পিরিয়ডের সময়ে রুকইয়া করা যাবে কি? ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ রুকইয়াহ করলেই কি মনের আশা পূর্ণ হবে? বিয়ে, সন্তান, আয়-রোজগার এবং ডিপ্রেশন সমস্যা স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু
পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় রুকইয়া করা যাবে কি?
ই বিষয়ে আমি বড়দের সাথে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তারপরে নিশ্চিত বলতে
পারবো। তবে আমার ছোট্ট জ্ঞানে প্রথম এবং শেষ সিদ্ধান্ত নিম্নরূপ –
প্রশ্নঃ রুকইয়া শোনা যাবে কি না।
.
উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। কোরআন শোনার জন্য পবিত্রতা শর্ত করেনি কেউ, তবে যত বেশি পবিত্র থাকবেন, রুকইয়ার তত বেশি ইফেক্ট হবে।
প্রশ্নঃ পিরিয়ডের সময় রুকইয়া গোসলের জন্য পানিতে হাত ডুবিয়ে ৭বার করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া যাবে কি না?
উত্তরঃ রুকইয়ার গোসলের জন্য যেহেতু তিলাওয়াত করতে হয়, আর অনেক তিলাওয়াত
করতে হয়। তাই এসব সুরা নিজে না পড়ে, অন্য কারও সহায়তা নিতে হবে। অথবা শুধু
দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করতে হবে।
এই উত্তরটা আপডেট করা হয়েছে। নোট ১
অর্থাৎ রুকইয়ার গোসলের জন্য নিজে তিলাওয়াত করবে না। তবে অন্য কেউ যদি এই
সুরাগুলো পড়ে দেয়, তবে গোসল করতে সমস্যা নেই। কিন্তু অন্য কাউকে না পান,
তবে রুকইয়ার কিছু দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করবেন। ইনশাআল্লাহ, উপকার
হবে।
(মুখতাসার রুকইয়া প্রবন্ধে কিছু দোয়া আছে, চাইলে দেখতে পারেন)
অনুগ্রহ করে এর বিপরীতে কোন বেদয়াতি মুজাসসিমা আকিদার কারও ফাতওয়া আনবেন
না। যদি সাহাবা, তাবীঈদের এর বিপরীত ফাতওয়া দেখান, তবে আমার সিদ্ধান্ত
পরিবর্তন করব ইনশাআল্লাহ।
নোট ১
পিরিয়ড অবস্থায় আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল পড়ার বিধান
প্রশ্ন: পিরিয়ড অবস্থায় ঘুমের
আগে আয়াতুল কুরসি এবং চারকুল পড়া যাবে? এটা তো সুন্নাহ। আমি শুনেছি এ
অবস্থায় কেউ একটি আয়াত পড়লেও তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়। আমি কি এই আয়াতগুলো
পড়তে পারব? নাকি না? এই অবস্থায় আয়াতে কারীম তেলাওয়াত করা যাবে?
উত্তর:
পিরিয়ডে এমন সব আয়াত পড়া যাবে যেসব দোয়ার
অর্থ প্রকাশ করে। অথবা আল্লাহর জিকির, প্রশংসা, বড়ত্ব বুঝায়। এ অবস্থায় এমন
কোন আয়াত পড়া যাবেনা যা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা, পূর্বের
অথবা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা অথবা ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুঝায়। মোটকথা, এ
অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন পড়া যাবেনা।
উল্লেখিত মূলনীতি অনুসারে, আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ
আয়াতের মাধ্যমে জিন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার জন্য পিরিয়ডের সময়
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, তিনকুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বেন, তাহলে
দোয়া হিসেবে এটা পড়া যাবে। তবে আপনি সুরা কাফিরুন পড়তে পারবেন না কারণ এটা
উপরের উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে না।
আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।
আমরা
রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের মাধ্যমে জ্বীন, যাদুর ইত্যাদি চিকিৎসায় ইসলামের
সাথে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন পদ্ধতির বদলে শরিয়া সম্মত রুকইয়াহ প্রচার ও
প্রসারের জন্য কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে বিষয়টার ব্যাপারে যথেষ্ট
প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে যা আশাপ্রদ। তবে লক্ষ করছি অনেকে এমন সব
প্রশ্ন করছেন যার সমাধান দিতে গিয়ে আমাদের বিব্রত হতে হচ্ছে। কারণ বিষয়গুলো
ইসলামের বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করে।
.
যেমন কেউ কেউ
চাইছেন হারাম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে রুকইয়ার সমাধান। আবার কেউ প্রশ্ন
করেছেন স্বামীকে ভুলে থাকতে চাওয়ার রুকইয়া। কেউ বলছেন, স্বামী মায়ের ভক্ত
হয়ে আছে। সে যেন বউয়ের কথায় উঠবস করে, এক কথায় স্বামীকে বশ রুকইয়াহ কি?
এরকম আরো বেশ কিছু প্রশ্ন আমরা পেয়েছি যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী।
.
সমাজে
প্রচলন, মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণা বা দ্বীনী জ্ঞানের স্বল্পতা-যে কারণেই
হোক না কেন, উনারা হয়ত বুঝতেই পারছেন না এসব কাজে আমরা সাহায্য করতে অপারগ।
.
কুরানে
কারীমে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পর্দার সীমা নির্ধারন
করে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সীমানাকে
আরো স্পষ্ট করেছেন সাহাবাদের কাছে। তাই একজন মুসলিম বালেগ পুরুষের সাথে
আরেকজন বালেগ নারীর সাথে দৃষ্টি বিনিময় হতে পারে না, বন্ধুত্ব হতে পারে না,
কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা হতে পারে না। এজন্য প্রেমের নামে যেসব সম্পর্ক
প্রচলিত তার সবই ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারের ভূমিকাস্বরুপ এবং পুরোপুরি
নিষিদ্ধ। আপনার বিয়ের ইচ্ছা থাক বা না থাক তাতে ইসলামের কিছুই আসে যায় না।
ইসলাম বলেছে হারাম, ব্যাস হারাম। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!
.
আমাদের
গ্রুপ ইসলামের জন্য কাজ করছে। সুতরাং এজাতীয় হারাম বিষয়ে আমরা কখনই
সাহায্য করব না। যে কুরানে আল্লাহ এইসব কাজের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধ করলেন
সে কুরান দিয়েই ঐসব কাজে সাহায্য করা কি সম্ভব? এই কাজ তো আল্লাহর সাথে
বিদ্রোহের মত হয়ে যায়!
.
তাই মেম্বারদের অনুরোধ করছি, দয়া
করে রুকিয়া করার আগে রুকিয়া কী তা জানুন। শারিরীক ও মানসিকভাবে আল্লাহকে
মানার, আল্লাহর হুকুম আহকামের সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি গ্রহন
করুন। এরপরে ইসলামের বাধা নেই এমন কাজে সাহায্যের পোস্ট দিন। ইনশাআল্লাহ
আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সহায়তার জন্য। কিন্তু ইসলাম-নিষিদ্ধ কাজে সাহায্য
চেয়ে পোস্ট দিলে তাতে আমাদের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব হবে না।
রুকিয়া করলেই কি বিয়ে হবে, মনের আশা পূর্ণ হবে?
------------------------------------------------
যারা প্রায়ই "মনের আশা পূরণ হওয়ার" বা "দ্রুত বিয়ের হওয়ার" এধরণের আমল/তদবির/ উপায় খুঁজেন, তাদের উদ্দেশ্যে এবং বিশেষত নিজেকে নসীহাহ প্রদানের উদ্দেশ্যে বলছি।
ইসলাম কোন শর্টকাট ধর্ম নয়। ইসলামে শর্টকাট বলে কিছু নেই। ইসলাম খ্রীষ্টিয়ানিটির মত কোন ধর্ম নয়, যেখানে সপ্তাহে ৬ দিন যা খুশি করে বেরাবো আর রবিবার চার্চে গিয়ে ফাদারের কাছে দোষ স্বীকার করে পূণ্যবান হয়ে যাবো।
ইসলাম আপনাকে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে একটি কন্টিনিউয়াস কানেকশন বিল্ড আপ করতে বলে। এর সবচে বড় প্রমাণ হলো, স্বলাত। দৈনিক পাচ বার স্বলাত ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করা ফারদ্ব। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়, কেন আল্লাহ ৫ বারের বিধান দিলেন? কেন ৫ ওয়াক্তের নামাজ জমিয়ে রেখে এক ওয়াক্তে সব গুলো আদায় করে দিলে নামাজ হবে না? কারণ আল্লাহ আমাদেরকে তার স্মরণ থেকে উদাসীন হতে দিতে চান না। দৈনন্দিন কাজের মাঝে যখন আমরা দুনিয়ার স্রোতে মিশে যাই, তখনই অন্তরে আল্লাহর স্মরণ আনার জন্য আল্লাহ ওয়াক্তে ওয়াক্তে স্বলাতের বিধান রেখেছেন। যেন আপনার অন্তর আল্লাহর স্বরণ বিমুখ না হয়ে যায়। ঠিক তেমনি ইসলামে কোন পীর ধরে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। ঈমান ও আমলে সলেহ অবশ্যই লাগবে।
তাই যারা মনের আশা পূরণের জন্য দু'আ চাচ্ছেন তাদের বলবোঃ ইসলাম এমন কোন যিকর/দু'আ/স্বলাত দেয় নি যে আমি নির্দিষ্ট কিছু আমল করলাম আর আমার মনের আশা পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আমি আবার আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে যাবো। বরঞ্চ ইসলাম আপনকে কন্টিনিউয়াস আল্লাহর ইবাদাত করতে বলে। তাই যদি আপনি সত্যিই চান আপনার মনের আশা পূরণ হোক, তাহলে "মনের আশা দ্রুত পূরণ হওয়ার" কনসেপ্ট ঝেড়ে ফেলুন। এর পরিবর্তে আল্লাহর সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাহাজ্জুদ পড়ুন। আল্লাহর কাছে কন্টিনিউয়াসলি চাইতে থাকুন। আল্লাহতো আপনার চাওয়া পাওয়া শুনতে শুনতে ক্লান্ত হন না। তাহলে আপনিই বা কেন চাইতে গিয়ে ক্লান্ত বোধ করবেন। গুনাহ থেকে বেচে থাকুন। আপনি আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকবেন, আর আল্লাহ আপনার আশা পূরণ করে দিবেন এটা মরিচীকা ছাড়া আর কিছুই না। দু'আ কবুলের সময়, স্থান, শর্ত গুলো জেনে নিন, সেই শর্ত অনুযায়ী দু'আ করতে থাকুন। হালাল উপার্জন থেকে আহার করুন। কারণ আল্লাহ পবিত্র, এবং তিনি পবিত্রতা ছাড়া কিছুই কবুল করেন না। নিয়মিত স্বলাতুল হাজত পড়ুন। নিজের চাওয়া-পাওয়া, যাবতীয় সমস্যা আল্লাহকে খুলে বলুন। আর সর্বোপরি আল্লাহর সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করুন। ইনশাআল্লাহ্, আল্লাহ আপনার মনের হালাল আশা পূরণ করে দিবেন।
কৃতজ্ঞতাঃ আনা ফুলান ভাই।
এস্তেগফারঃ বিয়ে ও রিযক লাভ এবং পেরেশানী ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
= = = = = = = =
.
আমি তখন জালালাইন জামাতের ছাত্র। জালালাইন (একটি তাফসীরগ্রন্থ) এর দারসে আমাদের উস্তাদে মুহতারাম মুফতী শাফিকুল ইসলাম একটি ঘটনা শেয়ার করলেন তার নিজের জীবন থেকে। দীর্ঘদিন তার সন্তান হয় না। (তিনি সময়টা বলেছিলেন সম্ভবত ১৭ বছর) একদিন তিনি হাদিসে পেলেন এস্তেগফার এর ফজীলত। আমল শুরু করলেন। দীর্ঘকাল পর যখন স্বামী স্ত্রী প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সকল চেষতা-প্রচেষ্টার পর, তাদের হয়ত সন্তান হবেই না। তখন এই আমলের বরকতে তাদের কোলজুড়ে সন্তান এলো।
.
আমি আমার ব্যক্তিজীবনের নানা পেরেশানি ও মুসিবত থেকে মুক্তি পেয়েছি এই এস্তেগফার এর সুবাদেই। এতো গেলো একজন গোণাহগারের জীবনের কথা। এবার শুনুন সোনালি যুগের (সাহাবী ও তাবেয়ীনদের যুগ) এর একটি ঘটনা।
.
একবার হাসান বসরী রাহ. এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো “ আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি গরীব। আমাকে রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন এস্তেগফার করো। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হও্য়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, এস্তেগফার করো।” উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ তায়ালা তার কুরআনে শিখিয়েছেন । তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)
নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বারিধারা বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)
এই আয়াতের দ্বারা আমরা এস্তেগফার এর যেসব উপকারিতা জানতে পারলাম। তারমধ্যে দুটি হচ্ছে ১- রিজক বৃদ্ধি ২- সন্তান লাভ। যেহেতু সন্তান বিয়ের মাধ্যমেই হয়। সুতরাং এস্তেগফারের দ্বারা বিয়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দিবেন।
সালেহ আ. বলেন “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কেন করছ না, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’’ (সুরা নমল-৪৬)
যারা পেরেশানি, হতাশা, ডিপ্রেশন, sadness, loneliness ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন, তারা এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম মানে হচ্ছে, আপনি দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফারকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
হাদিসে এসেছে
.
روي عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قَال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ) رواه أبو داود (1518) وابن ماجه (3819) ، وأحمد في "المسند" (1/248) ، والطبراني في "المعجم الأوسط" (
6/240)، والبيهقي في "السنن الكبرى" (3/351) ، وغيرهم
وقال أيضا رحمه الله :
" على كل حال فالحديث المذكور يصلح ذكره في الترغيب والترهيب ؛ لكثرة شواهده الدالة على فضل الاستغفار"مجموع فتاوى ابن باز" (26/259) . ،
.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা। বলেন “যে ব্যক্তি নিজের জন্যে এস্তেগফারকে লাযেম করে নিল, আল্লাহ তায়ালা তাকে যে কোন সংকটে পথ দেখাবেন। যে কোন ধরনের পেরেশানী ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন। এবং তাকে এমন উতস থেকে রিযিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।
(পরিবর্তন ও পরিবর্ধনযোগ্য)
মাওলানা Abdullah Al Mahmud
স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু
---------------
.
অনেকেই অভিযোগ করেন স্বামী তার কথা শুনে না বা পরনারীতে আসক্ত। এজন্যও বিভিন্ন রুকইয়াহও চেয়ে বসেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সম্পূর্ণ হালাল ভাবেই আপনি আপনার স্বামীকে যাদু করতে পারেন? এর জন্য দরকার একটু সচেতনতা।
.
আমাদের সমাজে স্বামী-স্ত্রী অমিলের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, অধিকার ও ভালোবাসার অভাব কাজ করে। বেশিরভাগ দম্পত্তিই জানেন না তাদের এই “বিবাহ বন্ধনের উদ্দেশ্য কি”।
“এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি (সুকুন) খুঁজে পাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।”
.
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে বিয়ের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা একে অপরের মাঝে “প্রশান্তি” খুঁজে পাই। এই প্রশান্তি বলতে শারিরীক ও মানসিক দুইধরণের প্রশান্তিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। শারিরীক প্রশান্তির কথা সবাইই বুঝি, কিন্তু মানসিক প্রশান্তির ব্যাপারে কতজনই বা সচেতন।
.
আপনি চিন্তা করুন খাদিজাহ বিনতে খুইয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কথা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন হিরা গুহাতে জিব্রীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে প্রথম দেখে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন, জীবনের প্রথম তিনি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন, একজন মালাকের সম্মুখীন হলেন, সেই মালাক তাঁকে বুকে করে তিনবার চাপ দিলেন। আপনি চিন্তা করুন, একজন না জানা মানুষের জন্য এটি কতটা ভীতিকর অভিজ্ঞতা। এই মূহুর্তে কে তাঁকে সান্তনা দিয়েছিলেন? তিনি হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মানিতা স্ত্রী, খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। তিনিই তাঁকে শান্ত করেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন যে তিনি মানুষের সাথে সদাচরণ করেন তাই আল্লাহ তার অমঙ্গল করবেন না। এটাই হচ্ছে সুকুন। যখন আপনার স্বামী বাইরে থেকে হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসবেন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আর চরম ব্যস্ততময় দিন পার করে ঘরে ফিরবেন, তখন যেন তিনি আপনার কাছে ফিরে প্রশান্তি পান। তখন যেন তিনি আপনাকে আস্থাভাজন ভেবে সব খুলে বলতে পারেন। তখন যেন তিনি তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতের কাছে তৈরী পান। আপনি সমস্যার সমাধান করতে না পারুন, তাকে তো মানসিক ভাবে শান্ত করতে পারেন। আপনি যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মতন স্বামী চান, তাহলে আপনাকে হতে হবে খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার মত।
.
এই বোধটারই চরম অভাব আজকের দম্পত্তিরদের মাঝে। এছাড়াও বোনেরা আরো কিছু ভুল করেন যার কারণে স্বামীরা দূরে সরে যায়। সংক্ষেপে এমনঃ
.
-------------------
.
→→ স্বামী হিসেবে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর কাছ থেকে আনুগত্য কামনা করে। এবং এই আনুগত্যই হচ্ছে “মূল অস্ত্র” যেটা দিয়ে স্ত্রী তার স্বামীকে পুরোপুরি নিজের করে পেতে পারে। শরীয়াহ অনুমোদিত সমস্ত কাজে স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব। শাইখ আল আলবানী তার আদাবুল যিফাফ গ্রন্থে বলেনঃ
.
“স্বামীর কামনা পূরণ করার ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। তাই এটা আরো বেশি জরুরী যে স্বামীর কামনা পূরণ করার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন তার সন্তান লালন পালন করা, তার পরিবারের হিফাযত করা ও অন্যান্য দায়িত্বগুলো পালন করার ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা।”
.
স্বামীর প্রতি আনুগত্য কোন পর্যায়ের হওয়া উচিত ইবনে মাজাহতে বর্ণিত একটি হাদীসে থেকেই বুঝা যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
.
“যদি আমাকে আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কাউকে সিজদাহ করার আদেশ দেওয়া হতো, তাহলে আমি স্ত্রীদের নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সিজদাহ করতে। ” (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)
.
.
→→বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনের অন্যতম মূল উদ্দেশ্যই হল নিজের কামনা বাসনাকে হালাল উপায়ে পূরণ করা। এক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য জরুরী করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
.
“সেই স্বত্তার কসম যার হাতে আছে মুহাম্মাদের (ﷺ) প্রাণ। কোন নারী আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পূর্ণ করে। যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে আহবান করে, আর স্ত্রী যদি উটের জিনের উপরও থাকে তার (স্ত্রীর) প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। ”
.
.
→→বোনদের মাঝে যে ঘাটতি ভয়াবহ আকারে দেখা যায় সেটি হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। ইউনিভার্সিটিতে আমাদের স্যার বলতেন, “পৃথিবীর বুকে এমন কোন স্বামী নেই, যে কিনা এ কথা শুনেনি যে আমি বলেই তোমার সংসার করেছি। অন্য কেউ হলে কবেই চলে যেত।”
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি হাদীসে নারীদের বেশি জাহান্নামী হওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন (ভাবানুবাদ) “তারা স্বামীদের প্রতি অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। দশটা জিনিস পাওয়ার পর, একটি জিনিস না পেলেই তারা অকৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলে বসে আমি কিছুই পাইনি।”
.
.
শাইখ ওয়াহিদ বিন আবদুস সালাম তাঁর “কুর’আনিক চিকিৎসা” বইতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উল্লেখ করেন। সেটির ভাব কথা এমনঃ
.
“এ পর্যায়ে আমি মুসলিম নারীদের জন্য একটি উপদেশ পেশ করছি। আর তা হল সে ইচ্ছা করলে তার স্বামীকে হালাল যাদু করতে পারে। নারী স্বামীকে আকৃষ্ট করার জন্য অধিক সৌন্দৰ্য্য ও সাজ-সজ্জা করবে, তাহলে তার স্বামীর দৃষ্টি অসুন্দর ও কুশ্রী বস্তুর প্রতি যাবে না। এমনিভাবে মুচকি হাসি, উত্তম কথা, কোমল আচরণ, স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ, তার সন্তানাদির প্রতি অত্যধিক যত্নবান হওয়া এবং আল্লাহর নাফরমানী ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা ইত্যাদি দ্বারা সে স্বামীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
.
পরিতাপের বিষয় যে, আমরা যদি আমাদের আধুনিক সমাজের দিকে তাকাই তাহলে এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা দেখতে পাই। বর্তমান সমাজে নারীরা তাদের উত্তম পোষাক-পরিচ্ছদ ও শাড়ি-গহনা ইত্যাদি পরিধান করে কোন অনুষ্ঠানে বা কোন বন্ধু-বান্ধবের সাক্ষাতের সময় বা বিশেষ কোন কমিউনিটি সেন্টারে কোন আয়োজনে। সে এমনভাবে নিজেকে সাজায় যেন আজকেই তার বাসর উদযাপনের দিন। আর যখন সে তার স্বামীর ঘরে ফিরে আসে তার সকল সৌন্দর্য ও অলংকারাদি খুলে এবং আরেকটি অনুষ্ঠানের জন্য রেখে দেয় ।
.
অথচ তার অসহায় যে স্বামী তাকে এসব পোষাক ও অলংকার ক্রয় করে দিল, সে তাকে একটি দিনের জন্যও এগুলো পরিহিত অবস্থায় দেখতে পায় না। তার সামনে সর্বদা এমন পুরাতন কাপড় পরিধান করে যা থেকে ঘাম, পেয়াজ ও রসূনের দূর্গন্ধ বের হয়। এই নারীর যদি সামান্য বিবেক থাকত তাহলে সে বুঝতে পারত যে, তার স্বামীই এ সৌন্দর্যের অধিক উপযোগী।
.
হে নারী! তোমার স্বামী যখন তার কর্মে বেরিয়ে পড়ে তুমি ঘরের কাজকর্ম জলদি গুছিয়ে ফেল । অতঃপর গোসল করে নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর এবং স্বামীর অপেক্ষা কর । যখন তোমার স্বামী তার কাজ হতে ঘরে ফিরে সুন্দর স্ত্রী, প্রস্তুতকৃত খাবার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখতে পাবে তখন তোমার প্রতি তার ভালবাসা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত এসব যখন তুমি স্বামীর জন্য সৌন্দর্যের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পালন করবে ও তাকে হারাম হতে রক্ষা করার নিয়তে করবে।
.
কেননা উদরপূর্ণ লোক খাবারের প্রতি আসক্ত থাকে না। খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকে একমাত্র তারই, যে খাবার হতে বঞ্চিত হয়েছে।”
২. আপনি অথবা আপনাদের পরিবারের কোন একজন কি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে? কেমন যেন উদাস ভাব চলে এসেছে, কিছুই ভালো লাগছে না।
৩. সালাত বা ওযু নিয়ে বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন? বারবার মনে হচ্ছে ঠিকমতো ওযু হচ্ছে না, নামাজের এই অংশটা ঠিকমত হল না।
৪. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অথবা পরনের কাপড় নিয়ে আপনি কি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন?
৫. আপনি কি অপ্রয়োজনে টয়লেট বা বাথরুমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন?
৬. আপনি কি আপনার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখছেন? যা আপনাকে ভীত করছে?
৭. আপনার কানে কি ফিস ফিস করে শোনা যাচ্ছে আপনি কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছেন (কুফরি করছেন)
৮. আপনি কি ওযু-গোসল বা ইস্তিঞ্জার সময় এক অঙ্গ বারবার ধুচ্ছেন? তবুও মনে হচ্ছে ধোয়া হয়নি ঠিকমতো।
৯. আপনার বারবার মনে হচ্ছে যে, ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে? মনে হচ্ছে প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা সবসময় মনে হচ্ছে বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু আপনি নিশ্চিত হতে পারছেন না?
১০. আল্লাহ, রাসুল অথবা ঈমানের ব্যাপারে, ইসলামের মৌলিক ব্যাপারে অবমাননাকর মাথায় চিন্তা আসে?
১১. মুরব্বি, উস্তায বা বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে বসলে, তাদের সাথে কথা বলতে লাগলে কি আপনার ভেতর থেকে কেউ বারবার বেয়াদবির জন্য উস্কে দিতে চায়?
১২. আপনি কি কোন অদ্ভুত শব্দ কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছেন? কারো সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করলে ভাবছে, আপনি প্যারানয়েড বা পাগল হয়ে যাচ্ছেন!
১৩. আপনি কি নামাজের রাকাত ভুলে যাচ্ছেন? অথবা অন্য আরকানগুলোর ব্যাপারে ভুল হচ্ছে? সাজদাহ একটা দিয়েছেন না দুইটা দিয়েছেন সন্দেহ লাগছে? আর এসব কি প্রায় দিনই হচ্ছে?
১৪. নামাজে সাজদা করতে গেলে মনের মধ্যে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি কিংবা দেবদেবীর মুর্তি ভেসে উঠছে?
উত্তর যদি হয় “হ্যাঁ!” তবে আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত।
খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, এক-দুইদিন এরকম হতেই পারে। কিন্তু সবসময়ই বা দিনের পর দিন যদি আপনার মাঝে দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে - “হ্যাঁ! সত্যিই আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত"
ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়াহ
ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়া:
১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যন্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -
১. অনাহূত চিন্তা-ভাবনার চিকিৎসা হল ভ্রুক্ষেপ না করা
হযরত থানভী রাহ. এক মালফূযে একটি ব্যাপক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। মানুষের মনে বিভিন্ন মন্দ ভাবনা আসে। কখনও এমনসব অবাঞ্ছিত চিন্তাও তার মনে উদয় হয় যে, ঈমান সম্পর্কেই সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায়। সম্ভবত এমন কোনো মানুষ নেই, যার মনে এ ধরনের চিন্তা কখনই আসে না। সবার মনেই তা আসে এবং এর কারণে মানুষ পেরেশান হয়। বিশেষত যে ব্যক্তি দ্বীনের পথে চলার ইচ্ছা করেছে এবং চলতে আরম্ভ করেছে তার মনে এ ধরনের চিন্তা খুব বেশি আসে।
অন্যদিকে দ্বীনদারীর দিকে যাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সারা দিন দুনিয়াবী কাজকর্মে মগ্ন, গুনাহর কাজে লিপ্ত তাদের মনে এই সব চিন্তা আসে না। এগুলো তাদের মনেই আসে যারা আল্লাহর রাস্তায় চলতে আরম্ভ করেছে। কোনো কোনো চিন্তা তো এতই ভয়াবহ যে, মানুষ তার ঈমানের ব্যাপারেও আশংকায় পড়ে যায়। কখনও আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে প্রশ্ন-সংশয় আসে, কখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, কখনও কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ সম্পর্কে, কখনও বা শরীয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে। এ সময় সঠিক নির্দেশনা না পেলে গোমরাহীর মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।
ওই দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না
হযরত রাহ. বলেন, এ সমস্যার সমাধান হল ভ্রুক্ষেপহীনতা। মন্দ চিন্তা যদি আসে তবে আসুক। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। এই চিন্তাই করবেন না যে, কী চিন্তা আসছে আর কী যাচ্ছে।
--
২. এই সব চিন্তাও ঈমানের আলামত
এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তাও ঈমানের আলামত। হাদীস শরীফে এসেছে, এক সাহাবী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসূল! অনেক সময় আমার মনে এমন সব কথা আসে, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়াও আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। আমি কী করতে পারি? দেখুন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী জওয়াব দিলেন! তিনি বললেন-‘এটা তো খাঁটি ঈমানের আলামত।’ (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাবু বয়ানিল ওয়াসওয়াসা ফিল ঈমান)
অর্থাৎ এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তা তো ঈমানের চিহ্ন। কেননা, এসব চিন্তা শুধু মুমিনের মনেই আসে, পাপাচারীর মনে আসে না।
চোর ওই ঘরেই সিঁধ কাটে যাতে ধন-সম্পদ আছে
হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, চোর ওই গেরস্তের বাড়িতেই যায় যার মালদৌলত আছে। যে ঘরে কিছু নেই সেখানে চোর কেন যাবে? তো এই চোরও (শয়তান) ওই অন্তরেই কুমন্ত্রণা দেয় যাতে ঈমানের দৌলত আছে। অন্তরে যদি আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান না থাকত তাহলে শয়তানের সেখানে যাওয়ার ও কুমন্ত্রণা দেওয়ার প্রয়োজনই হত না। এজন্য এইসব অনাহূত চিন্তা যখন মনে আসে তো প্রথম কর্তব্য হল আল্লাহর শোকর গোযারী করা যে, আলহামদুলিল্লাহ, আমার অন্তরে ঈমান আছে। তা না হলে এই সব চিন্তা আমার মনে সৃষ্টি হত না।
--
৩. মন্দ চিন্তায় উদ্বিগ্ন হওয়া ঈমানের আলামত
এটা ঈমানের লক্ষণ এই ভাবেও যে, আপনার মনে এই সব কথা আসলে আপনি উদ্বিগ্ন হন। আপনার কাছে এগুলো মন্দ চিন্তা বলে মনে হয়। ভেবে দেখুন, অন্তরে যদি ঈমান না থাকত তাহলে কি আপনি উদ্বিগ্ন হতেন না কিংবা একে মন্দ বলে মনে করতেন? বোঝা গেল যে, অন্তরে ঈমানের দৌলত রয়েছে।
মন্দ চিন্তা কেন আসে
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সান্তনাবাণী শুনিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা) আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। -সূরা আ‘রাফ ২০০
অর্থাৎ শয়তানের পক্ষ হতে যে সব মন্দ ভাবনা সৃষ্টি হয় এগুলো প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কুমন্ত্রণা। এভাবে সে মুমিনদেরকে পেরেশানীতে ফেলতে চায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, এই কুমন্ত্রণা মুমিনদের চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। এজন্য এইসব অনাহূত ভাবনা যখন আপনাকে বিরক্ত করে তখন স্মরণ করুন যে, এটা ঈমানের আলামত। শয়তান তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। তাকে বলে দিন, ঠিক আছে তুমি তোমারা মতো চেষ্টা কর, আমিও আমার মতো চেষ্টা করছি। এরপর নিজ কাজে মগ্ন হয়ে যান। এদিকে বেশি মনোযোগ দিবেন না। কেননা, এইসব অবাঞ্ছিত চিন্তাকে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে তা দূর করা যায় এ চিন্তায় পড়ে গেলে আপনি এখানেই আটকা পড়ে যাবেন। সামনে অগ্রসর হওয়া আর সম্ভব হবে না। এভাবে শয়তানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।
---
৪. একটি দৃষ্টান্ত
হযরত থানভী রাহ. একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টা বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর, কারো কাছে বাদশাহের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ এসেছে যে, অমুক সময় দরবারে উপস্থিত হবে। তোমাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হবে এবং পুরষ্কৃত করা হবে। আমন্ত্রিত ব্যক্তি প্রস্ত্তত হয়ে দরবারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। পথিমধ্যে দুটি কুকুর রাস্তার দুই পার্শ্বে দাড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। এখন তার কী করা উচিত? যথাসময়ে দরবারে পৌঁছার জন্য কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত পথ চলা উচিত, না ওই কুকুরগুলোর চিৎকার বন্ধ করার চেষ্টায় লেগে যাওয়া উচিত? বুদ্ধিমানের কাজ কী হবে? যদি সে কুকুর তাড়ানোর জন্য সেগুলোর পিছনে পিছনে ছুটতে থাকে তাহলে তো সময়মতো দরবারে পৌঁছা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এজন্য বুদ্ধিমানের কাজ এটাই যে, কুকুরগুলো চিৎকার করতে থাকুক, তুমি যেখানে যেতে মনস্থ করেছ সেখানে কীভাবে দ্রুত পৌঁছা যায় সেই চিন্তা কর। তুমি যদি কুকুরের চিৎকার থামানোর চিন্তায় পড়ে যাও তাহলে দরবারে পৌঁছার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।
একইভাবে তোমরা যে ইবাদত করছ এটা হল আল্লাহর দরবারে উপস্থিতি। এই সৌভাগ্যের মুহূর্তে যেসব বিক্ষিপ্ত ভাবনা তোমার অন্তরে সৃষ্টি হচ্ছে এগুলো হল কুকুরের চিৎকার। যদি তোমরা সেদিকে মনোযোগ দাও এবং তা দূর করার চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড় তাহলে শয়তানের উদ্দেশ্য হাসিল হবে আর তোমরা সাক্ষাতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হবে।
--
৫. নিজ কাজে মশগুল থাকুন
এজন্য এই সমস্যার সমাধান হল, ভ্রুক্ষেপ না করা। অর্থাৎ কী চিন্তা আসল, কী চিন্তা গেল-তা না ভেবে নিজের কাজে মশগুল থাকুন। যেমন এখন আপনার নামায পড়ার সময়, আপনার মনে যে ভাবনাই আসুক আপনি নামাযে মশগুল হয়ে যান। আপনার এখন তেলাওয়াতের সময়, মনে যত চিন্তাই আসুক আপনি তেলাওয়াতে মশগুল হয়ে যান। এভাবে অন্য কোনো কাজের সময় হয়ে থাকলে তাতে লেগে যান। মোটকথা, এদেরকে আপনার নির্ধারিত কাজে প্রতিবন্ধক হওয়ার সুযোগ দিবেন না। এটাই সমাধান। তা না করে আপনি যদি চিন্তা দূর করার চিন্তায় পড়ে যান তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।
৬. আরেকটি পদ্ধতি
আমার ওয়ালিদ ছাহেব (মুফতি শফী রহ.) বলতেন, যদি কোথাও অন্ধকার হয়ে আসে তবে তার সমাধান এই নয় যে, তুমি লাঠি নিয়ে অন্ধকার তাড়াতে নেমে পড়বে। কেননা, এভাবে অন্ধকার দূর হবে না। অন্ধকার দূর করার পন্থা এই যে, তুমি একটি বাতি জ্বালিয়ে দাও। বাতির আলো যেখানে পৌঁছবে সেখান থেকে অন্ধকার বিদায় নিবে।
মানুষের মনে শয়তানের পক্ষ থেকে যেসব কুচিন্তা, প্রশ্ন-সংশয় সৃষ্টি হয় সেগুলোও এক ধরনের অন্ধকার। একে তাড়ানোর চেষ্টায় লেগে যাওয়া সমাধান নয়; বরং তোমার মন-মস্তিষ্কে আল্লাহর স্মরণের বাতি জ্বালিয়ে দাও। বন্দেগী ও আনুগত্যের চেরাগ জ্বালিয়ে দাও। দেখবে আঁধার দূর হয়ে গেছে।
--
৭. অন্য চিন্তায় মগ্ন হও
এ ধরনের চিন্তা যদি বেশি আসে তাহলে এর সমাধান হযরত থানভী রাহ. এভাবে দিয়েছেন যে, এ ক্ষেত্রেও তা দূর করার চিন্তা ঠিক নয়। কেননা, যতই দূর করার চেষ্টা করবে ততই তা জোরদার হবে। এ সময় অন্য কাজে মনোনিবেশ কর কিংবা ভিন্ন চিন্তায় মশগুল হও।
- দর্শন শাস্ত্রে আছে-মানুষের চিন্তা এক মুহূর্তে দুই বিষয়ে নিবদ্ধ হয় না।
তুমি যদি নিজেকে ভিন্ন কাজে বা ভিন্ন চিন্তায় মশগুল কর তাহলে প্রথম চিন্তা এমনিই দূর হয়ে যাবে।
- চিন্তা দূর করার কোনো অযীফা নেই
উপরের আলোচনায় হযরত রাহ. এই কথাটাই বলেছেন যে, ‘অনাহূত ভাবনার সমাধান ভ্রুক্ষেপহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়।’ অর্থাৎ এর অন্য কোনো সমাধান নেই। লোকেরা আবেদন করে যে,নানা ধরনের ভাবনা মনে আসে, কোনো অযীফা দিন, যাতে এগুলো দূর হয়। তো হযরত বলছেন যে, এমন কোনো অযীফা নেই। এর একমাত্র সমাধান হল চিন্তা তাড়ানোর চিন্তা না করা।
--
৮. ঔষধ উদ্দেশ্য নয়, সুস্থতা উদ্দেশ্য তবে
এরপর একটি সূক্ষ্ম কথা বলা হয়েছে। তা এই যে, ‘ভ্রুক্ষেপহীনতাকে মাধ্যম মনে করবে না, একেই মূল কাজ বলে মনে করবে। ভ্রুক্ষেপহীনতার দ্বারা চিন্তা-খেয়াল দূর হোক বা না হোক।’ অর্থাৎ উপরে যে বলা হয়েছে ভ্রুক্ষেপহীনতাই চিন্তা দূর করার উপায়। এর অর্থ এই নয় যে, ভ্রুক্ষেপহীনতা ঔষধের মতো নিছক উপায় মাত্র। দেখুন, মানুষ যখন কোনো রোগের জন্য ঔষধ ব্যবহার করে তখন তার মূল উদ্দেশ্য থাকে আরোগ্য লাভ করা। যেহেতু ঔষধ সেবন আরোগ্য লাভের উপায় তাই অবশ্যই এর গুরুত্ব রয়েছে কিন্তু তার গুরুত্ব আরোগ্য লাভের উপায় হিসেবেই, উদ্দেশ্য হিসেবে নয়। মূল উদ্দেশ্য তো আরোগ্য লাভ করা। এজন্য ঔষধ সেবনের পর মানুষ সুস্থতার অপেক্ষায় থাকে। একদিন, দুইদিন, তিন দিন ঔষধ সেবনের পরও যদি সুফল না আসে তাহলে মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।
--
৯. এই সমাধান নিছক ঔষধ নয়
হযরত রাহ. বলছেন যে, অনাহূত ভাবনা দূর করার জন্য যে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা-এটাকে নিছক ঔষধ মনে করবে না। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা প্রয়োগের পর চিন্তা দূর হল কি হল না এই অপেক্ষায় না থেকে নিজ কাজে মশগুল থাকবে। মনে রাখতে হবে যে, এটা নিছক মাধ্যম নয়, এটাই মূল কাজ। অতএব একদিন, দুইদিন, তিন দিন এই পন্থা অনুসরণের পরও যদি দেখা যায়, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না তবুও তা পরিত্যাগ করা যাবে না। চিন্তার সমস্যায় সেদিকে মনোযোগ না দেওয়াই মূল কাজ। অতএব জীবনভর অবাঞ্ছিত চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি না পেলেও এই পন্থাই অনুসরণ করে যেতে হবে। চিন্তা আসুক আপনি অন্য দিকে মনোযোগ দিন। আবার আসুক, আবার অন্য চিন্তায়, অন্য কাজে ব্যস্ত হোন। এটাই সমাধান এবং এটাই করণীয়।
--
১০. মানসিক প্রশান্তি উদ্দেশ্য নয়
এরপর হযরত রাহ. আরেকটি সূক্ষ্ম কথা বলেছেন। তা এই যে, ‘মানসিক প্রশান্তি লাভকে মূল লক্ষ বানাবে না।’ অর্থাৎ এই সব ভাবনা দূর হোক-এটা আপনি কেন কামনা করছেন? মানসিক প্রশান্তির জন্য? এই সব চিন্তা সর্বদা আপনার মন-মস্তিষ্ককে অস্থির করে রাখে, তাই স্থিরতা ও প্রশান্তির জন্য তা থেকে নিস্তার পাওয়া দরকার? এই সম্পর্কে হযরত রাহ.-এর বক্তব্য এই যে, প্রশান্তি লাভকে উদ্দেশ্য বানোনো যাবে না; বরং উদ্দেশ্য এই হবে যে, ওইসব ভাবনা থেকে মনকে মুক্ত করে প্রয়োজনীয় কাজে মনোনিবেশ কর। যদি প্রশান্তি লাভই কাম্য হয় তবে তো মনের চাহিদা পূরণই উদ্দেশ্য হল।
১১. আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকুন
ভ্রুক্ষেপ না করা সত্ত্বেও যদি চিন্তার উৎপাত বন্ধ না হয় তাহলে এই কষ্টের উপরই সন্তুষ্ট থাকুন। কেননা, আপনার সম্পর্কে এটাই আল্লাহর ফয়সালা। এটাই আপনার তাকদীর। আল্লাহ যদি চান, আমি জীবনভর এই অবস্থায় থাকি তবে তো আমার অসন্তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই। আমার এই কষ্টভোগই যদি আল্লাহর মর্জি হয় তবে এতেই আমি সন্তুষ্ট। কবি বলেন-
‘না মিলন উত্তম না বিচ্ছেদ। প্রিয় যাতে সন্তুষ্ট, উত্তম তাই।’
আল্লাহ যে হালতে রাখেন তাই আমার জন্য ভালো। অতএব চিন্তা-ভাবনায় জর্জরিত হয়েও আমি খুশি। কবির ভাষায় : তোমার এই এখতিয়ার নেই যে, পরিবেশিত শরবত সম্পর্কে মন্তব্য কর-তা স্বচ্ছ কি ঘোলা; বরং সাকী তোমার পেয়ালায় যা কিছু ঢেলে দিয়েছে তাই তার করুণা।
তাৎপর্য বুঝে আসুক বা না আসুক, কারণ পরিষ্কার হোক বা না হোক আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্বাচন করেছেন তা-ই তাঁর করুণা।
--
১২. তোমার জন্য এটাই মুনাসিব
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে, অমুকের তো এই সমস্যা নেই। সে কত শান্তিতে আছে। অমুক শায়খের সঙ্গে তার সম্পর্ক! আর আমি এই সব অনাহূত ভাবনায় জর্জরিত। এই হালতের জন্য কি আমিই উপযুক্ত ছিলাম? এই অস্থিরতার অনলে আমাকেই কেন দগ্ধ হতে হবে?
মনে রাখতে হবে যে, এটা অস্থিরতা ও ধৈর্য্যহীনতা। ভাই, তোমার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে এটাই তোমার জন্য উপযোগী আর তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা তার জন্য উপযোগী। এটাও তাঁর দান, ওইটাও তাঁর দান। তার জন্য ওই অবস্থাটা ভালো, তোমার জন্য তোমার অবস্থা। তুমি যদি এই কষ্টের উপর ধৈর্য্য ধারণ করতে পার তবে আল্লাহর কাছে তোমার কি সমুচ্চ মর্তবা হাসিল হবে তুমি কি তা কল্পনাও করতে পার? অতএব অন্যের দিকে তাকাবে না। তুমি যা পেয়েছ তা তোমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
আমার পেয়ালায় রয়েছে পানশালার সারাৎসার
আমাদের হযরত ডা. আবদুল হাই ছাহেব রা. একটা পংক্তি পড়তেন-
যার অর্থ : কে কী পেল, কতটা পেল তাতে আমার কী আসে যায়। আমার পেয়ালায় আল্লাহ যা দিয়েছেন আমার জন্য তো এটাই পানশালার সারবস্ত্ত।
--
১৩. সবরের আলাদা ছওয়াব রয়েছে
মোটকথা, নিজের দায়িত্ব পালন করতে থাকুন। আর যেসব ভাবনায় আপনার ইখতিয়ার নেই তাতে মনোযোগ দিয়েন না। আর এ কারণে যে কষ্ট হয় তার সম্পর্কে ভাবুন যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এটা তাঁরই ফয়সালা। তাকদীর। অতএব আমি এতে সন্তুষ্ট। এর ফলাফল এই হবে যে, এই সব চিন্তা আপনার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না; বরং কষ্টের উপর সবর করার কারণে ছওয়াব পাওয়া যাবে এবং আল্লাহর কাছে মর্তবা বুলন্দ হবে। অতএব এতে সুফলই সুফল, ক্ষতি কিছুমাত্রও নেই।
আপনি যখন ভাববেন যে, আল্লাহ আমার জন্য যা ফয়সালা করেছেন তাতেই আমি রাজি এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট তো ‘রিযা বিলকাযা’ (আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকার) ছওয়াব আপনার আমল নামায় যুক্ত হবে। এছাড়া সবরের ছওয়াব তো আছেই।
--
১৪. দুনিয়াতে তো কষ্ট হয়েই থাকে
দুনিয়াতে মানুষ যতই সাধ্য-সাধনা করুক, যতই যে বাদশাহ-আমীর হোক, পূর্ণ শান্তি কেউ পায় না। কেননা, দুনিয়া পূর্ণ শান্তির স্থানই নয়।
আল্লাহ তাআলা তিনটি জগৎ সৃষ্টি করেছেন। এক জগত, যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি, দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা-পেরেশানী কিছুই নেই। এটা হল জান্নাত। দ্বিতীয় জগত যেখানে শুধু অশান্তি আর অশান্তি, শান্তির লেশমাত্রও নেই। এই জগত জাহান্নাম। আর তৃতীয় জগত হল দুনিয়া, যাতে আমাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এতে শান্তি যেমন আছে তেমনি অশান্তিও আছে। সুখের সঙ্গে দুঃখ আছে। এখানে কোনো আনন্দই নিরঙ্কুশ নয়, বিপদের কাঁটা তার সঙ্গে যুক্ত আছে। অতএব কেউ যদি কামনা করে, আমি শুধু শান্তিই পাব, দুঃখ ও পেরেশানী যেন আমাকে স্পর্শ না করে তবে তা কখনও পূরণ হবে না। যত বড় পুঁজিপতি হোক, শাসক হোক, সম্পদশালী হোক, জ্ঞানী-গুণী হোক, আলিম-ফাযিল হোক তাকে জিজ্ঞাসা করুন, কখনোই কি কোনো কষ্ট তোমার হয়নি? তার পক্ষে না বলা কখনো সম্ভব হবে না। অবশ্যই কোনো না কোনো কষ্টের স্বাদ তাকে আস্বাদন করতে হয়েছে।
অতএব এই দুনিয়াতে কষ্ট ভোগ করতেই হবে। এখন ইচ্ছা হলে এতে সবরও করা যায়, ইচ্ছে হলে বেছবরীও করা যায়। বান্দা যদি আল্লাহর ফয়সালায় এই বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে যে, যে কষ্ট তাঁর পক্ষ থেকে এসেছে আমি তাতে রাজি। তাহলে সে আল্লাহ তাআলার শুভ সংবাদকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা) ‘নিশ্চয়ই সবরকারীদেরকে দেওয়া হবে অগণিত বিনিময়।’
এজন্য এই পৃথিবীতে যত শান্তি ‘রিযা বিলকাযা’র দ্বারা পাওয়া যায় তত আর কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।
হযরত বাহলূল মাজযূব এর ঘটনা
হযরত বাহলূল মাজযূব রাহ.কে কেউ জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছেন? তিনি বললেন, খুব ভালো আছি। অত্যন্ত শান্তিতে আছি। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, কেমন শান্তি? তিনি বললেন, আরে ভাই, ওই লোকের শান্তির পরিমাপ কে করতে পারে যার ইচ্ছার বিপরীতে কিছুই পৃথিবীতে হয় না! জগতের সকল বিষয় তো আমার ইচ্ছা মাফিক হচ্ছে! লোকেরা বলল, জনাব, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এমন কেউ আসেনি, যার ইচ্ছে মাফিক সবকিছু হয়েছে। এমনকি নবীগণেরও ইচ্ছা-বিরোধী অনেক কিছু ঘটেছে। আপনার এমন কোন মাকাম হাসিল হয়ে গেল যে, আপনার ইচ্ছে বিরোধী কোনো কিছুই ঘটে না? তিনি বললেন, প্রকৃত বিষয় এই যে, আমি নিজের ইচ্ছাকে মাওলার ইচ্ছায় বিলীন করে দিয়েছি। তাঁর যা ইচ্ছা সেটাই আমার ইচ্ছা। তিনি যাতে খুশি আমিও তাতে খুশি। আর যেহেতু বিশ্বজগতে কোনো কিছুই তাঁর ইচ্ছার বিপরীতে ঘটে না তাহলে আমারও ইচ্ছার বিরোধী কোনো কিছু নেই। সমর্পণের এই শান্তি নিজ ফযল ও করমে আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করেছেন।
--
১৫. ‘রিযা বিলকাযা’ তে রয়েছে প্রশান্তি
মোটকথা, রিযা বিলকাযার চেয়ে বড় শান্তির উপায় আর নেই। এখন বান্দা এই পন্থায় শান্তি লাভ করতে পারে কিংবা শান্তির অন্বেষায় জীবনভর ছটফট করতে পারে।
হযরত রাহ.-এর উপরোক্ত মালফুযের সারকথা এই যে, ভ্রুক্ষেপহীনতা সত্ত্বেও যদি এই সব অনাহুত ভাবনা দূর না হয়; বরং যথারীতি তা আসতেই থাকে তাহলেও ভীত ও পেরেশান হওয়ার কারণ নেই। এক্ষেত্রে এই ভেবে হালতের উপর সন্তুষ্ট থাকাই কাম্য যে, আল্লাহ যখন আমার জন্য এটাই পছন্দ করেছেন তো আমি তাতে খুশী। তবে ওই সব ভাবনা মোতাবেক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আপনাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
অস্বস্তিকর একটা বিষয়ে আলোচনা, তাইনা? পর্ণ আসক্তি এবং মাস্টারবেশন আসক্তদের মাঝে খুব কমই এই সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনার সাহস পায়। বাকিরা ভাবে, কার সাথে কথা বলব? কোন মুরব্বির সাথে কথা বলব? সে আমাকে কত খারাপ ভাববে..! এভাবে আর সে সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে না।
প্রতিদিন এই অশ্লীল গুনাহে জড়িয়ে যাওয়া, এরপর অনুশোচনায় ভুগা। এটাই অনেকের দৈনিকের রুটিন। কেউ কেউ তো একদম হাল ছেড়ে দেন, "আমি বোধহয় এথেকে মুক্ত হতে পারব না!" অধিকাংশ পর্ণ – মাস্টারবেশন এডিক্টরা শুরুতে বন্ধুর পাল্লায় পড়ে একদিন দেখলেও পরে আসক্ত হয়ে যায়, চাইলেও আর এথেকে বের হতে পারে না। প্রতিদিন আত্মিক এবং শারীরিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। দিনের পর দিন সে দুনিয়া এবং আখিরাতের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
এপ্রসঙ্গে আমাদের গ্রুপে আগেও অনেক প্রশ্ন এসেছে, হয়তো আগামীতেও আসবে। তাই এই টপিকের ওপর উস্তায তিম হাম্বলের একটি লেখা অনুবাদ করা হয়েছে। আশা করছি, এটা আপনাদের জন্য উপকারী হবে। এরপর রয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে দেয়া কিছু পরামর্শ।
------------
১। দোয়া করুন।
অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর একটি হাদিস পেলাম। দীর্ঘদিন যিনার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এক বালকের জন্য রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া করেছিলেন, (এখানে আমি দোয়ার সময় ব্যবহার করা “তাকে” পরিবর্তন করে “আমাকে” দিয়েছি)
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই মন্দ কিছু শোনা থেকে, মন্দ কিছু দেখা থেকে, মন্দ কিছু বলা থেকে, আমার অন্তরের খারাপি থেকে এবং আমার দৈহিক কামনা বাসনার খারাপি থেকে। (আবু দাউদ ১৫৫১, তিরমিযী ৩৪৯২, নাসাঈ ৫৪৪৪,৫৪৫৫)
.
২। সাধারণ যেকোনো গুনাহ আর এই গুনাহের তীব্রতা সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করুন এবং এই গুনাহের প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণা বোধ জাগিয়ে তুলুন। সঠিক পথ প্রাপ্ত লোকদের কথা বলতে গিয়ে সুরা হুজুরাতের ৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “সঠিক পথ প্রাপ্ত লোকেরা আল্লাহর পথে দ্বন্দ্ব এবং অবাধ্যতা পছন্দ করে না।” অনেক পূর্বসূরি আলেমদের মতে বান্দার গুনাহের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, তাতে সে আনন্দ খুঁজে পায়।
এই হাদিসটি দেখুন,
সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত: নবী সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি আমার উম্মতের কিছু দল সম্পর্কে নিশ্চিত জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমল সহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা:) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন: তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (সুনানে ইবনে মাযাহ ৪২৪৫)
অতএব, সতর্ক হন এবং নিজের মনে আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য এই পাপাচারের এবং সাময়িক নিষিদ্ধ আনন্দের প্রতি গভীর ঘৃণা বোধ জাগিয়ে তুলুন। আর এই সংগ্রামকে সহজভাবে নিবেন না।
.
৩। আপনার নামাজের দিকে মনোযোগ দিন।
যখনই আশ্লীল বা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যাবেন তখন আপনার নামাজের দিকে খেয়াল করে দেখুন। নামাজ মিস হয়ে যাওয়া, নামাজে দেরি হচ্ছে কিনা, আযানে অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছেন কিনা এবং নামাযে অমনোযোগী হয়ে পড়ছেন কিনা এসব বিষয়ে খেয়াল করুন। আল্লাহ বলেছেন- “নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে ৷” (সুরা আনকাবূত ৪৫) নামাজ পড়ার পরেও যদি এরকম হয় তাহলে বুঝতে হবে সঠিকভাবে নামাজ হচ্ছে না।
.
৪। পাপ করার সাথে সাথে তওবা করুন।
আর কখনোই এমন কাজ করবেন না এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস রেখে, বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে মাফ চান। লক্ষ্য অর্জনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। হ্যাঁ, এটা সম্ভব যে আপনি আবার একই পাপকাজে জড়িয়ে যেতে পারেন। মনে রাখবেন প্রতিবার এটা বন্ধ করার জন্য আপনি যত দৃঢ় সংকল্প হবেন আপনার অবস্থা তত দ্রুত উন্নত হবে। নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখযোগ্য:
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি, এক বান্দা গুনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার রব! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তার প্রতিপালক বললেন: আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন রব যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছে অনুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গুনাহে জড়িয়ে গেল। বান্দা আবার বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ করে বসেছি। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন: আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার আছে একজন রব যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম। এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল সে অবস্থায় থাকল। আবারও সে গুনাহে জড়িয়ে গেল। বলল, হে আমার রব! আমি তো আরও একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন: আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরকম তিনবার বললেন। (বুখারী ৭৫০৭)
.
৫। পাপের দিকে নিয়ে যায় এরকম সব কিছু থেকে বিরত থাকুন। এর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন আপনাকে করতে হবে। যদি আপনার স্মার্টফোন বদলে পুরনো মোবাইল ব্যবহার করতে হয়, ব্রডব্যান্ড বিচ্ছিন্ন করতে হয়, সবাই দেখতে পারে এমন স্থানে কম্পিউটার ডেস্ক নিয়ে যেতে হয়, তাহলে করে ফেলুন। আপনি যদি গুরুত্বের সাথে তওবা করেন, তাহলে যা যা প্রয়োজন সে সবকিছুই আপনাকে করতে হবে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আপনি নিতে পারেন। আপনার কম্পিউটারের সেটিংস পরিবর্তন করে অথবা সফটওয়্যার (k9 web protection, porn blocker) ব্যবহার করে খারাপ কন্টেন্ট ব্লক করে দিতে পারেন। আপনার ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদানকারীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। সফটওয়্যার ব্যবহার করলে এমন এলোমেলো পাসওয়ার্ড দিন যা আপনি কোথাও লিখে রাখেন নি। তাহলে সফটওয়্যারটিকে চাইলেই আপনি বন্ধ করে দিতে পারবেন না। এগুলো খুব বেশি কিছু না। একজন দৃঢ়চেতা মানুষ চাইলেই এগুলো করতে পারেন। আপনি যত চেষ্টা করবেন গুনাহে জড়ানো ততই কঠিন হতে থাকবে।
.
৬। ভালো মানুষদের সাথে থাকুন।
এটা এমন এক গুনাহ যা সাধারণত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বা একা অবস্থায় করা হয়। আপনার একাকীত্ব যত কমবে, এই গুনাহের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা তত বেশি হবে। প্রয়োজনে কারো সাথে আপনার রুম শেয়ার করুন। আপনার কম্পিউটার, ফোন এগুলো অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এতে গোপনীয়তা কম হবে।
.
৭। একা থাকা অবস্থায় যদি খারাপ চিন্তা আসে এবং যদি ভয় হয় যে আপনি পাপে জড়িয়ে যাবেন তাহলে এই স্থান থেকে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। এটা একা থাকা অবস্থায় আল্লাহকে ভয় পাওয়ার বিকল্প নয়, বরং এটা আপনি একটু আগে যা করার চিন্তা করছিলেন তা থেকে ফিরে আসার সাময়িক উপায়।
.
৮। নিয়মিত রোজা রাখুন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুইদিন অথবা প্রয়োজনে আরও বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা:) সাওমকে প্রবৃত্তি দমনকারী বলে উল্লেখ করেছেন।
আলকামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রা:)-এর সঙ্গে চলছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেন: যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। সাওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। (বুখারি ১৯০৫)
.
৯। যদি মনে হয় এটা জ্বিনঘটিত কোন সমস্যা তাহলে ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়া করুন, তারপর পূর্ণ রুকইয়া করতে পারেন। তবে কিছু ব্যতিক্রম বাদে জ্বিনঘটিত সমস্যার কারণে এটা খুব কমই হয়। বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে জিন মানুষের প্রবৃত্তির ফায়দা নেয়। তাই আপনাকে এই কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হবে।
.
১০। এই ভিডিওটি দেখতে পারেন https://www.youtube.com/watch?v=25GpteVMBX0।
[সংযুক্তিঃ এই বিষয়ের ওপর লেখা প্রথম বাংলা বই "মুক্ত বাতাসের খোজে" (এখানে পাওয়া যাবে http://bit.ly/2GAbgOF) বেশ উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
এই দুইটি পেজ লাইক + সি ফার্স্ট দিয়ে রাখতে পারেন, ইনশাআল্লাহ এটা আপনার গুনাহ থেকে মুক্ত হতে সহায়ক হবে। ]
.
১১। আপনি যদি আবারো এই পাপকাজে জড়িয়ে পড়েন তাহলে আবার ১ নং পয়েন্ট থেকে আবার শুরু করতে করুন।
অনেকেই হয়ত বলবেন যে আমি কেন বিয়ের কথা বলছি না। যারা আমাকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাদের একটা বড় অংশ এখনই বিয়ে করতে পারবেন না আবার এর মধ্যে অনেকেই আছেন বিবাহিত। তাই বিয়ে করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। উপরে উল্লেখিত সমাধানের মাধ্যমেও চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ ভালো জানেন।
-
মুল: মুহাম্মাদ তিম হাম্বল
অনুবাদ: রাফায়েল হাসান
রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ
-------------
পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্ত হতে আমরা [Ruqyah Support BD] সাধারণত সেই টিপসগুলোই দিয়ে থাকি, যা ওয়াসওয়াসা রুগীদেরকে দেয়া হয়। তাঁর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হচ্ছে-
১. যথাসম্ভব প্রতি ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়া। আপনাকে জামাতে অংশ নিতে দিবে না; এমন কাজ দেখলে পারতপক্ষে দূরে থাকা।
২. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা, ঘুমের আগে এবং অন্যান্য মাসনুন যিকরের প্রতি খুব যত্নবান হওয়া।
৩. আসক্তির ব্যাপারে ওয়াসওয়াসা শুরু হলে (হরমোন প্রেশার বেড়ে গেলে) নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করা, যথাসম্ভব রিয়েক্ট না করা। ইগনোর করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।
৫. এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের ইচ্ছা রেখে প্রতিদিন কোরআনুল কারিমের আযাব বা শাস্তি সংক্রান্ত আয়াতগুলো (আয়াতুল হারক) তিলাওয়াত করা। প্রতিদিন সব শেষ করতে না পারলে, অল্প কিছু হলেও পড়া। এর পাশাপাশি আয়াতুল হারকের অডিও দিনে কমপক্ষে ২ বার করে শুনা। সাথে রুকইয়া যিনা অডিও দিনে কমপক্ষে ২ বার করে শুনা।