একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন— প্রতিদিন যদি আমরা আট ঘন্টা করেও ঘুমাই তবে এর অর্থ হবে আমাদের জীবনের এক তৃতীয়াংশ ঘুমের মধ্যেই অতিবাহিত হয়ে যায়৷ যদিও ঘুম মৃত্যুর মতোই৷ ঘুমের ঘোরে চোখ বন্ধ করে থাকি যখন আমরা দুনিয়া থেকে বেখবর হয়ে যাই৷ তবু, জীবদ্দশায় আমাদের ঘুম এটা তো আমার জীবনেরই অংশ৷ আল্লাহ তায়ালা যে কেয়ামতের দিন আমার জীবনের হিসাব নিবেন তখন কি এই দৈনন্দিন আট ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটালাম তার হিসাব চাইবেন না! অবশ্যই চাইবেন৷ জীবনের প্রতিটি প্রশ্বাসের, প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব তিনি চাইবেন৷
প্রখ্যাত সাহাবি মুআজ ইবনে জাবাল একদিন বলছেন আবু মুসা আশয়ারি রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে— আমি তো আমার ঘুম থেকেও সওয়াবের আশা রাখি৷ যেমন সওয়াবের প্রত্যাশা করি আমার নামাজ, আমার রোজা ও আমার তাবৎ ইবাদাত থেকে৷
(আসসালাতু ওয়াত তাহাজ্জুদ)
সুবহানাল্লাহ৷ আমরা তো মনে করি আমাদের ঘুম কেবল শরীরের ক্লান্তি নিবারক৷ দিনের যত শ্রান্তি তা দূর করবার জন্যে আমি বিছানার বুকে এলিয়ে দিই আমার দেহ৷ ঘুম আমার কাছে কেবলই একটা মেডিসিনের মতো: যা আমার শরীরে এনার্জি ফিরিয়ে দেয়৷
কিন্তু সাবাহায়ে কেরাম দেখেন ঘুমকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতেন৷ তাদের কাছে ঘুম কেবলই ক্লান্তি নিবারক নয়৷ সেটা তো আছেই৷ ঘুম তো ক্লান্তি দূর করবেই৷ “আর আমি নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি নিবারণকারী” (সূরা নাবা) কিন্তু তারা এটাকে ইবাদাতও মনে করতেন৷
কেন?
কিভাবে তাঁরা ঘুমের মতোন একটা আবশ্যিক মানবিক কাজকে ইবাদাত ভাবছেন! তাঁরা ভাবতে পারছেন— কারণ তাঁদের ঘুমটাও যে ছিল কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী৷ তাঁদের সামনে ছিল নবিজীর ঘুমের চিত্র৷ তাঁরা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ঘুমের বেলাতে এসেও ফলো করতেন নবিজীকে৷ এবং পূর্ণ মাত্রায়৷ তাই তাঁরা বলতে পেরেছেন— আমাদের ঘুম আমাদের ইবাদাত৷ বিনিময়ে তাঁরা হয়ে উঠেছেন মুমিনের আইডল৷ ইমান পরিমাপের মাপকাঠি৷
তোমরা ইমান আনো যেমন ইমান এনেছে মানুষেরা (সাহাবায়ে কেরাম)
(সুরা বাকারা)
এখন আমাদের ঘুমকে ইবাদাতের অংশ করবার জন্যে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে ঘুমোতেন৷ ঘুমোবার পূর্বে আরও কি কি প্রাসঙ্গিক কাজ করতেন৷ এবং এটাও আমাদের জন্যে জেনে নেয়া প্রয়োজন— ঘুম থেকে জেগেই বা নবিজী কী করতেন!
এসব কিছু জেনে নিজেদের জীবনে যদি তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি তবে আমার হৃদয়ও আমাকে বলবে— তোমার ঘুম থেকে তুমি সওয়াবের আশা করতে পারো৷
ক্রমশ...