সঙ্গম বৈধ নয়।[41]

হজ্জ করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় সঙ্গম করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। হজ্জের সমস্ত কাজ পূর্ণ করতে হবে, মক্কায় অতিরিক্ত একটি উট ফিদয়াহ দিতে হবে এবং নফল হলেও ঐ হজ্জ আগামীতে কাযা করতে হবে।[42]

মিলনের গুপ্ত রহস্য বন্ধু-সখী বা আর কারো নিকট প্রকাশ করা হারাম। স্ত্রী-সঙ্গমের কথা যে অপরের নিকট খুলে বলে সে ব্যক্তি কিয়ামতে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ের লোকেদের দলভুক্ত হবে।[43]

এমন ব্যক্তি তো সেই শয়তানের মত, যে কোন নারী-শয়তানকে রাস্তায় পেয়ে সঙ্গম করতে লাগে, আর লোকেরা তার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে।[44]

উল্লেখ্য যে, বিবাহ-বন্ধনের পর সারার পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ ও মিলন বৈধ।[45]

প্রকাশ থাকে যে, বাসর রাত্রির শেষ প্রভাতে দুধ ইত্যাদি দিয়ে বাসর ঠান্ডা করার আচার ইসলামী নয়।

বরের জন্য বাসর-সকালে উঠে বাড়িতে উপস্থিত আত্মীয়-সবজনকে সালাম দেওয়া এবং তাদের জন্য দুআ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-সবজনেরও মুস্তাহাব, তার জন্য অনুরূপ সালাম-দুআ করা। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এমনটি করেছেন।[46]

[1] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৯৬পৃঃ)

[2] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩২নং)

[3] (নাসাঈ, ত্বাহাবী, মুশকিলুল আসার, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৭নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩৪নং)

[4] (মুসলিম, নাসাঈ)

[5] (বুখারী মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৪৫নং)

[6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৬৯নং)

[7] (অকাফাত মাআল উসরাহ, সাবরী শাহীন ৫০-৫১পৃঃ)

[8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৫৭)

[9] (সূরা বাক্বারা ২/২২৩)

[10] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ৯৯-১০০পৃঃ)

[11] (আলকুরআন কারীম ২/২২২)

[12] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১২০-১২১)

[13] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আযি ১২২পৃঃ)

[14] (তুহফাতুল আরূস, ১৩৯ পৃঃ)

[15] (মুসলিম, আবু দাঊদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২১-১২২পৃঃ)

[16] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০)

[17] (আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ)

[18] (নাসাঈ, তিরমিযী)

[19] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ১০১-১০৪পৃঃ)

[20] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ)

[21] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬)

[22] (দেখুন, তুহফাতুল আরূস, ১১৮-১১৯পৃঃ)

[23] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)

[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭৭পৃঃ)

[25] (বুখারী, আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ৯৮পৃঃ)

[26] (সূরা ইসরা (১৭) : ৬৪, তফসীর ইবনে কাসীর ৩/৫৪)

[27] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/৮৯)

[28] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০পৃঃ)

[29] (ঐ ১/১২৫পৃঃ)

[30] (ঐ ১/১২৪)

[31] (আদাবুয যিফাফ ১০৫ পৃঃ)

[32] (মুসলিম, ইবনে আবী শাইবাহ , মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তাবঃ, আদাবুয যিফাফ ১০৮পৃঃ)

[33] (আদাবুয যিফাফ ১১৩,১১৭-১১৮ পৃঃ)

[34] (ঐ১১৮পৃঃ)

[35] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৫)

[36] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১০৪)

[37] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৭)

[38] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১৩)

[39] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪১৩-৪১৪)

[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫৪২)

[41] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)

[42] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/২৩২)

[43] (ইবনে আবী শাইবাহ , মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪২ পৃঃ)

[44] (মুসনাদে আহমদ,ইবনে আবী শাইবাহ ,আবু দাঊদ,বাইহাকী,প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪৩-১৪৪ পৃঃ)

[45] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/২০৬)

[46] (নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৮-১৩৯ পৃঃ)

শুভ বাসর

 

শুভ বাসর রজনী। জীবনের মধুরতম রাত্রি। রোমাঞ্চকর পুলকময়ী যামিনী। নব দম্পতির, নব দুই প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম সাক্ষাৎ ও প্রথম মিলনের শুভ সন্ধিক্ষণ। এই বাসর-কক্ষটি হবে মনোরম, সৌরভময়, সুসজ্জিত ও আলোকমন্ডিত। (অবশ্য এতে অপব্যয় করা উচিৎ নয়।) কক্ষের একপাশের্ব থাকবে কিছু ফলফ্রুট, দুধ অথবা মিষ্টান্ন ও পানি। বর ওযু করে বাসরে নব সাথীর অপেক্ষা করবে। নববধূকে ওযু করিয়ে সুসজ্জিতা ও সুরভিতা করে ভাবীরা এবং অন্যান্য মহিলারাও এই দুআ বলবে,

عَلَى الْخَيْرِ وَالْبَرَكَةِ وَعَلى خَيْرٍ طَائِرٍ.

উচ্চারণঃ- আলাল খাইরি অলবারাকাহ, অআলা খাইরিন তবা-ইর।

অর্থাৎ, মঙ্গল ও বর্কতের উপর এবং সৌভাগ্যের সাথে (তোমার নবজীবনের সূচনা হোক)।[1]

অতঃপর তাকে বাসর ঘরে ছেড়ে আসবে। পূর্ব হতেই স্বামী বাসরে থাকলে স্ত্রী সশ্রদ্ধ সালাম করে কক্ষে প্রবেশ করবে। স্বামী সস্নেহে উত্তর দেবে এবং উঠে মুসাফাহা করে শয্যায় বসাবে। কুশলাদি জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে ২ রাকআত নামায পড়বে। তবে স্ত্রী দাঁড়াবে স্বামীর পশ্চাতে। মুসলিম দম্পতির নবজীবনের শুভারম্ভ হবে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে। স্বামীর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর নামায পড়াতে তার (বৈধ বিষয়ে) আনুগত্য করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। সুতরাং প্রথমতঃ আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিতীয়তঃ স্বামীর আনুগত্য ও খিদমত হল নারীর ধর্ম।

অতঃপর স্বামী দুআ করবে,

اَللّهُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْ أَهْلِيْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِيَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَاجَمَعْتَ بِخَيْرٍ،

وَفَرِّقْ بَيْنَناَ إِذَا فَرَّقْتَ إِلى خَيْرٍ.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা বা-রিকলী ফী আহ্লী, অবা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লা-হুম্মাজমা’ বাইনানা মা জামা’তা বিখাইর, অফার্রিকব বাইনানা ইযা ফাররাকব্তা ইলা খাইর।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাকে আমার পরিবারে বর্কত ও প্রাচুর্য দান কর এবং ওদের জন্যও আমার মাঝে বর্কত ও মঙ্গল দান কর। হে আল্লাহ! যতদিন আমাদেরকে একত্রিত রাখবে ততদিন মঙ্গলের উপর আমাদেরকে অবিছিন্ন রেখো এবং বিছিন্ন করলে মঙ্গলের জন্যই আমাদেরকে বিছিন্ন করো।[2]

অতঃপর উঠে শয্যায় বসে স্বামী স্ত্রীর ললাটে হাত রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে এই দুআ পাঠ করবে;

اَللّهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَخَيْرِ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ،

وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন খাইরিহা অখাইরি মা জাবালতাহা আলাইহি, অআঊযু বিকা মিন শার্রিহা অশার্রি মা জাবালতাহা আলাইহ।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এর মঙ্গল এবং এর মধ্যে তোমার সৃষ্ট প্রকৃতির মঙ্গল প্রার্থনা করছি। আর তোমার নিকট এর অমঙ্গল এবং এর মাঝে তোমার সৃষ্ট প্রকৃতির অমঙ্গল হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।[3]

অতঃপর সপ্রেমে কোলে টেনে নিয়ে একটা চুম্বন দিয়ে স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘আমাকে পেয়ে খুশী হয়েছ তো প্রিয়ে?’

স্ত্রী লজ্জা ও ভয় কাটিয়ে বলবে, ‘আলহামদু লিল্লাহ, খুব খুশী হয়েছি। আপনি খুশী তো?’

স্বামী বলবে, ‘আলহামদু লিল্লাহ, শত খুশী।’

তারপর দুধ, ফল বা মিষ্টি নিয়ে একে অপরকে খাইয়ে দেবে। এই ভাবে নববধূর মন থেকে ভয় ও লজ্জা ধীরে ধীরে দূরীভূত হবে। উদ্বেলিত হবে প্রেমের তরঙ্গমালা।

প্রকাশ যে, একজনের পাত্রে হাত রেখে অপরজনের খাওয়া কুপ্রথা।

এই সময় শুধু যৌন চিন্তাই নয় বরং ভাবী জীবনের বহু পরিকল্পনার কথাও উভয়ে আলোচনা করবে। একে অপরকে বিশেষ উপদেশ ও পরামর্শ দেবে।

আবু দারদা তাঁর স্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘যখন আমাকে দেখবে যে, আমি রেগে গেছি, তখন তুমি আমার রাগ মিটাবার চেষ্টা করবে। আর তোমাকে রেগে যেতে দেখলে আমিও তোমার রাগ মিটাব।’[4]

আবুল আসওয়াদ তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘প্রিয়ে আমি ভুল করে ফেললে আমার কাছে বদলা নেবার চেষ্টা না করে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমি ক্রোধাw¦বত হয়ে কথা বললে তুমি আমার মুখের উপর মুখ দিও না। এতে আমাদের ভালোবাসা চিরস্থায়ী ও মধুর হবে।’

এক স্ত্রী বলেছিল, ‘প্রিয়! মেয়েদের মন ঠুনকো কাঁচের পাত্র। সামান্য (কথার) আঘাতে তাই ভেঙে যায়। তাই হয়তো স্বামীর উপরেও মুখ চালায়। তাই একটু মানিয়ে চলবেন।’

স্বামী বলল, ‘তা ঠিক, তাই কাঁচের টুকরা স্বামীর মর্যাদায় বিঁধে কষ্ট দেয়। তাছাড়া মেয়েদের মন কাঁচের হলেও মুখখানা কিন্তু পাকা ইস্পাতের। তাই সব ভেঙে গেলেও মুখ অক্ষত অবস্থায় সবেগে চলমান থাকে। অথচ মুখখানা কাঁচের ও মনখানা লোহার হলে আগুনে ঘি পড়ে না। দাম্পত্যও হয় মধুর।’

‘‘বিবাহের রঙে রাঙা আজ সব; রাঙা মন, রাঙা আভরণ,

বল নারী ‘এই রক্ত আলোকে আজ মম নব জাগরণ।’

পাপে নয় পতিপুণ্যে সুমতি

থাকে যেন হয়ো পতির সারথি

পতি যদি হয় অন্ধ হে সতী!

বেঁধোনা নয়নে আবরণ;

অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন তোমার সত্য আচরণ।’’

সতর্কতার বিষয় যে, এই রাত্রে বা অন্য কোন সময়েও পরস্পরের পূর্বেকার ইতিহাস জানতে না চাওয়াই উভয়ের জন্য উত্তম। নচেৎ মধুরাত্রি বিষরাত্রিতে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য যে, বাসরে বর-কনের কথোপকথনে কানাচি পাতা হারাম। কানাচি পেতে গোপন কথা যে শোনে, কিয়ামতে তার কানে গলিত সীসা ঢালা হবে।[5]

নব-দম্পতির প্রেমের জোয়ার পল্লবিত করুক তাদের জীবন ও যৌবনের উভয় কুলকে; এতে অপরের কাজ কি?

‘বাতি আনে রাতি আনার প্রীতি,

বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি।

বিজন ঘরে এখন যে গায় গীতি।।

একলা থাকার গানখানি সে গা’বে

উদাস পথিক ভাবে।’

কিন্তু মিলন-তৃষ্ণার্ত স্বামী কি ধৈর্য রাখতে চাইবে? মন তার গাইবেঃ-

‘গুণ্ঠন খোল এই নির্জনে আফোটা প্রেমের গুঞ্জ,

এনেছি পরাতে অলকে তোমার আলো ক’রে হূদিকুঞ্জ।

রত্ন প্রবাহ আনিয়া সবপনে,

সপিব তোমারে দখিনা পবনে-

মন ফাগুনের ফাগ মেখে সই নাচিবে কামনাপুঞ্জ।’

[1] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ১৭৪ পৃঃ)

[2] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ, আব্দুর রাযাযাক, মুসান্নাফ, তাবঃ, প্রভৃতি ,আদাবুয যিফাফ ৯৪-৯৬পৃঃ)

[3] (আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম , বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ৯২-৯৩পৃঃ)

[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৮)

[5] (বুখারী ৭০৪২নং)