ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও বিধান
▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: যদি কোনো ছেলে বা মেয়ে জীবনেও বিয়ে না করে তাহলে সে কি জাহান্নামে যাবে অথবা সে কি গুনাহগার হবে?
উত্তর:
বিয়ে ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তার উম্মতকে বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তান সাহাবায়ে কেরাম বিবাহ করে ঘর-সংসার করেছেন। বিয়ের মাধ্যমে বৈধ সান্তান দ্বারা বংশ বিস্তার হয় এবং এই পৃথিবী আবাদ হয়। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে অনেক অন্যায়-অপকর্ম বিদূরিত হয়। গড়ে উঠে একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বৈধ পন্থায় মাুনষ নিজেদের প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করে। এতে মানুষের হৃদয়পটে ঈমান ও তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালবাসা, দয়া ও পারস্পারিক সৌহার্দপূর্ণ সুস্থ ও সুন্দর জীবন লাভে ধন্য হয় মানব সমাজ।
তাই এই চমৎকার বিধানটির ব্যাপারে কোনরূপ অবহেলা প্রদর্শন করা কাম্য নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ইবাদতের ব্যাঘাত সৃষ্টির ওজুহাতে এক ব্যক্তি জীবনে কখনো বিয়ে করবে না বলে ওয়াদা করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাবধান করেন। দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসটি:
عنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فَلَمَّا أُخبِروا كأَنَّهُمْ تَقَالَّوْها وقالُوا : أَين نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قَدْ غُفِر لَهُ ما تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ وما تَأَخَّرَ . قالَ أَحَدُهُمْ : أَمَّا أَنَا فأُصلِّي الليل أَبداً ، وقال الآخَرُ : وَأَنا أَصُومُ الدَّهْرَ أبداً ولا أُفْطِرُ ، وقالَ الآخرُ : وأَنا اعْتَزِلُ النِّساءَ فلا أَتَزوَّجُ أَبداً، فَجاءَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم إلَيْهمْ فقال : ্র أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كذا وكذَا ؟، أَما واللَّهِ إِنِّي لأَخْشَاكُمْ للَّهِ وَأَتْقَاكُم له لكِني أَصُومُ وَأُفْطِرُ ، وَأُصلِّي وَأَرْقُد، وَأَتَزَوّجُ النِّسَاءَ، فمنْ رغِب عن سُنَّتِي فَلَيسَ مِنِّى: متفقٌ عليه.
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনজন লোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের ঘরে আসল। তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে জানতে চাইল। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হল, তখন তারা যেন এটাকে অপ্রতুল মনে করল। আর বলল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আর আমরা কোথায়? তাঁর আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
- তাদের একজন বলল, আমি সম্পূর্ণ রাত নামাজ পড়তে থাকব।
- আরেকজন বলল, আমি সারা জীবন রোযা রাখব। কখনো রোযা ছাড়ব না।
- আরেকজন বলল, আমি মেয়েদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখব, কখনো বিয়ে করব না।
ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। আর বললেন, তোমরা তো এ রকম সে রকম কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! তোমাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশী ভয় করি। তাঁর সম্পর্কে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু আমি রোযা রাখি আবার রোযা ছেড়ে দেই। আমি নামায পড়ি আবার নিদ্রা যাই। আবার মহিলাদেরকে আমি বিয়েও করি।
সুতরাং যে ব্যক্তি আমার আদর্শ (সুন্নাত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
বিয়ে করার বিধান:
ব্যক্তির অবস্থার আলোক বিয়ে করার বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই কথা।
কেউ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তা জন্যে বিয়ে করা ফরয। না করলে গুনাহগার হবে।
এ অবস্থায় কেউ অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থ না হয় তাহলে সে রোযা পালন করবে। কেননা, রোযা প্রবৃত্তিকে দমন করতে সহয়তা করে। তবে সামর্থ হলে অনতি বিলম্বে বিয়ে করবে। কিন্তু তথাকথিত অর্থনৈতিক দুর্বলতার অজুহাতে বিয়ে বিলম্ব করা অগ্রহনযোগ্য।
কেউ যদি শারীরিক দিক থেকে বিয়ে করতে সমর্থ থাকে কিন্তু বিয়ে না করলেও যৌন সংক্রান্ত বিভিন্ন পাপাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা না করে তাহলে তার জন্য বিয়ে করা মুস্তাহাব।
কেউ যদি জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় তাহলে তার জন্য বিবাহ করা বৈধ নয়। কেনানা, এতে করে অন্যের অধিকার নষ্ট করা হয়।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূল সা. এর সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবহেলার কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গুনাগার হবে।
আর কোন নারী বা পুরুষ যদি ইচ্ছা থাকার পরও বহুচেষ্টা সত্বেও কোন কারণে বিয়ে করতে ব্যার্থ হয় বা বিশেষ কোন ওজরের কারণে বিবাহ করতে না পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ এতে সে গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কেননা, বিয়ের ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।
তবে ইসলামের বিধান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ের চেষ্টা অব্যহত রাখা কতর্ব্য। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
No comments:
Post a Comment