Wednesday, April 28, 2021

জাদুটোনা শয়তানের কুপ্রভাব থেকে বাঁচার উপায়

 May be an image of text that says 'জাদুটোনা শেয়তানের বেঁচে থাকার শ থেকে'

 জাদুটোনা শয়তানের কুপ্রভাব থেকে বাঁচার উপায়

 

আমাদের প্রতিবেশী এক নানু আম্মুর কাছে খুব আক্ষেপ করছিলেন উনার মেয়েদের বিয়ে শত্রুপক্ষ বারবার কুফরি করে আটকে রাখা নিয়ে।
অনলাইনে পরিচিত এক বোনের সাংসারিক জীবনের করুণ কাহিনী জানি। দুশ্চারিত্রা শাশুড়ির কুফরি কালামের আশ্রয়ে জাদুর বলয়ে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থায় পৌছিয়েছে।
এমন ঘটনা খুজে দেখলে অনেক পাওয়া যাবে।
ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কুফুরি কালাম বা জাদু টোনা এখন খুব কমন একটি প্র্যাকটিস বলা চলে। টিভি, পেপার, রাস্তায় রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে এদিকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে।
 আর আমরা জানি নাওয়াক্বিদুল ঈমান তথা ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণের মাঝে একটি হল জাদু করা ও জাদুকরের কাছে গিয়ে সাহায্য চাওয়া।
এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, 
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।[বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।]
 
আর এটি কোন কল্পকাহিনী নয়। কুফুরি কালামের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করা, আত্মীয়ের ছেলে বা মেয়ের বিয়ে আটকিয়ে রাখা, পড়াশোনা, ব্যবসা, চাকরি ইত্যাদির ক্ষতি করা, কাউকে মানসিক ভারসাম্যহীন করে ফেলা, এমনকি এক্সট্রিম পর্যায়ের কুফুরি কালাম করে মানুষকে মেরে ফেলা পর্যন্ত সম্ভব।
আর এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কেউ যাদুকরের কাছে গেলে তারও ঈমান চলে যাবে। একসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনে হুশিয়ারি করে বলেন, ‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’ (বাক্বারাহ ১০২)।
সুন্নতি লিবাসে প্রচুর শয়তান আজ এসবের সাথে জড়িত। আত্মীয়স্বজনের মাঝে বা পরিচিতদের অনেকেই কারো ভালো দেখতে না পেরে হিংসায় এগুলো করে থাকে। অথচ এই জাহেল মানুষগুলো বুঝে না এর মাধ্যমে তারা ইসলাম থেকেই বের হয়ে যায়। তাদের পূর্বের সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়। এগুলো নিজেকে করা লাগে না, টাকার বিনিময়ে কিছু মানুষরুপী জানোয়ারের মাধ্যমে এগুলো খুব সহজেই করা যায় এবং আমাদের চারপাশের হাজার হাজার লোকজন এগুলো করছে। এবং এর ফলাফল হয় খুব ভয়াবহ। কেননা এইসব কুফুরি কালামের প্রভাব কার্যকরী। ক্রমাগত জঘন্য সব কুফুরি আর শির্ক করার মাধ্যমে শয়তানকে খুশি করা হয় আর শয়তান এসে তাদের কাজ করে দেয়। যারা জানেন না এগুলো কীভাবে করে, না জানাই ভালো। কেননা এগুলো জানা কোন জরুরী বিষয় নয়, জরুরী বিষয় হল এগুলো থেকে কীভাবে বেঁচে থাকবেন।
স্বয়ং রসুলুল্লাহ(ﷺ) কে কুফুরি কালাম করা হয়েছিল এবং উনার উপর এর প্রভাব কার্যকর করে আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন তা সত্য এবং আমাদের বেলায়ও তা হবে। এবং মৃত্যু পর্যন্ত উনার উপর এর কিছুটা প্রভাব ছিল বলে অনেক আলিম বলেছেন। এরই প্রেক্ষিতে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হয়। যারা বলেন তাহলে তো গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও গোলাপি আন্টি একজন আরেকজনকে এভাবে ধ্বংস করে দিতো, পারছে না কেন? তাদের জানা উচিত এইসব নেতারা কুফুরি কালামের মাধ্যমে বহু আগে থেকেই নিজেদেরকে প্রটেকশান দিয়ে রেখেছে। শুধু এই উপমহাদেশ নয় বরং ইউরোপ আমেরিকার নেতারাও প্রতিপক্ষের হাত থেকে বাঁচার জন্য এগুলোতে অভ্যস্থ। যারা এগুলো নিয়ে ঘেঁটেছেন তারা সহজেই বুঝতে পারবেন।
আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, الوقایة خیرمن العلاج অর্থাৎ প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তমতাই জাদু শয়তান ও জ্বিনের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
১) আকীদা বিশুদ্ধ করুন।
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার আকিদা বিশুদ্ধ করা। সে দৃড়ভাবে বিশ্বাস করবে যে, যা কিছু হয় সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। মুসীবত, কষ্ট, যন্ত্রণা সবই আল্লাহর হুকুমে হয়। আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। না জাদুটোনা, না জ্বিন-শয়তান, না কোন সুপার পাওয়ার দাবিদার কেউ।
আল্লাহ তা'আলা বলেছে, "আর তারা (জাদুকরেরা) আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন ক্ষতি করতে পারে না।" [সূরা বাকারা : ১০২]
যেহেতু আল্লাহর ইরাদা ও ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছু হয় না। তাই সুস্থতা-অসুস্থতা, বিপদ-আপদে সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে ফিরে আসায় কল্যাণকর।
 
২) তাকওয়া অর্জন করা।
সমস্ত কাজে আল্লাহর হুকুমকে সর্বাগ্রে এবং সব নিষেধ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। যে তাকওয়া অর্জন করে আল্লাহ তাকে সব রকম বিপদাপদ ও কষ্ট থেকে উদ্ধার করেন।
আল্লাহ বলেছেন- "যে তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তাকে (বিপদাপদ ও পেরেশানি থেকে) বের হবার রাস্তা করে দেবেন।" [সূরা তালাক : ২]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, "তোমরা যদি সবর ও তাকওয়া গ্রহণ করো, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।" [সূরা আল ইমরান : ১১০]
 
৩) আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখুন।
সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। যে বান্দা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেন আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহ বলেছেন, "যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।" [সূরা তালাক : ৩]
 
৪) ইস্তি'আযাহ করুন।
জাদু ও জাদুর প্রভাবে সবচে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বিন ও শয়তান। বেশির ভাগ সময় তাদের মাধ্যমে জাদু করা হয়। তাই জ্বিন ও শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াকে 'ইস্তি'আযাহ' বলে। তাই ইস্তি'আযার আয়াত, দু'আ ও যিকির-আযকারকে দৈনন্দিন আমল বানিয়ে নিন।
যেমন বেশি বেশি এ আয়াত পড়ুন-
رب اعوذ بک من ھمزت الشيطين - واعوذ بک رب ان يحضرون
‘হে আমার রব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা থেকে।
আর হে আমার রব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার কাছে তাদের উপস্থিতি থেকে।’ [সূরা মু'মিনুন : ৯৭-৯৮]
৫) আজওয়া খেজুর খান।
সসম্ভব হলে জাদুর কুপ্রভাব থেকে বাঁচার জন্য আজওয়া খেজুর খান।
সা‘দ (রাযি.) তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাতটি আজওয়া উৎকৃষ্ট খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করবে না। [সহীহ বুখারী, ৫৪৪৫]
 
৬) সকাল-সন্ধ্যার আমল করুন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে দু'আগুলো সকাল-সন্ধ্যায় শিখিয়েছেন, তা গুরুত্বের সাথে পাঠ করুন।
যেমন-
 
ক. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে ও ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী পড়া। একটি হাদীসে এসেছে, "যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পড়বে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একজ ফেরেস্তা নিযুক্ত করা হবে, সে সারারাত পাঠকারী বান্দাকে পাহারা দেয়। শয়তানকে তার কাছে ঘেষতে দেয় না।" [সহীহ বুখারী, ২৩১১]
 
খ. ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত দ্বারাও শয়তান ও জাদু থেকে হিফাজতে থাকা যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।" [সহীহ মুসলিম, ৭৮০]
 
গ. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতের বেলা পাঠ করাও গুরুত্বপূর্ণ। তা মানুষকে জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে, এই দুই আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হবে।" [সহীহ মুসলিম, ৮০৭]
 
ঘ. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস বেশি বেশি পড়তে থাকা। বিশেষ করে প্রত্যেক সালাতের পর একবার করে এবং ফজর ও মাগরিবের পরে প্রত্যেক সূরা তিনবার তিনবার করে পড়লে দুনিয়ার সবকিছুর জন্য যথেষ্ট হবে।
 
ঙ. সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার নিচের দু'আটি পড়লে দুনিয়ার কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। দু'আটি হলো,
«بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الازض ولا في السماء وھو السميع العليم».
“আল্লাহ্‌র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”[ আবূ দাউদ, ৪/৩২৩, নং ৫০৮৮; তিরমিযী, ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৮; ইবন মাজাহ, নং ৩৮৬৯; আহমাদ, নং ৪৪৬।]
 
৭) মানুষের সাথে শত্রুতা থাকলে তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। 
 
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমাদের সকলকে হিফাজত করুন।
||জাদুটোনা (শয়তানের কুপ্রভাব) থেকে বেঁচে থাকার উপায়||
~ জেবা ফারিহা

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment